জীবন ও জীবিকার তাগিদে যত সংগ্রাম || চলছে জীবন যুদ্ধ
নমস্কার,,
আমাদের জীবনটা জন্মের পর থেকে কেমন করে চলছে একবার ভেবে দেখেছেন? শৈশব কৈশোর কেটে গেল, আর ঠিক তারপর কিছু বছর পর থেকে শুরু হয় আমাদের জীবিকার যুদ্ধ। জীবন শুরুর প্রথম বিশ থেকে বাইশ বছরে আমরা যা কিছু করি, আমাদের যত অর্জন তার পেছনে যেন একটাই লক্ষ্য। কিছু একটা কর্ম করতে হবে আমাদের। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। পরিবারকে দেখভাল করতে হবে। হ্যাঁ এই কর্মের জন্য কত মানুষ কত ধরনের কাজ করছে তার ঠিক নেই। কেউ সৎ আবার কেউ অসৎ কাজ করছে। কেউ বা এমন এমন কাজ করছে অনেক সাধারণ মানুষ নাক কুচকে চলে যেই কাজ গুলো দেখলে।
মাস খানেক আগের কথা। ঢাকাতে থাকা অবস্থায় একদিন বাজারে গিয়েছিলাম। মুরগী কেনার এক পর্যায়ে দেখলাম পাশেই অনেক বড় একটা ড্রেন আছে। বৃষ্টি হওয়ার পর বেশ ভালোই বেগে স্রোতের পানি ছুটছিল। ঢাকার এমন ড্রেনের মত খাল গুলো কতটা নোংরা সেটা যারা ঢাকাতে থাকেন সবাই জানেন। জলের রং কালো কুচকুচে একদম। আর গন্ধে পাশ দিয়ে হেটে যাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। ঠিক এরই মাঝে দেখি একজন মানুষ কোমরের সাথে ড্রাম লাগিয়ে ঐ নোংরা জলের মাঝে দিয়ে হাঁটছে। আমি মুহূর্তেই থমকে গেলাম ওর কাজ দেখে। পরে একটু সময় নিয়ে পাশে দাড়িয়ে গেলাম ওনার কাজ গুলো দেখার জন্য। একটা পর্যায়ে দেখলাম ঐ ড্রেনের মাঝে দিয়ে যত নোংরা আবর্জনা আছে, প্লাস্টিক, চিপসের প্যাকেট সব কিছু সে কুড়িয়ে নিয়ে তার সাথে রাখা ড্রামে রেখে দিচ্ছে। ড্রেনের পানি চলাচল যেন সচল থাকে।
পরে একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম সিটি কর্পোরেশন থেকেই এদের নিয়োগ করা হয় । আমি শুধু অবাক হয়ে গেলাম এটা ভেবে মানুষ জীবিকার তাগিদে কত ধরনের কাজ করতে পারে! ওদের এই সংগ্রাম, এই জীবন যুদ্ধের কথা আমরা কজন ভেবে দেখি!! অথচ আমরা চাইলেই কিন্তু এই ধরনের কাজ যেন কাউকে না করতে হয় সেই ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারি। নিজের খাওয়া চিপসের প্যাকেট গুলো, কোকের বোতল গুলো , কলার খোসা গুলো, বিস্কুটের প্যাকেট গুলো যদি এখানে সেখানে না ফেলে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতাম তাহলে কি আশে পাশের পরিবেশ এত নোংরা হতো! নাকি এই মানুষ গুলোকে পেটের তাগিদে এই ধরনের কাজে কখনো নামতে হতো!! কখনো ভেবে দেখেছেন একটাবার!!
