বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী -পর্ব ০২
Copyright Free Image Source : Pixabay
ক্রমশ আদিম মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো । এবং এক এক ভৌগোলিক পরিবেশে তারা নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে লাগলো । আর শুরু হলো অভিযোজন প্রক্রিয়া । অভিযোজন আসলে এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় প্রাণী এবং উদ্ভিদকুল নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে তারা যে ভৌগোলিক এলাকায় বাস করে সেখানকার পরিবেশের সাথে টিকে থাকার জন্য কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জন্ম দেয় । আর এ জন্যই বলা হয়ে থাকে অভিযোজন হলো বিবর্তনের একটা প্রাথমিক ধাপ । লক্ষ লক্ষ বছর ধরে অভিযোজিত হতে হতে প্রাণিকুল একসময় নিজেদের অনন্য বৈশিষ্ট্যকেই আমূল বদলে ফেলে । এই প্রক্রিয়া অতি ধীরগতির ।
বর্তমানের আধুনিক মানুষের কথাই ধরুন । ঠান্ডা দেশে যারা বসবাস করে তাদেরকে ভীষণই প্রতিকূল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয় । একই মানব প্রজাতি যখন একদল ঠান্ডা দেশে, একদল অরণ্যসংকুল দেশে, একদল মরুভূমির দেশে, একদল পার্বত্য এলাকায় এবং আরেকদল সমতল নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লো তখন স্ব স্ব পরিবেশে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ধীরে ধীরে পরিবেশের সাথে টিকে থাকার জন্য তারা নিজেদেরকে অভিযোজিত করে ফেললো ।
ঠান্ডার দেশের বৈরী আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য তারা দীর্ঘদেহী এবং বেশি শারীরিক ক্ষমতার অধিকারী হলো । প্রখর সূর্যালোকের অভাবে চামড়ার নিচের মেলানিন এর পরিমাণ হ্রাস পেতে লাগলো । কারণ, মেলানিনের কাজই হলো মানবদেহকে সূর্য্যের প্রখর তাপ থেকে রক্ষা করা । এটি একরকমের রঞ্জক পদার্থ । এর বেশি উপস্থিতে চামড়ার রং ঘোরতর কালো হয়ে থাকে এবং খুব কম উপস্থিতিতে চামড়ার রং সাদা ধবধবে ধারণ করে । তাই, শীতপ্রধান দেশগুলির মানুষের গায়ের রং সাদা আর মরুভূমি প্রধান দেশ আফ্রিকার অধিবাসী নিগ্রো ।
আমাদের দেশ হলো নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় । খুবই কম পরিশ্রমে আমরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে পারি । তাই, আমাদের দৈহিক আকৃতি সাদা এবিং কালো মানুষদের মতো অত দীর্ঘকায় নয়, মাঝারি । পরিশ্রম কম করাতে আমাদের দৈহিক শক্তিও অনেক কম । খুব প্রখর সূর্যালোক মরুভূমির ন্যায় নেই আমাদের এলাকায় । তাই আমাদের চামড়ার রং সাদা এবং কালোর মাঝামাঝি বাদামি রঙের হয়ে থাকে ।
ঠিক একই ভাবে অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যেও এই অভিযোজিত বিশেষ রূপটি খুবই প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়ে থাকে । সারা পৃথিবীর সব চাইতে কষ্টসহিঞ্চু ঘোড়া হলো আরবীয় ঘোড়া । তার কারণ ভীষণই প্রতিকূল মরুভূমিতে নিজেদের টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে তারা তাদের নিজেদের দেহকে এইভাবেই অভিযোজিত করেছে । মরুর উট আর মেরুর উট একদমই আলাদা দেখতে লাগে । অথচ এরা উট তাতে কোনো সন্দেহ নেই । মরুর উটের গায়ে লোম হলো খুবই ছোট ছোট, গরুর গায়ের লোমের মতো । আর মেরু অঞ্চলের উটের গায়ে ঘোড়ার কেশরের মতো বিশাল বিশাল লোম, ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য ।
কপিরাইট ফ্রি ইমেজ সোর্স : pixabay
কপিরাইট ফ্রি ইমেজ সোর্স : pixabay
উপরেরটি মেরু উট আর নিচেরটি মরু উট
