আলোকচিত্র : শান্তিনিকেতনে কিছুদিন -০১

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

গত মাসের মাঝামাঝি পয়লা বৈশাখের এক দিন আগে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম । কয়েকটি দিন বোলপুরে গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যালোকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে ফিরলুম । তাপমাত্রা বিশাল ছিল । দিনের তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রী থেকে ৪৬ ডিগ্রীর আশে পাশেই থাকতো । তা সত্ত্বেও দারুণভাবে উপভোগ করেছিলুম শান্তিনিকেতনের শান্তিময় প্রকৃতির কোল । আমি, বাবা, মা, ভাই, স্ত্রী-পুত্র এবং ড্রাইভার । ব্যাস মাত্র এই ক'জনই ছিলুম আমরা ।

সকাল ৮ টার দিকে কলকাতা থেকে রওনা হলুম । ড্রাইভার পথ ভুল করার জন্য বেশ কিছুটা দেরি করে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পৌছালাম শান্তিনিকেতন । পৌঁছেই অমনি হোটেলের রুমে ব্যাগ লাগেজ টাগেজ রেখে ক্ষুন্নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে রিসেপশন এ নেমে এলুম । ততক্ষনে হোটেলে লাঞ্চ টাইম ওভার । যাই হোক, স্পেশাল অর্ডার দিয়ে খাওয়ার টেবিলে বসে পড়লাম ।

ক্রমে ক্রমে এক ঘন্টা গেলো । দেড় ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও খাবার না আসতে বাবার মেজাজ বিশাল গরম হয়ে গেলো । ওয়েটার কে ডেকে বিশাল এক ধমক । বেচারা কাঁচুমাচু মুখ করে ম্যানেজার-কে ডেকে আনলো । ম্যানেজার এসে জানালো যেহেতু লাঞ্চ টাইম ওভার, তাই নতুন করে সব ডিশ প্রিপারেশন চলছে । তাও বাবার মেজাজ আর ঠান্ডা হয় না ।

এবার শুরু করলো টিনটিন । ওর আরেকটা ডাক নাম গোলটু । তো গোলটুবাবু খিদের চোটে চ্যাঁচামেচি লাগিয়ে দিলো । সাথে তার দাদু । ম্যানেজার থেকে হোটেল এর সব কর্মচারী সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো । যাই হোক, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় খাবার এসে গেলো আধা ঘন্টার মধ্যে ।

এবার মা শুরু করলো । আসলে দোষ আমারই ছিল । আমরা মানুষ ছিলুম গোলটু বাদে ৬ জন । আর আমি খাবার অর্ডার করেছিলাম ষোলো জনের মতো । যাই হোক ফেলে ছড়িয়ে খেয়ে যার যার রুমে ঢুকে এসি অন করে ঘুম ।

এক ঘন্টা পরে আবিষ্কার করলুম আমাদের রুমে এসি কাজ করছে না । মা-বাবা, ভাই আর ড্রাইভার এর রুমে এসি ঠিকঠাকই চলছে । শুধু আমাদের রুম বাদে । কেমনটা লাগে । আমার আর আমার ছেলের এসি না চললে ঘুম আসে না । রিসেপশন এ কল করে রুম সার্ভিস চাইলাম ।

ওরা এসির মিস্ত্রিকে কল দিলো । এরপরে শুরু হলো প্রতীক্ষা । অন্তহীন । মিস্ত্রি আর আসে না । আমি ফোনের পর ফোন করতে লাগলাম রুম সার্ভিসে । তারা শুধু আমাকে বলে মিস্ত্রি এখনো আসেনি । দুই ঘন্টার মধ্যেও মিস্ত্রি না আসাতে এবার ম্যানেজার এর নাম্বার চাইলাম । ম্যানেজার কে আমি মাত্র একটি ঘন্টা সময় দিলাম । হয় এসি ঠিক করো না হয় রুম চেঞ্জ করে দাও, না হলে পুলিশকে কল করবো ।

এবার কাজ হলো । এসি ঠিক হলো । সন্ধ্যায় বেরুলাম শান্তিনিকেতনের প্রার্থনা সভার উদ্দেশ্যে ।


IMG_20220415_094442.jpg

পয়লা বৈশাখের পাঞ্জাবি পরিহিত ফ্যান্টম

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ৭ টা ৩০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220415_094431.jpg

IMG_20220415_094424.jpg

গোলটুবাবু আর তার মা শান্তিনিকেতনে ঘোরাঘুরি

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ৮ টা ০০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220415_095829.jpg

