কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ - পর্ব ০৬

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


copyright free image source pixabay

পঞ্চম পর্বের পর


ছয়


সবাই ঘুরে এক যোগে তাকালেন কুঞ্জবাবুর দিকে । কুঞ্জবাবুর উত্তেজিত ভয়ার্ত মুখ দিয়ে শুধু ওই একটাই শব্দ নির্গত হয়েছিল - "সর্বনাশ !!" । এরপরে, মিনিট দুই তিনি শুধু বিস্ফারিত চোখে মাইক্রো চিপটার দিকে তাকিয়ে রইলেন । বাপ হরনাথবাবুর মৃদু ধমকে সম্বিৎ ফিরে পেলেন অবশেষে ।

ঘরের সবার জিজ্ঞাসু অবাক দৃষ্টির সামনে ধীরে ধীরে তিনি তাঁর আশংকার কথাটি ব্যক্ত করলেন ।

"আসলে প্রথম দেখাতেই বুঝেছিলাম যে এটি একটি কম্পিউটার মাইক্রোচিপ । হাজার হলেও বিজ্ঞানী মানুষ আমি । এসব তো বুঝতেই হয় আমাকে । এরপরে যখন দেখলাম দপ করে একটা এলইডি (LED) বাল্ব জ্বলে উঠলো তক্ষুনি বুঝলাম যে এটা একটা ট্র্যাকার চিপ হতে পারে । কেউ বা কারা কুকুরটির বডির ভেতরে বসিয়েছে কুকুরটিকে ট্র্যাক করার জন্য । হয়তো তাঁদের কুকুর এটি । হারিয়ে গিয়েছে । অথবা ...অথবা ...."

"কী অথবা অথবা করছো ? আমতা আমতা না করে পরিষ্কার করে বলো দিকি ।", হরনাথবাবু তাড়া লাগলেন তাঁর ছেলেকে ।

"আজ্ঞে বাবা, বলছি । আমার সন্দেহ হচ্ছে যারা কুকুরকে গুলি করেছে তারাই এই ট্র্যাকার বসিয়েছে । হয়তো কুকুরটিকে বাগে আনতে চেয়েছিলো তারা, কিন্তু পারেনি । কুকুর পালিয়েছে । কুকুর পালাতে পারে এই আশঙ্কাতেই তারা হয়তো এই ট্র্যাকার চিপটি বসিয়েছিলো । এখন পালাতে দেখে হয়তো গুলি ছুঁড়েছিলো । এখন তারা খুঁজে বেড়াচ্ছে ।"

"হুম, বুদ্ধি আছে তোমার । এই আশঙ্কা সত্যি হলেও হতে পারে । কিন্তু, এমন একটি অসাধারণ কুকুরকে কেন তারা গুলি করবে ? আমার তো মনে হয় বিপক্ষের কেউ শত্রুতা করে গুলি করেছে । গুলি খেয়ে দৌড়ে পালিয়ে এসেছে এটা । এখন যাদের কুকুর তারা নিশ্চয়ই খুঁজতে বেরিয়েছে ।", ব্যাখ্যা করলেন হরনাথবাবু ।

যন্ত্রের মতো সবাই ঘাড় নেড়ে হরনাথবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন করলেন ।

হরনাথবাবু দ্রুত তাড়া লাগলেন কুকুরটিকে বয়ে ভেতর বাড়িতে নিয়ে যেতে । দু'জন চাকর, হারান মাস্টার আর বাবুলাল চারজনে মিলে কুকুরটিকে বয়ে ভেতর বাড়িতে নিয়ে গেলো । পেছন পেছন হরনাথবাবু চললেন । কুঞ্জবাবু গেলেন না তাঁদের সাথে । তিনি তাঁর সেই ল্যাবরেটরিতে বসে রইলেন । মাথার মধ্যে অনেক প্রশ্ন জট পাকিয়ে রয়েছে । তাঁর বাপ যত সহজে সব কিছু ব্যাখ্যা করে তাঁর আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করলেন কুঞ্জবাবু সেটা মানতে পারছেন না মোটেই ।

তাঁর মনে একটা অজানা ভয়ের কু গাইছে । একটা অমঙ্গলের ঝড় আসতে চাইছে বুঝতে পারছেন বেশ । তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জাগ্রত হয়েছে । কুকুরটি যদি এতটা অদ্ভুত ধরণের না হতো বা কুকুরটি এত গুলো গুলি খেয়েও যদি বেঁচে না থাকতো এবং তার দেহের অভ্যন্তর থেকে যদি না কোনো মাইক্রো ট্র্যাকার চিপ পাওয়া যেত তবে, তার মন কু গাইতো না ।

