আমার উদ্ভাবিত ইউনিক রেসিপি "লুম"
লুম
হ্যাঁ , ঠিকই শুনেছেন, লুম । আমি মাঝে মাঝে রেসিপি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে থাকি । এটা তেমনই একটা ফুড রেসিপি এক্সপেরিমেন্টের ফল ।এটা অনেক আগের করা একটা এক্সপেরিমেন্টাল রেসিপি । ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের । যখন আমাদের দেশ জুড়ে কড়া lockdown চলছে । ঘরের থেকে বেরোনো একেবারেই নিষিদ্ধ । তখন , মাঝে মাঝে এমনটা করতাম ।
আমি পুরো প্রসেসটার ছবি তুলিনি তাই এখানে দিতে পারলাম না । শুধু, prepared ডিশটার বেশ কয়েকটা স্ন্যাপশট নিয়েছিলাম । সেগুলিই এখানে শেয়ার করলাম, আর শেয়ার করলাম রেসিপিটা । রেসিপিটা পড়ে কমেন্টে আপনারা অবশ্যই উল্লেখ করবেন যে "লুম" নামকরণের রহস্যটা কি ?
তো চলুন শুরু যাক ।
উপাদান সমূহ :
১. ময়দা । পরিমাণ : ৫০০ গ্রাম (যদি বাড়িতে পেটুক কেউ থাকে তো ময়দার পরিমাণ ইচ্ছেমত নেবেন)
২. Vegetable অয়েল । পরিমাণ : ৫০০-৭০০ মিলিঃ
৩. ডিম । যত ইচ্ছে তত । ৫০০ গ্রাম ময়দার জন্য ৬টি ডিমই যথেষ্ঠ যদিও। তবে লুম রান্নার পরে অনেক ডিমের গোলা থেকে যাবে । ওগুলো দিয়ে দিব্যি ওমলেট ভাজা যাবে পরে । এক কাজে দুই কাজ সারা ।
৪. লঙ্কা কুচি । ৩-৪ টে কাঁচা লঙ্কা কুঁচি করে রাখবেন ভাইয়েরা । ভুলেও লঙ্কা কুঁচি করার পরে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত না ধুয়ে চোখে হাত দেবেন না । তাহলে বাপ্ বাপ্ বলে চেঁচিয়ে উঠতে হবে কিন্তু আমার মতো ।
৫. নুন । পরিমাণটা আমি জানি না । সোজা সাপ্টা বলে দিলাম । এ ব্যাপারে বাড়ির বৌকে ডাকবেন মিষ্টি করে । বি:দ্রঃ যাঁদের বৌ নেই তাঁদের জগজ্জননী মা-ই ভরসা এসব ক্ষেত্রে ।
৬. গোলমরিচের গুঁড়ো । দুই তিন চিমটি । বেশি দিলে কিন্তু লুম খাওয়ার সময় হাতের কাছে জলভর্তি গ্লাস রাখবেন ।
রন্ধন প্রক্রিয়া :
১. প্রথমে একটা বড় বোউলে ময়দা ঢেলে নিয়ে তাতে কিছুটা জল ঢেলে দিয়ে ময়দার পিন্ডি চটকাবেন ইচ্ছেমত । আমি তো ধুম ধাম কিল মেরে কাজ টা সেরেছিলাম । একটু নুন নিয়ে দেবেন (দুই এক চিমটি মাত্র) । যতবেশি পিন্ডি চটকাবেন তত বেশি টেস্ট হবে । তবে, ভাইয়েরা হাতটা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নেবেন ভালো করে এই কম্মটা করার আগে । আর যাঁরা আলসে মানুষ তাঁরা এই কাজটা বৌকে দিয়ে করিয়ে নেবেন, একটা কোনো কিছু কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে । কাজটা মিটে গেলে কিন্তু আপনার প্রতিশ্রুতিটা রক্ষা করবেন । না হলে গৃহে অশান্তির আশংকা আছে । আর যদি মা কাজটা করে দেয় তো কোনো কথা নেই । সন্তানের সব আবদার মা হাসি মুখেই পালন করে থাকে ।
