◾️ ১২ জুলাই
▪️ মঙ্গলবার
আসসালামু আলাইকুম/ আদাব
সোর্স
সকাল দশটা। ছুটির দিন, সোহা চা পানের পর আরও কিছুক্ষণ ঘুমুবে এই ভেবে বালিশে মাথা রাখতেই মোবাইল ফোন বেজে উঠল।
হ্যালো, সোহা বলছ?
হ্যা, কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না ।
বারো বছর পর গলার স্বর চিনতে না পারাটাই স্বাভাবিক । তোমাকে আমি একটি ক্লো দিচ্ছি, রোকেয়া হল। পরবর্তী কয়েক সেকেন্ডে রোকেয়া হলের সমস্ত চিত্র সোহার মনের মুকুরে দৃশ্যমান হলো, আর তখনই বুঝতে পারলো, প্রায় চিৎকার করে বলল শ্রেয়া... !
সহজেই চেনার জন্য ধন্যবাদ ।
আমি দুঃখিত শ্রেয়া, প্রথমেই চেনা উচিৎ ছিল ।
আমি এখনও দুঃখ পাইনি, কিন্তু তুমি যদি দরজা না খোল তবে সত্যি সত্যিই দুঃখ পাব ।
বিস্মিত সোহা দ্রুত দরজা খোলে শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘরে নিয়ে আসে। কুশল বিনিময়, একে অপরের বিভিন্ন বিষয় জানা, অতীত স্মৃতি রোমন্থন, এভাবেই কেটে যায় কিছু সময়। সোহার ঘরের কাজে সহায়তাকারী সবুজের মার দিয়ে যাওয়া কফির মগটি সোহা এগিয়ে দিল।
শ্রেয়া ও সোহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের রুমমেট ও ক্লাসমেট ছিল, সেই সুবাদে তাদের সম্পর্ক ছিল নিবিড়। মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার পর পরই সোহা সংসার জীবনে প্রবেশ করে। রেজাল্টের পূর্বেই একটি কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে বেশ ভালভাবেই দিন কাটাচ্ছে। দুই ছেলের মা সোহা দিনে দিনে কলেজের অনেক ছেলেমেয়ের মা হয়ে উঠেছে। অপর দিকে শ্রেয়া মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালীন পরিবারের সবার অমতে একক সিদ্ধান্তে এক ব্যবসায়ী রাজীবের সাথে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সোহা এক ধরনের অস্বস্তি নিয়ে আরও কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে ওদের বিয়েতে উপস্থিত ছিল। বিয়ের কিছুদিন পরেই সে বুঝতে পারে যে সে প্রতারিত। অসৎ রাজীব সুকৌশলে চরিত্রের কদর্য দিক মুখোশের আড়ালে রেখেছিল। ছয় মাস পরই শ্রেয়া একা একটি বাসায় থাকা শুরু করে। তার মা এ খবর পেয়ে তার মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যায়। ঢাকার মেয়ে শ্রেয়া আমেরিকা প্রবাসী হলো। সেখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার পর সে এখন ঐ বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রফেসর।
রাজীবের সাথে সেপারেশনের পর তার পরিচিত জনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমেও সোহা শ্রেয়ার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিল না।
সপ্তাহখানিক হলো দেশে এসেছে। তিন মাস এখানে থেকে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী নিয়ে গবেষণা করবে।
দুই বন্ধুর হাসির কল্লোল যখন ঊর্ধ্বমূখী, তখন আবার ডোর বেজে উঠল। সবুজের মা এসে জানাল যে, একটি ছেলে সোহার সাথে দেখা করতে চায়। সে ছেলেটিকে ভিতরে আসতে বলে।
আসসালামু আলাইকুম, ম্যাম।
ওয়া আলাইকুম আস সালাম, কেমন আছো নীরু ?
ভাল ম্যাম, আপনি ভাল আছেন?
হ্যাঁ, বসো। সোহা শ্রেয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
নীরুর কথায় বার বার কলেজে সে যে বিভিন্নভাবে সোহার সহায়তা পেয়েছে সেটি প্রকাশ করতে চাচ্ছে। দরিদ্র কিন্তু মেধাবি প্রাক্তন এই শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছে। তার পরনে একটি আকাশি টি শার্ট ও জিন্স যেটি প্রায় এক বছর পূর্বে রোড এক্সিডেন্টে নিহত শ্রেয়ার ভাই আদিবের প্রিয় পোশাক ছিল। নীরু বয়স ও গরনে আদিবের মতো । সে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। ছেলেটির প্রতি শ্রেয়ার গভীর মায়ায় আচ্ছন্ন হল। নিঃসঙ্গ শ্রেয়ার অন্তরে যে স্নেহের ধারা প্রবাহিত হওয়ার পথ খুঁজছে তা একটি সরু পথের সন্ধান পেয়ে প্রবল বেগে ধাবিত হতে চাচ্ছে। শ্রেয়া মনে মনে বলল, কারো জন্য তো কিছু করার প্রয়োজন হয়নি। না হয় অপ্রয়োজনেই এই ছেলেটির জন্য কিছু করি। সে বিদায় নেয়ার পর শ্রেয়ারও যাবার সময় হলো।
সোর্স
আমাকে এখন উঠতে হবে।
এখনই যাবে কেন?
আমার একটি ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। না হলে আরও কিছুক্ষন বসতাম।
ব্যাগ থেকে একটি চেক বই বের করে তার কয়েকটি পাতা স্বাক্ষর করে সোহার হাতে দিয়ে বলল,
তুমি যত ইচ্ছে নীরুর মঙ্গলার্থে ব্যয় করো। ও যদি রাজি হয়, আমি আমেরিকায় ওর পড়াশোনার ব্যবস্থা করবো। শ্রেয়া দরজার বাইরে পা রাখল। সে জানে না কেন তার নয়নের জল কপোলে আসছে।
সোহা, শ্রেয়ার বিদায়ের সময় শুধু বলল, "ভাল থেকো শ্রেয়া", শ্রেয়ার অন্তরের শুন্যতা সোহা অনুভব করে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য বলল, "মঙ্গল কর বিশ্ব বিধাতা"।
আমার পরিচয়
আমি রকিবুল শান্ত। বর্তমানে ঢাকা সিটি কলেজে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টে অনার্স ৩য় বর্ষে লেখাপড়া করছি । আমি পজেটিভ চিন্তাধারার একজন মানুষ । সব সময় সিম্পল থাকার চেষ্টা করি। কোডিং করতে, মিউজিক করতে , বিভিন্ন বিষয় এর উপরে আর্টিকেল লিখতে বেশি পছন্দ করি। নিজের স্কিল বাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখার চেষ্টা করি। ভালোবাসা পেলে ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করি না ।
শুভেচ্ছান্তে
@rokibulsanto
ভাই আপনার ছোট গল্পটি খুবই ভালো লেগেছে। আপনার গল্পটি পড়ছিলাম আর চোখের সামনে গল্পটি যেন ভেসে আসছিল। ১২ বছর পর সোহা ও শ্রেয়ার দেখা হওয়ার মুহূর্তটি খুবই ভালো লেগেছে। এবং সেই সাথে নিরুর প্রতি শ্রেয়ার উদারতা সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে করে নিরুর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এত সুন্দর একটি ছোট গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।