আমার বাংলা ব্লগ। বৈশাখী মেলার গল্প। ১০% পে-আউট লাজুক খ্যাক এর জন্য।
চলুন যাওয়া যাক মূল পর্ব।
বৈশাখী মেলার গল্প।
আমার বাংলা ব্লগের সকল বন্ধুদের জানিয়ে রাখছি, আমি বৈশাখী মেলায় অনেক ফটোগ্রাফি করেছিলাম। তবে সে ফটোগ্রাফি গুলো পর্যায় ক্রমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তাই আজকে আপনাদের মাঝে "বৈশাখী মেলার গল্প" প্রকাশ করব, আশা করি সকলের ভাল লাগবে।
![]() |
---|
মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল একেবারে আমার বাসার গলিতে এবং আমার বাসার নিচেই। তবুও মেলা উপভোগ করতে পারেনি, অফিস ছুটির এক পর্যায়ে গিয়ে আধা ঘন্টার মত মেলায় ঘোরাফেরা।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা জানেন আমি রমজান মাসে খুব গুরুতর এক্সিডেন্ট করেছিলাম। এবং সেই অ্যাক্সিডেন্টের কারোনে আমি ঠিকমত কাজ করতে পারেনি। এবং আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। এর পরের বাড়িতে গিয়ে ঈদ কাটানোর পর নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়েছিল। আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহর রহমতে আপনাদের মাঝে ফিরে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দ অনুভব করছি। চলুন যাওয়া যাক মূল কথায়।
ছোট্ট একটা গল্প।
বৈশাখী মেলা হইচই চলছে, আর গ্রামের মেলার জমজমাট আয়োজন। মেলার বাঁশির হুংকারে চারদিকে যেন গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। সেই গুঞ্জন এই মেলার আনন্দ বয়ে চলে প্রতিটি ঘরে প্রতিটি মানুষের মনে। গ্রামের সহজ সরল মানুষের প্রধান বিনোদন এর মূল কেন্দ্র ছিল মেলা। আমি অনেক ছোট ছিলাম, আর সেই আনন্দ আর আনন্দ বয়ে নিয়ে বেড়াই। এলাকায় মাইকিং হচ্ছে এলার্ম বাজছে বৈশাখী মেলার আয়োজন চলছে। দেখতে দেখতে মেলায় এসে পড়েছে। মেলা উপভোগ করার মতো কোনো অর্থ আমার কাছে নেই। মায়ের কানের কাছে ব্যন ব্যন করছি দুই তিন দিন ধরে মেলায় যাব মেলা করব আমার এটা লাগবে সেটা লাগবে। মায়ের একটাই কথা আমি কোথায় থেকে দিবো তোমার বাবার কাছে বল।
বাবা আমার খুব মেজাজি এবং এত বেশি রাগি বাবার সামনে যেতে ভয় কলিজাটা ছটফট করে। আর কিছুর আবদার করাটা অসম্ভব প্রায়। মেলার গুঞ্জন মানুষ বাঁশি নিয়ে আসছে। বাজার করে নিয়ে আসে, বিভিন্ন ধরনের খেলনা নিয়ে আসছে বাড়ির সামনে দিয়ে। দেখে মেলা যাওয়ার কষ্ট আর সহ্য হচ্ছে না। আমার সমবয়সী আরো একটা ভাই আছে, আমার দুই বছরের বড়। আমাদের বেড়ে উঠা একই সাথে, একই সাথে পড়ালেখা করি, একই ক্লাসে পড়ি। প্রথম ভাইয়াকে বললাম যে মেলায় যাব কিভাবে যাওয়া যায়। আম্মু কোন প্রকার কোন টাকা দিতে রাজি না।
