জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ : ঠাকুরদার প্রতি ভালোবাসা
নমস্কার,
তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও বেশ ভালো আছি। |
---|
বেশ কিছুদিন পর আজকে তোমাদের সাথে একটি স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট শেয়ার করব। আমাদের জীবনে অনেক স্মৃতি থাকে। এই স্মৃতিগুলো যখন মনে করা হয় নিজেদের মধ্যে একটা অন্যরকম ফিলিংস কাজ করে। অনেকটা আফসোস ফিলিংস কাজ করে। কারন আমরা চাইলেও সেই অতীতগুলো আর ফিরে পাবো না। ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত প্রতিটা পদক্ষেপেই এই স্মৃতিগুলো জমতে থাকে। আজকে তোমাদের সাথে যে স্মৃতিটা আমি শেয়ার করবো, সেটা আমার বয়স যখন সাত থেকে আট বছর হবে সেই সময়কার।
ছোটবেলা থেকেই আমি আমার ঠাকুরদাকে অনেক ভালোবাসি। সবাই সবার বাবা মাকে প্রথম বেশি ভালোবাসে। তবে আমার ক্ষেত্রে বিষয়টা সেরকম না। আমার ক্ষেত্রে ভালবাসার অর্ডারে সব থেকে প্রথমে আমার ঠাকুরদা, তারপরে বাবা-মা। কেন জানিনা ছোটবেলা থেকেই এই ব্যাপারটা আমার ভিতরে জন্মে গেছিল। আর আমার ঠাকুরদাও আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো, সেজন্যই হয়তো তার প্রতি আমার এই ভালোবাসাটা বেশি ছিল। যাইহোক, আমি যখন ক্লাস ফোরে উঠি তখন আমি গ্রাম থেকে শহরে শিফট হই বাবার চাকরির সুবাদে। ক্লাস থ্রি পর্যন্তই আমি গ্রামে পড়াশোনা করেছি। তারপর যখন শহরে যাই, গ্রামের প্রতি আমার একটা আলাদাই টান ছিল। সেজন্য যখন শহরে এসেছিলাম প্রতিদিনই প্রায় কান্না করতাম গ্রামে যাওয়ার জন্য।
শহরে আসার পর যখন স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় ক্লাস ফোরে তখন আমার স্কুলে যাওয়ার কোন মনই হতো না। সব সময় কান্না করতাম আর এই নিয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেক চিন্তিত ছিল। গ্রাম থেকে যখন প্রথম শহরে আসি আমার ঠাকুরদাও আমাদের সাথে এসেছিল এই শহরে, আমাদের সবকিছু একটু গুছিয়ে দেওয়ার জন্য। ঠাকুরদা যখন জানতে পারে আমি স্কুলে গিয়ে কান্নাকাটি করি, তখন ঠাকুরদা সিদ্ধান্ত নেয় আমি যেই সময়টাকে স্কুলে যাব ঠাকুরদাও আমার সাথে সেই সময়টাতে স্কুলে গিয়ে একটা জায়গায় বসে থাকবে যেন আমি ঠিকঠাক করে ক্লাস করতে পারি। ক্লাস ফোরে থাকা অবস্থায় যখন ক্লাসগুলো চলতো, আমি টিচারকে না বলেই হঠাৎ করে ক্লাসের বাইরে চলে আসতাম, ঠাকুরদা ক্লাসের বাইরে বসে আছে কিনা সেটা দেখার জন্য।
যদি কখনো দেখতাম ঠাকুরদা বাইরে বসে নেই। আমি সাথে সাথেই কান্না করে দিতাম এবং সেই কান্না থামাতে শিক্ষক শিক্ষিকারা এগিয়ে আসতো কিন্তু আমার কান্না থামতো না। কিছু সময় ঠাকুরদাকে না দেখতে পেলে আমার মনে হতো কোন কিছুই নেই আমার, সব কিছু হারিয়ে গেছে। এরকম ফিলিংস ছোটবেলায় আমার ছিল। আর যা ছিল সেটাই যথাযথভাবে তোমাদের সাথে শেয়ার করছি। এভাবে প্রায় ছয় থেকে সাত মাস সময় লেগে যায় আমার স্কুলের ক্লাসে বসতে। শহরে আসার পরেও গ্রামের টান সবসময় ছিল। আর ঠাকুরদা যেহেতু গ্রামে থাকতো সেজন্য মনটা আরো বেশি সেখানে চলে যেত। সময়ের সাথে সাথে ঠাকুরদাকে আমরা শহরে নিয়ে আসি। ঠাকুরদা যখন আমাদের সাথে থাকতো তখন সবসময় আমার ভালো লাগতো। ঠাকুরদার প্রতি সব সময় আমার একটা আলাদা ভালোবাসা ছিল।
