👥🌹 আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস🌹 👥||শহীদদের স্মরণে কিছু কথা(১০%লাজুক খ্যাকের জন্য)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@ripon বাংলাদেশের নাগরিক


  • আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
  • ২১, ফেব্রুয়ারি , ২০২২
  • সোমবার


আপনার সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস " উপলক্ষে কিছু কথা।



GridArt_20220221_130554382.jpg

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে । আমরা আজকে যে ভাষায় ব্লগিং করছি সেই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল একদল তরুণ সাহসী ছাত্রসমাজ। আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাই @rme দাদাকে যিনি আমাদের বাংলা ভাষায় ব্লগিং করার সুযোগ করে দিয়েছেন। মানুষ তার মাতৃভাষায় কথা বলতে যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে অন্য ভাষায় তেমনটা নয়। আমরা যারা বাংলায় ব্লগিং করি তাদের সবারই মুখের ভাষা বাংলা তারা ছোটবেলা থেকেই বাংলা ভাষায় কথোপকথন সুর বয়ে এনেছে।১৯৪৭ সালে ১৭ এপ্রিল ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্রের বিভক্তি ঘটে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুটো অংশ পূর্ব পাকিস্তান অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মুখের ভাষা বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের বসবাসকৃত মানুষের মুখের ভাষা উর্দু, হিন্দি বিভিন্ন ভাষায় মানুষ বসবাস করত। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গৃহীত করে। পূর্ব বাংলার জনগণ উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায় কিন্তু পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি প্রত্যাহার করে। তখন পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষা বাংলা উর্দু তে মানুষ 3.3 শতাংশ মানুষ কথা বলতো। সেই থেকে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে তৎপরতার সৃষ্টি হয়।

IMG-20220221-WA0004-01.jpeg

IMG-20220221-WA0006-01.jpeg

১৯৪৭ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কাল ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতি পর্ব ।১৯৪৮ সালে এসে এই আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং একটি সুনির্দিষ্ট রূপ পরিগ্রহ করে। এই সময়কালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন উদ্যোগ করতে পাকিস্তানের চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৪৭ সালে অক্টোবর মাসে তমুদ্দিন মজলিস এর উদ্যোগে এই পরিষদ গঠিত হয়। মুসলিম ছাত্রলীগের নেত্রী ও ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মী রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন এর সাথে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের শুরু হয়।

ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব:

বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর ।এই বছরে ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ভাষার জন্য বাঙালির রক্ত দানের মাধ্যমে রচিত একুশে ফেব্রুয়ারি অমর ইতিহাস। মূলত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব শুরু হয় ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এক জনসভায় গুলিতে নিহত হলে খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্বে নিযুক্ত হন । তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর ঢাকায় আসেন পল্টন ময়দানে এক ভাষণ এর মধ্যে বলেন উর্দুই হবে একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তাঁর এই বক্তব্যে বাংলার জনসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে আন্দোলনের তৎপরতার সৃষ্টি হয়। তারপর সকল রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' এই দাবির লক্ষ্যে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ব্যাচ তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করতে থাকে। এভাবে আন্দোলনের গতি তীব্রতর হয়ে উঠলে বিশে ফেব্রুয়ারি নুরুল আমিনের সরকার ঢাকা শহরের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে। 20 শে ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় উক্ত বৈঠকে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা না করা নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়। ছাত্র সমাজ ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করে ।পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী একুশে ফেব্রুয়ারি সকালের দিকে ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে সমবেত হতে থাকে। ছাত্রসমাজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা দিয়ে ১০ জনের দলে অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে মিছিল শোভাযাত্রা শুরু করে । 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' শ্লোগান দিয়ে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সামনের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের প্রবেশ করলে এই সময় পুলিশ এবং ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে সমবেত ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, যুবক আব্দুস সালাম ,আব্দুর রফিক ও মতিউরসহ অনেকে শহীদ হন। ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি বর্ষণের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করে সারাদেশে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

