প্রতিযোগিতা - ১৪ ||আমার জীবনে গ্রীষ্মকালীন ফল আম চুরি মাজার একটি ঘটনা "benificiary ১০% @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

আসসালামুয়ালাইকুম,

IMG-20220330-WA0004.jpg

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।

ছোটবেলার স্মৃতি গুলো সত্যি মনে পড়লে আবার মন চাই ওই দিন গুলোতে ফিরে যেতে।কিন্তু আক্ষেপ হয় কখনো শৈশব জীবনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় তারপরও ওই স্মৃতিগুলো মনে করে অনেক আনন্দ লাগে। কি দিনগুলো যে কাটিয়েছি তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। ওই দিনগুলোতে কোন পিছুটান ছিলনা না ছিলো না কোন সংসারের টেনশন।শুধু ছিল কিভাবে চুরি করবো। গ্রীষ্মকালীন ফল নিয়ে আসলেই প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে মজার মজার হাজারো ঘটনা রয়েছে যে ঘটনাগুলো বুড়ো বয়স হলেও মনে থাকবে 🤭

আমি আজকে কনটেস্ট ১৪ প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণের জন্য এই পোস্ট লিখতে বসেছি।প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমার প্রিয় @rme দাদাকে আমাদের বাঙ্গালীদের জন্য এত সুন্দর একটি প্ল্যায়টফরম উপহার দেওয়ার জন্য।এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা প্রতিটা বাঙালি বাংলা ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি এটাই সবচেয়ে
আনন্দের বিষয়।

তারপর আমার প্রিয় @HafizUllah ভাইকে ধন্যবাদ জানাই।ভাইয়া, এমন সুন্দর একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যেমে আমাদের শৈশবের মজার স্মৃতি গুলো সবার মাঝে প্রকাশ করতে পারব। এই প্রতিযোগিতা যদি আয়োজন করা না হতো তাহলে হয়তো এই মজার স্মৃতি গুলো মনের মধ্যে থাকতো, হয়ত মজার স্মৃতি গুলো কারো কাছে প্রকাশ করা হতো না। আর এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমার প্রিয় কমিউনিটি ❤আমার বাংলা ব্লগের ❤মেম্বাররা ছোটবেলায় কতটা চুরি করত তা এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকাশ পাবে🤭

যাইহোক অনেক কথা বলে ফেলেছি মূল কথায় আসা যাক।।

IMG-20220330-WA0005.jpg

তাহলে শুরু করা যাক গ্রীষ্মকালীন ফল আম চুরির একটি মজার ঘটনা।।

আগেই বলে রাখি আমার বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, সেই সুবাদে বিভিন্ন জেলায় থাকা হয়েছে।নিজের গ্রামের বাড়িতে খুব একটা বেশি থাকা হয়নি।তারপরও ৫ বছরের মতো গ্রামে ছিলাম। ৫ বছরে কিন্তু অনেক সহপাঠী আমার হয়েছে চাচাত ভাই বোন সবগুলো আমার বয়সেরই ছিল। তাদেরকে নিয়ে বেশ আনন্দেই দিন কাটিয়েছি। চাচাতো ভাইবোন সমবয়সী, কিন্তু এই ১০-১২ জনের সহপাঠীদের মধ্যে আমি ছিলাম লিডার আমি যা বলতাম সবাই তাই শুনত।
গ্রামে নতুন আসায় উদ্দীপনা টাও ছিল বেশ আনন্দের শহরে আনন্দ করতে পারতাম না।সারাদিন ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতাম তাই আমি গ্রামে সকাল ৫ টার সময় ঘুম থেকে উঠে যেতাম। তখন সূর্যের আলো উঠতো না থাকতো অনেক টা অন্ধকার ওই সময় ঘুম থেকে উঠে প্রত্যেকটা ভাই বোনের ঘরের গিয়ে ঢেকে উঠাতাম। অবশ্য অনেকেই আবার আমার আগে উঠে যেত কারণ আমাদের চিন্তা ছিলো সকাল বেলা উঠে সবার আগে আম কুড়াতে হবে।গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন রকমের ফল আমাদের দেশে হয়ে থাকে।আম, জাম,কাঁঠাল এছাড়াও অনেক ফল। তবে কাঁচা আমের প্রতি আমার আলাদা লোভ ছিল কারণ আমি টক খেতে খুবই পছন্দ করতাম এখনও করি।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ৪-৫ জন মিলে গ্রামের যতগুলো আমগাছ ছিল সব গুলো গাছের নিচে থেকে আম কুড়িয়েছি। সবাই মোটামুটি আম পেয়েছে কুড়িয়ে কিন্তু আমি একটাও পায়নি। তাই ওদের কে নিয়ে একটি গাছের নিচে গিয়েছি গাছটি বেশ বড় না ছোট আকারের। ওদের বললাম আমি গাছে উঠে আম চুরি করব।আমার কথা শুনে সবাই বলল ঠিক আছে আমরা আছি তর সাথে।ওদের কথায় ভরসা পেয়ে ওদেরকে বললাম আমি আম গাছে উঠি তোরা দাঁড়িয়ে দেখ কেউ আসে কিনা।

