এক চক্করে হাওড়া ব্রিজ ।। আর তারপর কিছু মজার অভিজ্ঞতা

নমস্কার,,

এবার কলকাতা গিয়ে পুরোটা সময় ছুটে বেরিয়েছি। এই কথা তো অনেকবার বলেছি এবং লিখেছি। আসলে পুরো কলকাতার বুকে ঘুরে বেড়ানোর মত এত জায়গা আছে যে তিন চার দিনে সেটা হয়তো ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। সেখানে আমি এক দিনে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ জায়গা ঘুরেছি বাইক নিয়ে। কোন প্রকার রেস্ট ছাড়া। এটা ঠিক সব জায়গাগুলো হয়তো ভালোভাবে ঘুরে দেখা হয়নি। তবে জায়গাগুলোর মজা ঠিক পেয়েছি।

হাওড়া ব্রিজের কথা শুনে নি এমন মানুষ হয়তো নেই। বাংলাদেশ থেকে যারা কলকাতা ঘুরতে যায় তারা অবশ্যই একবার হলেও দেখতে যায় হাওড়া ব্রিজ। আমিও আর বাদ যাই কি করে। দুপুরে বেলা একটা হোটেলে ঢুকে দুই ভাই মিলে ভোজনটা সেরে নিলাম। ১০ মিনিট রেস্ট না নিতেই দাদা বলল চল বেরিয়ে যাই। আমিও সাঁই দিয়ে দিলাম। সোজা চলে গেলাম হাওড়া ব্রিজ।

IMG_20220809_144909.jpg
Location

সত্যি বলতে হাওড়া ব্রিজ দূর থেকে দেখতেই সবচেয়ে বেশি সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। ব্রিজ দিয়ে দুইবার এপার ওপার ঘুরে এসেছি বাইক নিয়ে। অতটা মজা লাগেনি তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল ব্রিজের আর্কিটেকচারাল সৌন্দর্য দেখে। বাইক নিয়ে যাওয়ার জন্য উপরের দিকটা খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করতে পেরেছিলাম। যে প্রথমবার দেখবে তার মাথা ঘুরে উঠবে অনেকটাই। এই ভাসমান ব্রিজে কোন নাটবল্টু নেই। এই জিনিসটা এই ব্রিজের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।

এই ব্রিজ নির্মাণে সাড়ে ২৩ হাজার টন ইস্পাত দিয়েছিল টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি। ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৩৭ সালে। ১৯৪২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৪৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি।

IMG_20220816_14565118.jpg
Location

IMG_20220816_14570336.jpg
Location

ব্রিজ থেকে ঘুরে ফিরে যখন নামছিলাম তখন একটা মজার কান্ড ঘটে গেল। দেবাশিস দা ভুল করে অন্য একটা রাস্তায় বাইকটা ঢুকিয়ে দেয়। যখন বুঝতে পারে এটা আমাদের গন্তব্য ঠিক নেই সেই মুহূর্তে বাইকটি ইউ টার্ন নিয়ে নেয়। পাশের এক দোকানে গিয়ে সঠিক রাস্তা জিজ্ঞেস করতে নিয়েই পেছন থেকে ট্রাফিক সার্জেন্ট আমাদের ধরে ফেলে। এবং নানান বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। আমরা কেন ইউ টার্ন নিয়েছি সেটাই আমাদের অপরাধ। আর এর জন্য পাঁচশ টাকা জরিমানা দিতে হবে। সত্যি বলতে আমরা ১০ গজ ও এগোইনি ওই রাস্তা দিয়ে। কিন্তু ইউ টার্ন নেওয়া ট্রাফিক আইন পরিপন্থী। তাই পেনাল্টির জন্য আমাদের সাথে উঠে পড়ে লাগল।

IMG_20220809_144929.jpg
Location

এক পর্যায়ে সার্জেন্ট আমাকে বলছে, "তোমার দাদা না হয় রাস্তা ভুল করল, তুমি পেছনে বসে কি করলে! তুমিও কি রাস্তা চেননা? আমি এখন রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছি সেই ভাবে এগিয়ে যাও।"
উত্তরে আমি বললাম, " স্যার আমি তো আরো কিছুই চিনি না, বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে এসেছি, আর আপনি রাস্তার মাঝে এভাবে আটকে ঝামেলা শুরু করে দিলেন, এভাবে আটকানো কি ঠিক হচ্ছে বলুন তো স্যার, একটু ছেড়ে দিন না আমাদের 🤪। "

