আলোকচিত্র : শান্তিনিকেতনে কিছুদিন -০৩
পয়লা বৈশাখে ভেবেছিলুম খুব ভোরে উঠবো । কিন্তু, সারাদিন জার্নি আর ঘোরাঘুরি করে এমনিতেই খুব টায়ার্ড ছিলুম এর ওপর আবার মাঝ রাত্রি অব্দি জেগে ভোট দিলাম । ফলে, উঠতেই পারলুম না ভোরে । যাই হোক, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ উঠেই অমনি ব্রাশ করে বাথরুম গিয়ে ঝটপট ফ্রেশ হয়ে নিলুম ।
ন'টা বাজে প্রায়, তাই আর ব্রেকফাস্ট এর সময় ছিল না । বেরিয়ে পড়লুম । আগে পয়লা বৈশাখের স্নিগধ প্রভাতে গোটা শান্তিনিকেতনটা ঘুরে দেখবো । এরপরে কোনও এক রেস্তোরাঁতে সকালের জোলখাবারটা সেরে নিয়ে আবারও ঘুরতে বেরিয়ে পড়বো । এই ছিল মোটামুটি আমাদের প্ল্যান ।
তো হোটেল থেকে বেরিয়েই ঝটপট একজন গাইড ঠিক করে ফেললাম । গোটা বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসটা ঘুরিয়ে দেখাবে সে । বিশ্বভারতীর গোটা ক্যাম্পাস অনেক বড় । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তিতে মোট জমির পরিমান প্রায় ৩৬০০ বিঘা । বিশাল এই শান্তিনিকেতনের গোটা পরিধি তাই ।
অসংখ্য গাছ গাছালি ঘেরা শান্তিনিকেতনের পরিবেশটা আমার কাছে দারুন মনোমুগ্ধকর লেগেছিলো । একটা টোটো ভাড়া করেছিলাম ভিতরে ঘুরতে । আমাদের গাড়িটা বিশাল । অতবড় গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করা সুবিধের হবে না - গাইড জানালো । তাই টোটো ভাড়া । প্রায় দু'ঘন্টা ধরে ঘুরলাম টোটো করে । উত্তরায়ণ, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থাকতেন, সেখানে প্রথমেই গেলুম । উত্তরায়ণ এখন একটি রবীন্দ্র মিউজিয়াম । রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য স্মৃতি ধারণ করছে উত্তরায়ণ । এখন থেকেই রবি ঠাকুরের নোবেল পদক চুরি হয়ে গিয়েছিলো ।
এরপরে গেলুম ছাতিম তলায় । এই সেই বিখ্যাত ছাতিম তলা । প্রায় দেড়শ বছর আগে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ছাতিম তলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন কিছুক্ষনের জন্য । এই বোলপুর স্টেট তখন ছিল ভুবনডাঙার জমিদার এর আন্ডারে । তাঁর কাছেই যাচ্ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । যাওয়ার পথে এই স্থানে বিশ্রাম নিয়ে তিনি দেহ ও মনে অদ্ভুত এক প্রশান্তি অনুভব করেন । তাই তিনি তাঁর জমিদার বন্ধুর কাছে জায়গাটি কেনার প্রস্তাব দেন । উত্তরে ভুবনডাঙার জমিদার ভুবন সিংহ মহর্ষিকে নিয়ে সেই স্থান ছাতিম তলায় যান । সেখানে গিয়ে তিনি মহর্ষিকে বলেন এখানে দাঁড়িয়ে আপনি যতদূর চোখ যায় দেখুন, ততদূর পর্যন্ত ভূখন্ড আজ থেকে আপনার । মহর্ষি নিজেও তো জমিদার ছিলেন । তাই তিনি বন্ধুকে অনুরোধ করেন যে দান নয় বিক্রি করতে । অবশেষে মহর্ষির কথা মেনে নিয়ে ১৮৬৩ সালে মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে ২০ বিঘা জমি মহর্ষিকে রেজিস্ট্রি করে দেন ভুবন সিংহ ।
মহর্ষি এই ছাতিম তলায় একটি আশ্রম গড়ে তোলেন । নাম দেন "শান্তিনিকেতন" । পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাম্মদের গুরুকুল প্রতিষ্ঠা করেন শান্তিনিকেতনে যা কালক্রমে এক অনন্য বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়ে আজকের বিশ্বভারতী ।
ছাতিমতলায় আমরা সেই বিখ্যাত লেখাগুলি পড়ে মনে খুব শান্তি পেয়েছিলুম -
প্রাণের আরাম
মনের আনন্দ
আত্মার শান্তি
