বিবর্তন ও একটি ভবিষ্যৎবাণী -পর্ব ১০

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago


Copyright Free Image Source : Pixabay


প্রস্তর যুগের অবসান হয় তখনি যখন থেকে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শেখা শুরু করে । আসলে, ধাতু এমন একটা আবিষ্কার যেটা ছাড়া সভ্য যুগ একদমই অচল । একটি মুহূর্তও আধুনিক মানুষ ধাতু ছাড়া কল্পনাও করতে পারে না । এই ধাতু আবিষ্কার ও ব্যবহার শুরু হয় স্টোন এজের একদম শেষে । মানুষ তামার আকরিকের সন্ধান পায়, তামা নিষ্কাশন করে এবং তামা দিয়ে হাতিয়ার ও তৈজসপত্র তৈরী করা শুরু করে । সূচিত হয় নতুন একটা যুগের । তাম্র যুগ ।

মানুষের প্রথম আবিষ্কৃত ধাতু হলো তামা বা Copper । এই আবিষ্কার নিয়ে দুটি স্বজনগ্রাহ্য় মতামত রয়েছে । প্রথমটি হলো পাথরের খাঁজে আগুন জ্বেলে তামার সন্ধান পাওয়া এবং দ্বিতীয়টি হলো পাথরের খনি ও মাটির গভীরে তামার আকরিকের সন্ধান । আমার মনে হয় দু'টি মতবাদই সঠিক ।

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ সব প্রতিনিয়ত তিনটি জিনিসের অত্যধিক ব্যবহার করতো - আগুন, পাথর এবং মাটি । আগুন তাদের প্রায় সকল কাজেই লাগতো । পাথর দিয়ে তারা প্রায় সকল প্রকার অস্ত্র-শস্ত্র এবং তৈজসপত্র তৈরী করতো এবং কাদা মাটি দিয়ে তৈজসপত্র তৈরী করতো । এরই ফলে হঠাৎই একদিন ধাতুর লুকোনো গুপধনের দরজা তাদের সামনে খুলে যায় ।

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ শুধুমাত্র গুহার মেঝেতে আগুন জ্বালতো না । শুষ্ক আবহাওয়াতে খোলা আকাশের নিচেও তারা আগুন জ্বেলে রান্না-খাওয়াদাওয়া, আগুন পোহানো, গল্প-গুজব সব করতো । এই করতে গিয়েই একসময় মানুষ লক্ষ করলো যে পাথরের খাঁজে দীর্ঘক্ষণ আগুন জ্বালানোর পরে অগ্নিকুন্ডের ছাইয়ের মধ্যে কিছু শক্ত ধাতব পিন্ড । ধাতব খন্ডগুলি খুবই উজ্জ্বল হওয়ার কারণেই তাদের নজরে আসে । তামা আগুনে পুড়লে সোনার মতোই উজ্জ্বল বর্ণ ধারণ করে ।

এই ধাতু খন্ড গুলো তাদের এতো ভালো লেগে যায় যে তারা এগুলি সংগ্রহ করা শুরু করে । তখনও পর্যন্ত এই ধাতুখন্ড গুলোর উৎস্য সম্পর্কে তারা কিছুই জানতো না । কিন্তু, এটা লক্ষ করলো যে পাথরের খাঁজে আগুন দীর্ঘক্ষণ জ্বললে অনেক সময় এগুলো পাওয়া যায় ।

এভাবে ক্রমে তারা আবিষ্কার করলো যে পাথরের খাঁজে খাঁজে এই ধাতুর সূক্ষ গুঁড়ো আটকে রয়েছে যেগুলো আগুনের তাপে পাথরের খাঁজ থেকে গলিত হয়ে বেরিয়ে এসে অন্যান্য গলিত ধাতুর সাথে মিশে পিন্ড সৃষ্টি করে । খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই আবিষ্কার । মানুষ ধাতুর সন্ধান পেয়ে গেলো ।

