হাসপাতালে কাটানো একটি রাত

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আসসালামু আলাইকুম,

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই সুস্থ আছেন।ভালো আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব আমার জীবনে প্রথম হাসপাতালে কাটানো এক রাতের বর্ননা নিয়ে।

IMG-20231116-WA0004.jpg

সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমাদের ঘর আলো করে অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখ আমার ছেলে সানিত জন্মগ্রহণ করে।আমি আর যারা অক্টোবর মাসের প্রথম দিকেই গাইবান্ধা চলে গিয়েছিলাম।কারণ এখানে আমার তেমন কেউ নেই। আমরা শুধু তিনজন থাকতাম। গাইবান্ধায় মা-বাবা আত্মীয়-স্বজন সবাই আছে আর। ওখানকার ডক্টর কে দেখাচ্ছিলাম।

জাহিরা যেহেতু ভাই চাচ্ছিল আর সৃষ্টিকর্তা ওর মনের আশা পূর্ণ করে দিয়েছে।আমাদের পরিবারের সবাই অনেক খুশি ছিল। আর শানিতের জন্মের পর তেমন কোন সমস্যা ছিল না।ও সুস্থ ছিল।অপারেশনের চারদিন পর আমরা বাসায় চলে আসি।

অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখে শানিতের আকিকার দিন ঠিক করা হয়।সেদিনের মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে অন্য একদিন শেয়ার করব। আকিকা দেয়ার পরে আমরা ঠিক করি আমরা খুব তাড়াতাড়ি গাইবান্ধা থেকে গোবিন্দগঞ্জ চলে আসবো মানে আমরা যেখানে থাকতাম।কারণ জাহিরা ওর বাবাকে ছাড়া থাকতে পারছিল না। ওর বাবাকে খুব বেশি মিস করছিল। আর ওর বাবার যেহেতু অফিস গোবিন্দগঞ্জে। সে তো আমাদের সাথে থাকতে পারবে না।

নভেম্বরের ৭তারিখ গোবিন্দগঞ্জ চলে আসছি।তখন পর্যন্ত শানিত সুস্থ ছিল যার জন্য আসার সাহস পেয়েছি।আমাদের আসার আগের দিন থেকে বৌদি,ঐশী, অর্থী আমাদের জন্য অনেক অপেক্ষা করছিল এবং আমরা যেদিন আসি সেদিন দরজা খুলে বসেছিল কখন আমরা আসবো।আমরা আসার সাথে সাথে বৌদি শানিত কে কোলে নিয়েছে।

সারাদিন বৌদিদের সাথে সময় ভালো কাটছিল। কারণ অনেকদিন পর বৌদিদের সাথে দেখা হয়েছে।হীরা ভাবী শানিতকে দেখতে এসেছিল। সেই সুযোগে আমরা সবাই বৌদি মিলে গল্প করছিলাম। আর শানিত বাবু ঘুমাচ্ছিল।হঠাৎ শানিত কাশি দেয়। আমি কোলে নিয়ে দেখি ও কান্না করছে আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

আমার মা আমাদেরকে রাখার জন্য এসেছিল। শানিতের কান্না দেখে আমার মা ওকে কোলে নিয়ে অনেক ভাবে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে কিন্তু কোনভাবে স্বাভাবিক হচ্ছিল না।এত সমস্যা দেখে আমি কোন দিক বিদিক চিন্তা না করেই যে অবস্থায় ছিলাম সেই অবস্থায় আমার হাসপাতালের দিকে রওনা হই।

হাসপাতালের ডাক্তার বলে খুব দ্রুত ওকে বগুড়ার জিয়া মেডিকেলে ভর্তি করার জন্য। ওর অক্সিজেন নিতে সমস্যা হচছে।আর ওকে যেন আমরা অক্সিজেন দিতে দিতে নিয়ে যাই।ততক্ষণে দেখি বৌদি,হীরা ভাবী, শুভ ভাই, ঐশী, অর্থী সবাই চলে এসেছে।সবাই বলে কোন রিস্ক না নিয়ে ডাক্তার যা বলেছে সেটা করাই ভালো।তাই তখনই এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে চলে যায় জাহিরার বাবা।শুভ ভাই এ্যাম্বলেন্স ভাড়া করতে সাহায্য করে। আর তখনই আমরা বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হই।আর শানিত কে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা ও করা হয়।

হাসপাতালে গিয়ে দ্রুত ভর্তি করানো হয়।প্রায় এক ঘন্টা খুব দুশ্চিন্তায় কাটে এ্যাম্বুলেন্সে।হাসপাতালের ডাক্তার দেখে বলে এখন খুব বেশি সমস্যা নেই।ওকে NSU তে রাখা হয়।স্যালাইন দিয়ে সারারাত রাখা হয়।শানিতের সাথে থাকে আমার মা।আর NSU এর বাহিরে আমরা অপেক্ষা করতে থাকি।হাসপাতালে এর আগে কখনো আমি থাকি নি।হাসপাতাল এতো অপরিষ্কার যা বলে বোঝানো যাবে না।কোথাও বসার ও জায়গা নেই। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় জাহিরার ছোট মানুষ কতক্ষণ আর জেগে থাকে। আমরা তো বসে বসে সারারাত পার করেছি।

পরে ভোরের দিকে ডাক্তার বলে শানিত এখন অনেকটা ভালো আছে আর তাই আমরা খুব সকালেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বাসায় চলে আসি।

এখন শানিত অনেকটা ভালো আছে।সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।আমার পোস্ট টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 76354.05
ETH 3034.69
USDT 1.00
SBD 2.62