২. এরপরে হলো ময়দার তাল বেলে লুচির লেচি তৈরী করা । যাঁদের রুটি বেলার অভ্যাস আছে তাঁরা পারবেন । কেননা সব পুরুষেরই কম বেশি বউয়ের কথা মতো রুটি বেলার অভ্যাস আছে, তা তিনি যতই অস্বীকার করুন না কেনো । তবে, আমার কোনো অভ্যাস ছিল না, তাই ওই কাজটা আমার মা আর স্ত্রী মিলে করে দিয়েছিলো ।
৩. এই বার আর একটি কাঁচের বৌল নিন । ডিমগুলি আগে ভালো করে জলে ধুয়ে নেবেন । ডিমের খোসার গায়ে প্রচুর ময়লা থাকে তো তাই । এই বার এক একটা ডিম্ নেবেন, ঠকাস করে বাটির কানায় মারবেন, ডিমের খোসায় চীড় ধরবে । ব্যাস, এই বার দুই আঙুলে ডিমের ঠিক মাঝখানে চাপ দিন । ব্যাস ডিম্ ভেঙে কুসুম আর সাদা অংশ পড়ে যাবে । তবে তলায় যেন বাটিটা থাকে খেয়াল রাখবেন ।
৪. এই বার কাঁচা লঙ্কার কুঁচি আর গোল মরিচের গুঁড়ো, নুন (বৌয়ের হেল্প নিয়ে), একটুখানি হলুদ আর জিরের গুঁড়ো নিয়ে ডিমের গোলাটা ভালোভাবে ফেটিয়ে ফেলুন ।
৫. কড়াইতে তেল ঢালুন ৭০০ মিলির মতো । কড়াইয়ের নিচে আগুন জ্বালাতে ভুলবেন না যেন । তেল গরম হয়েছে কিনা ঠিক মতো চেক করার জন্য আপনার হেল্পিং হ্যান্ড বৌকে ডেকে নিন । বিপদজনক কাজের ভারটা ওকেই দিন ।আপনিও পাশে থাকুন ।
৬. তেল গরম হয়ে গেলে আসল খেল শুরু । একটার পর একটা লেচি নিয়ে ডিমের গোলায় চুবিয়ে রাখুন । চিমটে দিয়ে তুলুন আর ছ্যাঁক করে ঝেড়ে দিন কড়াইয়ের ভিতর ফুটন্ত তেলের মধ্যে । কড়াইয়ের গা ঘেঁষে ফেলবেন যথাসম্ভব কম উঁচু থেকে, না হলে ফুটন্ত তেল ছুটে চোখে মুখে লাগবে ।
৭. মুহূর্তের মধ্যে দেখবেন লেচি ফুলে পুরো ট্যাঁপা মাছ । ফুটবলের মতো গোল, আর মাঝখানটা বেলুনের মতো ফোলা । এরকম হলেই ঝাঁজরি দিয়ে নামিয়ে ফেলবেন । এই ভাবে ঘন্টা খানেক ধরে ভাজা কষ্টকর । তাই দুটো তিনটে ভেজে বৌয়ের হাতে কাজ ট্রান্সফার করে দিয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরুন ঘরের ভিতর । আর গরম গরম লুম গুলো টেস্ট করার নামে দিব্যি গিলে ফেলুন একটার পর একটা । কম্ম সমাধার পরে যা অবশিষ্ট থাকবে সবার সাথে সমান ভাবে ভাগ করে খেয়ে ফেলুন । টেস্টিং পারপাস যে গুলো গিলেছেন ইতিমধ্যে সেটা বেমালুম চেপে যান ।
আমাদের "লুম" রেসিপি এখানেই ফিনিশ ।
রেসিপি টি অনেক সুন্দর লাগ্লো
দাদা আপনার রেসিপিটা আসলেই খুব ইউনিক একটি রেসিপি। এটি দেখতে খুবই লোভনীয়। দেখে আমার খেতে ইচ্ছে করছে তবে এইনাম আগে কখনো শুনি নাই। তবে আমার কাছে নামটি খুবই ভালো লেগেছে। এটি দেখতে যেমন চমৎকার খেতেও মনে হয় খুবই সুস্বাদু হবে। আমি অবশ্যই বাসায় চেষ্টা করব। আশা করছি আপনি আমাদেরকে আরো সুন্দর সুন্দর রেসিপি উপহার দিবেন। অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা এত সুন্দর রেসিপিটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
