আমার বাংলা ব্লগ। নাড়িছেঁড়া ধন। ১০% venifishciary shy-fox এর জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আমার বাংলা ব্লগের সকল সহযোগী এবং সহযোদ্ধাদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সকলেই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। আমি আজকে আবারো আপনাদের মাঝে নতুন একটা কনটেন্ট নিয়ে হাজির হলাম, "নাড়ি ছেঁড়া ধন", আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে।

চলুন যাওয়া যাক মূল পর্বে।

নাড়িছেঁড়া ধন।

20220513_075043.jpg

বুলবুলি পাখির ডিম বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তোলা।


FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png


বন্ধুরা আমি আপনাদের মাঝে গত সপ্তাহ আগে একটি পোস্ট করেছিলাম "পাখির প্রতি ভালোবাসা" আর সে ভালোবাসা আমাকে এতটাই পাগল করে দিয়েছে যে আমার পিছুটান ছাড়লো না। তাই আমি প্রতিনিয়ত দেখাশোনায় লেগে রইলাম পাখির বাসার প্রতি। আবার মাঝে মাঝে খুব চিন্তা করছি এত ঝড় বৃষ্টি তুফান শুরু হয়ে গেছে, জানিনা এ পাখির ডিম গুলো ফুটবে কিনা। বাচ্চাগুলো বড় হবে কিনা। নানান ধরনের চিন্তা মনে হয় যেন আমার চোখের ঘুম চলে গেছে। দুদিন পরপর গিয়ে দেখে আসতাম ভালোবাসা পাখি গুলোর ডিম।

আর সেই পাখির ভালোবাসায় পড়ে দুই দিন পর আবার ছুটে গেলাম। এতো ঝড় বৃষ্টি হলো কেমন আছে বুলবুলি পাখি গুলো এবং ডিমগুলি। পাখির দেখব বলে আমার মাঝে এতটাই অস্থিরতা বোধ করছিলাম, আমি যে ডিউটি থেকে কাউকে না বলে চলে গেলাম বি আই ডব্লিউ টি এ শিশু পার্কে। যখন দেখলাম এত ঝড় বৃষ্টি তুফান পাখির বাসা টা একটু আচরণ লাগেনি, তখন আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম।

হাত দিয়ে গাছের পাতাগুলো একটু সরিয়ে যখন দেখলাম দুটি বাচ্চা ফুটেছে, আমার এতটাই আনন্দ হচ্ছিল আমার মন চাইছে পুরো পার্কের মানুষকে আমি এই চিৎকার করে বলি যে এখানে ফুটফুটে দুটি বাচ্চা ফুটেছে। এত আনন্দ যে আনন্দ কোনো সীমা নেই। দুটি বাচ্চা ফুটেছে একটি ডিম রয়ে গেছে। তখন আর আমি হাত দিয়ে না ধরে আমার মত আমি দেখলাম, আনন্দ করলাম তারপর দেখছি পাখিগুলো চতুর্পাশে উড়ছে আর কিচিরমিচির ডাকছে। তাদের সন্তানের প্রতি এত ভালোবাসা এত মায়া আমার কাছে চলে আসছে তাদের ভয়-ভীতি একটু লাগছে না।

20220520_065452.jpg
20220520_065501.jpg
20220520_065510.jpg

এখন আমি ফটোগ্রাফি টা আরো একটু ভালো করে ক্লিয়ার করে তুলে নিলাম, যাতে আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সবাইকে দেখাতে পারি। এবং সবার সাথে শেয়ার করার মূল উদ্দেশ্য তখন আমার স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। কিন্তু পাখিদের আত্মচিৎকার বেড়ে গেল। মনে হচ্ছে যে তাদের বাচ্চাকে কেউ মারতে এসেছে, না হয় নিয়ে যেতে এসেছে, তাদের আত্মচিৎকার আমি শুনতে পেয়ে আমি আস্তে নিজে থেকে সরে পড়লাম।