তখন ভাইয়ের সাথে বুদ্ধি পাকালাম যে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করবো। আবার এটাও চিন্তা করছি যদি একবার টের পায় তাহলে পিঠের চামড়া থাকবে না। ভাইয়া তো একেবারেই না, সে কখনোই কাজ করবে না। কারণ আব্বা একবার যদি টের পায় তাহলে জানে মেরে ফেলবে। কি আর করা আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে মেলায় যাবো। মেলায় গিয়া বড় বড় মিষ্টি বড় বড় জিলাপি খেতে হবে নাগরদোলায় চড়বো আরো কত কি করবো কল্পনার শেষ নেই।
বেলা প্রায় এগারটা বাজে, এই আব্বু পাঞ্জাবীটা খুলে কোথায় গিয়েছে ঘর একেবারেই ফাঁকা কেউ নেই। তখন আস্তে আস্তে আব্বুর রুমে ঢুকে পাঞ্জাবির পেটে হাত দিচ্ছি আবার বের করছি। হাত দিচ্ছি আমার বের করছি, আবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছি কেউ এসে পড়ে গেল না তো। কেউ দেখে ফেলল না তো, মনে হয়ে যেন গলা শুকিয়ে গেছে। পকেটে হাত দিয়ে অনেকগুলো টাকা বেরিয়ে এলো। তখন মনে হয় যেন হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। আবার টাকা গুলো রেখে দিলাম। আবার এদিক-ওদিক তাকিয়ে আবার টাকাগুলো বের করলাম, এতগুলো টাকা থেকে মাত্র ৫ টাকা বের করে নিলাম।
টাকাটা বের করে ভয়ে চোরের মত এদিক পালাচ্ছি ওধিক পালাচ্ছি। লুকোচুরি খেলছি সবার সাথে, তখন ভাইয়া ডাক দিলো কিরে এরকম করতেছস কেন কি হয়েছে। কিছু হয়নি চল মেলায় যাবো, ভাইয়া, মেলায় কি করবো টাকা পয়সাও নেই। তখন আমি জোর করে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললাম যে আমি বাবার পকেট থেকে ৫ টাকা চুরি করেছি।
তখন ভাইয়া মাঝরাস্তায় থমকে গেল। যে আমি যাবো না তুই যা। অনেক কষ্ট করে ভাইয়াকে অনেক রিকুয়েস্ট করে টেনে নিয়ে গেলাম মেলায়। মেলায় গিয়ে অনেক আনন্দ ফুর্তি করছি, খাচ্ছি দাচ্ছি নাগরদোলায় চড়লাম। তবে সবচেয়ে বড় ভুল করে ফেলেছি মেলায় গিয়ে প্রায় ২/৩ ঘন্টা ঘুরে ছিলাম। তখন বাড়িতে কেউ খুঁজে না পেয়ে সবাই বুঝে গেল যে ওরা মেলায় গেছে।
মেলা থেকে আসার পর দুই ভাই খুশি আম্মু ঘুরেফিরে জিজ্ঞেস করছে কেরি এত খুশি পেট ভরা ভরা মনে হয়। কিছু একটা খেয়ে এসেছিস, টাকা পেয়েছিস কোথায়, নানান প্রশ্ন। দুপুরবেলা ভাত খেয়েছি কম তাঁতে আরো বেশি সন্দেহ। আব্বু খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পরলো, বিকেল চারটার দিকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি পরে বাইরে যাবে। তখন পকেটে হাত দিয়ে টাকাগুলো গুনছে দেখে ওনার টাকা থেকে ৫ টাকা কম ছিল। মনে হয় যেন আত্মা শুকিয়ে গেছে, আব্বা শুরু করলো চেঁচামেচি, আমার পকেট থেকে টাকা নিয়েছে কে।
মা দৌড়ে এল কি হয়েছে, তখন বাবা বলল আমার পকেট থেকে টাকা নিয়েছে কে। মা বলল আমি তো আপনার পকেটে হাত দেই না।বাবা আমার টাকা কোথায় গিয়েছে।মা, কোথায় খরচ করেছেন মনে করে দেখেন। এখন দুই ভাই দৌড়ে বাগানে ঢুকে পড়লাম, আব্বু তো সেই গরম। চিৎকার চেঁচামেচি করছে। তখন মাথার ভিতরে শুধু একটাই ঘুরপাক খাচ্ছে এতগুলো টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচ টাকা তাও আবাবার মনে আছে।তখন এক পর্যায়ে রেগেমেগে বকা বাধ্য করে বাড়ি থেকে বাবা চলে গেল। পরে আম্মু দুই ভাইকে ডেকে দুই গালে দুই চড় বসিয়ে দিল। সেদিনের পর থেকে আর কখনো বাবার পকেট থেকে একটি টাকাও নেই নাই।
