আনন্দ পরিণত হোলো বিষাদে(ছোটো গল্প)
ক্যানভা দ্বারা তৈরি করা হয়েছে
কিন্তু আজকাল তো আর অভিভাবকদের পছন্দে কেউ বিয়ে করে না। তাই তারা পাত্রীপক্ষকে বলে রেখেছে ছেলে দেশে ফিরলে সে এসে পাত্রী দেখবে। পাত্রী পছন্দ করলে ওই সময়ে বিয়ে হয়ে যাবে। এজন্য তারা বিয়ের টুকিটাকি কেনাকাটাও করে ফেলেছে। রাশেদ মিয়া এখন মনে মনে কামনা করছে তার শ্যালক পাত্রী দেখে পছন্দ করলেই এখন বাঁচা যায়। পাত্রীর পরিবারকে তাদের কাছে বেশ ভালোই মনে হয়েছে। যাইহোক বেলা ১১ঃ০০ টার ভেতর রাশেদ মিয়া পুরো পরিবার নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে উপস্থিত হোলো। আগে থেকেই পাত্রীপক্ষের সাথে কথাবার্তা হয়ে আছে তারা বেলা দেড়টার ভিতরে পাত্রীপক্ষের বাড়িতে যাবে। এই কারণে রাশেদ মিয়া শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে সবাইকে তাড়া দিতে লাগলো তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেয়ার জন্য। কারণ তার অভিজ্ঞতা থেকে সে জানে এই সমস্ত সময়ে বাড়ির মহিলারা সাজগোজ করতে অনেক সময় লাগিয়ে দেয়। যার ফলে কখনো নির্ধারিত সময়ে পাত্রী পক্ষের বাড়িতে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। যাই হোক শেষ পর্যন্ত তাদের রওনা দিতে দিতে বেলা দুটো বেজে গেলো। যখন তারা পাত্রীপক্ষের বাড়িতে পৌঁছালো তখন বেলা বাজে প্রায় তিনটা।
তারা পৌঁছতেই পাত্রীপক্ষের লোকজন বললো আগে খাওয়া দাওয়া করে নিন তারপর দেখাদেখি হবে। কিন্তু তারা বললো না আগে পাত্র পাত্রীর সাথে দেখা হোক। তারপর পছন্দ হয়ে গেলে তখন খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে যাওয়া যাবে। কিন্তু পাত্রীপক্ষের জোরাজু্রিতে তাদেরকে খেতে বসতে হোলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে পাত্র পাত্রীকে দেখতে গেলো। সাথে দুলাভাই হিসাবে রাশেদ মিয়াও গেলো। কিন্তু পাত্রীকে দেখে পাত্রের মুখটা কালো হয়ে গেলো। রাশেদ মিয়া মনে মনে প্রমাদ গুনলো। কারণ এতো কিছুর পর এখন পাত্র যদি পাত্রী কে পছন্দ না করে তাহলে বিষয়টা তাদের কাছে খুব খারাপ লাগবে। আবার এদিকে তাদের কিছু করারও নেই। কারণ পাত্র বারবার করে বলে দিয়েছে পাত্রী তার নিজের পছন্দ হতে হবে। পাত্র কানে কানে দুলাভাইকে জানিয়ে দিলো পাত্রী তার পছন্দ হয়নি। এখন রাশেদ মিয়া চিন্তা করতে লাগলো কথাটা কাকে বলা যায় তখন সে চিন্তা ভাবনা করে মেয়ের দুলাভাইকে দেখে কথাটা জানালো। কিন্তু দুলাভাইয়ের মুখ দেখে সে বুঝতে পারলো কথাটা তারা ভালোভাবে নেয়নি।
মেয়ের দুলাভাইকে কথাটা জানানোর কিছুক্ষণ পরে মেয়ের কয়েকজন চাচাতো ভাই এসে রীতিমতো তার সাথে তর্কাতর্কি শুরু করলো। তারা বলল পাত্রী পছন্দ হয় নাই তাহলে খাওয়া দাওয়া করেছেন কেনো। একসাথে এতগুলো লোক নিয়ে এসেছেন। এখন এসে ফাজলামি করছেন? তখন রাশেদ মিয়া বললো আমরা তো খাওয়া দাওয়া করতে চাইনি। আমরা আগে থেকেই বলেছিলাম আগে পাত্রী দেখি। পছন্দ হলে তারপর খাওয়া দাওয়া করা যাবে। আপনারাই তো জোড়াজুড়ি করে আমাদেরকে খেতে বসিয়েছেন। এই এক কথায় দু্কথায় হঠাৎ করে পাত্রীপক্ষের বাড়ির ভেতর থেকে আরও বেশ কিছু ছেলে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপরে হামলা করলো। রাশেদ মিয়ারা সেখানে গিয়েছিল বেশিরভাগ মহিলাদের সাথে নিয়ে। সেখানে তারা ছিলো অল্প কয়েকজন ছেলে মানুষ। যার ফলে তাদেরকে বেধড়ক মার খেতে হোলো। পাত্রীপক্ষের লোকজন হামলা করলে রাশেদ মিয়ার সাথে থাকা পাত্রপক্ষের সবাই দৌড়ে পালিয়ে গেলো। সে একা হয়ে পড়ায় তাকে প্রচন্ড মারধর করলো। এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো। এদিকে পাত্রপক্ষের সাথে থাকা মহিলারা বাদে সবাই মোটামুটি কম বেশি করে মার খেয়েছে। তবে তারা এক ফাঁকে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে চলে এসেছে। কিন্তু সবাই আসার পর খেয়াল করে দেখে রাশেদ মিয়া তখনও আসেনি। এর কিছুক্ষণ পর তারা জানতে পারে পাত্রের দুলাভাই রাশেদ মিয়া মারা গিয়েছেন। মুহূর্তেই তাদের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো চরম বিষাদে পরিণত হোলো। আর ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি প্রাণ অকালে ঝরে গেলো।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
খুব দুঃখজনক ঘটনা এটি কিছুদিন আগে নিউজেও দেখেছিলাম এরকম একটি ঘটনা। পাত্রের পাত্রী পছন্দ না হওয়াতে দুলাভাইকে পিটিয়ে হত্যা। আসলে এরকম নোংরা মানুষিকতা রাখা ঠিক নয় পছন্দ না হতেই পারে তাই বলে কি একটা মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করতে হবে। ভালো লাগলো আপনার গল্পটি ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি গল্প আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
গল্পটা পড়তে পড়তে যখনই মজা আসলো শেষ করতে করতে ট্রাজেডির মধ্য দিয়ে শেষ হলো। প্রথমেই মহিলাদের সাজুগুজুর সময় নেয়ার বিষয়টি চরম বাস্তব সত্য তুলে ধরেছেন। পাত্রীপক্ষের বাড়িতে গিয়ে খাওয়ার পর পাত্রীকে অপছন্দ করা নিয়ে যে তোলপাট সৃষ্টি হলো বাস্তবিক জীবনে এমনটা দৃশ্যমান। তবে খুব কষ্ট লাগলো রাশেদ মিয়ার মৃত্যুতে।