জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ : পলান টুকটুক (লুকোচুরি)
বন্ধুরা,
তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমি মোটামুটি ভালোই আছি তবে আমার একটু ঠান্ডা লেগে গেছে । |
---|
আজকের ব্লগে তোমাদের সাথে শৈশবের একটি স্মৃতিচারণ শেয়ার করব। আজকের টপিক্স হলো পলান টুকটুক। পলান টুকটুককে অনেকে আবার লুকোচুরিও বলে থাকে। তবে গ্রামের ভাষায় পলান টুকটুকই বলা হয়। এগুলো হচ্ছে এক ধরনের খেলা। গ্রামে থাকতে শৈশবে সবাই মিলে আমরা খেলতাম এই খেলা। আমাদের গ্রামের বাড়ির আশেপাশে যত ছেলে মেয়েরা থাকতো সবাই মিলে একসাথে এই খেলা খেলতাম।
এই খেলায় একজনকে চোর করা হতো যে সবাইকে খুঁজে খুঁজে বের করবে, অন্যরা কোথাও গিয়ে লুকিয়ে পড়ার পর। গ্রামে সন্ধ্যার পরে কারেন্ট যাওয়ার সমস্যা অনেক দেখা দিত আগে। সেজন্য যখনই কারেন্ট চলে যেত আমরা এই খেলায় মেতে উঠতাম সবাই মিলে। এই খেলা খেলতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে পড়তে হতো। গ্রামের বাড়িতে সব বাড়ির দরজা সব সময় খোলা থাকতো তাই যে যার মতো করে যেকোনো বাড়িতে চলে যেতাম। সেখানে গিয়ে কেউ খাটের তলায় , চালের ড্রামের পিছনে, বড় ট্রাঙ্কের পিছনে লুকিয়ে পড়তাম। এছাড়াও কোথাও খড়ের গাদা দেখলে তার মধ্যে লুকিয়ে পড়তাম। খেলার সময় কেউ কেউ আবার গাছের উপরে গিয়েও লুকিয়ে পড়তো। এরকম করে পলান টুকটুক (লুকোচুরি) খেলতাম।
এই খেলার সময় একজনকে চোর করা হতো। যে চোর হবে সবাইকে তার খুঁজে বের করতে হবে এমন ব্যাপার ছিল। তবে এই খেলা খেলার সময় সবাই এমন ভাবে লুকিয়ে পড়তো তখন যে চোর থাকতো তার সবাইকে খুঁজে পেতে অনেক সমস্যা হত । সেজন্য যে চোর থাকতো মাঝে মাঝে যে লুকিয়ে থাকা সবাইকে আওয়াজ দিতে বলতো " টুকক" নামক সাউন্ড করে। এই খেলার সময় যে চোর থাকতো, সে প্রথমে যাকে খুঁজে পেত পরের বার খেলার সময় তাকে চোর হতে হতো। তবে চোরকে লুকিয়ে থাকা যেকোনো একজনও যদি লুকিয়ে এসে ছুঁয়ে দিয়ে "ধাপ্পা" নামক সাউন্ড করে দিতে পারতো তাহলে আবার পুনরায় এই চোরকেই আরো একবার চোর হতে হত । এই ভাবেই খেলাগুলো চলতো।
এই গুলো বলতে গিয়ে জটিল হয়ে যাচ্ছে তবে যারা এই খেলা গুলো খেলেছে তারাই কথাগুলো বুঝতে পারবে। এই পলান টুকটুক খেলতে সত্যি অনেক মজা হতো। কিছুদিন আগে যখন বাংলাদেশে ঘুরতে গেছিলাম সেইখানে গিয়ে বাচ্চাদের এই পলান টুকটুক খেলতে দেখছিলাম। তারপর ভেবেছিলাম তোমাদের সাথে এই ব্যাপারটা শেয়ার করব। তবে তখন আর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাই আজকে তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম। এই খেলাটা আমরা প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় খেলতাম। লুকানোর জন্য ওই সময়টাই বেস্ট থাকতো। তবে মাঝে মাঝে দিনের বেলাও খেলতাম আমরা এই খেলা।
সন্ধ্যার সময় খড়ের গাদার মধ্যে লুকিয়ে পড়াটা বেশ বিপজ্জনক ছিল। সাপের ভয় থাকতো আর কি! যদিও তখন এই ব্যাপার গুলো বুঝতাম না, এখন যেটা বুঝতে পারি। বাড়ির লোকজনও অনেক রাগারাগি করতো আমরা যেসব জায়গায় গিয়ে লুকাতাম সেগুলো দেখে। গ্রামে সাপের ভয় অনেক থাকে সেই জন্যই মূলত বাড়ির লোকজন ভয় পেত তবে আমরা কোন কিছু পাত্তা না দিয়ে আমাদের মত খেলে যেতাম। শৈশবের এই মধুর স্মৃতি গুলো মাঝে মাঝে যখন মনে করি, মনের মধ্যে একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করে। শৈশব টা কতই না সুন্দর ছিল! সব সময় হাসি খুশি থাকতাম, কোন ভয়ভীতি ছিল না। শৈশব আমরা অনেক আনন্দ করে কাটিয়েছি ,উজ্জ্বল এক শৈশব ছিল আমাদের ।