কর্মময় এই জীবনে যে যত বড় কাজই করুক না কেন আমার কাছে সমাজের প্রকৃত হিরো এই মানুষ গুলোই। একটা বার ভেবে দেখেছেন এই মানুষ গুলো যদি আমাদের চারপাশের পরিবেশ টা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না রাখতো তাহলে আমাদের অবস্থা কি হতো! বাইরে চলাফেরা করতে পারতাম কি আদেও!! আবার মজার ব্যাপার হলো এই ধরনের মানুষ গুলোকেই আমরা সব সময় ঘৃণার চোখে দেখি। অবহেলা করি। ছোট করি সব ক্ষেত্রে। তাদের অধিকারের প্রশ্নে , তাদের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তিতে আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
আমাদের উচিত শুধু কাগজে কলমে আর মাইকের সামনে শিক্ষার বুলি না উড়িয়ে আসল কাজে নিজেদের বিবেক কে কাজে লাগানো। তানাহলে সমাজের এই মানুষ গুলোর দিকে তাকানোর সময় কখনোই কারো হবে না। এরা সারাজীবন অবহেলা আর নিপীড়নের মাঝেই এদের জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। উদ্ধার আর কখনো পাবে না।
আমাদের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য আমরাই নিজেরা দায়ী। কারণ আমরা যেখানে সেখানে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশকে দূষিত করে ফেলি। তাইতো সিটি কর্পোরেশন থেকে কিছু মানুষকে নিয়োগ দেওয়া হয় ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য। আর এই ধরনের কাজগুলো জীবিকার তাগিদেই মানুষকে করতে হয়। আসলেই এগুলো ভাবলে মনের ভেতর অন্যরকম নাড়া দিয়ে ওঠে।
আমরা মুখেই শুধু ভালো কথার বুলি ওরাই, কাজের বেলায় কিছু না । কি আর বলবো। অনেক ধন্যবাদ আপু গঠন মূলক মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।
ঢাকার খালের পানি গুলো কতটা নোংরা তার নতুন করে বলার কিছু নেই। যেমন কুচকুচে কালো হয় তেমন দুর্গন্ধ হয়।
আসলেই নিজের পরিবার এবং জীবন সংগ্রামের তাগিদেই এই ব্যক্তি ড্রেনের মধ্যে এই ময়লা গুলো কুড়িয়ে নিচ্ছে। আর এই মানুষগুলোকেই আমরা সব সময় ঘৃণার চোখে দেখি। অথচ তারা যদি এই সকল কাজে না করত তাহলে আমাদের পরিবেশ না জানি আরো কত ঘৃন্য হত। প্রকৃত শ্রদ্ধা তাদের জন্যই।
এই মানুষ গুলোই আমাদের সমাজের আসল হিরো। এদের জন্যই আমরা সুস্থ পরিবেশে চলাফেরা করছি। ভালো থাকুক এই মানুষ গুলো।
আমাদের চারপাশের অনেক মানুষ আছে যারা জীবিকার জন্য কত কিছুই না করে বেড়াচ্ছে। আমরা হয়তো নামে মাত্র শিক্ষিত। কিন্তু আমাদের জন্যই তাদেরকে কষ্ট করতে হচ্ছে। আমরা যদি নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট আবর্জনা ফেলতাম তাহলে হয়তো তাদেরকে এভাবে পচা ড্রেনের ভেতর নেমে আবর্জনা পরিষ্কার করতে হতো না। আশা করছি আপনার এই পোস্টের মাধ্যমে অনেকে সচেতন হবে নিজের কাজের ব্যাপারে। সবার মাঝে সচেতনতা আসুক এই কামনাই করি।
একদম আসল কথা বলেছেন আপু। আমরা শুধু নামেই শিক্ষিত। আচারে ব্যবহারে সব কিছুতেই মূর্খ। আমাদের জন্যই সমাজের এই বেহাল দশা। অনেক ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আসলে জীবিকার তো আগে দিয়ে মানুষ অনেক ধরনের পেশায় গ্রহণ করে থাকে। অনেকেই হয়তো বা তার এই পেশাটি ভালো চোখে দেখে না কিন্তু সে পরিবেশ রক্ষার জন্য দারুন ভূমিকা পালন করছে। আমরা চাইলেই কিন্তু এই ধরনের প্লাস্টিক চিপসের প্যাকেট গুলো নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে পারতাম। আমাদের সামান্য অবহেলার কারণেই আজকে এই মানুষগুলোকে এমন কাজ করতে হচ্ছে।
