রহস্যগল্প 'মাশরুম" - পর্ব ০২

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)


copyright free image source pixabay

প্রথম পর্বের পর


প্রফেসর বললেন, "আপনাকে বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আপনি টাচ করতে যাচ্ছিলেন ।"

-"আমি কিছুই টাচ করতে যাচ্ছিলাম না ড: সোম, আর মাশরুম টাচ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল । কিন্তু, এই গামলাতে তো কোনো মাশরুম ছিল না ।"
-" যাই হোক, আপনি ওখান থেকে সরে আসুন প্লিজ । ডিনার রেডি । চলুন আমরা ডিনারে যাই ।"
-"আচ্ছা, চলুন যাই ।"

মৃদু হেসে বললেন বালাপোরিয়াজী । হঠাৎ, তিনি দেখতে পেলেন মাশরুম ঘরের একেবারে শেষের দিকে গাঢ় নীল রঙের একটা ভারী পর্দা ঝোলানো।

-"ওখানে কি আছে বলুন তো ?"
-"কোথায় ?"

পর্দার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বললেন বালাপোরিয়াজী ।

-"ওখানে, পর্দার পিছনে ।"
-"কিছু না, মাশরুম পরিচর্যার টুলস আছে কয়েকটি ।"
-"ওকে, চলুন যাই ।"

আরও একবার সন্দেহভরা চোখে তাকালেন পর্দার দিকে মি: বালাপোরিয়া । "মাশরুম ঘর" থেকে বেরিয়ে গবেষণাগারের দিকে যেতে যেতে লক্ষ্য করলেন ড: সোম কোনো একটা ব্যাপারে ভীষণ উদ্বিগ্ন । যাই হোক, এ নিয়ে আর ঘাঁটালেন না বালাপোরিয়াজী ।

ডিনার টেবিলে বাবুর্চি অনেক রকম প্রিপারেশন করেছে আজ অতিথির জন্য দেখা গেলো । বনমোরগের ঝাল রোস্ট, বাঁশের কোঁড়ের স্যুপ, বাসন্তী পোলাও, চিকেন পিকল হরেক রকম আয়োজন । কিন্তু, ডিনার টেবিলে ভয়ানক চুপচাপ ছিলেন ড: সোম । অতিথি আপ্যায়নের জন্য যেটুকু সৌজন্য না দেখালেই নয় তার বাইরে কিছুই বললেন না । মনে মনে বেশ খানিকটা ক্ষুণ্ন হলেন মি: বালাপোরিয়া ।

যাই হোক, খাওয়া পর্ব মিটলে দ্রুত শোওয়ার প্রিপারেশন নিলেন মি: বালাপোরিয়া । কালকেই ভোরে চলে যাবেন তিনি । এখানকার কাজ মোটামুটি শেষ তাঁর । কয়েকটা ফাইল শুধু সকালে ড: সোমের কাছ থেকে নিয়েই রওনা হয়ে যাবেন তিনি ।

রাত দু'টো । গবেষণাগারের মেইন গেট খোলার মৃদু কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল বালাপোরিয়াজীর । সন্তর্পণে জানালার পাল্লা খুলে দেখতে পেলেন নিচের মেইন গেট খুলে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কেয়ারটেকার ছোট্টুলাল । যেন, কারও অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ।

মিনিট দুয়েক পরে দেখতে পেলেন আবছা আলোয় কে যেন একজন "মাশরুম ঘরের" দিক থেকে হেঁটে গবেষণাগারের মেইন গেটের দিকে এগিয়ে আসছেন । কাছে এলে চিনতে পেরে অবাক হয়ে গেলেন । প্রফেসর সোম । এত রাত্রে "মাশরুম ঘরে" কী কাজ থাকতে পারে ?

গেট বন্ধ হয়ে গেল । কিছুক্ষন জুতোর শব্দ পাওয়ায় গেল । তারপর সব নিঃস্তব্ধ ।

জানালার কাঁচের শার্শি টেনে দিলেন মি: বালাপোরিয়া । মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে বিষয়টি । কী এমন গোপন গবেষণা করেন ড: সোম যে রাত দু'টোর সময় এত চুপিচুপি মাশরুম ঘরে যেতে হয় ।

ওনার বক্তব্য মতে ওনার তো রাত জেগে কাজ করার কথা ওঁনার ল্যাবরেটরীতে । তবে ?

তার ওপর আছে ওনার সেই সময়কার অদ্ভুত আচরণ । কোনো মাশরুম টাচ না করে ওই অদ্ভুত গামলার কাছে যাওয়াতে ওনার অত রাগ আর উদ্বিগ্ন হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে বোধগম্য হচ্ছে না এখন । ভারী নীল পর্দার পিছনে কি আছে ? অদ্ভুত মিষ্টি গন্ধটা কোথা থেকে আসছিলো ? মি: বালাপোরিয়ার তো মনে হচ্ছিলো গামলাটা থেকেই মিষ্টি গন্ধটা ভেসে আসছিলো ।

এ সবই ঘুরপাক খাচ্ছিলো বালাপোরিয়াজীর মাথার মধ্যে । অস্থির হয়ে শেষে মুড রিলাক্স করার জন্য এক গ্লাস জল খেয়ে ঘরের ভিতরকার ছোট্ট বুকশেল্ফের সামনে এসে দাঁড়ালেন মি: বালাপোরিয়া । কাঁচের পাল্লা খুলে বই খুঁজতে শুরু করলেন । মাথাটা পুরো তেতে আছে । কিছুক্ষন বই না পড়লে এখন আর ঘুম আসবে না ।

