ছোটবেলার স্মৃতিচারণ - মৎস্যশিকারী আমি
Copyright Free Image Source : Pixabay
প্রত্যেক বছর বর্ষাকাল এলেই এখনো মনটা ছটফট করে ওঠে ছোটবেলার মাছ শিকারের কথা মনে পড়লে । আমি আসলে দারুন ভালোবাসতাম মৎস্য শিকার করতে । বিশেষ করে বর্ষার দিনে গ্রামের পুকুর, খাল-বিলে মাছ ধরার যে কি মজা তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । বড়শি আর জাল এই দুটোই ছিল আমাদের প্রধান হাতিয়ার মৎস্য শিকারে ।
অনেক ভাবেই আমরা ছোটরা মাছ শিকার করতাম । কেউ খ্যাপলা জাল ছুঁড়ে, কেউ বড়শি দিয়ে, কেউ অগভীর জলে জাল পেতে মাছ শিকার করতাম আমরা । আমি জাল ছুঁড়তে জানতাম না, আর ভোরবেলায় ধানখেতের মধ্যে অগভীর জলে জাল পাততে যেতেও মন সায় দিতো না । ওই কাজটিতে এক্সপার্ট ছিল আমার কাকাতো-জেঠাতো ভাইয়েরা ।
আসলে আমি একটু বাবু মানুষ ছিলাম ছোট্টবেলাতেই । কাদা মাখামাখি পছন্দ করতাম না বিশেষ । তাই, ভোরবেলায় ধানক্ষেত, ডোবা বা অগভীর বিলের জলে মাছ ধরার জাল পাততে যাইনি কোনোদিনও । তবে, পুকুরে বড়শি দিয়ে প্রচুর মাছ ধরেছি । খালে কাজিন ভাইদের সাথে জাল ছুঁড়ে মাছ মারার সঙ্গী হয়েছি । বিলের জলে নৌকো করে বড়শি দিয়ে মাছ ধরেছি । আর ডোবার জলে তো রীতিমতো চ্যালেঞ্জ করে মাছ শিকার করতাম সমবয়সীদের সাথে ।
বর্ষাকালে আমাদের গ্রামের কাঁচা রাস্তা বেশ অগম্য হয়ে পড়তো কাদায় । তাই, স্কুল ফাঁকি দিতে ইচ্ছেমতো । বাবা রাজি থাকলেও মা মোটেও স্কুলে পাঠাতে চাইতো না এসময়টায় । আমি তাই মাঝে মাঝে ক্লাসে যেতাম বর্ষাকালে । কিন্তু, প্রায় দিনই বাড়িতে থাকতাম । সকাল বেলাটায় নমো নমো করে কোনো রকমে পড়া শেষ করেই আমরা মেতে উঠতাম মাছ শিকারে ।
বাড়িতে সব সময়েই নানান আকারের ছিপ-বড়শি, হুইল মজুত থাকতো । এক এক রকম মাছের জন্য এক এক রকমের ছিপ-বড়শি বা হুইল । পাটকাঠি ছিপের ক্ষুদ্র বড়শি ছিল পুঁটি মাছ শিকারের জন্য । মজবুত বাঁশের চাঁছাছোলা কঞ্চির ছিপ আর মাঝারি আকারের বড়শি ছিল ফলুই, তেলাপিয়া, কৈ, শোল, টাকি, জাপানি পুঁটি, ট্যাংরা, বান, নাইলোটিকা এসব শিকারের জন্য । আর বেশ মজবুত প্রকান্ড হুইল বড়শি গুলো ছিল রুই-কাতলা, মৃগেল, বড় শোল, ভেটকি এসব শিকারের জন্য ।
খ্যাপলা জালও আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েক রকমের মজুত থাকতো সবসময় । বড়, ছোট ও মাঝারি সাইজের খ্যাপলা জাল, কোনোটায় লোহার নল গুলো মোটা নিরেট আর ভারী, আবার কোনটায় সরু ফাঁপা ও হালকা । কোনোটার জালের ফাঁস বড়, কোনোটার মাঝারি আবার কোনোটার খুবই ক্ষুদ্র ।
পাতা জালও ছিল অনেক রকমের । লম্বা, খাটো, দীর্ঘ প্রশস্ত, কম প্রশস্ত । কোনোটার জালের ঘরগুলি খলসে, পুঁটি, বান মাছ ও পারশে ট্যাংরা শিকারের জন্য । আবার কোনোটার জালের ঘরগুলি তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, শোল, টাকি শিকারের জন্য । আরেক প্রকারের পাতা জাল ছিল । খুবই ক্ষুদ্র জালের ঘরগুলো । চিংড়ি শিকারের জন্য শুধু এগুলো ।
ছোটবেলায় মাছ শিকার করতে গিয়ে অনেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি আমি । আমার কাজিনেরা বড় গাঙে মাছ শিকার করতে গিয়ে কুমির অব্দি দেখে এসেছে । আমার অবশ্য সে রকম সৌভাগ্য কোনোদিনও হয়নি । তার আগেই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসি । তবে, খালে একবার নৌকাডুবি হয়েছিল আমাদের মাছ ধরতে গিয়ে । একটুর জন্য নৌকোর তলায় চাপা পড়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম আমি । বেশ কয়েক ঢোক খালের ঘোলা জল পেটে যাওয়া ছাড়া আর তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি সেবার ।
