অভিশপ্ত শৈশব (Cursed Childhood)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

তৃতীয় বিশ্বের শিশুদের শৈশব সব চাইতে অনিরাপদ এবং অভিশপ্ত হয়ে থাকে । এ তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে আফ্রিকান দেশগুলি - সোমালিয়া, চাদ, বুরুন্ডি, মোজাম্বিক, সুদান প্রভৃতি । দেশগুলিতে ক্রমাগত গৃহযুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের জেরে এই সব দেশের শিশুদের শৈশব সব চাইতে অনিরাপদ এবং অনিশ্চিত ।

সেই তুলনায় দক্ষিণ এশীয় উন্নয়নশীল দেশগুলি - ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকার শিশুরা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ । তবে এসব দেশের শতভাগ শিশুদের শৈশব মোটেও সুরক্ষিত নয় । বিশেষ করে, দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসরত গরীব পরিবারগুলিতে শিশুদের শৈশব সব চাইতে অনিরাপদ । মেয়ে শিশুদের বাল্যবিবাহ, পাচার এবং বিক্রি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শিশুশ্রম , যৌন নির্যাতন সহ নানাধরণের ভয়াবহ বিপদে দুর্বিষহ এই সব শিশুদের শৈশব ।

শিক্ষা প্রায় নেই বললেই চলে এসব শিশুদের পরিবারে । তাই একটু বুঝতে শেখার মতো জ্ঞান হলেই অমনি তাদেরকে নানা ধরণের কাজে জুড়ে দেয় শিশুদের বাবা মা ।দুর্বল, অপটু হাতে রীতিমতো কাজ করে খেতে হয় এই সব শিশুদেরকে । কতই বা বয়স তাদের । ৮-১০ বছর বয়স মাত্র । যে বয়সে শিশুদের খেলার সময়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময়, ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি করার সময় সেই সময়ে তারা নানাবিধ শারীরিক পরিশ্রমে লিপ্ত হয়ে থাকে ।

অন্ধকারাচ্ছন এদের ভবিষ্যৎ । অভিশপ্ত শৈশব ।

আমাদের দেশের চা বাগানে কর্মরত কুলি কামিন আর ইটখোলায় কর্মরত শ্রমিক পরিবারগুলি জাস্ট দাস (slave) ছাড়া আর কিছুই নয় । চাকরি ছেড়ে কোথাও চলে যাওয়ার কোনো অধিকার এদের নেই । নাম মাত্র পারিশ্রমিকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এরা মালিকের গোলামী করে চলে আসছে । এই সব পরিবারের শিশুরা গোলাম হিসাবেই জন্মে থাকে । তাই এদের শৈশবটাই সব চাইতে বেশি অন্ধকারময় ।


শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে একটি ছোট্ট মেয়ে শিশু অবাক চোখ মেলে তাকিয়ে আছে ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ইটভাটার চিমনীর কাছে হুটোপুটি করছে কুলি-কামিনদের বাচ্চারা ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


কাজের অবসরে বিশ্রাম নিচ্ছে নিজের ঠেলাগাড়ির উপর বসে একরত্তি ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


একদল ইটভাটার শ্রমিকদের কাচবাচ্চা । স্যালুট করছে ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


আরো একদল ইটভাটার শ্রমিকদের কাচবাচ্চা । এদের জন্ম ইটভাটায়, বেড়ে ওঠা ইটভাটায়, কাজ করবে ইটভাটায় এবং বাকি জীবনটাও কাটবে ইটভাটায় । এদের বাবা মায়ের মতোই ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ইটভাটায় কাজের অবসরে দুই শিশুশ্রমিকের খুনসুটি ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


নো ক্যাপশন । ছবিটি তুলে খুব দুঃখ পেয়েছিলুম । বাচ্চাটার নিষ্পাপ মুখটি যেন এখনো চোখে ভাসছে আমার ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ইটভাটার বাচ্চাদের খেলাধুলা ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


এখন সময় তার স্কুলে যাওয়ার
অথচ, কাজ ছাড়া জুটবে না দু'মুঠো খাবার ।
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ


N.B. All the above photographs were originally taken by me & were previously published in my @royalmacro blog.