সবাই আমার কথা শুনে বলে ঠিক আছে আমরা দেখব কেউ আসে কিনা তাদের কথায় ভরসা পেয়েই আমি আম গাছের উপরে উঠলাম।ওঠার পরেই ঘটল খুবই ভয়ানক একটি ঘটনা যে ঘটনার জন্য মোটেও আমি প্রস্তুত ছিলাম না😔 ঘটনাটি হচ্ছে আমি যে গাছ থেকে আম চুরি করতে গিয়েছিলাম,সেই গাছের মালিক মানে আমার দাদার আর ওনা একটি কুকুর ছিল।কুকুর হয়তো ঘুমায় না !যখনই দেখল আমি গাছের উপরে উঠেছি অমনি ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে দিলো।কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক শুনে আমার সাথে আসা প্রিয় বন্ধুরা আমাকে গাছের উপর রেখে পালিয়ে গেল।আমি একদম একা হয়ে গেলাম।আর আমি কুকুর প্রচন্ড রকমের ভয় পায়।তাই গাছের উপর বসে রইলাম কুকুটা পারছে না গাছের উপরে উঠে আমাকে কামড়তে। এমন অবস্থা হয়েছিল না পারি জোরে চিৎকার দিতে না পারি গাছ থেকে নামতে।গাছের ওপর বসে থেকে দেখছি কুকুর দূরে চলে যায় কিনা।কুকুর দূরে যাওয়ার সাথে সাথে অমনি আমি গাছে থেকে নেমে দিলাম দৌড়।দৌড়াতে দৌড়াতে ঢুকলাম আমার একজন কাকার রান্না ঘরে।গ্রাম এলাকাতে রান্না ঘর আলাদা থাকে বিশেষ করে ওই সময় কুঁড়েঘর বা পাট শোলা দিয়ে রান্না ঘর তৈরি করত।আর ওই ঘরে দরজা থাকতো না কুকুরের ভয়ে ওই পাকের ঘরে গিয়ে ঢুকলাম।মনে করেছিলাম আমি কুকুর থেকে বেঁচে গিয়েছি।

কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস কি আর বলব😭 যে রান্না ঘরে ঢুকে ছিলাম।ওই রান্না ঘরের ভিতরে অন্য একটি কুকুর ঘুমাচ্ছিল। এক কুকুরের ভয়ে গিয়ে বসলাম অন্ধকারে অন্য কুকুরের সাথে বুঝতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পরে যখন পাশের কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে ডাক দিল তখন কি আর বলবো। আমি তো পুরো অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। কোনরকমে ওই রান্না ঘর থেকে জান বাঁচিয়ে আসতে চেয়েছিলাম।এখন এই কুকুরের ডাক শুনে যে কুকুরের হাত থেকে বেঁচে আসছিলাম সে কুকুর ও দৌড়ে চলে আসছে দুই কুকুরের দৌড়ানো খেতে খেতে কোন রকমে জান বাঁচিয়ে আসছি। আম্মু-আব্বু থেকে শুনেছিলাম কুকুরে কামড় দিলে দশ বারোটা ইঞ্জেকশন দিতে হয় নাভির মধ্যে। বলেনতো যদি আমাকে কুকুর কামড় দিত তাহলে এই ছোট বয়সে দশ-বারোটা ইঞ্জেকশন নিতে পারতাম?

