জেনারেল রাইটিং || নিপা এর কারণে কাঁচা খেজুরের রস আর খাওয়া হলো না!
নমস্কার সবাইকে,
তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও খুব ভালো আছি। আজকের নতুন একটি ব্লগে প্রথমেই সবাইকে স্বাগতম জানাই। |
---|
করোনা আসার পর থেকে কেমন জানি আমরা সবাই অনেক বেশি সচেতন হয়ে গেছি। করোনা আমরা সবাই সামনে থেকে দেখেছি ,সে এক চরম ভয়াবহতা। করোনার ভয় কেমন জানি এখনো মন থেকে পুরোপুরি সরে যায়নি। যাইহোক, আমি বাংলাদেশে যাদের বাড়িতে ঘুরতে এসেছি, সেই বাড়িতে অনেকগুলো খেজুর গাছ রয়েছে। তারা প্রতিবছর খেজুর গাছ না কাটলেও , এই বছর দেখলাম খেজুর গাছ কেটেছে রস পাওয়ার জন্য। বেশিদিন হয়নি তারা এই গাছ কেটেছে । আমি যেদিন বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছি তার ৫ দিন পূর্বে এই গাছ কেটেছে তারা। এই কয়দিনে তারা দুইবার রসও পেয়েছে। ছোটবেলায় গ্রামে থাকতে অনেক কাঁচা খেজুরের রস খেয়েছি । ছোটবেলায় পাট কাঠি নিয়ে গাছে উঠে রসের ঠিলের মধ্যে পাট কাঠি ডুবিয়ে দিয়ে রস চুরি করে খেতাম । অনেক মজা হত এগুলো করে। আজ সকালে খেজুরের রস পাড়া দেখতে গিয়ে সেই কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছিল।
তবে পেড়ে আনা এই রস খাওয়ার কথা ভেবে বারবার মনের ভিতর কেমন জানি একটা ভয় কাজ করছিল নিপা ভাইরাসের কথা ভেবে। তাছাড়া আমি যতদূর শুনেছি নিপা ভাইরাস সম্পর্কে, এই ভাইরাসে মানুষের মৃত্যু হার অনেক বেশি । কোন কোন ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৭৫% পর্যন্ত মৃত্যুহার বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা গেছে। করোনা আসার পূর্বেই এই নিপা ভাইরাস ছিল কিন্তু তখন এতটা ভয় কখনোই কাজ করেনি। তবে কারোনা আসার পর থেকে আর সাহস হলো না কাঁচা রস খাওয়ার। নিপা ভাইরাস বাদুর বাহিত একটি রোগ। এই ভাইরাস আক্রান্ত বাদুর কাঁচা খেজুরের রস খেয়ে অনেক সময় রসের পাত্রের মধ্যে মলমূত্র ত্যাগ করে। সেই রস কাঁচা অবস্থায় মানুষ খেলে সেখান থেকেই এই নিপা ভাইরাস ছড়ায়। প্রত্যেক বছর এই সময়টাতে এই ভাইরাস ছড়ায়। এই বছরে আমি যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলাম তার পূর্বে এই ভাইরাস সম্পর্কে কোন নিউজ শুনিনি । তবে এইখানে আসার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিপা ভাইরাস সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর পাই । বাংলাদেশের কিছু কিছু জেলায় এই নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কিছু লোক মারা গেছে সেটাও জানতে পারি নিউজের মাধ্যমে। তারপর থেকে আরও বেশি সচেতন হয়ে যাই আমি । যাইহোক, কাঁচা রস গাছ থেকে পেড়ে আনার পর প্রচণ্ড লোভ হচ্ছিল আমার তবে নিজেকে কন্ট্রোল করি সেই মুহূর্তে। তখন রস না খেয়ে সাবধান ভাবে এগুলো বাড়ি নিয়ে আসি রস জ্বালিয়ে গুড় করার জন্য।
কাঁচা খেজুরের রস না খেতে পারলেও অনেকটা জ্বালানোর পর একটু রস খেয়েছিলাম আজ । জ্বালানো রস কাঁচা রসের মত অত বেশি টেস্টি হয় না। তবে জ্বালানো রস খেয়ে মোটামুটি ভালো লেগেছিল । নিপা ভাইরাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য রস জ্বালানোর পর খেলে তার ভিতরে কোনো জীবাণু থাকলেও তা শরীরে অ্যাটাক করে না। আমরা বেঁচে থাকার জন্য সব কিছু করি তাই এত বেশি সচেতনতা । গ্রামের মানুষজনের মধ্যে এত বেশি সচেতনতা নেই । তারা কাঁচা খেজুরের রস দিব্যি খেয়ে নিচ্ছে। আমরা যেহেতু শহরবাসী তাই আমরা সব ক্ষেত্রে একটু বেশি ভয় পেয়ে থাকি এবং সচেতন থাকি। অনেক বেশি সচেতন থাকার পরেও সব ক্ষেত্রেই আমি দেখেছি শহরের লোকজন বেশি রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় আর গ্রামের মানুষ অনেক বেশি সুস্থ থাকে।