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া আমাদের শৈশবের স্মৃতি গুলো অনেক মধুর। আসলে আপনারা যাকে পালান টুকটুক খেলা বলেছেন আমরা তাকে কানামাছি ভোঁ খেলা বলতাম।আসলে জোসনা রাতে কারেন্ট চলে গেলে এই খেলা আমরা অনেক খেলতাম। আপনার পোস্ট পড়ে কিছু সময়ের জন্য শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া শৈশবকে মনে করে দেওয়ার জন্য।
আপু কানামাছি ভোঁ আলাদা খেলা ছিল, এটা আমরাও খেলতাম। তবে যে পালান টুকটুক খেলার কথা আমি বলেছি, সেই খেলাকে লুকোচুরি খেলাও বলা হয়।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পর খেলার মজাই ছিল আলাদা। কারেন্ট চলে যাওয়ার পর সন্ধ্যার পর পড়ালেখা বাদ, সমবয়সী সবাই দৌড়াদৌড়ি লুকোচুরি খেলা শুরু করতাম। আমাদের বাংলাদেশে এইখানে এখন অনেক পরিচিত৷ আসলে ছোটবেলায় দৌড়ানোর সময় ভয় পেতাম না। খেলা শেষ হওয়ার পর যখন ভাবতাম আমি এখান দিয়ে এসেছি যদি সাপ থাকতো তখন একটু ভয় লাগতো।🤣
হ্যাঁ আপু, এই লুকোচুরি খেলার মজা সন্ধ্যার সময়ই ছিল কারণ তখন লুকিয়ে পড়লে খুঁজে বের করা মুশকিল কাজ হতো।
আমাদের শৈশবের স্মৃতিগুলো অনেক মধুর হয়ে থাকে। যা আজকে আপনি খুবই ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন৷ ছোটবেলায় এ খেলা অনেক বেশি পরিমাণে খেলা হতো৷ তবে এখন আর এই খেলা তেমন একটা খেলা হয় না৷ তবে যখন অন্য কোন ছোট বাচ্চাদেরকে এই খেলা খেলতে দেখি তখন শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়৷ রাতের বেলা যখন কারেন্ট চলে যেত তখন আমরা সকলে বাইরে এসে এই খেলা খেলতাম৷ খুবই ভালো লাগতো যখন সকলে মিলে একসাথে এই খেলাটি খেলতাম৷
এখন আর এই খেলার বয়স নেই ভাই আমাদের। তবে এই খেলা নিয়ে শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে করলে আমাদের মধ্যে একটা অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে।
জীবনে যে কয় বার এই খেলা খেলেছি তা বলে বোঝাতে পারবো না। কতনা মধুর স্মৃতি ছিল আমাদের। আজ সবাই যে যার মত বিয়ে হয়ে আর কর্মস্থানে আলাদা আলাদা হয়ে চলে গেছে অনেক দূরে। চাইলেও আর একত্রিত হতে পারব না আগের মত। নেই আগের মত আর সেই স্বাধীন জীবন সবাই নিজের সংসারে ব্যস্ত,তবে স্মৃতিগুলো রয়েছে মনের মধ্যে ঠিক এমন খেলার মুহূর্তের।
আমাদের সবারই এই খেলার মধুর স্মৃতি রয়েছে ভাই। যাই হোক, সময়ের সাথে সাথে সবাই সংসারে ব্যস্ত হয়ে যাবে এটাই বাস্তবতা ভাই।
এই লুকোচুরি খেলা কে যে পলান টুকটুক বলে আমি এই প্রথম শুনলাম। খুবই মজার একটি নাম ।তবে এই খেলাটি ছোটবেলায় আমরাও অনেক খেলেছি। গ্রামে যখন দাদু নানু বাড়িতে বেড়াতে যেতাম তখন সন্ধ্যার পরেই সাধারণত এই খেলাটি খেলতাম ।আসলে সন্ধ্যার পরে এই লুকোচুরি খেলার মজা অন্যরকম। আপনার লেখাটি পড়ে যেন সেই শৈশবে ফিরে গেলাম ।বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।
এটা আমাদের এলাকার স্থানীয় নাম আপু। এই জন্য, এই নাম হয়তো সবাই জানে না।
আমার শেয়ার করা লেখাটি পড়ে আপনি আপনার শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে গেলেন জেনে ভালো লাগলো।