শান্তিনিকেতনের ক্যাম্পাসের ভিতর পিয়ারসন মেমোরিয়াল হসপিটাল

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220415_095905.jpg

IMG_20220415_095909.jpg

IMG_20220415_095913.jpg

শান্তিনিকেতনের ক্যাম্পাসের ভিতর ঘুরে ঘুরে সব দেখে টিনটিনবাবু অবাক খুব

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ৮ টা ৪০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220415_100004.jpg

স্মৃতিবিজড়িত এই সেই বটবৃক্ষ যেটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বালক বয়সে নিজ হাতে রোপন করেছিলেন । বহু বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এর তলায় বসে শান্তি খুঁজে পেয়েছেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন, নন্দলাল বসু, সত্যজিৎ রায়, ইন্দিরা গান্ধী , রামকিঙ্কর বেইজ এমন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি এর তলায় দু'দন্ড শান্তি খুঁজে পেয়েছিলেন ।

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ৮ টা ৫০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220415_100019.jpg

IMG_20220415_100025.jpg

মাতা পুত্রের ঘোরাঘুরির বিরাম নেই, চলছেই ।

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ৮ টা ৫৫ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220415_103004.jpg

IMG_20220415_103013.jpg

IMG_20220415_103440.jpg

ভারতীয় উপমহাদেশে আধুনিক স্থাপত্য কলার জনক রামকিঙ্কর বেইজের কিছু অসাধারণ আর্ট ।

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ৯ টা ৩০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


IMG_20220415_105833.jpg

IMG_20220415_105837.jpg

IMG_20220415_105854.jpg

IMG_20220415_105938.jpg

শান্তিনিকেতনের খুব কাছেই রয়েছে সাঁওতালি গ্রাম পলাশবুনি । ডাব খাওয়া হলো অনেকগুলো সেখানে । আমি একাই ৪টে সাবড়ে দিলুম ।

তারিখ : ১৫ এপ্রিল ২০২২
সময় : সকাল ১০ টা ০০ মিনিট
স্থান : শান্তিনিকেতন, বোলপুর, বীরভূম, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।


ক্যামেরা পরিচিতি : OnePlus
ক্যামেরা মডেল : EB2101
ফোকাল লেংথ : ৫ মিমিঃ


Sort:  

Hi @rme
can you add me on Discord, friend request has been sent

 2 years ago 
প্রিয় দাদা শান্তিনিকেতনের ঘুরাঘুরির অনুভূতি এবং চমৎকার চমৎকার আলোকচিত্র দেখে আমি অভিভূত হলাম।সেইসাথে টিনটিন বাবুর আরেকটি গোপন নামো জেনে গেলাম। গোল টু বাবু।খুব মজা পেয়েছিলাম লাঞ্চ টাইমে যখন গোলটু বাবু এবং ওর দাদু ভাই অনেক রেগে গিয়েছিল।আর একটু অবাক হলাম সবার রুমে এসে ঠিকঠাক চলছে শুধুমাত্র আপনার রুমের এসি ঠিক চলছিলনা। সব মিলিয়ে আমার কাছে দারুণ লেগেছে।স্বপরিবারের জন্য রইল অসীম ভালবাসা ও সীমাহীন দোয়া।♥♥
 2 years ago 

মানুষ ছিলেন ৬ জন খাবার অর্ডার করেছেন ১৬ জন এর, দাদা এতো খাবার কি খেয়ে শেষ করতে পেরেছিলেন নাকি বেঁচে গিয়েছিল?
আর হোটেলের এসির সমস্যার কারণে দেখি ভালোই হয়রানি পোহাতে হয়েছিল দাদা।
হোটেলের সমস্যাগুলোর কথা ভুলে ছবিগুলোর দিকে তাকালে মনে হচ্ছে দাদা ভালই সময় কাটিয়েছেন, যদিও গরম ছিল প্রচুর। তবে ৪টে ডাব একাই সাবড়ে দেয়ার পর মনে হয় না খুব একটা গরম অনুভব হয়েছলো।
যাইহোক খুবই ভালো লাগলো দাদা আপনাদের শান্তিনিকেতনের মুহূর্ত গুলো ছবির মাধ্যমে দেখে। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

দাদা প্রথমেই বলবো আপনার আর টিনটিনের পাঞ্জাবি আমার খুব খুব খুব পছন্দ হয়েছে 🥰🥰। বউদির সব গুলো সিরিজ পড়েছিলাম শান্তি নিকেতন নিয়ে। তবে আজ ভেতরের খবর গুলো জানলাম। আমাদের দাদা গেছে যেখানে আর ওরা সার্ভিস দেবে না ঠিক করে তাই কি হয় নাকি 😊😊। বট গাছ টা সত্যিই ভালো লাগলো দাদা। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 2 years ago 

