বুক রিভিও - ফেরিওলা ।। 10% for shy fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

◾️ ০৩ মার্চ
▪️ বৃহস্পতিবার


আসসালামু-আলাইকুম বন্ধুগণ
কেমন আছেন সবাই। আশা করছি সকলে সুস্থ ও ভালো আছেন। গত কিছুদিন ধরে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খানিকসময় গল্প-উপন্যাসের বই পড়তে কেমন জানি ভালো লাগছে। পড়তে পড়তে ঘুম ও চলে আসে হুট করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ফেরিওলা ছোট গল্পের বইটি গত কয়েকদিন ধরে পড়ছিলাম। পড়া ইতিমধ্যে শেষ করেছি। আজ আপনাদের মাঝে গল্পের সার-সংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

book-gb2c903096_1920.jpg

Free Images Source

divider.png

ছোটগল্প
ফেরিওলা
লেখক
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ
ফেব্রুয়ারি ২০১২
গল্পের সংখ্যা
১২ টি
প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ
সব্যসাচী হাজরা
একমাত্র পরিবেশক
প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা

divider.png

1.jpg

আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক অবিস্মরনীয় নাম। তার রচিত ছোটগল্প ও উপন্যাসের জন্য তিনি পাঠকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। ফেরিওলা ছোটগল্পটির মধ্যে মোট ১২ টি গল্প রয়েছে। তার মধ্য থেকে আমি ফেরিওলা গল্পটি নিয়ে রিভিও লিখবো।

গল্পঃ ফেরিওলা


ফেরিওলা গল্পটিতে মূলত বর্ষাকালে ফেরিওলাদের কষ্টের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। বর্ষাকাল ফেরিওলাদের জন্য অভিশাপ। গল্পের মূল চরিত্রে রয়েছে জীবন নামের এক ফেরিওলা। সে বর্ষামূখর দিনে কাধে গামছা, শাড়ি, চাদর নিয়ে ফেরি করতে বের হয়। আকাশ অন্ধকার হয়ে ফের বৃষ্টি নামতে গেলে সে এক বাড়ির ভাঙ্গা বারান্দায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। তার বয়স হয়ে এসেছে। বয়সের ভারে আগের মতো শরীরে শক্তি পায় না। ফেরি করতে তার কষ্ট হয়। বারান্দায় জীর্ণ শরীর নিয়ে বিশ্রাম নেয়ার সময় ছোট সাত-আট বছরের একটি মেয়ের সাথে তার কথা হয়। মেয়েটি তার কাছে শাড়ি দেখতে চায়। মূলত বাড়ির ভেতর থেকে মেয়েলি গলায় অন্য আরেক জনের কাছ থেকে প্রশ্নটি এসেছে তার মাধ্যমে।

2.jpg


জীবন তার কাছে থাকা টুকটুকে লালপাড়ওলা মিহি শাড়িটা এগিয়ে দেয় বাচ্চাটির হাতে। দাম বেশি হওয়াতে শাড়িটি ফেরত আসে। তারপর কম দামের কয়েকটি শাড়ি দেয় জীবন। সেখান থেকে একটি শাড়ি দরদাম শেষ করে ছ টাকায় রফা হয়। একটি টাকা আর সিকি দুয়ানিতে মিলিয়ে মেয়েটি দুটি টাকা তুলে দেয় জীবনের হাতে । বাকিটা দুদিন পরে এসে নিয়ে যেতে বলে জীবনকে। বাড়ির বউটির সঙ্গে এখনও তার সাক্ষাত কথা হয়নি। ফেরিওলার সামনে বেরোতে লজ্জা করে না, ভয়ও করে না মেয়ারা। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে মেয়াটি তার সামনে আসতে চায় না। ব্যাপারটি আন্দাজ করে জীবন বাকীতে শাড়ি দিতে অসম্মতি প্রকাশ করে। মেয়েটির মিনতি মেশানো অনুরোধেও জীবন শাড়ি দিয়ে চায় না। কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ কাটার পর ভেতর থেকে শ্যামবর্না এক মেয়ে তার নতুন শাড়িটাই পড়ে বের হয়ে আসে এবং সে জানায় তার পরনের মতো কোন কাপড় নেই। তার দেয়া শাড়িটিই সে পরে তবে বাইরে আসলো। যদি বাকিতে শাড়িটি না দেয় তবে গা থেকে খুলে নিতে হবে। আধ-ঘন্টা পরে বৃষ্টি থামলে জীবন বিরস মুখে পথে নেমে যায়।

