কুঞ্জবিহারীর নিকুঞ্জ - পর্ব ০৮

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


copyright free image source pixabay

সপ্তম পর্বের পর


আট


ভয় পেয়ে পল্টুর ছোটার গতি বেশ বেড়ে গেলো । নিঃস্তব্ধ শীতের রাতে জনমানবহীন রাস্তায় শুধু একাকী পল্টু ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলেছে, আর পিছনে রহস্যময় কেউ এক জন ছুটে আসছে । ঘন আঁধারে দৃষ্টি চলে না এক হাতের বেশি । তাই কারও চেহারা ঠাওর করতে পারেনি পল্টু । ছোটার সময়ে বেশ কয়েকবার ঘাড় ঘুরিয়ে সে দেখার চেষ্টা করেছে । কিন্তু, নিকষ কালো আঁধারে রাস্তার দু'পাশে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছ গাছালি আর ঝোপে ঝাড়ে জোনাকীর ওড়াওড়ি ছাড়া আর কিচ্ছু দেখতে পারেনি ।

ইশ ! টর্চটা ফেলে এসেছে সে কুঞ্জবাবুর ল্যাবরেটরীতে । উত্তেজনায় তার টর্চের কথাটা খেয়ালই হয়নি । এখন পদে পদে তার মাছ শিকারের সর্বক্ষণের সঙ্গী প্রিয় টর্চটার অভাব টের পাচ্ছে । তবে, আশার কথা এই যে পিছনে যেই ধাওয়া করে আসুক সে সংখ্যায় মোটে একজন । মাত্র একজোড়া ছুটন্ত পায়ের শব্দই সে পাচ্ছে । একজন মাত্র লোক হলে তাকে ডজ দেওয়া পল্টুর জন্য কস্টকর হলেও অসম্ভব কোনো কাজ নয় ।

ছুটতে ছুটতে এক সময় দেখা মিললো চণ্ডীমণ্ডপের সেই বড় অশ্বত্থ গাছটির মাথার । জমাট বাঁধা নিকষ কালো একটা অন্ধকার যেনো । দ্রুত পায়ে ঢুকে পড়লো পল্টু চন্ডীমন্ডপের বড় চাতালটায় । বিশাল চাতাল । পুজোর সময় বেশ জমাটি হয় এখানে । আগে পাঁঠা বলি হতো , এখন লেবু, আখ এসব নিরামিষ বলি হয় । চণ্ডীমণ্ডপের এই বড় চাতালটা গাঁয়ের অনেকগুলো বেওয়ারিশ কুকুরের নিশিযাপনের ঠিকানা । আজকেও দেখা গেলো আট-দশটা কুকুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে ।

পল্টুর সাড়া পাওয়া মাত্র কয়েকটা ঘ্যাঁক ঘ্যাঁক করে উঠলো । পরক্ষণেই পল্টুকে চিনতে পেরে মৃদু স্বরে কেঁউ কেঁউ করে আবার গুঁটিসুটি হয়ে শুয়ে পড়লো । পিছন পিছন পদশব্দটা হঠাৎই বেশ তীব্র হয়ে উঠলো । মুহূর্তে তিন চারটে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে উঠেই আবার কেঁউ কেঁউ করে চুপ করে গেলো । সর্বনাশ ! এ কেমন আততায়ী ? কুকুর পর্যন্ত বশ মানে এর কাছে ?

হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেনো পল্টুর মনে বেপরোয়া এক সাহস চলে এলো । মানুষ যখন বিপদের সামনে পিছু হঠতে হঠতে হঠাৎ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন কেউ কেউ এমনই বেপরোয়া হয়ে বিপদকে ফেস করে । পল্টুরও বেলাও ঠিক তাইই হলো । দ্রুত ঘুরে পল্টু হঠাৎই ঝাঁপিয়ে পড়লো অন্ধকারের মধ্যে তার আততায়ীর ওপর । কয়েকটা ঘুঁষি আর লাথি হাকরিয়ে দিলো চটপট । এবং খুবই অবাক হয়ে লক্ষ করলো যে আততায়ী বিন্দুমাত্র প্রতিরোধের সুযোগ পেলো না । সব কয়টি ঘুঁষি লাথি সঠিক জায়গাতেই লাগলো । এবং সঙ্গে সঙ্গে ভীষণই চমকে উঠলো পল্টু । আততায়ী চিৎকার ছেড়েছে ।

হাউ মাউ কাউ কাউ করে সে এক রাসভনন্দিত গলায় চেঁচানি । এ গলা চিনতে ভুল হওয়ার জো নেই । এই গলার মালিক আর কেউ নয় । এ হলো বাতাসপুর গাঁয়ের একমাত্র পাগল জগা পাগলা । পল্টুর আবার খুব ভালো বন্ধু জগা । একমুখ দাড়ি আর মাথায় উসকো খুসকো চুল আছে সত্য, তবে জগা সপ্তাহে অন্তত দুই তিন দিন চান করে । জামা কাপড়ও তার তেমন ছেঁড়া খোঁড়া নয় । পায়ে শীত গ্রীষ্ম সব সময়েই মোজা ছাড়া এক জোড়া বহু পুরোনো কেডস পরা থাকে । উর্ধাঙ্গে একটা হলদে বা গেরুয়া ফতুয়া পরা থাকে । আর পরনে পুরোনো ফুটো ফাটা জিন্স ।