দাদা আপনার উদ্ভাবিত ইউনিক রেসিপি "লুম" দেখতে অনেক সুন্দর হয়েছে।তবে এমন খাবার কখনো আমি খাইনি ।তবে আমি বাড়ীতে চেষ্টা করবো ,আপনার রেসিপি দেখে দেখে বানাতে ।দাদা অসংখ্য ধন্যবাদ এমন সুন্দর রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
ওয়াও দাদা আপনি এতো পরিশ্রম করে লুম বানিয়েছেন। সত্যি এটি ইউনিক। আমি প্রথম শুনলাম লুমের কথা। তবে অনেক পরিশ্রম করেছে। একবার ঝাল কেটে আমি হাত না ধুয়ে চোখে হাত লাগাইছিলাম। সে কি যন্ত্রনা।
প্রথম এই পোস্টের টাইটেল না দেখেই খাবারের দিকে তাকিয়ে কিছুই চিনতে পারি নাই ।🙄 পরে টাইটেল দেখে বুঝতে পারলাম এটা দাদার বিশাল একটা এক্সপেরিমেন্টের ফল। ☺️🤭
এমন রেসিপি পোষ্ট আমি আগে কখনোই দেখি নাই ।হাঁসতে হাঁসতে শেষ।😂😂
একদম ...না হলে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে নাহ....😅
নতুন রেসিপি, বাসায় টেস্ট করতে হবে, দেখছি।
দাদা, এইরকম আরো কয়েকটি নতুন নতুন রেসিপি দিয়েন।
দাদা ইংরেজি তো যদি লুম এর মানে দাড় করাই তাহলে তা হয় তাঁত।
তাঁতের মেশিনটাকে বোধহয় লুম মনে। তো আপনি ও একটা এক্সপেরিমেন্ট করলেন বলেই কি তার নাম লুম দিলেন দাদা?
আর কিছু তো মাথায় আসছে না দাদা। 🤦♀️🤦♀️
আপনিই বলে দিয়েন।আপনার রেসিপি ট্রাই করতে দেখতে হচ্ছে কিন্তু।
তবে দাদা রেসিপিতেও কি করে মানুষকে হাসাতে হয় সেই বিদ্যে আপনার অসীম। লেখার কিছু ধরণ পড়লেই পড়তে পড়তেই হাসি চলে আসে।
2020 সালে এপ্রিল মাসে আপনি এটা এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন এবং আমরা অক্টোবর মাসে পেলাম ছয় মাস পর।আপনি নিজের নাম দিয়েছেন অসম্ভব সুন্দর ছিল লুম।একদম ইউনিক একটা নাম শুনলাম আজকে জীবনে প্রথম এবং আমি এটি বাড়িতে তৈরি করার চেষ্টা করব আপনার যথাযথ নিয়ম মেনে।অনেক সুন্দর পরিবেশনা ছিল দাদা অনেক ভালো লাগলো
এটা সত্যি ইউনিক, তবে অনেকটা লুচির মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু সত্যি বলতে স্বাদটা কেমন সেটা চেক করার ইচ্ছে করছে খুব। আপনার টেকনিকটা মাঝে মাঝে আমিও খাটাই, শুরুটা আমি করলেও শেষটা তাকে করতে হয়, হি হি হি হি
ওয়াও দাদা অসাধারণ হয়েছে আপনার রেসিপি টি। পুরো রেসিপিটি পড়ার সময় মিটমিট করে হাসছিলাম কারন হলো আপনার সুন্দর বিনোদন মূল্যক কথা গুলো ।
আর টেস্টিং এর জন্য যে গুলো গিলেছিলেন ওগুলো থেকে বেমালুম হওয়ার জন্যই মনে হয় রেসিপিটির নাম "লুম" দিয়েছেন।
ঠিক বলেছি দাদা?