আমরা যদি নিজেরা একটু সচেতন হতাম সবার কত মঙ্গল হতো ভাবা যায়!! সবার মাঝে শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। এটাই চাওয়া 🙏🙏
জীবিকার তাগিদে মানুষ কত কিছুই না করে। আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতির কারনে এখন অনেকেই যে কাজ করতে পারত না তাকেই আজ সে কাজ করতে হচ্ছে। আর আমরা যারা এ দেশে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলি তারাই বাহিরের কোন দেশে গেলে ময়লা ব্যাগে করে নিয়ে নির্দিস্ট স্থানে ফেলি। আমরা নিজ থেকে যদি সচেতন না হই তাহলে এ পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে না।
হ্যাঁ আপু,, আমরা নিজেরাই পারি এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে। আমরা সচেতন না হলে সমাজের সবাইকে ভুগতে হবে দিনের পর দিন।
এমন ময়লা ড্রেন দেখলে আমাদেরতো পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই অস্বস্তি লাগে। আর সেখানে এই লোকগুলো প্রতিনিয়ত এই নোংরা পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য । আসলে আমাদের অসচেতনার জন্যই এই ড্রেনগুলো আরো বেশি নোংরা হয়। তারপরও ভালো যে এরা সৎ উপায়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করছে। তাছাড়া তো কত মানুষ ভালো থেকেও অসৎ পথের দিকে এগিয়ে যায়।
এনাদের স্ট্রাগল দেখলে মাঝে মাঝে চমকে উঠি আপু। জীবন যুদ্ধে কিভাবে নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! এই মানুষ গুলো এখনও সৎ আছে বলে সমাজটা এখনও টিকে আছে। তানাহলে নিজেদের অস্তিত্ব থাকতো না আর।
সত্যি অবাক করার মত বিষয়। জীবিকার তাগিদে নোংরা পানির মাঝেও সে কাজ করতেছে। এখন ঢাকা নয় সবজায়গাতে কম বেশি এরকম নোংরা দেখা যায় বিশেষ করে খালে বিলে কাছরা গুলো ফেলে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে সাজিয়ে উপস্থাপনা করার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
অনেক ধন্যবাদ আপু গঠন মূলক মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।
দাদা একটা কথা কী সবার আগে বাচতে হবে ৷ আর এই বাচাঁর জন্য চাই কাজ ৷
আসলে মানুষ তো সবাই একটা বয়সে এসে জীবনে একটা কিছু করতে হবে সেটা এমনি এমনি মাথায় আঘাত করে ৷ একদিকে পরিবার আর পারছে না ৷ অনেক অনেক কথা ৷
তাই জীবন জীবিকার তাগিদে ছুটছে যে কোনো একটা কাজের জন্য ৷ তবে আমাদের সমাজে কিছু লোক আছে যেগুলো সাধারণ ছোট জীবিকার মানুষগুলোদের এক চোখে দেখে ৷তারা এটা জানে না যে তাদের কর্মের ফলে আমরা একটি সুন্দর পরিবেশ বসবাস করতে পারছি৷ তাই দিন শেষে মানুষ যে কর্মই করুক না তাদের প্রতি সম্মান জানানো উচিত ৷ কেন
না তিনিও তো মানুষ৷
খুব চমৎকার একটি ব্লগ উপস্থাপন করেছেন ৷
আসলে এই মানুষ গুলোর কথা আমরা কয়জন ভাবি রে ভাই!! সবাই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে পারলেই বাঁচি। ভালো থাকুক সমাজের এই প্রকৃত যোদ্ধারা। আর মানুষের মাঝেও যেন একটু সচতনতা আসে।