গ্রামের মানুষকে নিপা ভাইরাসের কথা বলে তারা হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে। তারা নিজেরা কাঁচা খেজুরের রস খেয়ে নিচ্ছে কোন সমস্যা ছাড়া এবং আমাকেও কয়েকজন খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তবে আমি কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার সাহস করতে পারিনি। হয়তো আর কোনদিনও কাঁচা খেজুরের রস খাওয়ার সাহস করতে পারবো না এসব ভাইরাসের কথা ভেবে। এই ভাইরাসের শেষ কোথায়, কবে এবং কিভাবে আমার জানা নেই , তবে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ চেষ্টা আমাদের এই বেঁচে থাকার জন্যই।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী জেনারেল রাইটিং
ডিভাইস Samsung Galaxy M31s
ফটোগ্রাফি @ronggin
লোকেশন নড়াইল, বাংলাদেশ।
বন্ধুরা, আজকের ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ সবাইকে
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
ডিভাইস | Samsung Galaxy M31s |
ফটোগ্রাফি | @ronggin |
লোকেশন | নড়াইল, বাংলাদেশ। |
ঠিক বলেছেন আপনি গ্রামের লোকেরা নিপা ভাইরাসকে ভয় পায় না তারা দিব্যি ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। গত বছর আমি খেয়েছি তবে আমার ভাই ও এক দেওর জাল দিয়ে ঢাকতে বলেছিলো এবং খেজুর রস খাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে ভোরে এসে রস নামিয়ে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এনেছিল।আমার তেমন ভালো লাগেনি একটা ঝাঝালো স্বাদ খেজুরের রস গুলোতে।আপনার খেতে মন চাচ্ছে কিন্তুু খেতে পারেন নি।আসলে বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ থাকার জন্য আমরা কতো কিছুই না করি।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলোর আবার উপর ওয়ালার উপর বিশ্বাস বেশী। আমাদের মত হুজুগে নাচে না। তাই যে যত কথাই বলুক না কেন তাতে করে তাদের কাজ তারা করেই যায়। এই যে দেখেন না এত বলার পরও তারা সেই খেজুরের রস খেয়েই যাচ্ছে। কে শোনে কার কথা। আসলে নিপা ভাইরাসের কথা আমি আরও শুনেছি। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আসলে ভাইয়া গ্রামের মানুষ অনেক পরিশ্রম করে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক। যাই হোক ভাইয়া আপনার পোস্ট করে বেশ ভালো লাগলো।
আসলে এখন তো এমন রস পারা কাছ থেকে দেখিনা অনেক দিন।আপনার ফটোগ্রাফিতে দেখতে পেয়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে। কাঁচা রস খেতে পারেন নাই জেনে একটু খারাপ লাগলো যাইহোক তারপর জ্বালানোর পর তো খেয়েছেন। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমি ভাবছি আপনার নিপা বোনের জন্য খেজুর খাওয়া হলো না 😂। আসলে নিপা ভাইরাসে প্রতিবছরই এই খেজুরের রস খেয়ে মৃত্যুবরণ করে! বিশেষ করে এখন যে সময়টা যাচ্ছে দাদা। তবে না খেয়ে ভালোই করেছেন