একটি অভিশপ্ত দিনের গল্প
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, এই মাত্র মাসখানেক আগের কথা, নরকযন্ত্রণার ভিতর দিয়ে কেটে ছিলো বেশ কয়েক ঘন্টা সময় । অন্য আর পাঁচটা দিনের মতো সেদিনও কি ভাবতে পেরেছিলাম যে এমন বিপদে পড়ে যাবো আমরা !
২৯ শে আগস্ট ২০২১ । সেদিনটি ছিল রৌদ্রকরোজ্জ্বল বেশ গরম একটা দিন । সকালে ঘুম থেকে উঠেই ইমেইল চেক করে মেজাজ গেলো খিঁচড়ে । যে প্রজেক্টটা স্পেটেম্বরের ফার্স্ট উইক এর যে কোনো এক দিন ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল সেটাই আর্জেন্ট ডেলিভারির জন্য রিকোয়েস্ট আর সাথে বাড়তি পেমেন্টও করেছে without my consent । কি আর করা । ক্লায়েন্টদের অবহেলা আমি কোনো কালেই করি না ।
তাই ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেলাম নাওয়া খাওয়া ভুলে । বিকাল ৪ টার দিকে প্রজেক্টটা ডেলিভারি দিয়ে ভাবলাম একটু ফ্রেশ হয়ে আসি বাইরে থেকে । ড্রাইভারকে ফোন দিলাম । দ্রুত রেডি হতে বললাম তনুজা আর আমার ভাইকে । টিনটিনবাবু ঘুমোচ্ছিলো । ওকে ঘুম থেকে ওঠালাম । তারপর সবাই রেডি হয়ে রওনা হলাম গ্রামের দিকে ।
আমাদের বাড়ি থেকে গ্রাম অনেকটাই পথ । ৫০ কিমির মত । তো গেলাম পথের প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে একটা অজানা গ্রামের বাজারে । সেদিন ছিল আবার হাটবার । আমরা গাড়ি থেকে নেমে কিছু টুকটাক বাজার করলাম । এক জায়গায় দেখি গ্রামের ফ্রেশ জ্যান্ত মাছ বিক্রি হচ্ছে । কিনে নিলাম কিলো দু'য়েক । তনুজা কিনলো কিছু শাপলা ফুল । এছাড়া আরো বেশ কিছু গ্রামের টাটকা সবজি কিনলাম ।
হাটের এক স্থানে বিক্রি হচ্ছিলো আলুর চপ । গরম গরম আলুর চপ । করোনা কালীন সতর্কতা মাথায় রেখে আমরা আবার ভাজিয়ে নিলাম গোটা দশেক আলুর চপ । তারপরে গাড়িতে উঠে হাট ছাড়িয়ে ২ কিলোমিটার দূরে একটা মাঠের কাছে গাড়িটা পার্ক করে আমরা সবাই গাড়ি থেকে নেমে চপ খেলাম ।
চারিদিকে আদিগন্ত চষা মাঠ ছাড়া আর কোনো কিছুই নেই । মাঠে কৃষকরা কাজ করছে । শুধুমাত্র ছোট্ট একটা বাড়ি ছিল আমাদের গাড়ি যেখানে পার্ক করেছিলাম তার কাছে । টিনটিনবাবু একটু বেড়ু করতে বেরোলো । আমি কয়েকটি ছবি তুললাম, বেশ কিছু সেলফিও তুললাম । সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো ক্রমে ।পাখির ডানায় বিকেলের মরা রোদ ফিকে হতে হতে গাঢ় অন্ধকারে পরিণত হল অবশেষে । আমরা সবাই গাড়িতে উঠলাম । ড্রাইভার সেলফ স্টার্ট বাটনে চাপ দিলো ।
কিন্তু গাড়ি স্টার্ট নিলো না । একবার, দু'বার, তিনবার । গাড়ি স্টার্ট নিলো না । একদম নিউ কার । অথচ কি হলো ! বুঝুন অবস্থাটা ।
ড্রাইভার ক্রমাগত চেষ্টা করে যেতে লাগলো । চারিদিকে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এসেছে । চারিপাশের মাঠ শূন্য । যারা মাঠে কাজ করছিলো সন্ধ্যা নামতে চলে গেছে বাড়িতে ।আশেপাশে কেউ নেই ।শ্রাবন মাসের রাত । আকাশে চাঁদ-তাঁরা কিছুই নেই । গ্রামের রাস্তা । কোনো রোড লাইট নেই । আশেপাশে বাড়ি ঘর কিছুই নেই । আমরা বিপদে পড়ে গেলাম ।
সঙ্গে বাচ্চা রয়েছে । তার খিদে পেয়েছে । অথচ গাড়িতে দুধ, জল কিছুই নেই । আনার প্রয়োজন মনে করিনি । বেশিক্ষন লাগবে না ফিরতে তাই ।