3.jpg


সন্ধ্যার আগে শ্রান্ত অবসন্ন দেহে জীবন শহরতলির সীমান্তে তার ঘরের দিকে পা বাড়ায়। অ্যালুমিনিয়ামের বাসনের ঝাকা মাথায় একজন এগিয়ে আসছিল তারই মতো শ্রান্ত পায়ে। জীবনকে দাড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন দাম শাড়ির? সেও

4.jpg

একজন ফেরিওলা। সে বাসন ফেরি করে চলে। সাধ্যিমতো শাড়ির দাম মিলে না দেখে সে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। বাড়ি গিয়ে জীবন তার ক্লান্ত শরীর মেলে দেয় চৌকিতে। জীবনের বউ বীণা ভূমিকা শুরু করে দেয় ভীত ভীত কন্ঠে, সে অ্যালুমিনিয়ামের একটি হাড়ি কিনেছে। তাদের ভাত রাধার পাতিল ফুটো হয়ে গেছে। বাসনের ফেরিওলার কাছ থেকে পাচ সিকেতে সে পাতিলটি রেখেছে। বীণাও পাতিলের দাম দেয়নি সেই ফেরিওলাকে। পাতিলের ফেরিওলাও তার সাথে গজর গজর করতে করতে চলে গেছে । জীবন কিছু বলে না । বাচ্ছা দূটোকে সঙ্গে নিয়ে ঢ্যাড়স আর ডাম দিয়ে ভাত খেয়ে শুয়ে পরে। পরের দিন সকালে অঘোরের আট বছরের ছেলে ভোলা এসে জীবনের কাছে একটি গামছা ধারে দিতে বলে। এরপর আরও অনেক কাহিনি হয়ে যায় অঘোরের সাথে। পরেরদিন যখন সেই বউটির কাছে শাড়ির দাম নিতে যায় জীবন তখন দেখতে পায় অ্যালুমিনিয়ামের বাসন বৃক্রি করা সেই ফেরিওলার বউই তার কাছ থেকে গতকাল ধারে শাড়ি নিয়েছে। লোকটির গায়ে জর ছিল। রক্তচক্ষু তার চোখ দুটির দিকে তাকিয়েই জীবন বুঝতে পারে বীণা যে হাড়িটি ৫ সিকিতে বাকিতে নিয়েছে তার দাম চাওয়ার জন্য কয়েকদিনের মধ্যে সে যেতে পারবে না।


এভাবেই শেষ হয় ফেরিওলার প্রথম গল্পটি

divider.png

ব্যক্তিগত মতামত


গল্পটিতে সে সময়কার গরীব অসহায় মানুষের জীবন জীবিকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়। নিম্ন শ্রেনীর মানুষের দারিদ্র্যের সঙ্গে বসবাস করার দিকটি লেখক খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সে সময়কার নারীরা ঘরের পুরুষদের না জানিয়ে ঘরের হাড়ি পর্যন্ত কিনতে ভয় পাওয়ার দিকটি লক্ষ্য করেছি। বর্ষাকাল এলে রাস্তায় রাস্তায় ফেরি করে বেড়ানো ফেরিওলাদের জীবনে যে অভিশাপ নেমে আসে তা বাস্তব। বর্ষাকাল ফেরিওলাদের জন্য সত্যি অভিশাপ।

divider.png

আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামিকাল। ধন্যবাদ সবাইকে

বিভাগ তথ্য
ডিভাইস রেডমি নোট ১০ প্রো
লোকেশন ধানমন্ডি-১৯

tnq.png

শুভেচ্ছান্তে
@rokibulsanto
Mybanner.png


blogPng.gif

Sort:  
 3 years ago 

ফেরিওয়ালা এই বইটা আমি আগে কখনো পড়িনি তবে আপনি যেভাবে এই বইটি আমাদের মাঝে রিভিউ করলেন মনে হচ্ছে কাহিনীকে অনেক ইন্টারেস্টিং । বিশেষ করে একজন দরিদ্র মানুষের জীবন নিয়ে দারুন একটি কাহিনী রয়েছে মনে হয় এই বইটিতে । যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি বই আমাদের মাঝে রিভিউ করার জন্য।

 3 years ago 

জি ভাই । বইটি পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.034
BTC 90284.37
ETH 3086.81
USDT 1.00
SBD 2.93