আমার পছন্দের শীতকালের খোলাজালি বা খোলাজা পিঠা "আমার বাংলা ব্লগ কনটেস্ট-৯ !! @shy-fox 10% beneficiary
আসসালামুয়ালাইকুম,
সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভাল আছি।
আজকে আমি তৈরি করেছি আমার পছন্দের শীতের খোলাজালি পিঠা। আমার বাংলা ব্লগ কনটেস্ট-৯ এর জন্য। আমি আজকে কনটেস্ট পোস্টি করতে পেরে আমি সত্যি অনেক আনন্দিত।
শীত এলে বাঙালির প্রতিটি ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব শুরু হয়ে যায়।এটা আমাদের বাঙালির একটি উৎসবে যেন পরিণত হয়েছে।
আমি পিঠা খুবই পছন্দ করি, তবে মিষ্টিজাতীয় পিঠাগুলো কম পছন্দ করি। যেগুলো ঝাল অথবা নোনতা পিঠা আমার খুবই ভালো লাগে। আমার খুব পছন্দের একটি পিঠা আজকে তৈরি করেছি এই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য।
পিঠা তৈরি করতে তেমন আমি পারি না। তবে এই পিঠাটি আমি যেমন পছন্দ করি, তৈরি করতেও খুব সুন্দর করে পারি। খোলাজালি পিঠা চট্টগ্রামের মানুষের খুবই পছন্দের।শীত এলে এই পিঠা খেজুরের রস দিয়ে খাওয়া হয় এছাড়াও মুরগির মাংসের ঝোল পিঠা দিয়ে খেতে অনেক সুস্বাদু।খোলাজালি পিঠা যেমন সুস্বাদু তেমন স্বাস্থ্যকর একটি পিঠা।
বন্ধুরা আপনারা হয়তো এই পিঠাটি নাম শুনে বলবেন এই পিঠাটি নাম কেন খোলা জালি।আসলে এই পিঠাটি মাটির খোলাতে দিয়ে তৈরি করা হয় তাই এর নাম চট্টগ্রামের ভাষায় খোলাজালি পিঠা বলে।
আমার তৈরি করা খোলাজালি পিঠা আপনাদের কেমন লাগবে জানিনা?
তবে আমি আশা করছি যারা চট্টগ্রামের মানুষ আছেন তারা এই পিঠা খুবই পছন্দ করবেন।
তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন,আমি খোলাজালি পিঠা কিভাবে তৈরি করেছি। তা আপনাদের সাথে ধাপে ধাপে শেয়ার করি।
খোলা জালি পিঠা তৈরি উপকরণ সমূহ"
আতপ চাল আড়াইশো গ্রাম।
দুটি ডিম।
লবণ স্বাদ মতো।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
* প্রথম ধাপ"
প্রথমে আমি আতপ চাল পানিতে ভিজিয়ে রাখলাম 5 মিনিট।5 মিনিট পর চাল গুলো একটি ছাকুনিতে ঢেলে দিলাম পানি ঝরার জন্য।পানি ঝরা হলে আমি চাল গুলো গুঁড়ি করার ব্লেন্ডার মেশিনে দিয়ে গুঁড়ি করে নিলাম।
বন্ধুরা, আপনারা হয়তো বলতে পারেন তাহলে এতো কষ্ট করে ঘরে চালের গুঁড়ি করি কেনো?
