গোয়েন্দা রহস্য গল্প : "অর্কিড যখন মৃত্যুর হাতছানি দেয়" - পর্ব ০৯

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


copyright free image source pixabay

অষ্টম পর্বের পর


নয়


-"হ্যাঁ, বড় বাবু বলুন ।"

-"ভেরি গুড । আপনি কল লিস্টের সব এনালাইসিস রিপোর্ট আমাকে হোয়াটস্আপ করে দিন । আমি আপনাকে পরে কন্টাক্ট করছি ।"

এই বলেই মোবাইলটা রেখে দিলেন ইন্সপেক্টর অনীশ মিত্র । এই মুহূর্তে তাঁর কল লিস্টের রিপোর্টটা ভীষণই জরুরি ছিল । প্রোফেসরের মৃত্যুর দিন থেকে তার আগের ৭ দিন পর্যন্ত সব কল লিস্টের পূর্ণ এনালাইসিস রিপোর্ট মিনিট পাঁচেক পরে তাঁর হোয়াটসআপ-এ এসে গেলো ।

ঝাড়া ১টি ঘন্টা ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব এনালাইসিস রিপোর্টটা পড়লেন, তারপরে কন্টাক্ট করলেন লালবাজার সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টে । কল লিস্টের রিপোর্টটা পাঠিয়ে দিয়ে কিছু ইনফরমেশন চাইলেন । মিনিট দশেক পরে পেয়েও গেলেন । এরপরে কন্টাক্ট করলেন দমদমে, এয়ার পোর্ট পুলিশ স্টেশনে । দ্রুত কিছু রিপোর্ট তলব করলেন । মিনিট দশেক ধরে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ন কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করলেন এয়ার পোর্ট পুলিশ স্টেশনের সাথে । তারপরে কিছুটা নিশ্চিন্তে চেয়ারে হেলান দিয়ে রিলাক্স মুডে রেস্টে গেলেন ।

জাল গুটিয়ে আনা হচ্ছে । কুয়াশার চাদর সরিয়ে খুনীর চারিপাশে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ঘিরে ফেলা হচ্ছে । খুনী অত্যন্ত ট্যালেন্টেড । কিছুমাত্র সন্দেহ হলেই উধাও হয়ে যাবে চিরতরে । আর খুঁজে পাওয়া যাবে না কোনোদিন । তবে, খুনী নিজের প্রতি ওভার কনফিডেন্সে এখনোও কিছুমাত্র সন্দেহ করেনি পুলিশের কার্যকলাপ । এটাই যা একমাত্র ভরসা ।

প্রোফেসর খুন হওয়ার পরে কেটে গেছে পাঁচ পাঁচটি দিন । আর দেরি নয় । আজ, আগামীকাল বা পরশু, খুনি পাততাড়ি গুটিয়ে সরে পড়বে । এখনো যে সরে পড়েনি সেটা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ভাগ্য । খুনী নিজেকে অত্যন্ত চালাক মনে করে, তাই আরো দু'এক দিন পুলিশের নাকানি চোবানি উপভোগ করে সরে পড়বে চিরতরে । পুলিশ আর কোনোদিন তার টিকির নাগালও পাবে না ।

চার ঘন্টা পর । লালবাজার হেডকোয়ার্টার্স ।

ইন্সপেক্টর মিত্র এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত । হাতে অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, খুনীর এখনো কলকাতা ছেড়ে না যাওয়ার ব্যাপারে অকাট্য প্রমান হাতে পাওয়া, খুনীর সম্ভাব্য লোকেশন ট্র্যাক করতে পারা আর খুনীকে ধরতে পারার সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত হওয়াতে ইন্সপেক্টরের মন মেজাজ এখন শরতের আকাশের মত প্রফুল্ল ।

শুধু একটা ব্যাপারেই এখনো খটকা । খুনীর মোটিভ । কি হতে পারে খুনীর মোটিভ ? প্রোফেসরের ঘর থেকে কিছুই খোয়া যায়নি । কোনো রকম আর্থিক ব্যাপার এর সাথে জড়িত নেই বলেই মনে হচ্ছে । তাহলে কি কারও ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই খুন ?

সব উত্তরই জানা যাবে, তবে খুনী ধরা পড়ার পরে । তার আগে নয় ।

তারপরেও প্রোফেসর সেনের চারটি ডাইরি পড়ে ইন্সপেক্টর কিছুটা অন্তত ধারণা করতে পারছেন কী জন্য হতে পারে এই খুন ? সত্যি, মানুষের সীমাহীন লোভ আর দুর্দমনীয় প্রতিহিংসার প্রবৃত্তি মানুষকে পশুরও অধম করে দেয় । লোভ আর হিংসার বাইরের দুনিয়াটাই আসল স্বর্গ ।

এমন সময় ইন্সপেক্টরের চিন্তাজাল ছিন্ন করে টেবিলের উপরে রক্ষিত তাঁর মোবাইল ফোনটি বেজে উঠলো সশব্দে । কল রিসিভ করলেন তিনি,

