একটু আশ্রয়ের খোঁজে কাটানো দুইটি দিন
হাতে অফুরন্ত সময়। সুতা কাটা ঘুড়ির মত আকাশে উড়ে চলে গেলেও পিছুটান নেই। বাড়িতে কিছু দিন দম আটকে আসছিল। তাই ভাবলাম কিছু কাছের মানুষের সাথে দেখা করে আসি। যারা অন্ততঃ নিঃসার্থ ভাবে ভালবাসে। যে মানুষ গুলো সুখে দুঃখে সব সময় পাশে থাকবে, হাত ছাড়বে না কখনো। হোক সে বন্ধু , হোক কোন বান্ধবী, না হয় কোন ছোট ভাই। কাঁধে একটা বার হাত দিয়ে যারা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে সব সময়।
গতকালের পোষ্টে আপনারা দেখেছেন আমি রাজীবের সাথে বসে গানের আড্ডা দিয়েছি। সত্যি বলছি এই পাগল ছেলেটা পাশে থাকলে তিন চার ঘণ্টা সময় কি করে কেটে যাবে বোঝায় যায় না। দুপুর দুটো থেকে সন্ধ্যা আট টা পর্যন্ত এক সাথে ছিলাম দুই ভাই। দুপুর বেলা রাজীবের দিদির বাড়িতে দারুন একটা ভুরি ভোজন করে এসেছিলাম। অসাধারণ ছিল দিদির হাতের রান্না। তারপর তো গানের আসরে বসে গেলাম।
ভগবানের কি লীলা। আড্ডা টা জমিয়ে দেওয়ার জন্য ঠিক তখনই মেঘ করিয়ে দিল। একটু পরেই অঝোরে বৃষ্টি। কিছুক্ষণের জন্য অন্য এক জগতে চলে গেলাম।
তারপর সন্ধ্যে বেলা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পরছিল। ওভাবেই বেড়িয়ে পরলাম হাঁটতে। হাঁটতে হাঁটতে পার্কে গেলাম। আবহাওয়া টা যে কি দারুন ছিল বলে বোঝাতে পারবো না। ছবি তোলার কথা যদিও মনে ছিল না একদম। একটা সময় কফি খেতে খেতে মনের আবেগ মাখানো অনেক কথা দুজনই বলতে শুরু করলাম। কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম দুজন এক সাথেই। যথারীতি এবার যাবার পালা। রাজীব আমাকে অনেকটা রাস্তা এগিয়ে দিয়ে চলে গেল।
এর মাঝেই রাজীব হয়তো আমার সাথে কোন ছবি স্ট্যাটাস দিয়েছিল। সাথে সাথে আরেক পাগল ছোট ভাই ফোন করল। জিজ্ঞেস করছে দাদা কোথায়। আপনার কাছে যাব। ওর নাম রাকেশ। এক কথায় সাদা মাটা একটা ছেলে। মনে কোন প্যাঁচ নেই।
এই রাকেশ হনুমান টা আমার থেকে দুই ঘণ্টার দূরত্বে ছিল। তারপরও আসবেই সে। একটাই কথা অনেক দিন আপনার বকা খাই না দাদা। কষ্ট হলেও আসবো। আসলে এভাবে যখন কেউ বলে, বুকের কোথায় গিয়ে যে লাগে বলে বোঝাতে পারবো না।
রাকেশ আসলো। এক গাল হাসি দিয়ে বকবক শুরু করল। তারপর লাগলো আমার বিয়ে নিয়ে। ফোনে যত মেয়ের লিস্ট আছে এক এক করে শুরু করলো শয়তানি করতে 😂🤗। আমি হাসবো না কাদবো বুঝে পাচ্ছিলাম না তখন।
আমাকে টার্মিনাল অবধি এগিয়ে দিয়ে গেল রাকেশ। বাসের ভেতর উঠেও ফাজলামো শুরু করলো। বলল দাদা আপনার বাসের সাথে আমিও যাব কিছুদূর। তারপর আবার চলে আসবো। আমি বললাম আমার বাড়িতেই চল। কিন্তু এখন আসবে না। যাই হোক আমি বাসের সুপারভাইজার যে ছিল তাকে বললাম এই পাগল ছেলেটা যাবে আমার সাথে কিছু দুর। লোক টা হেসে বললো, আচ্ছা কোন ব্যাপার না 🤪😊।
সময় তখন সন্ধ্যে হবে হবে। বাস ব্রেক দিল ইফতারের জন্য। আমিও একটু ফ্রেশ হয়ে আপন মনেই থাকলাম কিছু সময়। তারপর চললাম আমার গন্তব্যের দিকে।
রাস্তায় বেশ জ্যাম ছিল। সাত ঘন্টার মত সময় লেগে গেছে বাড়ি ফিরতে। একা একা বসে ভাবছিলাম জীবন টাই কি যেন এক সিগন্যালে ধুম করে আটকে গেছে, সেখানে আমাকে যে রাস্তাতে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হবে এটাই তো স্বাভাবিক 😊।
একটা ব্যাপার ভেবে দেখলাম, জীবনে চলার পথে অনেক ধরনের মানুষের সাথেই পরিচয় হয়। কেউ ক্ষণিকের আবার কেউ সারা জীবন পাশে থাকে। তবে যেটা একদম প্রকৃত সত্য সেটা হলো, আমরা যে যেমন ধরনের মানুষ আমাদের সাথে ঠিক সেই ধরনের মানুষ গুলোই থেকে যায়। আমি যদি ভালো হই তবে ভালো সঙ্গ পাব। আর আমি যদি খারাপ হই তাহলে খারাপ সঙ্গই আমার সাথে থেকে যাবে। এটা পুরোপুরি আমাদের স্বভাব চরিত্রের উপর নির্ভর করে।
সবাই ভালো থাকবেন।
প্রিয় মানষগুলোকে ভালো রাখবেন।