কী বই পড়বেন ? শেলফ জুড়ে শোভা পাচ্ছে শুধুমাত্র বোটানি, জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং আর ফানজিকালচারের অজস্র বই । আর আছে কিছু গবেষণাধর্মী দেশি বিদেশী জার্নাল । সেলফের পাল্লাটা বন্ধ করতেই যাচ্ছিলেন; এমন সময় চোখে পড়লো একটা লাল রঙের কভার দেওয়া ডাইরী গোছের নোটবুক ।

অত্যন্ত কৌতূহলবশে নোটবুকটা নিয়ে বেডে এসে বসলেন মি: বালাপোরিয়া । অনুমতি ছাড়া অন্যের লেখা ডাইরি পড়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ জেনেও মাত্রাধিক কৌতূহলের কাছে ন্যায় অন্যায় বোধটা চাপা পড়ে গেল ।

ডাইরির প্রথম পাতাতে জ্বলজ্বল করছে ড: সোমের নাম । পাতার পর পাতা ওল্টাতে লাগলেন মি: বালাপোরিয়া । ঝরঝরে ইংরেজিতে লেখা । পড়তে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না । হঠাৎ, এক জায়গায় এসে চোখ আটকে গেলো ।

"আমার মাস্টারপিস" লেখা এক জায়গায় । নিচে লাল রঙের আন্ডারলাইন করা । ড: সোমের সেরা আবিষ্কার সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষেপে কিছু লেখা রয়েছে ড: সোমের নিজেরই হস্তাক্ষরে । বর্ণনা পড়ে মনে হচ্ছে সেই পেতলের গামলার মাশরুম নিয়ে লিখেছেন ।

ও, ওটাই তাহলে ড: সোমের মাস্টারপিস । সেরা আবিষ্কার । তাই উনি হঠাৎ অত উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন সেসময় । কিন্তু, বালাপোরিয়াজী তো কোনো মাশরুম দেখতে পাননি পেতলের সেই গামলাটিতে । তাহলে ?

পরের পৃষ্ঠা ওল্টালেন মি: বালাপোরিয়া । কিছুটা পড়েই হঠাৎ যেন শক খেলেন । চক্ষু বিস্ফারিত । ভয়ের একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল মেরুদন্ড দিয়ে । এও কী সম্ভব ?

.......[চলবে ]

Sort:  

দাদা আপনার পোস্ট অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।এত সুন্দর লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

 3 years ago 

দাদা পোস্টটি অনেক আসাধাণ হয়েছে ।

 3 years ago 

এমন সময় গল্পটি শেষ হয়ে যায়, খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। পড়তে পড়তে মনে হয় একদিনে শেষ হলে ভালো হতো, আবারো অপেক্ষা করতে হবে।

একদিনেই শেষ হলে তো গল্পের মজাটা একদিনেই শেষ হয়ে গেলো।তার থেকে ধাপে ধাপেই ভালো লাগতেছে আমার কাছে☺️☺️😍

 3 years ago 

কি দেখলেন তিনি?আমারও খুবই কৌতূহলী লাগছে।না জানা পর্যন্ত ভালো লাগছে না।দাদা পরবর্তী পর্ব তাড়াতাড়ি চাই।

 3 years ago 

কি যে হচ্ছে এসব। দাদা আবারো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসে থামে দিয়েছেন। আগামী পর্বটি খুব তাড়াতাড়ি দিয়েন।

 3 years ago 

ওয়াও দাদা।গল্প পরতে পরতে যখনই শেষ প্রান্তে চলে এসেছি আর লাস্ট লাইন টা দেখলাম একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখে প্রশ্নবোধক চিন্হ বসিয়ে।,চলবে লিখেছেন তখন থেকে লাস্ট কথাটা জানার জন্য মন আনচান কিরছেন।গল্পটি পড়েই বোঝা যাচ্ছে মাস্টারপিস হবে। দাদা আমরা পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।ভালোবাসা নিবেন@rme দাদা💖💖

 3 years ago 

পর্ব-২ এর অপেক্ষায় ছিলাম।কিন্তু উত্তেজনাপূর্ন জায়গায় এসে আবার স্থগিত।🥺
বেশি অপেক্ষা করাবেন না দাদা🙏

 3 years ago 

গল্পটা পড়ার সময় মনে হচ্ছিল পড়ে কি হবে?এক সেকেন্ডের জন্য ও উঠতে পারিনি।লাস্ট মুহূর্তে এসে ভাবছিলাম হয়তো বালপুড়িয়া দেখতে যাবে মি সোম কু করে!কিন্তু পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

 3 years ago 

ভেবেছিলাম দ্বিতীয় পর্বে এসে কোন একটা রহস্যের উন্মোচন ঘটবে। কিন্তু এখানে এসে তো দেখছি আরও বেশি উত্তেজনায় পরে গেলাম।

 3 years ago 

হা হা হা হা দাদা সত্যি রহস্য ঢুকিয়ে দিলেন মনের ভিতর।

প্রথম পর্বে সকলের মন্তব্য দেখে বেশ মজা নিয়েছিলাম কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে এসে আর মন্তব্য না করে থাকতে পারলাম না। প্রথম পর্বের রহস্য এবং তার জের সম্ভবত শেষ অবদি টেনে নিয়ে যাবে, আমার বিশেষ সেন্স সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গল্প কিংবা রহস্য, এর স্বার্থকতা তখনই আসে যখন এর প্রতি আকর্ষনটা শেষ অব্দি থাকে। রহস্যের মাঝে রয়েছি, তাই পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম-যদি কিছু রহস্যের সমাধান পাওয়া যায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 62276.80
ETH 3005.63
USDT 1.00
SBD 3.62