এরপর থেকে আর কখনো অন্ধকারে আম কুড়াতে যায়নি।তবে পাঁচ বছর গ্রামে ছিলাম,গ্রামের প্রতিটি মানুষই আমার প্রতি খুবই তিক্ত ছিল।কারণ আমি খুবই চঞ্চল প্রকৃতির একটি মেয়ে ছিলাম।ছেলেরা যে দুষ্টুমি গুলো কত তা আমি করতাম।
গ্রীষ্মকালীন ফল যখন গাছে গাছে ধরত ফল চুরি টা ছিল আমাদের সহপাঠীদের একটা নেশা। আর ফল চুরি করে খেতে আলাদা একটা স্বাদ লাগতো।

যাইহোক গ্রীষ্মকালীন মজার ঘটনাটি এখানেই সমাপ্ত করলাম।

বন্ধুরা, আমার লেখা গ্রীষ্মকালীন ফল নিয়ে মজার গল্পটি আপনাদের কেমন লেগেছে?
যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
আপনাদের কমেন্ট আপনাদের ভালোবাসা ভালো কাজ করার উৎসাহ যোগায়।

ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

ধন্যবাদ, সবাই ভাল থাকবেন।।

Sort:  
 3 years ago 

আশেপাশে যত প্রাণী আছে তার মধ্যে কুকুরকে আমি সবচেয়ে ভয় পাই। আম চুরি করতে গিয়ে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন কুকুরের হাত থেকে। আমার মনে হয় ছোট বলেই হয়তো কুকুর আপনাকে কামড়ায়নি। শুধু ভয় দেখিয়েছে। একবার ভাবুন তো 14 টা ইনজেকশন নিতে কেমন লাগতো হাহাহাহা। অনেক মজা লাগলো গল্পটি পড়ে। তবে বদ্ধ রান্নাঘরে ওই বয়সে কুকুরের সঙ্গে আটকা পড়া টা আসলেই অনেক ভয়ংকর ছিল।

 3 years ago 

14 টা ইনজেকশন নিলে খবর ছিলো ঐ সময় 😔
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া🥰

 3 years ago 

বেশ মজা লেগেছে মিষ্টি আপু, এই পোসা কুকুর গুলোর জন্য ধরা পরে হাজারটা নিরীহ চোর, তবে আপনি দাবড়ানি খেয়েছেন কিন্তু ধরা পরেননি এটাই খুব ভালো লেগেছে, সত্যি বলতে আপু আমিও দশ-বারোটা ইঞ্জেকশন দেওয়ার ভয়ে কুকুর থেকে অনেক দূরে থাকতাম, যাই হোক আপু আপনার গল্পটি পরে অনেক ভালো লেগেছে, অনেক সুন্দর করে আপনি গল্পটি সাজিয়ে উপস্থাপনা করেছেন, শুভকামনা রইলো আপনার জন্য মিষ্টি আপু।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া🥰🥰

 3 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। আসলে এরকম ঘটনা আমার সাথে ঘটেছিল।আমিও চুরি করতে গিয়েছিলাম তখন কুকুরের নির্ভয়ে আর চুরি করা হয়নি। আমরা বন্ধুরা যার যার মত পালিয়ে গিয়েছিলাম। সত্যিই কুকুর গুলোর জন্য চুরি করেও শান্তি নেই। ভালো লাগলো গল্পটি।

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া🥰

 3 years ago 

আপু আপনার গল্পটি পড়ে বেশ মজা পেলাম। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই রাত্রি হয়। আপনার বেলাতেও ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটেছে। একটি কুকুরের ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে রান্না ঘরের ভিতরে আরেকটি কুকুরের পাল্লায় গিয়ে পড়লেন হা হা হা হা। তবে আপু আপনার ভাগ্যটা খুবই ভালো তাই হয়তো দুই কুকুরের পাল্লায় পড়ে ও একটি কুকুরের কামড়ও আপনাকে খেতে হয় নি। এত সুন্দর একটি মজার গল্প আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

একদম ঠিক কথা ভাইয়া," যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়।
ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য 🥰

 3 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া🥰

 3 years ago 

আমি জানতাম আপনি আম চুরি করবেন কিভাবে। শেষ মেষ কুকুরের ধাওয়া। কুকুর যদি গাছে উঠতে পারতো তাহলে তো হয়েই গেছিলো। প্লান ভুল ছিল । কুকুর কে শান্ত রাখার জন্য কিছু পউরুটি নিয়ে যেতে পারতেন। পাতি কুত্তা সব খায়। আর আপনার গল্পের মধ্যে থেকে একটা শিক্ষা কিন্তু পাওয়া যায় । সেটা হল বিপদে বন্ধুর পরিচয়। হা হা হা। ধন্যবাদ।

 3 years ago 

হাহাহা জানতেন কুকুরের ধাওয়া খাব।ভাইয়া,আপনার মন্তব্য পড়লে সত্যি খুব ভালো লাগে।।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 62504.18
ETH 2430.44
USDT 1.00
SBD 2.60