প্রিয় দাদা, আপনার শান্তিনিকেতনে আলোকচিত্র আমার খুবই চমৎকার লেগেছে, এর সাথে টিনটিন বাবুর নতুন নামটি শুনে খুবই ভালো লাগলো, এছাড়াও যখন গোলটু বাবু এবং দাদু ভাই এক সাথে ম্যানেজার ধরলো, সেই সময় আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো, আবার রুমে ডুলে আপনার রুমে এসি চলে না, ম্যানেজার ও খুব বিপদে পরছিলো, যখন পুলিশের কথা বলেছেন, আর শান্তিনিকেতনের ছবি গুলো আমার খুবই ভালো লেগেছে, সব থেকে বৌদির ডাব খাওয়ার ছবিটি জোস ছিলো, প্রিয় দাদা পরের পর্ব গুলো দেখার অপেক্ষায় রইলাম, এবং আপনাদের প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো দাদা।

 2 years ago 

এবার মা শুরু করলো । আসলে দোষ আমারই ছিল । আমরা মানুষ ছিলুম গোলটু বাদে ৬ জন । আর আমি খাবার অর্ডার করেছিলাম ষোলো জনের মতো

😱😱কি বলেন দাদা!!!! আমিতো অবাক!!যাইহোক খাবার যেহেতু বেশি ছিল আমি হলে হতো 😋।
দাদা বৌদি এবং গল্টে বাবুকে বেশ সুন্দর লাগছিল। টিনটিনের পাঞ্জাবির কালার টা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। আপনারা পরিবারের 6 জন মিলে খুব সুন্দর এবং আনন্দের একটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন। শান্তিনিকেতন বেশ সুন্দর ছিল দু একটা ফটোগ্রাফি যা শেয়ার করেছেন আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। শান্তিনিকেতন মনে হচ্ছে শান্তি শান্তি একটা জায়গা ☺️। হসপিটাল টা দেখে মনে হচ্ছিল খুবই নিরিবিলি একটি জায়গা যেখানে সচরাচর মানুষের ভিড় থাকে সেখানে এটি খুবই ফাঁকা ছিল। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের কাটানো সুন্দর মুহূর্তটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল দাদা।

 2 years ago 

এই হোটেল এ দেখি ঝামেলা আর ঝামেলা। দাদা কি ভুলে অত মানুষের খাবার অর্ডার করে ফেলেছিলেন নাকি। আমি থাকলে ভালোই হতো। আমি আবার অনেক খেতে পারি। আর পাঞ্জাবিতে আপনাকে যা লাগছেনা গুরু। টিনটিন বাবুকে সেই কিউট লাগছে। আর দাদা সাবড়ের বিষয় টা বুঝলাম না। এটা কি ডাব কেই বুঝালেন?

 2 years ago (edited)

এক ঘন্টা পরে আবিষ্কার করলুম আমাদের রুমে এসি কাজ করছে না ।

এই লাইনটা পরে হাসি পেয়ে গেল। ঘুরে ঘুরে আপনার রুমের এসিই খারাপ হল। যার এসি ছাড়া এক সেকেন্ডও চলে না। যাক অবশেষে পুলিশের ভয় দেখিয়ে এসি ঠিক করিয়ে নিলেন। সোজা আঙুলে ঘি উঠে না তার প্রমান।
শান্তি নিকেতনে যাওয়ার আমার খুব ইচ্ছা আছে। জানি না পূরণ হবে কিনা। বটবৃক্ষটি দেখে ভালো লাগলো। তাছাড়া বৌদি এবং টিনটিন খুব মজা করেছে মনে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ভালো একটি ট্রিপ ছিল আপনাদের।
(গল্পের পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে ঢুকে এই পোস্ট দেখে কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। পরে সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে ও ছবিগুলো দেখে হতাশা দূর হয়ে গিয়েছে । )

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 2 years ago 

দেড় ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও খাবার না আসতে বাবার মেজাজ বিশাল গরম হয়ে গেলো

এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। প্রথমত দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গিয়েছে তারপর আমি খাবার দিতে এতো দেরি। টিনটিনের এই গোলটু নামটা তো জানতাম না। বেশ মিষ্টি নাম টা। একেই বুঝি বলে ঠ‍্যালার নাম বাবাজি। সবার ঘরের এসি চলছে অফ শুধু আপনাদের টা। দুপুরের ঘুমটাই নষ্ট।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজে হাতে লাগানো বটবৃক্ষ সত্যি ঐতিহাসিক। এবং অন‍্যান‍্য ছবি ফটোগ্রাফি গুলো চমৎকার ছিল।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 64136.70
ETH 3128.20
USDT 1.00
SBD 3.94