সত্যি বলতে মজা করেই এভাবে আমি কথাগুলো বলছিলাম। আমি বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে এসেছি শুনে সার্জেন্টটা ও বেশ নরম হয়ে গেল। তারপর দেখলাম লুকিয়ে লুকিয়ে হাত দিয়ে দাদাকে ইশারা করলো অল্প কিছু তার হাতে গুঁজে চলে যাওয়ার জন্য। দাদা এক পাশে গিয়ে সার্জেন্টের পকেটে ২০০ টাকা দিয়ে বেরিয়ে আসলো। আসার সময় সার্জেন্ট আমাকে বলল এবার ভালোমতো ঘুরে দেখ কলকাতা। ভুলভাল কিছু করিস না আর 😅।

হাওড়া ব্রিজে ঘুরতে গিয়ে এই মজার অভিজ্ঞতাটা সারা জীবন মনে থাকবে আমার। দারুন কিছু সময় কেটেছিল ট্রাফিক দুই সার্জেন্টের সাথে। যদি কখনো কলকাতা ঘুরতে যান কেউ তাহলে অবশ্যই হাওড়া ব্রিজ ঘুরে আসবেন। সত্যি অনেক ভালো লাগবে। তবে দূরে দাঁড়িয়ে গঙ্গার ধার থেকে দেখতেই অপরূপা লাগে হাওড়া ব্রিজকে।

Sort:  

অনেক মজার অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। পড়ে ভালো লাগলো। বাস্তবিক অর্থে সব জায়গায় পুলিশের চরিত্র একই রকম। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর পোস্টের জন্য।

হিহিহিহি, কি আর বলবো দাদা, বাঙালি যেখানেই আছে সেখানেই ঘাপলা আছে 😉

 2 years ago 

একটা কথা ঠিক বলেছেন । বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কলকাতার যে স্থাপনাটির নাম জানে সেটি হলো হাওড়া ব্রিজ । আমার ও ইচ্ছে আছে কখনো কলকাতায় গেলে হাওড়া ব্রিজটা ঘুরে দেখা । শুধু ইচ্ছে নেই কারো পকেটে ২০০ টাকা গুজে দেওয়ার ।

বিপদে পরলে কত কি যে করতে হয় ভাই,,, সময় করে একবার ঘুরে আসবেন। খুব ভালো লাগবে। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।

 2 years ago 

ওয়াও আপনি ঠিকই বলেছেন ভাইয়া ।বাংলাদেশের মানুষ শখ করে কলকাতার হাওড়া ব্রিজে ঘুরতে যাই দেখেই অনেক ভালো লাগলো । সব জায়গার পুলিশের চরিত্রই একই রকম যদি কখনো পুলিশে ধরে তাহলে কিছু টাকা বা অন্য কিছু দিলে আর কোন কথা ছাড়াই ছেড়ে দেবে।মন চাচ্ছে এখনই বেড়াতে যাই। আর আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর বিরিজ এর ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে খুব ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।

কি আর বলি,, পুলিশও বাঁচে আমরাও একটু বাঁচি 🤪। অনেক ধন্যবাদ ভাই।

 2 years ago 

আসলে দাদা সার্জেন্টদের এই কর্মকাণ্ড আমি ভেবেছিলাম শুধু বাংলাদেশেই হয় এখন দেখছি ইন্ডিয়াতেও হরহামেশা হচ্ছে। শুনে খুব খারাপ লাগলো। তবে আপনি ইন্ডিয়া গিয়ে অনেক সময় দিয়ে ঘুরাঘুরি করে এসেছেন এটা শুনে খুব ভালো লাগলো বেশ আনন্দঘন মুহূর্তই কেটেছে আপনার, আপনার পোস্টটি পড়ে তাই বুঝতে পারলাম।

এটা ঠিক যে কিছু টাকা পকেটে গুজে দিতে হয়েছিল তবে কলকাতার ট্রাফিক সিস্টেম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গুন ভালো। আর সবচেয়ে ভালো যেটা লেগেছে সবাই ট্রাফিক রুলস মেনে চলে।

 2 years ago 

হাওড়া ব্রিজ সত্যি দেখতে অনেক সুন্দর। এই ব্রিজের সৌন্দর্য দেখতে আপনি সেখানে গিয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। তবে সেখানে গিয়ে ভিন্ন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন। যাই হোক বাংলাদেশের ট্রাফিক পুলিশদের মতো কলকাতার ট্রাফিক পুলিশরাও ঘুষ নেয় এটা জানতে পারলাম। তবে তারা সেটাকে ঘুষ বলে মানে না। সেটা হয়তো তাদের পাওনা। 😅😅

হিহিহিহি,, তবে কলকাতার ট্রাফিক সিস্টেম টা অনেক ভালো আপু। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গুন বেশি নিয়ম-কানুন সেখানে মেনে চলতে হয়। আইনের একটু ফাঁকফোকর সব জায়গাতেই থাকে এটা কোন ব্যাপার না 😉

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59575.00
ETH 2607.14
USDT 1.00
SBD 2.43