হঠাৎ থমকে যাওয়া ( ছোটো গল্প )

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


রমিজ মিয়া সকাল সকাল রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি রয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিবারের কাউকে কিছু কিনে দিতে পারেনি সে। আবার ঈদের দিনের জন্য বাজারও করা হয়নি। তাই সে ঠিক করেছে আগামী কয়েক দিন সে বেশি সময় রিক্সা চালাবে। যাতে কিছু টাকা বেশি ইনকাম করা যায়। তাছাড়া ঈদের সময় মানুষজনের কাছে টাকা থাকার কারণে ভাড়াটাও একটু বেশি পাওয়া যায়। যদিও সবাই ভাড়া বাড়িয়ে দেয় না। অনেকে তো রীতিমতো মারতে আসে ভাড়া বেশি চাইলে। সকালে পান্তা ভাত সাথে মরিচ, পেঁয়াজ আর লবণ দিয়ে খেয়ে সে বেরিয়ে পড়ে। রোজা রেখে সারাদিন রিক্সা চালানো বেশ কষ্টকর এজন্য সে রোজা রাখতে পারে না।

Screenshot_20240410_092718.jpg

ক্যানভা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে

এদিন সকাল থেকে তার কপালটা বেশ ভালো। বের হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই একটা ভালো ভাড়া পেলো সে। প্যাসেঞ্জারকে রিক্সায় উঠিয়ে তার সাথে কথা বলতে বলতে রিক্সা চালাচ্ছিল রমিজ মিয়া। রমিজের কথায় খুশি হয়ে তার প্যাসেঞ্জার রিকশা থেকে নেমে তাকে কিছু বাড়তি টাকাও দিলো। টাকাটা দিয়ে বলল তোমার পরিবারের জন্য কিছু খাবার কিনে নিয়ে যেও। দিনের শুরুটা এভাবে হওয়ায় রমিজ মিয়া বেশ আশাবাদী হয়ে উঠলো। সে খেয়াল করে দেখেছে মাঝে মাঝে এমন হয়। যখন তার খুব প্রয়োজন তখন একদিনে হঠাৎ করে বেশ কিছু টাকা ইনকামের ব্যবস্থা হয়ে যায়। রমিজের মাথায় শুধু একটা চিন্তায় ঘুরছিলো। ছেলেমেয়েগুলোর জন্য কিছু কাপড়চোপড় কিনতে হবে। ওরা গত কয়েক দিন ধরেই রমিজের কাছে বায়না ধরছে কেনাকাটা করার জন্য। রমিজের ছোটো ছেলেটা গত রাতে কাছে এসে বলে বাবা আশেপাশের সবার কেনাকাটা শেষ হয়ে গেছে। আমরা এখনো কিছু কিনতে পারিনি। রমিজ মিয়া তখন তাকে আশ্বস্ত করেছে ঈদের আগেই সবার জন্য কেনাকাটা করা হবে।


এসব চিন্তা করতে করতে রমিজ সারাদিন রিকশা চালাচ্ছিলো। প্রচন্ড গরমের ভেতরে রিক্সা চালাতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। এই জন্য সে মাঝে মাঝেই টিউবওয়েল দেখলে সেখান থেকে পানি খেয়ে নিচ্ছিলো। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো। দুপুর পর্যন্ত তার বেশ ভালই ইনকাম হয়েছে। দুপুরে রাস্তার পাশে একটি হোটেল থেকে ডিম দিয়ে ভাত খেয়ে নিলো সে। অনেকদিন এমন হয় রমিজ মিয়া শুধু ডাল দিয়ে ভাত খায়। আজকে পকেটে কিছু বেশি টাকা থাকার কারণে রমিজ মিয়া ডিম দিয়ে ভাত খেলো। ভাত খেয়ে সে কিছুক্ষণ রেস্ট নিচ্ছিলো। সে আর মনে মনে হিসাব করছিলো ছেলে মেয়ের জামা কাপড় কেনার জন্য কতো টাকা লাগতে পারে? এর ভিতর রমিজ মিয়া সামনে তাকিয়ে দেখে একটা হাতি আশেপাশের বিভিন্ন দোকানের সামনে গিয়ে থামছে আর তাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। আসলে টাকাটা মূলত হাতি নিচ্ছে না। নিচ্ছে হাতির পিঠে বসা মাহুত। রমিজের এই দৃশ্যগুলো দেখতে ভালই লাগে। সেও মনে মনে ঠিক করে রাখলো তার কাছে আসলে সেও পাঁচ টাকা দেবে হাতিকে।


কিন্তু হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখে হাতিটার যেনো কি হয়েছে। হাতিটা উন্মত্ত ষারের মতে ছুটে তার দিকেই আসছে। রমিজের হাত পাত জমে ঠান্ডা হয়ে গেলো। সে দৌড়ে পালাতে চাইছিলো। কিন্তু তার শরীরে নড়াচড়ার এতটুকু শক্তি ছিলো না। এদিকে হাতিটা তার একেবারে কাছে এসে পড়েছে। চোখের পলকে হাতিটা রমিজের দেহটাকে থেতলে দিয়ে চলে গেলো। আশেপাশে অবশ্য আরো বেশ কয়েকজন আহত হোলো হাতিটার তাণ্ডবে। হাতিটা সেখান থেকে চলে গেলে লোকজন এসে রমিজের নিথর দেহটা ঘিরে দাঁড়িয়ে রইলো। আর আফসোস করতে লাগলো আহা বেচারা রিক্সাওয়ালা। অকারণে তার প্রাণটা চলে গেলো। রমিজের চোখ দুটো তখনও খোলা ছিলো। তবে সেই চোখে ছিল না কোনো অভিযোগ।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।



ধন্যবাদ

Sort:  
 23 days ago 

গল্পটি পড়ে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। রমিজ মিয়ার শেষ পরিণতির কথা জেনে খুব খারাপ লাগলো। একদিকে রমিজ মিয়ার পরিবার আশায় বসে আছে, রমিজ মিয়া তাদেরকে ঈদের শপিং করে দিবে,আর অপরদিকে রমিজ মিয়ার দেহটা লাশে পরিণত হয়েছে। যাইহোক দারুণ লিখেছেন। গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 64144.95
ETH 3509.20
USDT 1.00
SBD 2.55