ছোট হলেও কিছুটা প্রাপ্তি || ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টায় আমার আত্মবিশ্বাস

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

নমষ্কার,,

গ্র্যাজুয়েশনের শুরু থেকেই বাবার ইচ্ছে ছিল আমি যেন মাস্টার্স, পি এইচ ডি সব কমপ্লিট করি চাকরীর পিছনে না দৌড়িয়ে। সেটা সরকারি ভাবে হোক কিংবা বেসরকারি। পড়াশোনার জন্য টাকা খরচ করতে বাবা কোন দিন ভাবে নি। যখন যেটা দরকার সাথে সাথে পেয়েছি। এই সুযোগ নিয়ে অবশ্য ভুলভাল বুঝিয়েও অনেক টাকা নিয়েছি, সেটা কিন্তু বয়সের দোষ, আমার নাহ্, হিহিহিহি। আসলে বিশ্বাস করবে নাই বা কেন, স্কুল হাইস্কুলের বৃত্তি পরীক্ষা থেকে শুরু করে কলেজ জীবনের সব পরীক্ষাতেই ভালো রেজাল্ট করেছি। তাই ছেলের প্রতি বিশ্বাস টা এখনো অনেক বেশি, বাঁদরামি যতোই করি না কেন।

IMG20230112142124.jpg
Location

এটা তো গেল বাবার কথা। এদিকে মা আর আমার বোনের ইচ্ছে মোটামুটি একটা সরকারী চাকরী নিয়ে বাড়ির আশে পাশেই থাকা। পয়সার বেশি দরকার নেই। ঘরের ছেলে ঘরে থাকুক এটাই ওদের চাওয়া।

অন্যদিকে আমার জেদ ছিল আরেকটা। দেশের বাইরে গিয়ে হাইয়ার স্টাডিস শেষ করা। দুনিয়াটাকে একটু নিজের মত করে চড়ে বেড়িয়ে খাওয়া। কিন্তু বাড়ির করো মত ছিল না আমার সাথে। তবুও নিজের সাথে জেদ করে গ্র্যাজুয়েশনের শেষের দিকে এসে বেশ লাফালাফি শুরু করি নিজের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য। অনেক বইও কিনে ফেলি। নানান জায়গায় কথা বলা শুরু করি। কিন্তু ঐ যে একটা কালো বিড়াল এসে রাস্তা কেটে গেল। নিজের স্বপ্নগুলোকে ওখানেই শেষ করলাম।

IMG20230112130213.jpg
Location

তারপর প্রায় চার বছর পার হয়ে গেছে। জীবনের অনেক সমীকরণ বদলে গেছে। নিজের স্বপ্ন কে কারো জন্য বিসর্জন দেওয়াটা সব থেকে বড় বোকামি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছি কয়েক বছরে।

সরকারী চাকরীর রাস্তা থেকে বেরিয়ে গেছি গোলধাঁধায় পরে। চাইলেও আর মন বসাতে পারি না। অনেক কাছের বন্ধুগুলো বারবার উৎসাহ দিয়ে পুরোনো স্বপ্ন টাকে আবার নতুন করে দেখার সাহস দিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে অস্ট্রিয়ায় একটা ইউনিভার্সিটিতে এম এস এর জন্য আবেদন করেছিলাম। আমি তখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিলাম। আমার বন্ধুই আমার সমস্ত কাজ করে দেয়।

IMG20230112142218.jpg
Location

যাইহোক ছোট করে হলেও প্রথম ধাপে সফলতার একটা ম্যাসেজ আসে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে। ইউনিভার্সিটি থেকে আমাকে ইমেইল করে যে তারা ইনিশিয়ালি আমাকে সিলেক্ট করেছে। এবার আমার সব ডকুমেন্টস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভেরিফাই করে অস্ট্রিয়ান অ্যাম্বাসি থেকে লিগলাইজড করে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখের মাঝে পাঠিয়ে দিতে হবে ইউনিভার্সিটিতে। কিন্তু সমস্যা বাঁধে অন্য জায়গায়। অস্ট্রিয়ান এম্বাসি বাংলাদেশে নেই। সবকিছু প্রসেসিং করে ডকুমেন্টস পাঠাতে মোটামুটি ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে।