সত্যিই ছাতিমতলা খুব শান্ত আর নির্জন । কোথাও কোনো শব্দ নেই । মনে হয় যেন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ হলো ছাতিমতলা ।
এরপরে আমরা গেলুম কলাভবনে । ধীরে ধীরে প্রায় সবগুলি ফ্যাকাল্টি গুলো ঘুরে ঘুরে দেখলুম । নিজে কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র ছিলুম তাই গার্ডকে বলাতে CSE অনুষদটাও ঘুরে দেখে এলুম । সবার শেষে গেলুম গুরুপল্লী দেখতে । গুরুপল্লী হলো বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের সারি সারি বাসগৃহ । অমর্ত্য সেনের বাবার বাড়িটিও গুরুপল্লীতে অবস্থিত ।
এরপরে ঘুরে ঘুরে দেখলুম ভারতের তথা এই উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের কিছু অসামান্য স্থাপত্য শিল্প । ঘুরতে ঘুরতে ভীষণ খিদে পেয়ে গেলো হঠাৎ ।
শালবনের মধ্যে আদিবাসীদের হাট "সোনাঝুরি"-তে একটা সেলফি
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ১২ টা ০০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
টিনটিনবাবু পা ঝুলিয়ে বাঁশের মঞ্চে বসে হাটের দৃশ্যাবলী উপভোগ করছেন
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ১২ টা ০০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
সোনাঝুরির সেই বিখ্যাত হাট
তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ১২ টা ০০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।
ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ
শান্তিনিকেতন ভ্রমণ করার ইচ্ছা বহু আগের, আশা করছি সুযোগ একদিন আসবে এবং হৃদয় শান্ত করার সুযোগ পাবো। সোনাঝুরির সেই বিখ্যাত হাটটি দারুণ লেগেছে, একদম গ্রাম বাংলার হাটের মতো।
আহা কি দারুণ সুযোগ ছিলো, আমি হলে কম কম পেতাম চোখের পাওয়ার তো মেলা কম, হি হি হি।
মাএ ৫ টাকার বিনিময়ে ২০ বিঘা জমি😉 অবাক হওয়ার কিছুই নাই ১৮৬৩ সালের কথা বলে।উত্তরায়ণ থেকে নোবেল যে চুরি যে করেছিলো পরে কি পেয়েছিলো?টোটো কেমন দেখতে আমার জানতে চাওয়া মন।সব মিলিয়ে আসলেই শান্তিনিকেতন।ধন্যবাদ আপনাকে।
সব মিলিয়ে একটি কবিতা বানিয়ে দিলেন মনে হচ্ছে😃
দাদা বড়লোক হবার কত সুবিধা। যা ইচ্ছা তাই করা যায়। অনেক দিনের শখ শান্তিনিকেতন ঘুরতে যাব। তবে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসটা যে এতোবড়ো সে সম্পর্কে জানা ছিল না। এত বড় জায়গা টমটমে ঘোড়া নিশ্চয়ই অনেক সময় সাপেক্ষ। ধন্যবাদ দারুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
নতুন করে আর জানতে পারলাম এই শান্তিনিকেতন সম্পর্কে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে ভুবনডাঙার জমিদার ভুবন সিংহের কি ধরনের বন্ধুত্ব ছিল যে চাওয়া মাত্রই সে জায়গা থেকে যতদূর চোখ যায় সকল জাইগা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের করে দিতে চেয়েছিলেন। আজ ও কি বন্ধুত্বের এমন মর্যাদা আছে?? কথায় আছে আগের দিন নাকি বাঘে খেয়েছে। সেটাই সত্যি।
তবে দাদা ফটোগ্রাফি গুলো দেখার মত ছিল। একতারা আর নানা রকমের জিনিস। সাথে আপনি আর আমাদের টিনটিন বাবু। সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগলো।
আহা। এমন বন্ধুই তো দরকার। যতদূর চোখ যাবে ততদূর আমার। মাত্র ২০ বিঘা জমি পরে ৩৬০০ বিঘায় পরিণত হয়েছে। শান্তিনিকেতনে যাওয়ার ইচ্ছা আরো প্রবল হচ্ছে আপনার বর্ণনা শুনে।
সোনাঝুড়ির হাট টা আমার পছন্দ হয়েছে। কি কি কিনলেন বৌদির জন্য?
