ছোটবেলার স্কুল স্মৃতি : "অনিয়মিত শিক্ষার্থী"steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগlast year

boys-286245_960_720.jpg
Copyright Free Image Source: PixaBay


আমাদের সময়ে যদিও স্কুলে উপস্থিতির জন্য এতটা কড়াকড়ি ছিল না তবুও স্কুল কামাই করলে বেত দিয়ে মারা, কান ধরে দাঁড়ানো, নিল ডাউন প্রভৃতি মজার মজার সব শাস্তির বিধান ছিল । আমি যেহেতু বাবার স্কুলেই পড়েছি তাই কোনোদিনও এসব সাজা লাভ করার সৌভাগ্য হয়ে ওঠেনি । তবে, আমার আর সব বন্ধু বান্ধবের কপালে অনুপস্থিতির জন্য এই ধরণের সাজা লেখা ছিল অবশ্যম্ভাবী ।

যেহেতু বাবার স্কুল তাই, আমি মনের সুখে স্কুল কামাই করতাম । আর বাবাও সেই তালে তাল দিতো । প্রায়ই দিন বলতো স্কুলে আজ যেতে হবে না তোমার, স্কুলে ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা হয় । বাড়িতে বসে পড়ো । এই শুনেই মন আমার নেচে উঠতো । বাড়িতেও ওই সময়টা আমি ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা করতাম । প্রায় দিনই স্কুলের বইয়ের মধ্যে হী ম্যান আর চাচা চৌধুরীর কমিক্স রেখে পড়তাম, না হয় ছবি আঁকতাম বা ভিডিও গেম্স্ খেলতাম কম্পিউটার এ ।

তো পরীক্ষার পরে প্রগ্রেস রিপোর্টে উল্লেখ থাকতো বছরভর স্টুডেন্টদের উপস্থিতির হার । আর আমার প্রগ্রেস রিপোর্ট খুলে প্রত্যেকবারই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যেতো উপস্থিতির ঘরগুলোতে চোখ বুলিয়ে । শিউরে ওঠার মতো উপস্থিতির সংখ্যা -

জানুয়ারি ০, ফেব্রুয়ারি ২, মার্চ ১৩, এপ্রিল ১৬, মে ৩ (গরমের ছুটি থাকতো এ মাসে), জুন ১০, জুলাই ২ (বৃষ্টির দিনে স্কুলে যাবে কোন আহাম্মক), আগস্ট ১৭, সেপ্টেম্বর ২১, অক্টোবর ১ (পুজোর ছুটি থাকতো এ মাসে). নভেম্বর ১১ (কালীপুজো, দীপাবলী এসব ফেলে স্কুলে যেতে মন চাইতো না, শুধুমাত্র নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এক্সাম শুরু হতো বলে একটানা কিছু উপস্থিতি ছিল) এবং ডিসেম্বর ৫ (ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই এক্সাম শেষ হয়ে যেতো, তারপরে আর স্কুলে যেতে বয়েই গেছে আমার) ।

ক্লাস টীচার বলতেন -"তোমার বাবার কারণে তোমায় কিছু বলতেও পারি না, কিন্তু এ কেমন উপস্থিতি ? একজন ভালো স্টুডেন্টের গুণ শুধুমাত্র তার প্রগ্রেস রিপোর্টে মার্ক্স্ দেখে হয় না, উপস্থিতির হারও একটা বড় জিনিস । এখন থেকে চেষ্টা করবে ক্লাসে নিয়মিত হতে ।" শুনে আমি দুলে দুলে ঘাড় নাড়তাম, কিন্তু প্রায় তৎক্ষণাৎ এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিতাম কথাগুলি ।

গ্রামের নিচু স্কুলে পড়ার সময় তো বর্ষাকালে টিফিন পিরিয়ডে বাড়িই চলে আসতুম, আর ফিরে যেতুম না টিফিনের পরে । আমার সহপাঠীরা বাড়ি বয়ে এসে স্কুল ব্যাগ পৌঁছে দিয়ে যেতো । আর উপস্থিতির হারও ছিল একদম নগণ্য । তার ওপর আবার স্কুল শেষ হওয়ার আগেই কত দিন যে বাড়ি চলে আসতাম তার ঠিক নেই । টিচাররাও কেউ কিছু বলতে পারতেন না, কারণ আমার বাবা ছিলেন আবার ওই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ।