IMG20230112120641.jpg
Location

আমি ইউনিভার্সিটিতে ইমেইলে লিখে পাঠাই যে, এই খরচটা আমার পক্ষে এখন ক্যারি করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি যদি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে করে একদম সিল দিয়ে তাদেরকে পাঠাই তাহলে সেটা এক্সেপ্ট করবে কিনা। মোটামুটি ১০ দিন পরে আমার ইমেইলের রিপ্লাই পাই। আমাকে বলে আমার অফারটা তারা মেনে নিতে রাজি কিন্তু কোন থার্ড পার্টির মাধ্যমে ডকুমেন্টস তাদেরকে পাঠানো যাবে না। সরাসরি ভার্সিটির থেকে ডকুমেন্টসগুলো অস্ট্রিয়ায় পাঠাতে হবে।

IMG_20230120_181626.jpg
Location

আর সেজন্যই আজকে ভার্সিটিতে এসেছি সার্টিফিকেটগুলো অ্যাটেস্টেড করতে। প্রয়োজনীয় ফরম পূরণ করে রেজিস্টার কে আমার সব কথা খুলে বললাম। উনি আমাকে ব্যাংকে একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমা দিতে বলে সাত দিন পর আসতে বলল। আমি ওনার কথামতো সমস্ত কাজ ঠিকমতো করে আমার কাগজপত্র জমা দিয়ে চলে আসলাম। আশা করি সামনের সপ্তাহের মধ্যেই সবকিছু রেডি হয়ে যাবে।

হ্যাঁ হতে পারে খুব আহামরি কোন অফার না এটা । আরো অনেক ভালো দেশ আছে উচ্চশিক্ষার জন্য। তবে চেষ্টা করতে দোষ কি! কেউ যদি ইউরোপে সেটেল হতে চায় তাহলে তার জন্য এটা অনেক বড় একটা সুযোগ। আমি আসলে অত কিছু ভাবছি না। সুযোগ যখন এসেছে হাতে রেখে দিতে চাইছি। এটুকুই যা। পরেরটা পরে দেখব। দেখি কতদূর সামনে এগোতে পারি!

Sort:  
 2 years ago 

দাদা কালো বিড়াল এসে রাস্তা কেটে গেল বুঝিনি 🤔। আপনার বাবা মার সাপোর্ট আছে বলেই এতোদূর যেতে পারছেন। আশা করি অস্ট্রিয়ায় আপনার হায়ার এডুকেশনটা কমপ্লিট করতে পারবেন। দ্রুত যেন সবকিছু প্রসেসিং হয়ে যায় সেই কামনা করছি

হাহাহাহা,, সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে যে আপনি পুরো লেখাটা পড়েছেন । আর কালো বেড়ালের গল্প অতীত এখন। তাই বক্স থেকে আর নাইবা বের করলাম। পাশে থাকবেন সবসময়। অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

 2 years ago 

আপনাকে অভিনন্দন।
আশাকরি সফল হবেন ,উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে দেশ ও সমাজের জন্য আরো ভালো কিছু করবেন। আপনার বন্ধু আবেদনের জন্য সহায়তা করেছেন ,এটাই বন্ধুত্ব । ভালো থাকবেন।শুভ কামনা।

অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। দোয়া করবেন যেন আরো সামনে এগিয়ে যেতে পারি।

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া প্রতিটি বাবা মা চায় তার সন্তানেরা সব সময় কাছে থাকুক। সন্তান যতই বড় হোকনা কেনো বাবা মার কাছে কখনো বড় হয় না।আর আপনার ইচ্ছে যেতেতু বাইরে পড়াশোনা করার, সুযোগ যেহেতু এসেছে তাই যাওয়া অনেক ভালো।আসলে ভাইয়া স্বপ্ন দেখতে দেখতে একদিন সফলতা আসবেই। ধন্যবাদ আপনাকে।

মা বাবার কথা ভেবেই আসলে হুটহাট কিছু করতে পারি না আপু। দেখা যাক কতটা লক্ষ্যে এগোতে পারি। দোয়া করবেন। অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

অভিনন্দন দাদা আপনি অস্ট্রিয়ায় একটা ইউনিভার্সিটিতে এম এস এর জন্য সিলেক্ট হয়েছেন। অতীতের কালো দিন গুলো ভুলে গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। দোয়া করি অনেক দূরে এগিয়ে যান দাদা।

অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া পাশে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন সবসময়।

 2 years ago 

প্রথমেই ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা জানাই দাদা।আপনার মনের একটা আশা পূরন হতে যাচ্ছে।যেখানেই থাকুন ভালো থাকবেন আর সবসময় নিজের খেয়াল রাখবেন।
আল্লাহ তায়ালা আপনার বাকি আশাগুলোও পূরন করে দিক।