কি করা এখন ? ইতিমধ্যে ১ টি ঘন্টা পার হয়ে গেছে । রাত গভীর হচ্ছে, অন্ধকার আরো গাঢ় হয়ে এসেছে । ড্রাইভার তার যত বিদ্যে ছিলো সব এপলাই করলো । কিন্তু কোনো কাজ হলো না । বার বার বলতে লাগলো এই গাড়ির সে তেমন কিছুই জানে না । লাক্সারি গাড়ি চালানোর তার অভ্যাস নেই ।
নিরুপায় হয়ে আমার মাহিন্দ্রার শো রুমের পার্সোনাল এসিট্যান্ট ম্যানেজারকে call করলাম । অনেক ইন্সট্রাকশন্স দিলেন উনি কাজ হলো না । গাড়ি স্টার্ট নিলো না । বাধ্য হয়ে গাড়ির এসি অফ করে ব্যাটারি সাশ্রয় করতে লাগলাম । ড্রাইভার তার গুরুকে কল করে অনেক কায়দা এপলাই করলো । কাজ হলো না । গাড়ি একেবারে নট নড়ন চড়ন, নট কিচ্ছু ।
রাত তখন ৮ টা । টিনটিন বাবুর গরম লাগছে খুব । এসি অফ । চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো । ভারী বিপদে পড়লাম । দ্রুত কল করলাম আমাদের পাড়ার এক পরিচিতকে । একটা গাড়ি পাঠাতে বললাম । সে সাথে সাথে একটা গাড়ি পাঠিয়ে দিলো । গাড়ি আসতে মিনিমাম ৪০ মিনিট লাগবেই । wait করা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর নেই । অগত্যা ।
এবার আমার গাড়ির কি করা যায় । মুম্বাই তে কল করলাম । মাহিন্দ্রার ইমার্জেন্সি হেল্প সেন্টারে । তারা আমাকে একটা রোড অ্যাসিস্ট্যান্ট এর নাম্বার দিলো ।কল করলাম । আমার রোড এসিট্যান্ট সাবস্ক্রিপশন ছিল । ওখান থেকে আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলো । লোকেশন শেয়ার করে দিলাম । এর পর কল করলাম XUV500 W11 র পার্সোনাল কার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার কে । ইচ্ছেমত ঝাড়লাম মিনিট দশেক ধরে । এতো দামি গাড়ি মাত্র ৬ মাসে ডিসটার্ব ! সে আমাকে বললো সব রিপেয়ার চার্জ আবসোলুটলি ফ্রি করে দেবে । বিল লাখ টাকার উপরে গেলেও । সে তার কথা রেখেছিলো । কিন্তু, গাড়ি নষ্ট হওয়ার কষ্টের কাছে ওটা কিছুই না ।
যাই হোক, অবশেষে আমাদের ব্যাকআপ কার এসে হাজির হলো । আমি , তনুজা আর টিনটিন সেই গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে এলাম । তখন বাজে রাত দশটা । আমার ভাই আর ড্রাইভার সেই ফাঁকা মাঠে অন্ধকারে রোড এসিস্টেন্টের জন্য wait করতে লাগলো । এদিকে বাড়িতে বসে টেনশনে মাথা খারাপের জোগাড় ।তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ভেবে আমার মনের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েছিল । যাই হোক ফর্চুনেটলি রাত ১ টার দিকে রোড অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে কার পিকআপ করে নিয়ে গেলো । রাত প্রায় তিনটের দিকে আমার ভাই বাড়ি ফিরে এলো ।
ডেইলি গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট না করে ঘন্টার পর ঘন্টা ড্রাইভার এসি চালিয়ে ভিডিও দেখতো গাড়ির মধ্যে বসে । ফলশ্রুতিতে ব্যাটারির সেল নষ্ট । যাই হোক আমার প্রিয় XUV500 এখন নতুন ব্যাটারি লাগিয়ে দিব্যি চলছে । নো ইস্যু । কোনো রিপেয়ার বা purchase চার্জ লাগেনি আমার । সব মাহিন্দ্রা বহন করেছে । ভবিষ্যতের এই ধরণের ঝামেলা থেকে মুক্তির জন্য অবশেষে আমার ভাইকে আর একটা কার কিনে দিলাম । যেটা আপনারা গত পোস্টে দেখেছেন । ওটাও SUV car, Hyundai Alcazar Signature Starry Night ।
আলোকচিত্র তোলার তারিখ ও সময় : ২৯শে আগস্ট ২০২১, বিকাল ৫ টা বেজে ২৩ মিনিট থেকে ৫ টা বেজে ৫৭ মিনিট পর্যন্ত
স্থান : পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ
Good!