আমাদের সাথে একটা ছেলে পড়তো । পড়াশোনায় একদম যাকে বলে লবডঙ্কা ছিল । কিন্তু, উপস্থিতিতে একদম তাক লেগে যাওয়ার মতো পারমারফ্যান্স। প্রায় ১০০% উপস্থিতির হার ছিল তার । বর্ষাকালে দারুন দুর্যোগের দিনে হয়তো বেশিরভাগ টিচার এবং স্টুডেন্ট হাজির হতে পারেনি, কিন্তু আরিফ ঠিকই হাজির হয়ে যেতো । একবার শুনেছিলাম দারুন ঝড়ের একটা দিনে আমাদের সেকশন এ একটি মাত্র স্টুডেন্ট হাজির ছিল, আর সে হলো আরিফ ।

আমার ছেলে এখন সবে স্কুল জীবনে প্রবেশ করেছে । পড়ে প্লে গ্রূপে । মাত্র ৩ মাস হলো তার স্কুল লাইফ । এর মধ্যে ১ দিন মাত্র অনুপস্থিত ছিল । জ্বর হয়েছিল তার, সে জন্য । তবুও স্কুলে এপ্লিকেশন দেওয়া লেগেছিলো ওই একটি মাত্র দিন অনুপস্থিতির জন্য ।

একাল আর সেকাল । এক আকাশ তফাৎ ।


পরিশিষ্ট


আজকের টার্গেট : ৫১০ ট্রন জমানো (Today's target : To collect 510 trx)


তারিখ : ২৫ এপ্রিল ২০২৩

টাস্ক ২৪৬ : ৫১০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

৫১০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 7eb5fdb62d0bb52166f0907e88de177922c11ecdbcdc271f77c9cc6dcf022b1f

টাস্ক ২৪৬ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Sort:  
 last year 

আপনার ছোটবেলার স্কুল জীবনের ঘটনা গুলো শুনে খুব ভালো লাগলো, আমি খুব একটা স্কুল কামাই করিনি কিংবা পালানোর রেকর্ড নেই। একদিন রাগ করে স্কুলে যায়নি স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে বাহিরে ঘোরাঘুরি করছিলাম এই ছিল আমার জীবনে একদিন স্কুল পালানোর রেকর্ড।

 last year 

দাদা আপনি আপনার বাবার স্কুলে পড়েছেন বলে এই অনুভূতি গুলো কখনোই পাননি আসলেই এ যে কি অনুভূতি যা না পাইলে বোঝা যাবে না। তবে এ ধরনের শাস্তি গুলো পাওয়ার থেকে দেখার মজাটাই আলাদা। আপনার মত আমরাও টিফিনে বাড়ি আসতাম এসে আর যেতাম না। অবশ্য বাড়িতে ফিরতাম না এদিক-ওদিকে ঘুরে বেড়াতাম। সব মিলিয়ে স্কুল লাইফটা সত্যি অনেক মজার। আপনার লেখাগুলো পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো ধন্যবাদ দাদা।

 last year 

বাড়িতেও ওই সময়টা আমি ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা করতাম ।

😄

দারুন দারুন 😍
ভালো ছাত্রদের এতো পড়াশোনা করতে হয় না 😅 আর স্কুলে এতো যেয়ে কি কাজ। তবে আমার ক্ষেত্রে মায়ের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে বেশি স্কুল কামাই দিতে পারতাম না। তবে ছাত্র মোটামুটি ভালো ছিলাম। দাদা আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে ছোট বেলায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম মনে হয়।
তবে সত্যিই তখনকার সময় আর এখনকার সময় বিশাল ফারাক।

 last year 

দাদা আপনি তো দেখছি দারুণভাবে স্কুল ফাঁকি দিয়েছেন। আপনার স্কুলে উপস্থিতির হার দেখে তো বেশ মজা পেলাম দাদা😅। তবে এখন স্কুল ফাঁকি দেওয়া ভীষণ মুশকিল। টিনটিন এত ছোট হয়েও এখনো স্কুল মিস দেয়নি জেনে ভালো লাগলো। হয়তো অসুস্থতার কারণে একদিন অনুপস্থিত ছিল। আশীর্বাদ করি সে যেন একজন ভালো মানুষ হয়।