আকাশ পাতাল ভাবতে থাকলেন তিনি । হঠাৎ, বিপ করে খুবই ছোট্ট একটা যান্ত্রিক সাউন্ড শুনতে পেলেন তিনি । দ্রুত ঘুরে তাকালেন তিনি চিপটির দিকে । দপ দপ করে ক্ষুদ্র LED লাইটটি জ্বলছে আর নিভছে ।

অজানা ভয়ে ভীত দৃষ্টিতে তিনি সেদিকে তাকিয়ে রইলেন । এমন সময় জানালায় মৃদু টোকার শব্দে তিনি চমকে উঠে তাকিয়ে দেখলেন জানালার শার্সিতে পল্টু আর পাঁচু, দুই মূর্তিমান । বিধ্বস্ত চেহারা তাদের । দ্রুত শার্সির কাঁচ নামিয়ে দিলেন তিনি ।

পল্টুই প্রথম কথা বললো - "কাকাবাবু, বিপদ !"

কুঞ্জবাবু দ্রুত তাদেরকে ঘরে ঢুকতে বললেন । ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকেই পাঁচু প্রথমে ঘরের দোর লাগিয়ে দিলো আর পল্টু জানালাগুলো ভালো করে এঁটে দিলো । কিছু একটা ব্যাপারে যে দুই মূর্তিমান বেশ ভয় পেয়েছে এটা বুঝতে পারলেন কুঞ্জবাবু ।

পাঁচু চোরকে তিনি বিলক্ষণ চেনেন । পাঁচুর ছোটখাটো সিঁদকাটার যন্ত্রগুলো তিনিই ভালোবেসে বানিয়ে দেন, বিনিময়ে পাঁচু তাঁর বাড়িতে কখনোই চুরি করে না । আর পল্টুর বাপ গজেনবাবু হলো কুঞ্জবাবুর বাল্যবন্ধু । তাই, পল্টুও তাঁর ভালোই পরিচিত ।

তিনি যতদূর জানেন এই দুই অসমবয়সী বন্ধুযুগল বিশাল ডাকাবুকো । রাত বিরেতেই এদের যত কাজ । একজন মানুষের ঘরের জিনিসপত্র সাফ করে আরেকজন সবার পুকুরের মাছ সাফ করে বেড়ায় । দুঃসাহসী এই দুই মূর্তিমান যখন ভয় পেয়ে এই মাঝ রাত্তিরে তাঁর কাছে এসেছে তখন বলতেই হবে ব্যাপার বেশ গুরুতর ।

কিছুটা ধাতস্থ হতে সময় দিলেন তাদের কুঞ্জবাবু । ঢক ঢক করে বরফশীতল এক গ্লাস ঠান্ডা জল গিলে এরপরে ধীরে ধীরে একটু আগে ঝিলের ধারে ঘটে যাওয়া রোমাঞ্চকর ঘটনাটি বলতে লাগলো পল্টু । শুনতে শুনতে ভয়ের একটা হিমশীতল স্রোত বয়ে গেলো কুঞ্জবাবুর মেরুদন্ড বরাবর ।


[ক্রমশ:]


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ২২৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ৪র্থ দিন (225 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 04)


trx logo.png



সময়সীমা : ২১ অগাস্ট ২০২২ থেকে ২৭ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ২৪ আগস্ট ২০২২


টাস্ক ৩৯ : ২২৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

২২৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : eb3ea856aad03784ab1a5381982de52e6fd3bb50bbecd5f8c967ff9b5b972f3f

টাস্ক ৩৯ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Sort:  
 2 years ago 

দাদা আপনার লেখা কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ গল্পের আজকের পর্বটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। দুই সাহসী চোর যখন ভয় পেয়ে গেছে, তাহলে বুঝাই যাচ্ছে নিশ্চয়ই বেশ রহস্যজনক ঘটনা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দাদা পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

ওফ দাদা, একেতো মেলা দিন পর পর্বটা ফিরে আসলো তারপর আবার এমন জায়গায় শেষ করলেন মনে সংশয় তৈরী করে। তবে গল্পটির মাঝে দারুণ একটা আকর্ষণ তৈরী হয়েছে। কুঞ্জবাবুর মাথায় যে কিছু আছে সেটা তার বাপ বুঝতে পারছে হা হা হা।

 2 years ago 

অসুস্থতা জনিত কারণে ইতিপূর্বের কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ - পর্ব পর্বগুলো আমার পড়া হয়নি। তবে **কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ -০৬ পর্বটি পড়ে তো একটি অঘটন ঘটার আশঙ্কা পাচ্ছি। পরের পর্বগুলো দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

