শিকার ও শিকারির গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

বন্ধুরা ,

সবাই তোমরা কেমন আছো ? আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে আমিও অনেক অনেক ভালো আছি।

আজকের নতুন একটি ব্লগে প্রথমেই তোমাদেরকে স্বাগতম জানাই। আজকের ব্লগে তোমাদের সাথে ফটোগ্রাফি অথবা আর্ট এই ধরনের কোন পোস্ট শেয়ার করবো না। আজ তোমাদের সামনে ছোট্ট একটি ঘটনা তুলে ধরব শিকার ও শিকারির। এটিকে যদিও আমি শিকার ও শিকারির গল্প বলছি কিন্তু এটি শিকার ও শিকারির বাস্তব একটি ঘটনা যা আমি ২ ঘন্টা অবজার্ভ করে বিষয়গুলো দেখেছিলাম। এখানে "শিকারি" হচ্ছে টিকটিকি এবং "শিকার" হচ্ছে মাকড়সা।


20220508_022131.jpg

20220508_024706.jpg

এটি কয়েক মাস আগের একটি ঘটনা, ঘড়িতে তখন মোটামুটি রাত দুটো বেজে গেছে। আমি তখনও আমার ফোনে বিভিন্ন ভিডিও দেখছিলাম এবং আমি ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেবো এমন একটি সময়। হঠাৎ করে আমার নজরে পড়ে আমার সামনের একটি দেয়াল অর্থাৎ আমি যেখানে শুয়ে রয়েছি সেখান থেকে সামনে যে দেয়ালটি পরে সেই দেয়ালে একটি টিকটিক এর সম্মুখে একটি মাকড়সা। টিকটিকিটি মাকড়সাটিকে শিকার নেবে এরকম একটা সিচুয়েশন। খুবই সামান্য দূরত্বের মধ্যে টিকটিকি এবং মাকড়সা উভয় স্থির অবস্থায় ছিল । শিকার করার আগে শান্ত একটা পরিবেশ যেটাকে বলা হয় সেরকম কিছু একটা হবে।


20220508_031145.jpg

20220508_022150.jpg

মোটামুটি পাঁচ মিনিট এর মধ্যে মাকড়সা এবং টিকটিকি কোনোটিই তাদের জায়গা থেকে নড়লো না। কিছু সময় পর দেখলাম টিকটিকির হালকা মুভমেন্ট । সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম মাকড়সাটিও বাঁচার জন্য কিছুদূর সামনে এগিয়ে গেল। টিকটিকিতেও তার পিছনে পিছনে ছুটতে শুরু করলো। কিছুদূর যাওয়ার পর আবার কিছুটা দূরত্বের ব্যবধানে টিকটিকি এবং মাকড়সা উভয়েই স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে গেল। টিকটিকিটি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল মাকড়সটাকে ধরার জন্য আর মাকড়সাটিও তার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিল পালানোর জন্য। এখানে মাকড়সার প্রাণে বাঁচার তাগিদ অন্যদিকে টিকটিকিটি নিজের ক্ষুধা নিবারনের জন্য মাকড়সাটির পিছনে ছুটে চলেছিল। এখানে টিকটিকিরও বেঁচে থাকার ব্যাপার আসছে কারণ সে যদি খাবার না খেতে পায় তাহলে সেও মরে যাবে। তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গায় সঠিক ছিল। তাদের এই ছুটে চলা অনেকটা সময় ধরে রুমের চার দেয়ালের মধ্যে চলতে থাকে । তাদের এই অবস্থা দেখে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল মাকড়সাটাকে আমি প্রাণে বাঁচিয়ে দি টিকটিকিকে তাড়িয়ে দিয়ে। তারপর ভাবলাম প্রকৃতির নিয়ম যেভাবে হচ্ছে হতে দি দেখি কি কি হয়!