এছাড়াও পাথরের খনিতে পাথর ভেঙে ভেঙে সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা অনুরূপ ধাতুর সূক্ষ গুঁড়ো আবিষ্কার করে । ক্রমে, মৃৎশিল্পের ব্যাপক উন্নতির জন্য প্রচুর মাটির প্রয়োজন হওয়াতে তারা মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে অনেকটাই গভীরে চলে যাওয়াতে মাটির অভ্যন্তরে তামার আকরিকের সন্ধান পায় আরো প্রচুর পরিমাণে ।

বুদ্ধিমান মানুষ তখন আর শুধু সংগ্রহ করার জন্য নয় তামার পিন্ডগুলিকে তাদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য চিন্তা ভাবনা শুরু করে দেয় । তারা লক্ষ করে যে তামার এই সব ধাতব পিন্ডগুলো পাথরের মতোই শক্ত আবার আগুনে পোড়ালে কাদা মাটির তালের মতোই নরম । ধাতুর এই অনন্য দুটি বৈশিষ্ট্য তাদেরকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে ।

পাথর যতই শক্ত হোক না কেন তা দিয়ে মনের ইচ্ছেমতো আকার ও আকৃতির অস্ত্র-শস্ত্র এবং তৈজসপত্র তৈরী করা সম্ভব নয় । কারণ, আগুনে পাথরকে গলিয়ে নরম করা সম্ভব নয় । আবার কাদা মাটি নরম হওয়াতে তা দিয়ে ইচ্ছেমতো তৈজসপত্র বানিয়ে রোদে শুকিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে যতই চমৎকার বাসন কোসন তৈরী করা যাক না কেন সেগুলো ভঙ্গুর এবং দীর্ঘস্থায়ী নয় । যথেষ্ঠ শক্ত এবং সহজে ভঙ্গুর হওয়ার কারণে মাটি দিয়ে কোনো অস্ত্র-শস্ত্র বানানোও সম্ভব নয় ।

কিন্তু, তামার এই ধাতু পিন্ডগুলি আগুনে পুড়িয়ে নরম করে যে কোনো আকৃতির অস্ত্র শস্ত্র ও তৈজসপত্র বানানো যায় এবং ঠান্ডা হওয়ার পরে তারা পাথরের মতোই শক্ত এবং অভঙ্গুর হয় । শুরু হলো মানুষের নতুন আরেকটি যুগ । তাম্র যুগ । শুরুতে মানুষ তামা নিষ্কাশন করতো একদম আদিম উপায়ে । প্রচুর সময় আর পরিশ্রমের দরকার পড়তো । ক্রমশ তাম্র নিষ্কাশনের আরো সহজতর উপায় আবিষ্কার করলো মানুষ । তামার সাথে টিন মিশিয়ে সংকর ধাতু ব্রোঞ্জ আবিষ্কার করে ব্রোঞ্জ যুগের সূচনা করলো ।

পরের এপিসোডে আদিম মানুষের ধাতুবিদ্যা এবং ব্রোঞ্জ ও লৌহ যুগ নিয়ে আলোচনা করবো । আজ এ পর্যন্তই ।

[ক্রমশ ...]


পরিশিষ্ট


প্রতিদিন ১৭৫ ট্রন করে জমানো এক সপ্তাহ ধরে - ১ম দিন (175 TRX daily for 7 consecutive days :: DAY 01)


trx logo.png




টার্গেট ০৩ : ১,২২৫ ট্রন স্টেক করা


সময়সীমা : ০৭ আগস্ট ২০২২ থেকে ১৩ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত


তারিখ : ০৭ আগস্ট ২০২২


টাস্ক ২২ : ১৭৫ ট্রন ডিপোজিট করা আমার একটি পার্সোনাল TRON HD WALLET এ যার নাম Tintin_tron