এবার একটা মজার ঘটনা শেয়ার করে আজকে শেষ টানছি । জীবনে প্রথম পেন দিয়ে লিখে পরীক্ষা দেই আমি ক্লাস টু তে । এর আগে পাঠশালা, ছোট ওয়ান আর বড় ওয়ান এর সব কয়টি পরীক্ষায় আমি হয় শ্লেট বা পেন্সিল ব্যবহার করেছি । তো, সেবার বর্ষার শেষের দিকে মিড টার্ম এক্সাম পড়লো । সেদিন সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিলো আর হাওয়া দিচ্ছিলো বেশ । বর্ষার জোলো হাওয়া । গায়ে মাখলেই মনটা চিড়িং বিড়িং করে লাফাতো মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য ।
তো পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পথে আমি আর আমার এক সহপাঠী দুজনে মিলে প্ল্যান করতে থাকলাম যে কোনোরকমে পরীক্ষাটা দিয়েই বাড়ি ফিরে আজকে মাছ ধরতে যেতে হবে । এই ধরণের নানান পরিকল্পনায় অর্ধেক পথ এসে হঠাৎ আমরা একটা জিনিস লক্ষ করে আনন্দে দিশেহারা হয়ে গেলাম । রাস্তার এক সাইডে খুবই নিচু মতো ছোট্ট একটা ডোবা ছিল । বিলের নতুন বর্ষার জলে এখন সেটা একদম টইটুম্বুর । একেবারেই ছোট্ট একটা ডোবা । অথচ এখন মাছে ভর্তি । পরিষ্কার মাছের খলবলানি শোনা যাচ্ছে ।
রইলো পরীক্ষা মাথার উপরে । আমরা দু'জনে নেমে পড়লাম মাছ ধরতে । কিন্তু, ধরবো কি করে ? যতই ছোট ডোবা হোক হাত দিয়ে তো আর জলের মধ্যে মাছ ধরা সম্ভব নয় । তাই, মনের মধ্যে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দু'জনে ফের রওনা দিলাম স্কুলে । অঙ্ক পরীক্ষা তখনকার দিনে ছেলেদের কাছে রীতিমতো আতংক ছিল । সবাই ভীষণ নার্ভাস আর টেনশনে থাকতো ।
এই দিন আমিও খুবই টেনশনে ছিলাম । অঙ্ক পরীক্ষার ভয়ে নয় । পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে সেই ডোবায় মাছেরা থাকবে তো ? আমাদের আগে আর কেউ মেরে নিয়ে যাবে না তো ? এই চিন্তায় তখন পরীক্ষা মাথায় উঠে গিয়েছে । যাই হোক পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে আমি আর আমার সেই সহপাঠী মিলে সেই ডোবা থেকে মাছ ধরে তবে বাড়ি ফিরেছিলাম । হাতের কাছে কোনো সরঞ্জাম না থাকাতে আমি জামা খুলে আর মাথার ছাতা দিয়ে বহু কষ্ট করে বিশাল সাইজের একটা নাইলোটিকা ধরে ফেললাম ।
সেদিন বাড়ি ফিরে হুলুস্থুলু কান্ড ঘটে গিয়েছিলো । পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম জামা ছাতা সব বিসর্জন দিয়ে প্রকান্ড একটা নাইলোটিকা হাতে ঝুলিয়ে । মাছের কানকোর ছিদ্র দিয়ে গাছের ছালের দড়ি ঢুকিয়ে হাতে ঝোলাতে ঝোলাতে একরকম নাচতে নাচতে বাড়িতে এসে ঢুকলাম । কান্ড দেখে মায়ের তো একদম চক্ষুস্থির । দাদা question paper চাইলো । আমি বললাম জামা ছাতা সব ভুলে রাস্তায় ফেলে এসেছি । আর জামার বুকপকেটে রয়েছে question paper ।
এরপরে কি ঘটলো সেটা আর নাই বা বললাম । তবে, হ্যাঁ সেবার অঙ্ক পরীক্ষায় আমি ১০০ তে ৯৯ পেয়েছিলাম । আমি জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিকই ছিলাম । হে হে :)
পরিশিষ্ট
প্রতিদিন ১৫০ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৭ম দিন (150 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 07)
টার্গেট ০৩ : ১,০৫০ ট্রন স্টেক করা
সময়সীমা : ৩১ জুলাই ২০২২ থেকে ০৬ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত
তারিখ : ০৬ আগস্ট ২০২২
টাস্ক ২১ : ১৫০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
১৫০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : 79b899084a340546689a07cb9cd8afb0ba9cf8517a182bcf59986433ff75ca03
টাস্ক ২১ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
RME, Thank You for sharing Your insights...