অভিযোজন । খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ প্রাণীদের বিবর্তনের শুরুতে । ঘোড়া ক্রমশ নিজেদেরকে অভিযোজিত করতে করতে বিবর্তিত হয়ে একটা বেড়ালের সাইজ থেকে এখন বিশালকায় হয়েছে । সীল, ডলফিন, তিমি নিজেদেরকে অভিযোজিত করতে করতে জলে স্থায়ী ঠিকানা বানিয়েছে, অথচ তারা কিন্তু জলের জীব কস্মিনকালেও ছিল না ।
প্রতিদিন যে সুমিষ্ট পাখিদের কলরবে আমাদের ঘুম ভাঙে, পাখিদের অপরূপ সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হই আমরা, অথচ আমরা কি জানি এই পাখিরা আগে কি ছিল ? পাখিদের পূর্বপুরুষ হলো ভংয়কর মাংসাশী ডাইনোসোর । এক শ্রেণীর ডাইনোসোর উড়তে পারতো সেই আদিমযুগে । সব ডাইনোসোর লুপ্ত হয়ে গেলেও এই উড়ুক্ক ডাইনোসোর কিন্তু টিকে গেছিলো । আদিম পরিবেশ থেকে বিবর্তিত হয়ে আজকের আধুনিক পক্ষীকূলে রূপান্তরিত হয়েছে এরা । এর সূচনাও ছিল সেই অভিযোজন । ভীষণ উল্কাপাতে আর গ্রহাণুর সাথে সংঘর্ষে আদিম পৃথিবীর ডাইনোসোরদের যুগের অবসান ঘটে । আদিম প্রাকৃতিক পৰিবেশেরও বিলুপ্তি ঘটে । ধীরে ধীরে পরিবর্তিত প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে অভিযোজিত করতে করতে লক্ষ বছরের বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আদিম ডাইনোসোর আজ আজকের পাখি ।
পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করবো অভিযোজন এর ফলে কি ভাবে বিবর্তনের সূত্রপাত হয় । এবং, কেন মানুষের প্রায় কাছাকাছি বুদ্ধির অধিকারী হয়েও ডলফিন ইতর প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত হলো । কেন মানুষই একমাত্র সৃষ্টির সেরা জীব হলো !
[ক্রমশ ....]
পরিশিষ্ট
প্রতিদিন ১২৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৩য় দিন (125 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 03)
টার্গেট ০২ : ৮৭৫ ট্রন স্টেক করা
সময়সীমা : ২৪ জুলাই ২০২২ থেকে ৩০ জুলাই ২০২২ পর্যন্ত
তারিখ : ২৬ জুলাই ২০২২
টাস্ক ১০ : ১২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron
আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
১২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :
TX ID : 118422ac5ca469b432c6cf6da84c3f73b923e1d3a7b83668d274e1c42286220a
টাস্ক ১০ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি
Account QR Code
Wallet Address
TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx
অভিযোজনের প্রক্রিয়ার ব্যাপার গুলো বেশ ভালো ভাবে বুঝলাম ভাই , যদিও আগে থেকেই হালকা জানতাম । তবে বেশি ভালো লেগেছে আরবীয় ঘোড়া , মরু ও মেরুর উটের বিশ্লেষণ গুলো জেনে । পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ভাই ।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
দাদা বিবর্তন আর অভিযোজন নিয়ে দারুন একটি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন আজকের পোস্টে। এ ধরনের বিষয়গুলোর আলোচনা আসলে খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ি। বেশিরভাগ তথ্যই জানা ছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা জানার আগ্রহের বিষয় আছে। আর তা হচ্ছে মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মীয় তত্ত্ব এবং বিবর্তনবাদ দুটোর থিওরি আসলে কি সাংঘর্ষিক নাকি কোন মিল আছে? এ সম্পর্কে আপনার ব্যক্তিগত মতামত জানালে কৃতজ্ঞ হব।
এই রে ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান প্রায় শূন্য । আগে পড়তে হবে এ বিষয়ে ।
😁😁😁👍
ধর্মীয় তত্ত্বের সাথে ডারউইনের বিবর্তনবাদ পুরোপুরি সাংঘর্ষিক অবস্থানে আছে। যদি আজ এতগুলো বছর পর মানুষ জানতে পারে এতদিন ডারউইনের বিবর্তনবাদ ভুল ছিলো তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে?