ভাইয়া এখনো কিছুই হয় নি তেমন,, তবে চেষ্টা করে চলেছি। দোয়া করবেন। অনেক ভালোবাসা রইলো।

 2 years ago 

আশা করি অবশেষে আপনার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।আহামরি কিছু না হলেও যে খুব কাছাকাছি গেছেন সেটা হচ্ছে অনেক কিছু। প্রথম ধাপে যখন লেগে গেছেন আপনার সবকিছু মেনে নেবে ওরা সেটাই বিশ্বাস করি।স্বপ্ন দেখতে মন্দ নেই স্বপ্ন মাঝে মধ্যে বাস্তব রূপ নেই।আপনার জন্য অনেক শুভকামনা এবং অগ্রিম অভিনন্দন রইল।

চেষ্টা করছি আপু নিজের মত করে। দোয়া করবেন ভাইয়ের জন্য। অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

 2 years ago 

আসলে বাবা-মা সব সময় চাই যে তাদের সন্তান কাছে থাকুক। তাই হয়তো ওনারা আপনাকে যেতে দিতে চাইছিল না। তাই ওনাদের কথা মেনে আপনি চাকুরী করছিলাম। কিন্তু মন বসাতে না পেরে আবার পুরনো স্বপ্ন পূরণ করার চেষ্টা করছেন। আপনার জন্য শুভকামনা রইল যেন আপনি আপনার স্বপ্নটা ঠিকভাবে পূরণ করতে। ধন্যবাদ এই সুন্দর পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

মা বাবা পাশে আছে বলেই আজ এতদূর আসতে পেরেছি। আমিও চাই আমার সাথে সাথে বাবা মা কেও পুরো বিশ্ব টা দেখাবো। দোয়া করবেন ভাই। ভালোবাসা রইলো।

 2 years ago 

আপনার মনে মনে এই ছিল আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়ার। এতদিন জিজ্ঞাসা করলাম তখন তো বললেন না আজকে ঠিকই সব শেয়ার করছেন। যাই হোক অনেক অনেক অভিনন্দন এই ছোট্ট প্রাপ্তির জন্য। আশা করি এই ছোট প্রাপ্তি থেকে অনেক বড় কিছু আপনার জন্য সামনে অপেক্ষা করছে। খুব ভালো লাগলো খবরটি শুনে। তাছাড়া ঠিকই বলেছেন সব সময় নিজের লক্ষ্যে আগে অটুট থাকা উচিত তারপর বাকি সব কিছু। যাইহোক অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

আসলে আপু আমি তো কোন দিকেই আগাতে পারছি না, তাই আগে থেকে কি আর বলবো বলেন! এটাও এখনো মাঝ পথে আটকে আছে। জানিনা কতদূর কি হবে। শুধু তো নরমাল প্রসেস টুকু শেয়ার করেছি। এখনও অনেক কাহিনী বাকি। দোয়া করবেন আপু ভাইয়ের জন্য। অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আশা করি আপনার স্বপ্নটা পূরণ হোক। এ ধরনের অফার গুলো আসলে তা গ্রহণ করা খুব ভালো একটা কাজ। আর বাবা মা তারা চাই তার ছেলেটি অনেক বড় হোক। বিশেষ করে মা এবং বড় বোনেরা চাই ছেলেটি তার আশেপাশে থাক এবং সবসময় তার চোখের পাশে থাকুক। আশা করি ভালো একটি গেজুয়েট হওয়ার জন্য আপনার মনের আশা আল্লাহতালা যেন পূরণ করুক।

দোয়া করবেন ভাই নিজের লক্ষ্যে যেন এবার ঠিকভাবে এগোতে পারি। আর এভাবেই পাশে থাকবেন সবসময়। অনেক ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

প্রথমে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আশা করছি আপনি অবশ্যই আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। অবশ্যই আপনার স্বপ্ন পূরণ হবে। যেহেতু আপনার ইচ্ছে বাহিরে গিয়ে পড়াশোনা করার তাই এই সুযোগটি ছাড় দেওয়ার মতোই না। সকল বাবা-মা চায় তার সন্তান যেন অনেক দূরে যেতে পারে। আপনার বাবা-মা আপনাকে সাপোর্ট করে আসছে তাই তো এত দূর। ভালোই লাগলো পড়ে আমার কাছে।

মা বাবা আছেন বলেই আজ এতদূর আসতে পেরেছি আপু। দোয়া করবেন যেন বাকি পথ টাও ভালো ভাবে শেষ করতে পারি। অনেক ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58647.58
ETH 2550.58
USDT 1.00
SBD 2.50