চালের গুঁড়ি দোকানে তো পাওয়া যায় তাহলে কেন এত কষ্ট। সত্যি কথা বলতে কি আমি যখন ঘরে পিঠা তৈরি করি।তখন আমি ঘরে গুঁড়ি করার ব্লেন্ডার মেশিন দিয়ে ব্লেন্ড করে চাল গুঁড়ি করি। কারণ বাজারে যে চালের গুঁড়ি বিক্রি করে সেগুলো কতটা স্বাস্থ্যকর সেটা আমি ভালো করে জানি না।তাই আমি সবদিকে বিবেচনা করেই ঘরের চালের গুঁড়ি টা তৈরি করে থাকি।
* দ্বিতীয় ধাপঃ
চালের গুঁড়ি করা হলে, এবার আমি একটি বাটিতে চাউলের গুঁড়ি নিলাম। তাতে আমি স্বাদ মত লবণ দিলাম। এবার একটি পাতিলে এক কাপ পরিমান পানি গরম দিলাম। পানি হালকা গরম হলে গুঁড়ি গুলোর মধ্যে হালকা গরম পানি দিয়ে হাতের সাহায্যে মাখিয়ে নিলাম।
খোলা জালি পিঠা তৈরি করার জন্য বিটার তৈরি করতে হবে একদম পাতলা ও না একদম ঘন ও না।এরকমভাবে বিটার তৈরি করতে হবে।
* তৃতীয় ধাপঃ
গরম পানি দিয়ে চালের গুড়া বিটার করা হলে,এবার আমি দুটি ডিম দিলাম চালের গুড়ার সাথে,এবার দুটি ডিম চাউলের গুঁড়ির সাথে হাতের সাহায্যে মাখিয়ে নিলাম।এবার মাখিয়ে কিছুক্ষণ আমি একটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিলাম।তারপর আমি চুলায় একটি মাটির খোলা ধুয়ে বসিয়ে দিলাম।এখন মাটির খোলায় একটি পাতলা কাপড় দিয়ে সরিষার তেল লাগিয়ে দিলাম।
* চতুর্থ ধাপঃ
মাটির খোলা গরম হলে আমি এমন একটি চামচ দিয়ে চাউলের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি করা বিটার মাটির খোলার মধ্যে এভাবে দিয়ে দিলাম।এবার একটি কাপড় দিয়ে মাটি খোলা টি ধরে ঘুমিয়ে খোলাজালি পিঠা পাতলা করে। এবার একটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে এক মিনিট জন্য অপেক্ষা করবো।1 মিনিট পর খোলাজালি পিঠার উপর জালির মত এরকম হলে চামচের সাহায্যে খোলা থেকে তুলে নিলাম।
এই ভাবে আমি সবগুলো পিঠা তৈরী করে নিলাম। পিঠা তো তৈরি হয়ে গেল। খোলা জালি পিঠা সাথে মুরগির মাংসের মাখা ঝোল দরকার।তাই আমি 100 গ্রাম হাড় ছাড়া মুরগির মাংস ছোট টুকরো করে ধুয়ে নিলাম।
আমি চুলায় একটি হাঁড়িতে তিন চামচ সয়াবিন তেল দিলাম। এরবার পেঁয়াজ দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিলাম।আদা,রসুন বাটা নিয়ে কিছুক্ষ ভেজে নিয়ে।একে একে সব মসলার গুঁড়া পেঁয়াজ কুচি,আদা,রসুন বাটা সাথে দিয়ে দিলাম। লাল মরিচ গুঁড়ো,হলুদ গুঁড়ো, জিরা ধনিয়া গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো, এলাচি,দারুচিনি,লং গুঁড়ো এবং স্বাদমতো লবণ।
সব মসলা দিয়ে মুরগির মাংসের টুকরোগুলো পাতিলে দিয়ে মসলার সাথে কিছুক্ষণ ভাজি করে নিলাম।এবার এক কাপ পরিমান পানি দিয়ে মুরগির মাংস রান্না করব।
এবার মুরগির মাংস ঝোল শুকিয়ে একটু মাখা মাখা ঝোল হলে আমি চুলা বন্ধ করে দিলাম।
খোলাজালি পিঠা মাংসের মাখা ঝুলের তরকারি খেজুরের রস দিয়ে খেতে ভালো লাগে তাই আমি দুইটা একসাথে দিয়ে পরিবেশন করেছি। ঘরের মানুষ অনেকেই মুরগির মাংসের মাখা ঝোল দিয়ে খেতে পছন্দ করে। আবার অনেকে খেজুরের রস দিয়ে খেতে পছন্দ করে।
বন্ধুরা, খোলাজালি পিঠা গরম গরম খেলে অনেক স্বাদ লাগে। নরম তুলতুলে পিঠাটি খেলে বারবার খেতে মন চাইবে।
জানিনা আমার তৈরি করা খোলাজালি পিঠা আপনাদের কেমন লাগে যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাকে জানাবেন।আর ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