ডিউটি করছি খাচ্ছি দাচ্ছি বাসায় যাচ্ছি মনে হচ্ছে যেন আমার ভিতর এতটাই অস্থিরতা বোধ করছি। পাখির বাচ্চা গুলা কেমন আছে, কিভাবে আছে, কতটুকু বড় হয়েছে। দুইদিন পরে আবার দৌড় বিআইডব্লিউটি শিশু পার্কে গিয়ে দেখলাম একটা বড় হয়ে গেছে, একটা বাচ্চা নেই একটা ডিম নেই উধাও। তখন মনে ভীষণ কষ্ট পেলাম, তখন মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি হয়তো এর চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছে ওই পাখিগুলো। ওই পাখিগুলো বাচ্চার জন্য কি খুবই খারাপ লাগে। পাখিগুলো চতুর্পাশে উড়ে উড়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে।

20220523_080753.jpg
20220523_080824.jpg
20220523_080857.jpg
20220523_081001.jpg

একটা ডিম একটা বাচ্চা না দেখে আমার কাছে খুব খারাপ লাগে। এতটাই খারাপ লেগেছে যা হয়তো আপনাদের কে বোঝানো খুব কষ্টকর। কিন্তু কি করার নির্মম নিয়তি, কপালে যা লেখা ছিল তাই হয়েছে। তাই অধীর আগ্রহে বাচ্চা টাকে অনেক আদরে শহিত হাতে তুলে নিলাম, কিন্তু এদিক সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু এখনো চোখ ফোটে নি, একেবারেই লাজুক, মনে হচ্ছে ভয় পেয়েছে।

কিছুক্ষণ পর দেখলাম বাচ্চাটা একটু স্থির ভাবে বসে রইলো। মনে হয় যেন স্বস্তির একটা জায়গা পেয়েছে। ভয় টা কেটে গিয়েছে একটু দীর্ঘ শ্বাস নিচ্ছে। কষ্টটা মনে হয় যেন নিয়তির লিখন ছিল বিধায় আজকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হলো। পাখিগুলো এতো নিরাপদ জায়গায় ভাষা ভেদেও বাচ্চাগুলোকে বড় করে তুলতে পারল না। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবার ফিরে আসলাম নিজের কর্মস্থলে।

এর দুদিন পরে আবারও গেলাম বি আই ডব্লিউ টি এ শিশুপার্কে। কিন্তু গিয়ে সম্পূর্ণ হতাশায় পড়তে হলো আমাকে। যার আশায় ডিউটি ফেলে দৌড়ে গিয়ে ছিলাম তাদেরকে আর দেখতে পেলামনা। তাদের কিচিরমিচির ডাক শুনতে পেলাম না, চোখ কোনে ফোটার মত পানি এসে গেল। কেননা উদয় হয়ে গেল বাসা থেকে পাখির বাচ্চা গুলো। পাখির বাসায় চোখ বুলিয়ে আমি হতাশায়, অশ্রুসিক্ত নয়ন, মনে হয় যেন আমার কলিজায় আঘাত টা খুব জোরে লেগেছে। পাখিগুলো আমার মাথার উপরে কিচির মিচির ডাকছে। এত বেশি ডাকছে যা না দেখলে বিশ্বাস করার মতো না। হতাশায় ক্লান্ত মন নিয়ে পার্কে থেকে চলে এলাম আবারো কর্মস্থলে। আর কোন ফটোগ্রাফি বা ছবি নিলাম না। খুবই খারাপ লেগেছিল আমার কাছে। এতটাই খারাপ লাগছে আমার কাছে, তাহলে পাখির বাচ্চাগুলোর জন্য মা-বাবার কাছে কেমন লেগেছে।