20220508_025821.jpg

20220508_025909.jpg

অতঃপর অনেকটা সময় অতিক্রম করার পর খেয়াল করলাম রুমের মধ্যে ভেন্টিলেশনের জন্য যে জায়গা রয়েছে সেখানে মাকড়সাটি ঢুকে গেছে প্রাণ বাঁচানোর জন্য। তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার দেখলাম টিকটিকিও সেই ভেন্টিলেশনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে মাকড়সাটি কে ধরার জন্য । তখন আমি মনে মনে ভাবছিলাম হয়তো এবার মাকড়সাটি টিকটিকির খপ্পরে পড়ে গেছে। হঠাৎ করে খারাপ লাগছিল এই ভেবে আমার কাছে সুযোগ ছিল মাকড়শাটিকে বাঁচানোর । দুই মিনিটের মধ্যে দেখি মাকড়সাটি ওই ভেন্টিলেশনের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসেছে। তখন আমার মনের ভিতর অনেকটা স্বস্তি পেলাম। সেই দিন রাতে, সেই সময়ের জন্য হয়তো প্রাণে বেঁচে গেছিল সেই মাকড়সাটি । এইসব দেখতে দেখতে অনেকটা সময় চলে গেছিল, প্রচন্ড ঘুমও চলে এসেছিল চোখে। তারপর আমি মশারি টানিয়ে লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি। এটি ছিল আমার শিকার ও শিকারির গল্প যা আসলে আমার দেখা একটি ঘটনা ।


20220508_031127.jpg

20220508_030137.jpg

আজকে শেয়ার করা শিকার ও শিকারির গল্প এখানেই শেষ করছি। সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

🕷️🕷️ধন্যবাদ সবাইকে🦎🦎

Sort:  
 2 years ago 

টিকটিকি ও মাকড়সা কে দেওয়ালে সবসময় দেখতে পেয়ে খুব চমৎকার একটি গল্প লিখে ফেলেছেন। আসলে আমি কিন্তু গল্প না লেখলেও টিকটিকি অথবা মাকড়সা দেখলে সেগুলোর ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি করে ফেলি। যাইহোক অনেক চমৎকার ছিল আপনার গল্পটি।

 2 years ago 

অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। আমি এটা নিয়ে গল্প লিখব তা ভাবিনি, এমনি জাস্ট ফটোগ্রাফি করে রেখেছিলাম পরে ভাবলাম সেই ঘটনাটা গল্পের মাধ্যমে সবার কাছে তুলে ধরি। সেই ভাবে শেয়ার করলাম আর কি।

 2 years ago 

অনেক ভালো ছিল ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

দারুণ তো। শেষ মেষ মাকড়সা বেচারা বেঁচে গেলো। চালাক মাকড়সা ছিলো সে। তাই বেঁচে আসতে পেরেছিলো। নাইলে ধরা খেতো টিকটিকির কাছে। যাক আপনার ঘরের দেওয়াল এ রঙ এর কম্বিনেশন টা জোশ ছিলো। আমার চোখ টিকটিকি মাকড়সার আগে সেখানে গিয়েছিলো।

 2 years ago 

মাকড়সাটা প্রাণে বেঁচে গেল দেখে অনেকটা ভালো লেগেছিল আমার সেই সময়। বেঁচে থাকার জন্য চালাক হওয়াটা জরুরী, না হলে তো শিকারির শিকারে পরিণত হয়ে যেতে হবে।

 2 years ago 

মাঝে মধ্যে এমন করে অনেক প্রানিই শিকার করে। অনেক সময় এদের খেলা দেখতে ভালো লাগে আবার কষ্টও হয়। ধন্যবাদ এত সুন্দর পোষ্ট শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

অনেক আগে এই ব্যাপারগুলো খেলার ছলে দেখতাম কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে এগুলো দেখলে অনেকটা কষ্ট লাগে। প্রকৃতির নিয়ম এইসব তো মেনে নিতেই হবে।

 2 years ago 

আপনার শিকার ও শিকারির গল্পটি পড়ে তো ভালই লাগলো। আর যেহেতু প্রাকৃতিক নিয়ম এটাই সেটা তো কিছু করার নাই একজন আরেকজনকে খেয়ে বেঁচে থাকবে তারা। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে এই শিকার ও শিকারির গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