শীতকালের খোলাজালি বা খোলাজা পিঠা আজকে সত্যি আমিও নতুন দেখলাম। এটা কখনো খাওয়া হয় নাই আর আপনি এত সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে পরিবেশন করেছেন। দেখার মত ছিল আর আপনার রান্নার ধরনটি অনেক ভাল। অনেক ভালো আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য
খুবই ভালো লেগেছে আপনার রেসিপিটি, আমার কাছে একেবারে আনকমন, কখনো খাওয়া হয়নি, ধাপগুলি অনেক সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, শুভকামনা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য🥰
আপনার খোলাজালি পিঠা খেতে মনে হয় খুব সুস্বাদু হয়েছে। এই পিঠার নাম প্রথম শুনলাম। মুরগির মাংসের কারণে খেতে খুবই সুস্বাদু হবে মনে হয়। আপনার প্রস্তুত প্রনালি ছিল খুব দারুণ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মতামতের জন্য
এই ধরনের রেসিপি এখনও খাওয়া হয় নাই এবং এটাই প্রথমবার দেখলাম। আমার কাছে রেসিপিটা বেশ নতুন মনে হয়েছে। আপনে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
শুভ কামনা রইল।
জি ভাইয়া, চট্টগ্রামে শীতকালীন পিঠা।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মতামতের জন্য
আপু আমার জন্য একটি নতুন নাম খোলাজালি পিঠা। জীবনে প্রথম আপনার পোস্টটি পড়ে খোলাজালি পিঠা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মতামতের জন্য
এই পিঠা খাওয়া তো দূর নামই শুনিনি কখনো🙂তবে এই পিঠার মতো করেই আমাদের এদিক একটা পিঠা বানানো হয় যার নাম চিতই পিঠা,কিন্তু তাতে ডিম দেয়া হয়না।এই চিতই পিঠা এমনিতেও খাওয়া হয় কিংবা পরে দুধের ভেতর দিলে দুধ পিঠা হিসেবে খাওয়া হয়।🙃
ধন্যবাদ আপনাকে,খুব অনন্য একটা আইটেম দেখানোর জন্য🥰
চিতায় পিঠা আর খোলাজালি পিঠা একদম আলাদা খোলাজালি পিঠা বিশেষ করে চট্টগ্রামের শীতকালে খেজুরের রস দিয়ে খেয়ে থাকে।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য
খুব সুন্দর রেসিপি শেয়ার করেছেন আপু। আমি এই পিঠাটি আরো অনেকবার খেয়েছিলাম। এই পিঠাটি আসলে অনেক সুস্বাদু। তার সাথে আবার মুরগির মাংসের ঝোল। রেসিপি দেখে জিভে জল চলে এসেছে। অনেক সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করেছেন। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপু,আপনি কি চট্টগ্রামের তাহলে অবশ্যই এই পিঠার স্বাদ সম্বন্ধে ভালো বলতে পারবেন।ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য
আপনার তৈরি শীতকালীন খোলাজালি পিঠা রেসিপি আমার কাছে একদম নতুন। এর আগে এই পিঠার নাম শুনেনি খেয়েও দেখিনি। আপনার পোস্ট থেকে অজানা পিঠা সম্পর্কে জানতে পারলাম। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য
আপনার পিঠা এবং মাংস টা দেখে মনে হচ্ছে এখনই খেতে বসে যাই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুবই মজাদার হয়েছিল। এই পিঠাটার অনেক নাম শুনেছি কিন্তু কখনো খাওয়া হয়নি। আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে শিখতে পারলাম পিঠাটি বানানো। শুভকামনা রইল জন্য।
চলে আসুন একসাথে বসে পিঠা খাব😊😊।অসংখ্য ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য
আমরা এই পিঠাটিকে চিতল পিঠা বলি। এই পিঠাটি বানাতে যেমন সহজ খেতে অনেক মজা। অনেক সুন্দর হয়েছে আপনার পিঠাগুলো।
ভাইয়া,এটি চিতল পিঠা না আমাদের সীতাকুন্ডে খোলাজালি পিঠা বলে পরিচিত।শীতের দিনে খেজুরের রস দিয়ে খেয়ে থাকে এই পিঠাটি। সীতাকুণ্ডে শীতকালে প্রতিটি ঘরে ঘরে এই পিঠাটি তৈরি করে খেয়ে থাকে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য😊😊