আমার ট্রন ওয়ালেট : TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx

১৭৫ TRX ডিপোজিট হওয়ার ট্রানসাকশান আইডি :

TX ID : 64a73ae3dd863bcbf03550bad51c53bc9432d6e3814d1b3806bdff48653136bf

টাস্ক ২২ কমপ্লিটেড সাকসেসফুলি


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png

Sort:  
 2 years ago 

দাদা বই পড়ে কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগের অনেক কিছু জানতাম, তবে এখন দিন দিন আরও ক্লিয়ার হচ্ছে, তবে মানব সভ্যতার সবথেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে তারাই, তাই আজ সব কিছু আমাদের হাতের মুঠোয়।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



 2 years ago 

দাদা আপনার এ পোষ্টটি পড়ে মানব সভ্যতার অনেক পুরনো অজানা বিষয় জানতে পারলাম। বিশেষ করে নব্য প্রস্তরের যুগে মানুষের আগুনের ব্যবহারের বিষয়টি জানতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগলো। পাশাপাশি আপনার এ পোষ্টটি পড়ে তাম্র যুগ সম্পর্কে অনেকগুলো অজানা তথ্য জানতে পারলাম। অসাধারণ শিক্ষামূলক একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য দাদা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

দারুন লাগছে এপিসোড গুলো,আসলে এর থেকে অনেক কিছু জানা যাচ্ছে। আসলেই তামার জিনিসপএ আগের দিনের মানুষ ব্যবহার করতো,আমাদের বাসায় ও ছিলো।

 2 years ago 

দাদা আজকে আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে এবং এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। আসলে প্রাচীন ইতিহাস আমাদের প্রত্যেককে জানা উচিত। আর এই প্রাচীন ইতিহাস জানতে পেরে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে। আজকে আপনি প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে খুবই সুন্দর তথ্য দিয়েছেন। আগুন জালার ইতিহাস ভালোভাবে আমি জানতে পারলাম। ভালো লাগলো আজকের পোস্টটি পড়ে।

 2 years ago 

ঠিক বলছেন দাদা তামা ব্যবহারে আদিম মানুষ অনেকটা আধুনিকের পথে এগিয়ে গেছে। তাম্র যুগটা অনেক গুরুত্ব পূর্ন। ধন্যবাদ দাদা পরের পর্বের আশায় রইলাম।

 2 years ago 

দাদা আপনার এই পোস্ট পড়ার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম। তামা আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য তামা সবার কাছেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছু এগিয়ে যাচ্ছে। তাইতো মানুষের চাহিদার সাথে সাথে মানুষ নতুন কিছু খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে। শুভকামনা রইল দাদা।

 2 years ago 

মাঝেমাঝে ভাবি দাদা একটা মানুষকে সৃষ্টিকর্তা কতোটা আশীর্বাদ করতে পারে জ্ঞান দিয়ে!এসব কত পড়েছি কখনোই নিজের ইচ্ছাতে পড়িনি।কারণ লেখাগুলো সম্পূর্ণই এক ঘেয়েমি ধরণের কিন্তু আপনার লেখার ধরণের কারণে পড়তে বাধ্য!

প্রচুর মাটির প্রয়োজন হওয়াতে তারা মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে অনেকটাই গভীরে চলে যাওয়াতে মাটির অভ্যন্তরে তামার আকরিকের সন্ধান পায়

আমার কাছে এই বিষয়টা অস্পষ্ট মনে হচ্ছে । কারণ ওই সময় পৃথিবীর মানুষের সংখ্যা ছিল খুবই কম । তাদের তো মাটির জন্য জায়গার অভাব হওয়ার কথা না। তাহলে খুব বেশি গভীর গর্ত করতে হবে কেন ? আপনার পোস্টগুলি পড়ছি আর নানান রকম তথ্য জানতে পারছি আদিম মানুষের সম্বন্ধে ।

 2 years ago 

মৃৎশিল্প একটা বিশেষ এলাকা কেন্দ্র করেই গড়ে উঠতো । এক এক স্থানের মাটি খুঁড়ে নির্দিষ্ট শিল্প স্থানে আনার চাইতে তার কাছাকাছি সুনির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে খোঁড়াটাই তাদের কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছিল ।

Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.26
JST 0.040
BTC 98327.66
ETH 3508.12
USDT 1.00
SBD 3.27