-"কাল রাত ১১টা ৪৫ এ ? কনফার্মড ? ওকে, ওয়েল ডান, ওয়েল ডান ! হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আর শ্যামপুকুরের থানার বড়বাবু অন দা স্পট থাকবো । বোঝেনই তো, আমরা দু'জনেই একই কেসের ইনভেস্টিগেশন অফিসার । তার উপরে বড়বাবু যেভাবে হেনস্থা হচ্ছেন মিডিয়াতে, তাই পুরো ক্রেডিটটা আমি বড়বাবুকেই দিতে চাই । খ্যাতির মোহ আমার কোন কালেই কোনোদিন ছিলো না, এখনো নেই ।যাক, অনেকটাই নিশ্চিন্ত হওয়া গেল । থ্যাংকস এ লট ।"

মৃদু হাসির রেখা খেলে গেলো ইন্সপেক্টর মিত্রের ঠোঁটের কোণে ।

কালই এই নাটকের যবনিকা উত্তোলন ।


[ক্রমশ]

Sort:  

Hello, I am a new witness. Can you vote for me? Thank you very much

 3 years ago 

অসাধারণ হয়েছে, দাদা।নাটকটির শেষ অংশটি পাওয়ার অপেক্ষায় থাকলাম।নিরন্তর ভালোবাসা রইলো দাদা।

 3 years ago 

খুব সুন্দর ফুল বন্ধু, সাফল্য সবসময় তোমার জন্য

 3 years ago 

খুনের রহস্য উন্মোচিত হতে চলেছে। খুনি এবং খুনের কারণ খুব শীঘ্রই সামনে আসতে চলেছে। লোভ ও প্রতিহিংসার কারণেই প্রফেসর সেনের খুন হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইন্সপেক্টর মিত্র খুনিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। ইন্সপেক্টর মিত্র খুব সাবধানে খুনির উপর নজর রাখছেন খুনি যেনো পালিয়ে না যায়। কিন্তু খুনি এখনো জানেনা পুলিশ তাকে সন্দেহ করছে। আশা করি আগামী পর্বে খুনির নাম ও খুনের কারণ এগুলো আমাদের মাঝে প্রকাশিত হবে। অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

 3 years ago 

অনেক বড়ো রহস্যময় গল্প।আশা করি এইবারের পর্বে আসল খুনির নাম জানতে পারবো।খুনের রহস্য উন্মোচন হবে তাড়াতাড়িই।পরের পর্বের অপেক্ষায় দাদা।

 3 years ago 

"লোভ আর হিংসার বাইরের দুনিয়াটাই আসল স্বর্গ ।" যথার্থ। তবে বেশি এক্সাইটেড খুনীর জন্য। কারণ পরবর্তীতে জানতে চাই মেইন ঘটনাটা, ভীষণ এক্সাইটেড কিন্তু আমি।

 3 years ago 

হা হা হা হা হাসি পেলো আমার, কারন প্রতিটি পর্ব পড়ার পরই মনে হচ্ছে এই বুঝি সব কিছু খোলাসা হয়ে যাবে, খুনীর বিষয়টির সুন্দর একটি সমাধান বের হয়ে আসবে কিন্তু না নতুন নতুন বিষয় ঢুকে যাচ্ছে আর প্যাচটা আরো বড় হচ্ছে। দেখা যাক আগামী পর্বে কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

 3 years ago 

ইশশশ,সব ইন্সপেক্টর গুলো যদি আপনার গল্পের এই ইন্সপেক্টর এর মতো হতো দাদা।
খুনি তো মনে হচ্ছে ওই ছোকরা করে ছেলেটাই হবে যে একটা ক্যাটালগ নিয়ে গেছে।গল্প এখন অনেক জমে উঠেছে তবে আজকে কেনো যেনো মনে হলো খুব তাড়াতাড়িই গল্পটা শেষ হয়ে গেলো। হয়তো গল্পের পাগল হওয়াতেই এমন লাগছে আমার কাছে।প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকি কখন গল্প দিবেন! কখন গল্প দিবেন!

 3 years ago 

অবশেষে অধীর আগ্রহে বসে থাকা প্রহরের অবসান ঘটতে চলছে।অনেক বেশি এক্সাইটেড, কে খুনটি করেছে?

 3 years ago 

দাদা শেষ পর্বের আগে আপনি প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না বোঝা যাচ্ছে ।গল্প প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে কিন্তু এখনো খুনীর পরিচয় সম্বন্ধে কিছুই বুঝতে পারলাম না ।তবে এখন আশা করি পরবর্তী পর্বে গল্পের যবনিকাপাত হবে ।তখন অবশ্যই খুনির ব্যাপারে জানতে পারবো ।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম দাদা।

 3 years ago 

আসলেই ভাইয়া দাদা চালাকি করে আজকের পোস্ট ছোট করে দিয়েছে কারণ 10 নাম্বার পোস্টে দাদা আসল খুনের চেহারা আমাদের সামনে উন্মোচন করবে

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.033
BTC 64216.73
ETH 2767.45
USDT 1.00
SBD 2.64