Thank You for sharing...
Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community
দাদা ছোটবেলার স্মৃতিগুলো জীবনে চলার পথে বারবার মনে পড়ে যায়। যখন আশেপাশে কোথাও ছোটদের ডোবা বা পুকুরে এইভাবে মাছ ধরতে দেখি তখনই দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে খুব ইচ্ছা করে। আপনার গায়ের জামা ও ছাতা বিসর্জন দিয়ে নাইলোটিকা মাছ ধরার ঘটনাটি পড়ে খুব মজা পেয়েছি। আমিও ছাত্র জীবনে একবার পাড়ার ছেলেদের পাল্লায় পড়ে খেলতে গিয়ে বই হারিয়ে ফেলেছিলাম। পরে বাসায় ফিরে সেকি হুলস্থুল কান্ড কান মলাও খেয়েছিলাম। নিশ্চয়ই আপনারও সেই অবস্থা হয়েছিল হা হা হা হা।
চিন্তা করা যায় মাথায় মাছ ধরার এত বড় টেনশন নিয়েও আপনি ১০০ তে ৯৯ পেয়েছেন তাও আবার অংকে।
আসলেই আপনি জাতে মাতাল তালে ঠিক।
Thank You for sharing...
আপনার ছোটবেলার গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আসলে ছোটবেলা মাছ ধরা যেন প্রত্যেকেরই একটা নেশার মত ছিল। আমি মাছ ধরতে পারতাম না। তবে বাবার সাথে ছোটবেলা মাছ ধরতে যেতাম। বাবা-মাছ জাল দিয়ে ধরতো তো আমি সেগুলো ধরে ধরে ব্যাগে রাখতাম। সত্যি মুহূর্তটি অনেক আনন্দের ছিল। আপনার গল্পটি আমার অনেক ভালো লেগেছে দাদা।
Thank You for sharing...
এই না হলেন আমাদের বুদ্ধিমান দাদা হি। পরীক্ষা থেকে মাছ ধরার টেনশন বেশি বাহ বৈশ দারুণ তো। আমি নিজেও ছোটবেলা মাছ ধরেছি তবে ঐ বরশী দিয়েই বেশি। আপনার ছোটবেলার মাছ ধরার কাহিনী টা দারুণ লাগল দাদা। কী রঙিন শৈশব ছিল আপনার।
Thank You for sharing...
এই ধরনের মজার স্মৃতি কমবেশি আমাদের সবারই রয়েছে। তবে পোস্টটি পড়ে সেই অতিথিতে ফিরে গেলাম।
মাছ ধরতে কার না ভালো লাগে আর যদি বাড়ির পাশে আমার মত থাকে পদ্মা নদী তাহলে তো কোন কথাই নেই। পদ্মার তীরবর্তী অঞ্চলে বেশ কয়েক পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয় আমি প্রায় সবকটা পদ্ধতিতে মাছ শিকার করেছি শখের বসে। আপনার মত নৌকাডুবিতেও পড়েছি তবে ঘোলা জল নয় পদ্মার জল খেয়েছি।
Thank You for sharing...
মাছ ধরতে আমার খুবই ভালো লাগে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমি কখনো বড়শি দিয়ে একটি ও মাছ ধরতে পারিনি। অনেকবার চেষ্টা করেছি। নদীতে তো দূরের কথা। আমি কোনো পুকুরের ও মাছ ধরতে পারি না। আপনার মাছ ধরার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।এতো সুন্দর একটি স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
Thank You for sharing...
হা হা,বেশ মজা পেলাম🤪।এর পরের ঘটনা বললেও বুঝতে পেরেছি😉।বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে বেশ ভালো লাগে।ভালো লাগলো।আসলেই জাতে মাতাল হলেও তালে ঠিক আপনি 😉।ধন্যবাদ
Thank You for sharing...