এমন বিপদের সম্মুখীন যারা হয়,তারাই বোঝেন কি অবস্থা। যা আপনার হয়েছিল।ব্যপারটি সেই মুহুর্তে ডিসকর্ডেও ঝড় তুলেছিল।আমরাও চরম মর্মাহত ছিলাম।
যাই হোক বিপদ আসে, আবার কেটে যায় এটাই নিয়ম।অনেক সুন্দর পোস্ট লেখার জন্য ধন্যবাদ।
দাদা এমন দিন যেনো আমার শত্রুর ও না আসে জীবনে। আপনারা কি ভয়াবহ অবস্থায় পরেছিলেন তা আমরা এখন অনুভব করতে পারি। সাথে বৌদি এবং টিনটিন থাকায় তাদের নিরাপত্তা নিয়ে আপনি আরো চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কি ভয়াবহ একটা সময় আপনারা কাটিয়েছেন তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করি যেনো ভবিষ্যতে আর কখনো এমন পরিস্থিতিতে আপনাদের পরতে না হয়। তবে দাদা ড্রাইভারের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। না হলে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে। আপনাদের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।
যদিও আগে শুনেছি তবে আজকের পোস্ট থেকে পুরোপুরি বুঝতে পারলাম। আপনি এবং আপনার পরিবার মিলে একটি অভিশপ্ত দিন ও রাত কাটিয়েছেন। আপনার পুরো পরিবারের জন্য শুভকামনা রইলো এমন দিন যেনো আর না আসে।
আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া জিনিসগুলি একরকম আমাদের বাড়তে সাহায্য করে, তাই এগিয়ে যান
এই কাহিনি তো আমাদের সবারই জানা দাদ। সেদিন আপনার সাথে কী একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গিয়েছিল। সত্যি ঐ পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে নিজেকে এখনই অসহায় মনে হয়। তারপর আবার সাথে টিনটিন বাবু। খাওয়ার মতো জলও ছিল না। অবস্থা টা খুবই সংকটপূর্ণ ছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে কোন বিপদ আপদ ছাড়াই আপনারা উথরে গিয়েছিলেন।হ
আপনার লেখাটি পড়ে টিনটিন বাবুর জন্য আমার বেশি খারাপ লাগলো দাদা। টিনটিন বাবু গরমে ও ক্ষুধায় বেশ কষ্ট করেছে। বড়রা ক্ষুধা বা গরম সহ্য করতে পারে কিন্তু টিনটিন বাবু খুবই ছোট তার অনেক কষ্ট হয়েছে সেই সময়টি পার করতে। কেউ যেন কোনদিন এই রকম বিপদের সম্মুখীন না হয় এই কামনাই করি সব সময়। আপনি যেহেতু অনেক ভালো মানুষ তাই সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সব বিপদ থেকে খুব সহজেই মুক্তি দিবে। টিনটিন বাবুর জন্য রইল অনেক অনেক ভালোবাসা❤️❤️।
দাদা এই মুহূর্তগুলো কতটা কষ্টের হয় সেটা সেটা সম্পর্কে আমার ন্যূনতম অভিজ্ঞতা আছে কারণ আমিও এরকম বিপদে পড়েছিলাম গভীর রাতে।তখন মাথা সঠিক কাজও করতে চায় না কি করব কাকে ফোন দেবো কোথায় সমাধান পাব ড্রাইভার তার সাধ্যমত চেষ্টা করেও কোনও লাভ হচ্ছে না পথের ড্রাইভার আর আমি।ভাবুন একবার কি অবস্থা তাই সেদিন আপনার অবস্থাটা আমি একটু হলেও বুঝতে পেরেছিলাম দাদা♥যাই হোক যে কোন বিপদ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি যে কোন বিপদ থেকে শিক্ষা অর্জন করা যায়। একটা দুর্যোগ অনেকগুলো সুযোগ বয়ে আনে ধন্যবাদ দাদা ভালো থাকবেন♥
দাদা শুভেচ্ছা রইল আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য। আপনার বাস্তব জীবনের গল্প পড়তে পড়তে ভাবছিলাম এটা কি কোন অলৌকিক ঘটনার গল্পো কিনা। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম তারপর কি হল। সাথে ছোট্ট বাচ্চা থাকলে ভয় হওয়াটা স্বাভাবিক । আসলেই খুব একটা কঠিন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দিন টি পার করেছেন। তবে আমি মনে করি ইশ্বর যা করেন ভালই করেন। যদিও আপনাদের অনেক কষ্ট হয়েছে তবু একটা কঠিন পরিক্ষার মধ্য দিয়ে সময় টা অতিবাহিত করেছেন এবং পরিক্ষায় উত্তীন হয়েছেন । ইশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন এই কামনা করি। এ রকম বাস্তব ঘটনা ঘটে যাওয়া আপনার জীবনের আরো গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থাকবেন সব সময়।
মাঝ শুনশ্মান গ্রামের রাস্তায় সমস্যায় পড়াটা ভারী ঝুঁকিপূর্ণ।যারাই সমস্যায় পড়ে তারাই বুঝতে পারে কতটা কষ্টদায়ক ব্যাপার।আমি আপনাদের কষ্টটার কথা শুনে দূর থেকে কিছুটা অনুভব করতে পারছি।তবে টিনটিন বাবুসোনাও বৌদির জন্য বেশি ভয়াবহ ও কষ্টকর ছিল দিনটি।তাই টিনটিন বাবুর জন্য বেশি খারাপ লাগলো।শেষমেশ ভালোভাবে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে এটি জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ দাদা।সর্বদা আপনার পরিবারের জন্য ঈশ্বরের কাছে মঙ্গল কামনা করি।টিনটিন সোনার জন্য অনেক আদর ও ভালোবাসা রইলো।