 last year 

দাদা আজকের পোস্টটি পড়ে ১০০% মজা পেয়েছি।🤗খুব ভাল লাগলো আপনার স্কুল জীবনের গল্প পড়ে।সত্যি আপনার সময় আর এখন অনেক তফাৎ। আপনি তো আপনার বাবার কারনে বেঁচে গেছেন।এখন স্কুলে দরখাস্ত জমা দিতে হয়।আর অসুস্থ হলে প্রেসক্রিপশন ও দেখাতে হয়।যাক আপনি খুব রিলাক্স মুডে স্কুল করেছেন।কিছু সময়ের জন্যই আমিও স্কুল জীবনে চলে গিয়েছিলাম।আমিও নিয়মিত ছাত্রীটি ছিলাম।ধন্যবাদ দাদা শেয়ার করার জন্য। খুব ভাল লেগেছে।

 last year 

স্কুলে ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা হয় । বাড়িতেও ওই সময়টা আপনি ঘোড়ার ডিম পড়াশোনা করতেন,হা হা হা। এই অংশটা পড়ে আমি হাসঁতে হাসঁতে শেষ। দাদা আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে আপনার সহপাঠি আরিফ ভাইয়া এখন কি করে। তার কোন খুজ খবর আছে না কি আপনার কাছে। ধন্যবাদ দাদা।

 last year 

দাদা আপনার ছোটবেলার স্কুলের স্মৃতি শুনতে পেরে বেশ ভালই লাগলো। ষ ছোটবেলায় আমিও আমার বাবার স্কুলেই পড়তাম। আমি যেদিন স্কুলে যেতাম না বাবা স্কুল থেকে বাড়িতে এসে আমাকে সাইজ করতো। ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ স্টুডেন্ট আমি ছিলাম। লেখাপড়া একদম জিরো। আপনি স্কুলে না গিয়ে কমিকস, গেম এগুলো খেলতেন যেন বেশ ভালো লাগলো। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা।

 last year 

হুম দাদা আপনার মতো আমিও ছিলাম স্কুল ফাকি বাজ ৷ যদিও মা অনেক বকাবকি করতো ৷ আবার স্কুলে গেলেও ৷ একবার তো ফেল করেছিলাম ৷ আসলে সেই ছোট্ট সময়ের কথা গুলো সত্যি বড় অদ্ভুত ৷ ভালো লাগলো আপনার জীবন কাহিনী স্কুল জীবনের ৷ তবে ভাগ্য ভালো আপনার বাবা ওই স্কুলের সভাপতি নয়তো কি যে হতো ৷

 last year 

দাদা, আপনার ছোটবেলার স্কুল স্মৃতি পড়ে খুবই মজা পেলাম। সত্যিই দাদা একাল আর সেকাল যেন এক আকাশ তফাৎ। কেননা আগে স্কুলে অনুপস্থিতি অথবা টিফিনের সময় পালিয়ে গেলে মজার মজার সব শাস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। আর হ্যাঁ দাদা, আপনার সাথে পড়ুয়া ছাত্র আরিফের মত আমার স্কুলেও একজন এমনই ছাত্র ছিল, যে কিনা লেখাপড়ায় খুবই দুর্বল ছিল। অথচ তার স্কুলে আসার উপস্থিতি অনেক অনেক বেশি ছিল। আর সেই ছেলেটি এখন সরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্তব্যরত রয়েছেন। কার ভাগ্য কখন সহায় হবে সে বলা বড়ই মুশকিল। যাইহোক দাদা, আপনার ছোটবেলার স্কুল স্মৃতি নিয়ে খুবই মজার একটি পোস্ট উপস্থাপন করেছেন, এজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

দাদা আপনার স্কুল জীবনের গল্প দেখে খুবই হাসি পেল আমার। বিশেষ করে কিছু কিছু জায়গায় হাসি থামাতেই পারছিলাম না। টিফিনে বাড়ি চলে আসার পর , স্কুল ছুটির শেষে স্কুলের বন্ধু-বান্ধবীদের আপনার বাড়িতে ব্যাগ পৌঁছে দিতে যাওয়াটা সেরা ছিল। তাছাড়া আপনার স্কুলে উপস্থিতির হার তো দেখছি খুবই ভালো ছিল হা হা হা। তবে টিনটিন কিন্তু খুব উৎসাহের সাথে স্কুলে যায়,রাত্রেও তার স্কুলে যেতে পারলে ভালো হয় হিহিহি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 61155.34
ETH 2383.47
USDT 1.00
SBD 2.56