সব হারিয়ে সর্বস্বান্ত (ছোটো গল্প)

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রউফ সাহেব খুশি মনে বাসায় ফিরলেন। বাসায় ঢুকেই দেখতে পেলেন পরিবারের সকলে বেশ খুশি। আসলে এই খুশির উৎস হচ্ছে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়া। গত কয়েক বছর কাজের চাপে তিনি পরিবার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারেনি। এজন্য এবার অফিস থেকে কয়েক দিনের ছুটি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিলেন। পরিবারের সবাইকে বলেছিলেন এবার আমরা এটা বাড়িতে ঈদ করবো। এই জন্য সকলেই অনেক খুশি। গ্রামের বাড়িতে যাবেন এই জন্য সবার জন্য তিনি কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। পরদিন সকালে রওনা দিবেন। শেষ মুহূর্তে টিকেট পাওয়া যাবে না সে কারণে তিনি আগে থেকেই ট্রেনের টিকেট কেটে রেখেছিলেন। যদিও ট্রেনের টিকেট পেতে তাকে বেশ কিছু বাড়তি টাকা গুনতে হয়েছে। যাই হোক সে বাসায় ফিরে শেষবারের মতো সবকিছু চেক করে নিচ্ছিলেন।

Black and Gold Fancy New Year Card_20240411_100759_0000.png

সবকিছু নেয়া হয়েছে কিনা সেটা বারবার তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করছিলেন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী তার কাছে জিজ্ঞেস করল বাসায় যে স্বর্ণালংকার এবং কিছু নগদ টাকা আছে সেগুলো কি করবো? রউফ সাহেব বললো এগুলো নিয়ে তো একটু চিন্তায় আছি। গ্রামের বাড়িতে এগুলো টেনে নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ ওখানে কোথায় কার কাছে এগুলো রাখবো? ওর থেকে বাসায় তালা বন্ধ করে এগুলো রেখে যাই। নিরাপদ কোনো জায়গায় রাখতে হবে। পরে দুজন মিলে পরামর্শ করল তাদের আলমারিতেই তারা স্বর্ণালংকার এবং টাকা পয়সা সব রেখে যায়। পরদিন সকালে উঠে রউফ সাহেব খুশি মনে সবাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। স্টেশনে পৌঁছে দেখেন ট্রেন আসতে লেট হবে। বাড়িতে যাওয়ার খুশিতে ট্রেনের এই লেট হওয়াও তাদের কাছে খুব একটা কিছু মনে হচ্ছিলো না। তাছাড়া পুরো স্টেশন জুড়েই দেখছিল এই রকম ঈদে ঘর মুখো মানুষের ভিড়। সবার মুখে একটা অদ্ভুত প্রশান্তির হাসি লেগে রয়েছে। যাই হোক ঘন্টা দুয়েক লেটে ট্রেন এলে তারা তাড়াহুড়ো করে ট্রেনে উঠে পড়লো। তারপর যথারীতি বাড়িতে পৌঁছে কয়দিন দারুন সময় কাটালো। তারা দীর্ঘদিন পর বাড়িতে যাওয়ার ফলে বাড়ির লোকজনেরাও অনেক খুশি ছিলো। সবাই মিলে বেশ হইচই করে কয়েকটা দিন চোখের পলকে কেটে গেলো। ছুটি শেষ হতেই রউফ সাহেব পরিবার নিয়ে তার শহরের বাড়িতে ফিরে এলেন।


তিনি শহরের একটি চারতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকেন। বাসায় পৌছে তালা খুলে ঘরে প্রবেশ করতে গিয়ে তিনি দেখলেন দরজা খুলতে পারছেন না। অতঃপর বাড়ির দারোয়ানকে ডেকে শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করলেন। ঘরে ঢুকে তার চক্ষু চরক গাছ। দেখলেন ঘরের ভেতর সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তার স্ত্রী এ অবস্থা দেখে দৌড়ে তাদের বেডরুমে ঢুকলেন। সেখানে গিয়ে তাদের আলমারির অবস্থা দেখে তিনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন। রউফ সাহেব তার বেডরুমে ঢুকে দেখেন আলমারির দরজা খোলা আর যেই ড্রয়ারে কারা টাকা পয়সা এবং স্বর্ণালংকার রেখে গিয়েছিলেন সেই ড্রয়ার নিচে পড়ে রয়েছে। মুহূর্তেই তিনি বুঝে গেলেন কি হয়েছে। তিনি অনেক কষ্টের টাকা জমিয়ে তার স্ত্রীকে কিছু গহনা কিনে দিয়েছিলেন। তাদের সঞ্চয় বলতে ওই স্বর্ণালংকার গুলোই ছিলো। আর সামান্য লাখ দুয়েক টাকা ছিলো। চোরেরা সব কিছু নিয়ে চলে গিয়েছে। মুহূর্তের মধ্যে রউফ সাহেবের মনে হোলো তিনি পথে বসে গিয়েছেন। ইতিমধ্যে বাড়িওয়ালা সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি এ অবস্থা দেখে রউফ সাহেবকে নিয়ে সাথে সাথে থানায় চলে গেলেন। থানায় গিয়ে চুরির অভিযোগ দায়ের করলেন। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে বলল চুরি যাওয়া এ সমস্ত জিনিসপত্র উদ্ধারের সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরও আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করে দেখবো। যদি আপনারা চুরি হওয়ার সাথে সাথে আসতে পারতেন তাহলে হয়তো চোরদের ধরার একটা সুযোগ থাকতো। এই কথা শুনে রউফ সাহেব বুঝতে পারলেন টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার ফিরে পাওয়ার আর কোনো আশা নেই। ভগ্ন হৃদয়ে তিনি ধীর পায়ে বাসায় ফিরতে লাগলেন।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।



ধন্যবাদ

Sort:  
 3 months ago 

ঈদের ছুটিতে অনেকেই শহর থেকে গ্রামে যায়, আর সেই সুযোগে চোর ডাকাতেরা তাদের অভিযান চালিয়ে থাকে। আসলে তারা সারা বছর ঈদের ছুটির অপেক্ষায় থাকে। আর আমাদের দেশের প্রশাসনের কথা কিছুই বলার নেই। যাইহোক রউফ সাহেবের জন্য খুব খারাপ লাগলো। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 59155.91
ETH 2515.65
USDT 1.00
SBD 2.47