তখন থেকে আন্দাজ করতে শুরু করলাম যে আমার বাবা কতটা বিজ্ঞানী। আর কেনইবা পুড়োপাড়া পুরো মহল্লা পুরো গ্রামের মানুষ বাবাকে এত শ্রদ্ধা সম্মান করে। একজন বিচারক ছিলেন নিষ্ঠাবান। এক কথায় তার কথায় পুরো গ্রামের মানুষ উঠতো আর বসতো। তবে আমাদের বাপ দাদার আমল থেকেই প্রভাবশালী ছিল বিধায় আর বাবার কঠোর বিচার মানুষ শ্রদ্ধা ভক্তি সম্মান করতে।
হয়তো আমি বলে ফেলেছি ৫ টাকা চুরি করেছি, কিন্তু তখন আমার বয়স ছিল আনুমানিক ৮ কি ৯। আর সে সময় ৫ টাকার মূল্য অনেক বেশি। ৫ টাকা দিয়ে অনেক কিছু পাওয়া যেত, আর ওই সময়টা ছিল ৮০ থেকে ৯০ দশকের।
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
তবে এখন তেমন একটা মেলা উপভোগ করতে পারেনা। কিন্তু মেলার স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেল। আসলে ছোটবেলার স্মৃতিগুলো বার বার মনে করিয়ে দেয় সেই চিরচেনা সোনালী অতীত। কেউ কি ভুলতে পারে তাই আপনাদের মাঝে মনে গেঁথে থাকা ছোট গল্পটি শেয়ার করলাম।
বন্ধুরা কেমন লেগেছে আমার মেলা ভ্রমণ এবং সেই সাথে ছোট্ট একটি গল্প। আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে, ভাল মন্দ কমেন্টে জানাবেন। সাপোর্ট দিয়ে পাশে থাকবেন। আজকের মত বিদায় নিচ্ছি সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আপনার বাড়ির পাশের গলিতে মেলা হওয়া সত্বেও আপনি ভালভাবে মেলা উপভোগ করতে পারেনি এটা আসলে অনেক কষ্টকর। তবে আধঘন্টা সময় মনে হয় খুব ভালোভাবে উপভোগ করেছেন। আপনার মেলায় ঘোরার মুহূর্ত গুলো খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন । তবে একটা কথা ঠিক ছোটবেলার মতো আনন্দ এখন আর কোথাও পাওয়া যায় না। আপনার পোষ্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য।
আপনি খুবই চমৎকার ভাবে আমাদের মাঝে বৈশাখী মেলার গল্প শেয়ার করেছেন ।আপনার এই বৈশাখী মেলার গল্প পড়ে অনেক বেশি ভালো লাগলো। বৈশাখী মেলার গল্পের সাথে সাথে আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর মনমুগ্ধকর কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন যেগুলো দেখে অনেক বেশি ভাল লেগেছে ।ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনি অনেক চমৎকার ভাবে বৈশাখী মেলার সুন্দর মুহূর্ত ও কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইয়া। বৈশাখী মেলায় কিছুদিন আগে আমিও ঘুরতে গিয়েছিলাম। বৈশাখী মেলায় ঘুরতে গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। বৈশাখী মেলায় আপনি অনেক মজা করেছেন তা দেখে বুঝতে পারলাম।
আপনার গল্প পড়ে অনেক মজা লাগলো ভাই। তবে ৫ টাকা চুরি করে আপনার কাঁপাকাপির কথা শুনে মজা পেলাম ভাই। তবে আমি অনেক মেরেছি এই রকম টাকা। তবে এখন আর মেলাতে আগের মতো মজা খুঁজে পাইনা। আপনার স্টোরি ভালো ছিলো।