IMG-20220221-WA0001-01.jpeg

ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীগণ একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে যেখানে আবুল বরকত শহীদ হয়েছিলেন সেই স্থানে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি শহীদ শফিউরের পিতা উদ্বোধন করেন। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণে পরবর্তী ১৯৫৩ সালে থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালিত হয়ে আসছে। প্রভাত ফেরি, শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ,আবৃত্তি অনুষ্ঠান ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশব্যাপী শহীদ দিবস পালিত হয়।১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' স্বীকৃতি প্রদান করে। সারাবিশ্বে শহীদদের স্মরণ করা হয় এই দিনটিতে। আমাদের দেশে প্রতিবছর অমর একুশে ফেব্রুয়ারীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোতে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়ে থাকে। এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সবাই একসঙ্গে শহীদদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেনি কিন্তু অনেকে বাড়ি থেকে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।

ধন্যবাদ সবাইকে



logo.gif

Sort:  
 2 years ago 

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি টাকে খুব সুন্দর ভাবে আপনি উপস্থাপন করেছেন। বেশ জানার কিছু বিষয় ছিল। ভালো লাগলো আপনার উপস্থাপনা টি দেখে। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

ভাষা আন্দোলনের সকল বিষয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা উচিৎ। আপনার সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

সত্যি ভাষা আন্দোলন এর অনেক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। অনেকেই এসবের কিছু কিছু জানেনা। তারা আপনার পোস্ট পড়লে অনেক গুলো বিষয় জানতে পারবে। ভাষা আন্দোলন এর সকল শহিদ দের স্মরণ করি। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য ও।

 2 years ago 

হ্যা ভাষা আন্দোলনের অনেক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।এই বিষয়ে একজন বাঙালী হিসেবে আমাদের জানা উচিৎ ধন্যবাদ।

 2 years ago 

বাংলা আমার প্রাণের ভাষা বাংলা আমার মায়ের ভাষা বাংলা আমার প্রতিবাদের ভাষা।

সত্যি আমরা তাদের ঋণ কখনোই ভুলতে পারব না যারা আমাদের এনে দিয়েছেন এই ভাষা এবং স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলনের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপটের উপর দারুণ লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে শেয়ার করে নেওয়ার জন্য।

 2 years ago 

আমাদের মাতৃভাষার উপর সকলের শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিৎ। তাদের এই ঋণ শোধ করার মতো নয় ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আমাদের বাঙ্গালীর ইতিহাস গুলো আপনি আমার আপনার পোষ্টের মাধ্যমে খুবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন । একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আমাদের জন্য গর্বের বিষয় এবং এটি আমাদের বাঙালি জাতির কাছে অনেক বিশেষ একটা দিন। এই পোস্টটি পড়ে সত্যি আমি গর্বিত আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

যে আন্দোলনের এর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি তাদের স্মরণ করা সকলের জন্যই কাম্য। আপনার সুগঠিত মতামত এর জন্য ধন্যবাদ।

শহীদদের স্মরণে পোস্টটি নিয়ে অনেক কথা শেয়ার করেছেন দেখছি আসলে যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন তাদের কোন তুলনা হয় না আমরা কোন কিছু দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না শুধু এতোটুকুই বলতে চাই মনের অন্তরে অন্তস্থল থেকে তাদের প্রতি ভালোবাসা এবং স্যালুট।আপনার জন্য শুভকামনা রইল

 2 years ago 

বীর সৈনিকদের জন্য দোয়া করি তাদের এই অদম্য সাহসের মাধ্যমে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য। আপনার সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনার পোস্ট পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। কেননা আপনার পোস্টের মধ্যে আপনি ভাষা আন্দোলনের অনেক ইতিহাসের কথা তুলে ধরেছেন। এত সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে আমাদের মাঝে পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাষা আন্দোলনের অনেক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনার সুগঠিত মতামত এর জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

খুব সুন্দর কিছু কথা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ভাই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে সুন্দর করে সব কিছু বর্ণনা করেছেন। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। এর সাথে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার কিছু ছবি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদের স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য পোস্ট করেছি।আপনার সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74