যদি কখনো আমি অসুস্থ হতাম তখন ঠাকুরদার যে ভালোবাসা, সেটা কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। সব সময় কোলের মধ্যে নিয়ে রেখে দিত। সে তার নিজের কথা কখনোই চিন্তা করতো না, সব সময় শুধু আমাদের কথাই চিন্তা করত। তার জীবনের পুরোটাই আমাদের জন্য ডেডিকেটেড করা ছিল। সে না খেয়েও সব সময় আমাদের খাওয়াতো। আমরা কিসে ভালো থাকবো, সবসময় সে সেটাই করত। সবকিছু মিলে ঠাকুরদা আমাদের যেমন ভালোবাসতো, একইভাবে ঠাকুরদাকেও আমরা অনেক ভালবাসতাম। অনেকদিন পর সেই কথাগুলো আজ মনে পড়ে গেল। ঠাকুরদাকে অনেক মিস করি এখন। ২০১৯ সালে আমার ঠাকুরদা মারা গেছে। আজও যখন ঠাকুরদার সেই কথাগুলো মনে পড়ে, চোখে জল চলে আসে। যাইহোক, এতটুকুই শেয়ার করার ছিল আজ।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
লোকেশন | বারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল। |
আসলে ঠাকুর দাদাও দিদারা এমনি হয় তবে কেউ বা একটু অতিরিক্ত ভক্ত হয় যেমন আপনি ও আপনার ঠাকুর দাদা।আসলে এই সম্পর্ক গুলো তারাই বুঝবে যাদের ঠাকুর দাদা আছেন ।ঠাকুর দাদা আসলে মা,বাবার থেকেও অনেক বেশি ভালোবেসে থাকেন। আমাদের ভালোবাসায় প্রমানিত হলো আবারও।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ দিদি, ঠিক বলেছেন। আমার ঠাকুরদাও সেরকমই ছিলেন । আমাকে তিনি আমার বাবা-মার থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসতেন ।
আসলে ভালোবাসা এমন এক মায়া যা কখনো ভুলা যায় না। আপনার ঠাকুরদা আপনাকে অনেক বেশি আদর স্নেহ করতো। এজন্য মনে হয় আপনি তার জন্য এতো পাগল ছিলেন। আসলে আমাদের জীবনে এমন অনেক স্মৃতি রয়ছে যা মনে পড়লে এমনিতেই চোখের কোনায় জল চলে আসে। আপনার ঠাকুরদার জন্য দোয়া রইলো সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে ভালো রাখে।
আসলেই ভাই এমন স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেলে চোখের কোনায় জল চলে আসে।
আপনি আপনার ঠাকুরদাকে অনেক ভালোবাসেন তা আপনার পোস্ট থেকে বুঝতে পারলাম। আসলে এমন কোন মানুষ নেই যারা তাদের ঠাকুরদাকে ভালবাসেনি৷ তারা যেভাবে আমাদেরকে আগলে রেখেছে এবং ভালোবাসা দিয়ে আমাদেরকে বড় করেছেন, তাদের প্রতি ভালোবাসাটা যেন একটু বেশি বেড়ে যায়৷ এই ভালোবাসার জন্য আপনি আপনার ঠাকুরদার জন্য পাগল ছিলেন যা বুঝতে পারলাম৷ অনেক ভালো লাগলো আপনার কাছ থেকে এই সুন্দর পোস্টটি পড়ে৷ অসংখ্য ধন্যবাদ৷
আমিও তাই মনে করি । যাইহোক, ধন্যবাদ ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
খুবই ভালো লাগলো ভাই আপনার এই স্মৃতিচারণের পোস্টটি করে। শৈশবের দারুন একটি মুহূর্তের স্মৃতি আপনি আমাদের মাঝে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনার এই শৈশবের স্মৃতির কথাগুলো পড়তে পড়তে আবার শৈশব জীবনের কথাগুলো দারুন ভাবে মনে পড়ে গেল। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাই, এমনটা অন্য কারোর শৈশবের স্মৃতি পড়তে গেলে আমার সাথেও হয়।
আমাদের জীবনে এমন কিছু মানুষ থাকে, যাদের ভালোবাসার কথা এবং তাদের সাথে কাটানো মুহূর্তের কথা আমরা ভুলতে পারিনা। আপনার ঠাকুরদাকে আপনি অনেক বেশি ভালোবাসতেন এবং আপনার ঠাকুরদা ও আপনাকে খুবই ভালোবাসত শুনে সত্যি খুব ভালো লাগলো। বুঝতে পারতেছি ওনাকে নিয়ে আপনার অনেক স্মৃতি জমে রয়েছে। তিনি আপনাদের মাঝে আপনি এটা শুনে খারাপ লাগলো। তবে আপনার ঠাকুরদার জন্য দোয়া করি অনেক বেশি।