ইশ,কোথায় শেষ করলেন দাদা,পরের অংশ না পড়া অব্দি শান্তি নেই। কি ঘটনা ঘটতে পারে তাই ভাবছি😀।বেশ রহস্যজনক

 2 years ago 

এতোদিন পর আপডেট পেয়ে কি যে ভালো লাগছে দাদা।অপেক্ষা করতে করতে মাঝে জাস্ট ভুলেই গিয়েছিলাম আমি।জানার অপেক্ষায় সে হিমশীতল করা কাহিনী।

একজন কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক তার ক্লাসে একটি খেলা খেলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷

শিক্ষক ক্লাসের প্রতিটি শিশুকে কয়েকটি আলুযুক্ত প্লাস্টিকের ব্যাগ সঙ্গে আনতে বললেন।

প্রতিটি আলুকে এমন একজন ব্যক্তির নাম দেওয়া হবে যা শিশু ঘৃণা করে,

সুতরাং একটি শিশু তার প্লাস্টিকের ব্যাগে কতগুলি আলু রাখবে তা নির্ভর করবে সে কত লোককে ঘৃণা করে তার উপর।

তাই যখন দিনটি এল, প্রতিটি শিশু তার ঘৃণার লোকদের নাম দিয়ে কিছু আলু নিয়ে আসে। কারো কারো কাছে 2টি আলু ছিল; কেউ 3টি আবার কেউ 5টি পর্যন্ত আলু। এরপর শিক্ষক বাচ্চাদের বললেন, তারা যেখানেই যান (এমনকি টয়লেটে) ১ সপ্তাহের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগে আলু নিয়ে যেতে।

দিনের পর দিন কেটে যায়, এবং শিশুরা পচা আলু থেকে অপ্রীতিকর গন্ধের কারণে অভিযোগ করতে শুরু করে। এছাড়া যাদের কাছে ৫টি আলু আছে তাদেরও ভারী ব্যাগ বহন করতে হয়েছে। 1 সপ্তাহ পরে, বাচ্চারা স্বস্তি পেয়েছিল কারণ গেমটি শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছিল...

শিক্ষক জিজ্ঞাসা করলেন: "1 সপ্তাহ ধরে আলু নিয়ে যাওয়ার সময় আপনার কেমন লেগেছিল?" শিশুরা তাদের হতাশা প্রকাশ করে এবং তারা যেখানেই যায় সেখানে ভারী এবং দুর্গন্ধযুক্ত আলু বহন করতে গিয়ে তাদের কষ্টের অভিযোগ করতে শুরু করে।

তখন শিক্ষক তাদের জানালেন খেলার পেছনে লুকিয়ে থাকা অর্থ। শিক্ষক বললেন: "আপনি যখন আপনার হৃদয়ে কারো প্রতি আপনার ঘৃণা বহন করেন তখন ঠিক এই পরিস্থিতি হয়। ঘৃণার দুর্গন্ধ আপনার হৃদয়কে কলুষিত করবে এবং আপনি যেখানেই যান না কেন আপনি তা আপনার সাথে নিয়ে যাবেন। আপনি যদি পচা আলুর গন্ধ সহ্য করতে না পারেন তবে মাত্র 1 সপ্তাহ, আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে আপনার হৃদয়ে ঘৃণার গন্ধ আপনার সারাজীবনের জন্য থাকে???"

 2 years ago 

দাদা রোমাঞ্চকর ঘটনাটি বলেই শেষ করলে ভালো হতো। এখন তো মনের ভিতর কেমন জানি করছে কি সেই ঘটনা। আমি আবার কোন কিছু শুরু করলে শেষ করে শান্তি পায় না। গল্পের নাম গুলো একটু কঠিক কঠিন মনে হয় । ধন্যবাদ দাদা।

 2 years ago 

কুঞ্জবিহারী ইস ব্যাক!! পাঁচ মাস পর। দারুন।

আমার সন্দেহ হচ্ছে কুকুরটা হয়তো এলিয়েন। কুকুর টা আর যাই হোক গল্পটা বেশ ঘোরালো হয়ে চলেছে।

 2 years ago 

দীর্ঘদিন পরে পড়লাম ভাই , বেশ আগ্রহ জেগে বেশে বসেছে তাছাড়াও মাইক্রো চিপ ,দুই পাক্কা চোরের ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা বেশ এলোমেল করে দিল । তাছাড়াও বেশ রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি । অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 67083.87
ETH 3502.60
USDT 1.00
SBD 3.13