আপনার ঐতিহাসিক সানগ্লাস টার কি করা যায় ভাবছি। একটা ভালো সানগ্লাস কিনে দিতে হবে চাঁদা তুলে।
আমিও কিন্তু অমন একজন বন্ধু পেতে নয়, হতে চাই । আহা !
তাহলে তো হয়েই গেল। রেডি থাকেন আমি আসছি।
বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস সম্পর্কে আগেও শুনেছিলাম তবে এতটা ডিটেলস জানা হয়নি। মাত্র পাঁচ টাকার বিনিময়ে এতগুলো জমি পেয়েছিলো সত্যিই অবাক করার বিষয় এবং নোবেল চুরির বিষয়টি অনেকটা নতুনভাবে জানলাম। ধন্যবাদ দাদা আপনাকে এত সুন্দর ভাবে সবকিছু বর্ণনা করার জন্য।।
সত্যি দাদা আপনার কোনো না কোনো একজনের সাথে ফটোগ্রাফিতে গুলো দেখে খুবই আফসোস হচ্ছে বিশ্ব ভারতীয় ক্যাম্পাসটা একবার বলে দেখতে পারতাম এটা সম্ভব না সেটা নিয়ে এতটা ভেবে লাভ নেই যাই হোক সব মিলিয়ে অসাধারণ বেশকিছু আনন্দঘন মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি 5 টাকার বিনিময় জমিদার 20 বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছিল। যদিও সাল হিসাবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সত্যি দাদা আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমি অবাক হয়ে গেলাম উওরায়ণ মিউজিয়াম থেকে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি হয়েছিল এই ঘটনাটি জানতে পেরে।
৩৬০০ বিঘা? ওরে বাবা এতো বিশাল এলাকা। আপনারা যেটাকে টোটো বলেন আমরা সেটাকে অটো বলি। গুরু পল্লীর ছবি দেখার ইচ্ছা ছিলো দাদা। মনে করেছিলাম এর ভেতরে হয়তো দু একটা ছবি পেয়ে যাবো। কিন্তু সেটা পেলাম না। শেষ পর্যন্ত মনে করেছিলাম প্রচন্ড ক্ষুধা পেটে কি কি খেয়েছেন সেটা অন্তত শেয়ার করবেন। সেটাও পেলাম না। তবে শান্তিনিকেতন সম্বন্ধে নতুন অনেক কিছু জানতে পারলাম। এত কিছু জানা ছিলো না দাদা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
শান্তিনিকেতন ক্যাম্পাসের ভিতরের ছবিগুলি আমার ভাইয়ের ডি এস এল আর ক্যামেরা দিয়ে তোলা রয়েছে । আমার মোবাইলে আর তুলিনি ।
দাদা একসময় সময় করে ছবিগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করবেন। শান্তিনিকেতনের যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু যেহেতু যাওয়া হয়নি তাই ছবিগুলো দেখে অন্তত একটা ধারণা নিতে পারতাম।
বেশি অবাক লাগলো উওরায়ণ মিউজিয়াম থেকে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি হয়েছিল এই ঘটনাটা শুনে ।তাছাড়াও পাঁচ টাকার টাকার বিনিময়ে জায়গাটা কিনে নিয়েছিল । যাইহোক এই পর্ব থেকেও অনেক কিছু জানলাম । ছাতিমতলার ব্যাপারটি বেশ ভালো লেগেছে , যদিও স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য হয়নি । তবে লেখা পড়েই বুঝতে পারলাম, জায়গাটি আসলেই অনেক সুন্দর ও নিরিবিলি হবে ।