হ্যাঁ প্রকৃতির নিয়ম প্রাণীর লাইফ প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। এইজন্য সব ক্ষেত্রে শিকার ও শিকারির গল্প চলতে থাকে। আপনার সুস্পষ্ট মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ছোটবেলায় টিকটিকি ও মাকড়সার শিকার ও শিকারি হওয়ার ব্যাপারটি খুব উপভোগ করতাম। আর তখন ব্যাপারটি খুব মজাও লাগতো। তবে এখন এই দৃশ্যগুলো দেখলে ভীষণ খারাপ লাগে। এক প্রাণী আরেক প্রাণীকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলে। এরকম দৃশ্য এখন আর আমার কাছে ভালো লাগে না। তবে আপনি শিকার ও শিকারির গল্পটি বেশ চমৎকারভাবে লিখেছেন। পড়ে খুবই ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ছোটবেলায় আমিও এই বিষয়গুলো ইনজয় করতাম কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে এসব দেখলে খারাপ লাগে। যদিও সব কিছু প্রকৃতির নিয়ম, সবকিছু আপনা আপনি হতেই থাকে। এক্ষেত্রে কারোর কিছুই করার নেই।

 2 years ago 

আপনার দেয়াল তো দেখছি আমাদের ঘরের দেওয়ালের মতো। আমাদের ঘরে প্রচুর টিকটিকি রয়েছে যারা এরকম তাদের শিকাদেরকে খুঁজে খুঁজে খেয়ে থাকে। কিন্তু আপনার কথাগুলো যখন পড়ছিলাম তখন মাকড়সার জন্য খুবই কষ্ট হচ্ছিল। যদিও আপনার কাছে সুযোগ ছিল মাকড়সা কে বাঁচানোর। আসলে ঠিক বলেছেন এটাই প্রকৃতির নিয়ম তাছাড়া দুই জায়গা থেকে দুজনের উদ্দেশ্য সঠিক। কিন্তু এত রাত করে ঘুমানো টাও ঠিক নয়।

 2 years ago 

মাকড়সারটির জন্য আমারও কষ্ট হচ্ছিল, পরে যখন দেখলাম সেটি বেঁচে রয়েছে তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমি ঘুমাতে গেছিলাম। প্রকৃতির নিয়মে সবাই সবার জায়গায় সঠিক। সবাই নিজের বেঁচে থাকার জন্য সবকিছু করে।

 2 years ago (edited)

ঐভাই তোমার গল্পটা বেশ ভালো। পৃথিবীতে এমন শিকার আর শিকারী খেলা বারে বারে চলতেই থাকে। আসলে উদ্ভিদ, প্রানী সকলে আমরা সবাই এক একটি খাদ্য শৃঙ্খলের মধ্যে পরি। তাই মাকড়শাকে খায় টিকটিকি আর টিকটিকিকে খায় বেড়াল। এভাবেই চলে খাদ্য শৃঙ্খল।

 2 years ago 

খাদ্য শৃঙ্খলের ব্যাপারটা ঠিক, প্রকৃতির নিয়মে খাদ্যশৃঙ্খল সব সময় চলমান। খাদ্য শৃঙ্খলে বেঁচে থাকার জন্য একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল।

 2 years ago 

বাহ! বেশ দারুন একটি ব্যাপার ছিল। আপনার শিকার ও শিকারির গল্পটি পড়ে তো ভালই লাগলো। আর যেহেতু প্রাকৃতিক নিয়ম এটাই সেটা তো কিছু করার নাই একজন আরেকজনকে খেয়ে বেঁচে থাকবে তারা। আপনি শিকার ও শিকারির গল্পটি বেশ চমৎকারভাবে লিখেছেন। পড়ে খুবই ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

একটি আসলে গল্প না আমার সামনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। প্রকৃতির নিয়মে বেঁচে থাকার জন্যই সবার লড়াই চলে। সুন্দর করে গুছিয়ে কথাগুলো বলার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68565.31
ETH 2455.74
USDT 1.00
SBD 2.62