সবার লাইফেই এমন মানুষ থাকে আপু, যাদের কথা আমরা চাইলেও কখনো ভুলে যেতে পারি না । এই মানুষগুলো আসলেই স্পেশাল হয়ে থাকে। আমার ক্ষেত্রে যেমন আমার ঠাকুরদা সেরকম একজন মানুষ ছিলেন। যাইহোক, ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য।
পোস্ট পড়ে যতটুকু বুঝতে পারলাম তাতে আপনি আপনার ঠাকুরদাকে প্রচন্ড ভালবাসতেন। ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে যেমন ভালোবাসে আপনি তো ছোট সময়ে আপনার ঠাকুরদাকে সেরকম ভালবাসতেন। দোয়া রইল ওপারে সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে ভালো রাখেন।
হ্যাঁ ভাই, আমি আমার ঠাকুরদাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসতাম। আমার ঠাকুরদার জন্য দোয়া করেছেন, সেজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বুঝতেই পারতেছি আপনি আপনার ঠাকুরদাকে সবথেকে বেশি ভালোবাসতেন। ঠাকুরদার প্রতি আপনার এরকম ভালোবাসা এবং টান ছিল জেনেই আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আপনি তো দেখছি আপনার ঠাকুরদাকে ছাড়া একেবারেই চলতেন না। স্কুলে আপনার ঠাকুরদা বসে থাকলে আপনি ভালোভাবে ক্লাস করতেন। আপনার ঠাকুরদার মৃত্যুর কথা শুনেই খারাপ লেগেছে অনেক বেশি।
একদম সত্যি কথা ভাই, আমি আমার ঠাকুরদাকে ছাড়া একেবারেই চলতে পারতাম না।
ভাইয়া আপনার ছোট বেলায় আপনার ঠাকুরদাকে নিয়ে খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করলেন। কেন জানিনা লেখাগুলো পরে আমার মন কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম।আপনি আপনার মা বাবা থেকে আপনার ঠাকুরদাকে বেশী ভালো বাসতেন।আসলে সবার ভালোবাসা এক সকম নয়। আপনি হয়তো বুজ হবার পর থেকে আপনার ঠাকুরদার সংস্পর্শে বেশী ছিলেন। তার স্নেহ ভালোবাসা আপনাকে এমনভাবে আকরে ধরেছে যে, আপনি তাকে ছাড়া থাকতেও পারেননি। আর তাই গ্রাম থেকে শহরে এসেও আপনার মন পড়ে ছিল তার প্রতি। এমনকি আপনার ক্লাসের পাশেও ঠাকুরদাকে না পেলে আপনি কেদে ফেলতেন। আসলে অনেকের হৃদয়ে এমনও অনেক মানুষ থাকেযাদের প্রতি ভালোবাসা ও মায়াটা কখনও ভুলা যায় না। ধন্যবাদ ভাইয়া বেশ সুন্দর করে একটি জেনারেল রাইটিং শেয়ার করলেন যার প্রতিটি কথা পড়ে আমার মনকে মুগ্ধ করেছে।
আমার ঠাকুরদা আমার জন্য তেমনই একজন মানুষ ছিলেন আপু। ধন্যবাদ এত সুন্দর করে কথাগুলো বলার জন্য।
আপনার ছোটবেলা অনেক মধুরছিলো আপনার স্মৃতিচারণ আর আমার ছেলের সাথে হুবুহু মিল আপনার ঠাকুর দার মৃত্যুর বছরই আমার ছেলের জন্ম সেও তার নানুমনিকে এভাবে চোখে হারায় অর্ধেক রাত আমার কাছে থাকলে বাকি অর্ধেক নানুর সাথে থাকে যদি চলে যায় সে ভয়ে। তাকে রেখে কোথাও যেতে পারে না সে একমাত্র ছায়াসঙ্গী তার নানুর।
ঠাকুরদা আপনার স্কুল শেষ হওয়া পযন্ত বসে থাকতেন এমনটা একমাত্র গ্র্যান্ডপ্যারেন্টসরাই করেন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকে।
প্রতিটি শিশুর জীবন একজন ঠাকুরদা দরকার আপনার মতো যাতে করে তার শৈশব টা রঙিন প্রচ্ছদে মোড়ানো থাকে আজীবন স্মৃতির পাতায়।
আপু, বাচ্চারা এমনই করে ঠাকুরদা ঠাকুরমার জন্য। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য ।