Sort:  
 2 years ago 

সত্যি দাদা এই শিশু-কিশোরদের এই অবস্থা দেখে নিজেকেও খুব খারাপ লাগে । নিজেকে খুব ছোট মনে হয় । আমাদের দেশ আজ কোন পর্যায়ে গিয়েছে । এমন সময় যে বাচ্চাদের মায়ের কোলে থাকা দরকার ,স্কুলে যাওয়া দরকার, খেলাধুলা ছোটাছুটি করা দরকার, সেই সকল বাচ্চাদের দিয়ে কি ধরনের শিশুশ্রম করানো হয় । এদেরকে কঠিন শাস্তি দেওয়া দরকার ।এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে ।ধন্যবাদ ও দোয়া রইলো দাদা ।

শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সচেতন হওয়া জরুরী৷ এই ফুলগুলো ফুটে উঠুক নির্বিঘ্নে, এটাই প্রত্যাশা।

too sad, there are no words that can describe the reality of the less fortunate children. it is a total injustice

 2 years ago 

শিশুশ্রম একটি মারাত্মক ব্যাধির মতো কাজ করছে। কিছুদিন আগে নীলফামারী আসার পরেও আমি দেখেছি বিভিন্ন ছোট খাটো হোটেলে বা দোকানে অনেক শিশুরা কাজ করছে।

 2 years ago 

এদের দেখলে শুধু মন থেকে কষ্ট লাগে। সাধ্যের মধ্যে সবাই মিলে কিছু করার যত বেশি চেষ্টা থাকবে ততবেশি এই সমস্যাগুলো দূর হবে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার আশেপাশে যারা গরীব রয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি কিন্তু এরচেয়েও সম্মিলিত কোন উদ্যোগ সমাজে আরো বড় অবদান রাখতে পারে।

সম্মিলিত প্রয়াসে তাদের জন্য অবৈতনিক স্কুল এবং মানসম্মত পড়াশোনার ব্যবস্থা এবং থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে সেটি অনেক ফলপ্রসূ হবে এবং এই কাজটি গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে বিভিন্ন জায়গায় শুরু করা যায়।

 2 years ago 

পুঁজিবাদ সমাজ ব্যবস্থায় আমরা একে অন্যের দাস হয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। এতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম অল্প বয়সে শ্রম দিতে শুরু করে। মূলত অর্থনৈতিক মন্দা এর একটা কারন এবং সরকারী ভাবে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের দূর্নীতির কারনে এদের জীবন অভিশপ্ত জীবনে রুপান্তরিত হয়। দাদা সঠিক বলেছেন। সুশিক্ষা না পাওয়ার দারুন কিছু মানুষ অর্থনৈতিক সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও অধিক সন্তান জন্মদানও কিন্তু এই ধরনের শিশু শ্রমিক তৈরীতে বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখে। কাকে দায়ী করবেন সম্পূর্ন সিস্টেম ই যদি করাপটেড হয় তাহলে কিছুই করার থাকে না। সুন্দর একটি বিষয়ের উপরে আলোকপাত করেছেন। ধন্যবাদ । শুভেচ্ছা রইল দাদা।

 2 years ago 

দাদা বাচ্চাগুলোদ হাতের ধুলোবালি দেখে অজান্তেই মনটা কেমন করে উঠলো।আমরা আমাদের ঘরের বাচ্চাদের কতোটা আদর যত্নে বড় করে তুলি।আর এ বাচ্চা গুলোর জন্মই যেনো দোষের।

 2 years ago 

আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে বাচ্চাগুলোর প্রতি মায়া লেগে গেলো। আমাদের সবার উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে এই সব সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। দাদা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভালোবাসা নিবেন। 💕💕

 2 years ago 

লেখাগুলো পড়ার পর অনুভূতিগুলো একটু জাগ্রত হয়েছিলো কিন্তু শিশুদের দৃশ্যগুলো দেখার পর সত্যি নির্বাক হয়ে গেছি, ফুটফুটে এই শিশুদের নিদারুণ দৃশ্যগুলো আবেগকে স্থমিত করে দিয়েছে, কিছু বলার নেই। খুব সুন্দরভাবে দৃশ্যগুলো উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ

 2 years ago 

ছবিগুলো দেখে চিন্তা করছি, কত নিশ পাপ চেহারা।যখন তাদের পড়ার কথা,এই বয়সে পেটের তাগিদে কাজ করছে।এত কষ্টের মাঝে ও কত সুন্দর হাসি।তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখার আছে।ভালো ছিলো।ধন্যবাদ আপনাকে।শুভেচ্ছা রইলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.17
JST 0.032
BTC 63715.34
ETH 2738.90
USDT 1.00
SBD 2.61