দিনশেষে বুঝতে পারলাম পাখিদেরও অনেক কষ্ট, অনেক যন্ত্রণা আছে। আমরা মাঝে মাঝে চাই পাখির মত উড়ে বেড়াতে। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে। কিন্তু আমাদেরকে আল্লাহর সৃষ্টি কুলের সৃষ্টির সেরা জীব বানিয়েছে। যত জীবজন্তু আছে পশুপাখি আছে তারা তাদের সন্তানকে মানুষের মতো লালন-পালন করতে পারেনা। কিন্তু দুঃখ-কষ্ট তাদের মানুষের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। মানুষের যেরকম তাদের সন্তানের জন্য হাহাকার করে, এর চেয়ে বেশি হাহাকার হয়তো পাখিরাও করে। কম নয় হয়তো বা অবলা প্রাণী দেখে কাউকে কিছু বলতে পারে না, নিজের দুঃখ ব্যথা নিয়ে নিজে পড়ে থাক। নিজের কষ্ট গুলো বুলার জন্য উড়ে বেড়ায় মুক্ত আকাশে।


FUkUE5bzkAZT3HzV5tJDiU2ik81PCd4JCyhWnRcDN8XJsVFY3UNB8DCRWUhECrBewyvr56XLHQLFtR3iJUgyYXhoNnQzaPV4fGATT2PmXhFCBxcFCr2kEHS2obaiYPVBvHXcZ5NDLfrZh4qAU4CWzpqmK5XnDexEGztE.png


বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই, "নাড়িছেঁড়া ধন" কেমন লেগেছে। আশা করি ভালো লাগবে, ভাল মন্দ কমেন্টে জানাবেন। সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি ,সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  
 2 years ago (edited)

পাখির প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখে সত্যিই অভিভূত আমি। আর কি চমৎকার অনুভূতি প্রকাশ করলেন। পাখির বাচ্চা আর ডিম অসাধারণ দেখাচ্ছিল কিন্তু শেষের দিকটায় মনটা সত্যিই খারাপ হয়ে গেল।
ধন্যবাদ ভাই চমৎকার একটি পোস্ট আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য 💌

 2 years ago 

প্রথম দিকে ডিমগুলো দেখে আমার খুব ভাল লেগেছিল। নিচের দিকে পড়তে পড়তে ভাবছিলাম হয়তো তিনটি বাচ্চা দেখতে পাবো। পরবর্তীতে ডিম ও বাচ্চা না থাকার কারণে আপনার মত আমারও খুব কষ্ট হয়েছে। পর্যাক্রমে ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার ফটোগ্রাফি দেখে আমার খুব ভালো লাগলো। আপনার পাখির প্রতি ভালোবাসা দেখে অনেক শ্রদ্ধা বেড়ে গেল।
ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

আসলে গল্প শুরুর দিকে অনেক ভালো লাগছিল ডিম এবং বাচ্ছা দেখে ,বাচ্ছা গুলো একদম ছোট ছোট ছিল দেখতে খুবই সুন্দর ।তবে এই বাচ্ছা গুলো মনে হয় অন্য পাখিতে খেয়ে ফেলছে।জন্মদাতা এবং জন্মদাত্রী তাদের কেমন লাগছে আহারে অনেক কষ্ট।ভীষন খারাপ লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে ,ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।ভালোবাসা রইল

 2 years ago 

অনেক ভাল লাগছিলো যকন ডিম গুলো দেখতে পেলাম পাখির। ডিম ফুটে বাচ্চাও হয়েছিল অনেক কিউট কিউট। কিন্তু শেষের দিকে এসে মন খারাপ হয়ে গেল। পাখিগুলোর বাবা মায়ের কেমন লেগেছে তা হয়ত তারা ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনি। খারাপ লাগছে খুব।

 2 years ago 

গল্পের শুরুতে বুঝতে পারি নি শেষটা এতটা হৃদয়বিদারক হবে। প্রথমের দিকে ডিম, তারপর ডিম থেকে পাখির বাচ্চা হল এগুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো। শেষে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মা পাখিটা নিশ্চয়ই এর চেয়েও বেশি খারাপ লেগেছিল। কিন্তু এটা মেনে নিতেই হবে। কারণ এসব জিনিস আমাদের হাতের বাইরে। আপনার অনুভূতি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74