জগার কথা বার্তা শুনে মনে হয় না তার মাথায় ছিট্ আছে । গাঁয়ের অনেকেই মনে করে জগা ছদ্মবেশী পাগল । তবে, সত্যি কথা হলো জগা আসলেই পাগল । পুরো পাগল না হলেও হাফ পাগল । কথা বার্তা শুনে ঠাহর করা না গেলেও সে পাগলই । অবশ্য এ ব্যাপারটা নিয়ে জগার নিজেরই খুবই সন্দেহ আছে । সে কি সত্যিই পাগল, নাকি পাগল নয়, এ ব্যাপারে জগা পাগলা নিজেও নিশ্চিন্ত হতে পারে না কোনোমতেই ।

গাঁয়ের ছেলে ছোকরারা তার বন্ধু । তো, গত বিষ্যুদবার গোবিন্দ জগাকে পরামর্শ দিলো গাঁয়ের স্কুলে গিয়ে হেড স্যারের কাছ থেকে একটা সার্টিফিকিট আনতে । সেখানে হেড স্যার লিখে দেবেন "জগা পাগলা আসলেই একটা নিপাট খাঁটি পাগল - ইতি হেড স্যার" । তাহলে, আর কোনো সন্দেহ থাকবে না । সবাই মেনে নেবে যে জগা পাগলা আসলেই এক জন খাঁটি পাগল । কথাটি কিন্তু দারুন পছন্দ হয়েছিল জগার ।

তা গিয়েওছিলো সে শুক্কুরবারেই স্কুলে । সার্টিফিকেট আনতে । তা সেখানে জব্বর এক কান্ড বাঁধিয়ে দিয়েছিলো জগা ।


[ক্রমশ:]


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ২৫০ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ১ম দিন (225 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 01)


trx logo.png



সময়সীমা : ২৮ অগাস্ট ২০২২ থেকে ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ২৮ আগস্ট ২০২২


টাস্ক ৪৩ : ২৫০ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

২৫০ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : ad438137022be4f226f569dc88a92f6ee0b05350060b38f75530a2c9124a29f2

টাস্ক ৪৩ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Sort:  
 2 years ago 

দাদা কি যে ভয় নিয়ে পড়ছিলাম ,বুকের ভেতর কেঁপে উঠছিল আর পড়ছিলাম । পিছনে সেটা কি হতে পারে নিশ্চয়ই ভূত হতে পারে। কিন্তু শেষমেষ দেখলাম যে একটি পাগল সত্যিই মজার লাগলো কাহিনীটা ।দারুন লিখেছেন আপনি ।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

সেই জবর কান্ডটা আগামী পর্বে জানা যাবে। গল্পের বর্ননাভংি অসাধারণ

 2 years ago 

হাহাহা এরকম একটা টুইস্ট পাব ভাবতেই পারি নি।একদম বোকা বনে গেছি।পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

 2 years ago 

দাদা কি হলো এটা, পুরো আকর্ষণটাকে এভাবে থামিয়ে দিলেন আপনি, যা উত্তেজনাটা পুরো পানি পানি হয়ে গেলো। দারুণ একটা মুহুর্ত তৈরী করেছিলো পল্টু সাথে এ্যাকশনটাও জমে উঠেছিলো। এখনতো সন্দেহ তৈরী হচ্ছে এতো খাঁটি পাগলা না, নিশ্চয় কোথায় গাপলা আছে।

 2 years ago 

আগের পর্বে ভাবলাম হয়তো এলিয়েন কুকুর টার মালিক হবে আর শেষে কিনা জগা পাগলা। হাঃ হাঃ। জমে উঠেছে গল্প। যদিও রাতের অন্ধকারে পল্টুর মোটেই আলো ছাড়া বেরোনো উচিত হয়নি, শিক্ষা হলো।

 2 years ago 

দাদা আপনার শেয়ার করা গল্পটির এই পর্ব পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আমিতো প্রথমে ভূত ভেবেছিলাম। এরপর দেখলাম অন্য কিছু। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।

 2 years ago 

পল্টুকে নিয়ে অবশেষে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। এ যাত্রায় বেঁচে গেল 😂। তবে জগা পাগলের বিবরণ টা বেশ মজার। এবার বেশ জমে যাচ্ছে। দেখা যাক পরের পর্বে কি আসছে 🙏

 2 years ago 

এই পর্বে শুরুর দিকে যদিও একটু ভয় পেয়েছিলাম কিন্তু শেষের দিকে এসে আর হাসি আটকে রাখতে পারছিলাম না। জগা পাগলার কান্ড কারখানা দেখে না হেসে আর উপায় নেই। বেশি ভালো লেগেছে, হেড স্যারের কাছে সার্টিফিকেট নেওয়ার কথা শুনে সে যে স্কুলে গিয়ে তুলকালাম কান্ড করেছে। যাইহোক দাদা পল্টু যে আপাতত নিরাপদে আছে এটা জেনে খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ আপনাকে দাদা।

 2 years ago 

আততায়ী তাহলে জগা পাগলা ছিল।। পল্টু কি ভয়টাই না পেয়েছিল। জগা পাগলাকে উরাধুরা মাইর দিয়ে দিল। জগা পাগলা শুক্কুরবারে স্কুলে গেল তখন তো স্কুল বন্ধ থাকে। কি যে ঘটনা আবার ঘটিয়ে ফেললো জগা 🙆‍♂️। পরের পর্বের অপেক্ষায় দাদা।

 2 years ago 

আমিত খুব থ্রিলিং মুড নিয়ে পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম পিছনে যে-ই থাকুক পল্টু ডজ দিতে পারবে না, ভেবেছিলাম পলটু ঘায়েল করবে ঠিকই কিন্তু অনেক বেগ পোহাতে হবে। শেষে কিনা জগা পাগলা- এইটা খুবই আনেক্সপেক্টেড ছিল। ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 61205.14
ETH 3376.01
USDT 1.00
SBD 2.51