দাদা আপনার লেখার সব সময়ে উপযোগি লেখা হয় , যেখান থেকে আমরা অনেক নতুন তথ্য পেয়ে থাকি বা অনেক কিছু শিখে থাকি। মরুর প্রান্তে দু উট যে দুটি সময়ে ব্যবহার কর হয় যা আমার কাছে জানার নতুন একটি অধ্যায় ছিল।বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী লেখায় অনেক অজানা জ্ঞান অর্জন করতে পারি । এই সব সৃষ্টী কর্তার ইচ্ছে , যার ভালো মন্দ তিনি যানেন। শুভকামনা দাদা
পড়ে বেশ মজা পাচ্ছি।আসলেই একেক দেশের একেক রকম আবহাওয়ায় প্রানীকূল খাপ খাইয়ে বসবাস করে। তবে পাখিদের ঘটনাটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো ধন্যবাদ।
অভিযোজন আর পরিবর্তন এই দুটো বিষয় যখন প্রাণীকুলের সাথে ভাবি তখন মাথাটা একেবারে গোলমেলে হয়ে যায়। কারণ কি থেকে যে কি হয়।
এত এত তথ্যের মাঝে এই অংশটুকু একেবারে চমকে দেওয়ার মত ছিল দাদা। কোথায় ডায়নোসর আর কোথায় পাখি! অভিযোজন কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে ভাবতেই গা শিউরে উঠলো । আরো জানতে চাই দাদা। অনেক ভালো লাগছে সত্যি।
পাখিদের আদি রুপ ডাইনোসর ভাবতেই অবাক লাগছে। অভিযোজিত হয়ে আজ কোন পর্যায়ে ঠেকেছে সবকিছু ভাবতে গেলে মাথা ঘুরে যায়। বেশ চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছেন দাদা, এতো তথ্য জানা ছিল না।
আচ্ছা দাাদ মেলানিনের থিউরি অনুযায়ী তো আরব দেশের মানুষের রং কালো হওয়ার কথা কারন আরব দেশে অনেক গরম। তাহলে সে দেশের মানুষের রং সাদা বা লাল বর্ণ কেন..?
আরবের আদি অধিবাসীরা সবাই কালো । আপনি যাদের কথা বলছেন তারা আর্য শ্রেণীভুক্ত । এরা ভাগ হয়ে এক দল ইউরোপে, আরেক দল আরব আর শেষোক্ত দল ভারতবর্ষে চলে আসে । এরা উঁচু লম্বা, সাদা , নীল চোখের অধিকারী । ভারতের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় আর অনার্য সাথে রক্তের সংমিশ্রনে এরা তাম্র বর্ণ ধারণ করে, আরবের ওই দলটিও সাদা থেকে উজ্জ্বল তাম্রবর্ণ ধারণ করে । আর প্রথম দল ঠান্ডা দেশে অভিযোজিত হয়ে আরো সাদা হয়ে যায় ।
অসাধারণ ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন দাদা, আমি ও এই উড়ন্ত ডাইনোসর সম্পর্কে কিছুটা জানি,যখন ডাইনোসররা ধ্বংসের পথে তখন কিছু কিছু ডাইনোসর বেঁচে গিয়েছিলো আর তার থেকেই এই পাখিদের আবির্ভাব। দারুন লিখেছেন দাদা।