শুক্রবারের গল্প ।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। এখন আমি ঢাকাতে আমার রুমে বসে আছি। নামাজ পড়ে এসে খাওয়া-দাওয়া করে বিছানায় বসলাম। (পোস্টটি লেখা দুপুর আড়াইটায়।) একটা বিষয় আমাকে ভাবিয়ে তুলল। গোসল করে নামাজ পড়তে গেলাম আমার এক ফ্লাট মেটের সাথে। বাসাটা আজ একটু ফাঁকা। ছোট ভাইয়েরা, বন্ধু কেউ নেই বাসায়। প্লটমেট এর সাথে তেমন একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং নেই। যাইহোক একসাথেই গিয়েছিলাম নামাজ পড়তে।

মসজিদে গিয়ে দুইজন দুই জায়গায় বসেছিলাম। আমার আশেপাশে যারা বসেছিল আমি কাউকেই চিনি না। বড্ড অচেনা একটা শহর অচেনা সব মানুষগুলো। নামাজ পড়া শেষ করে আবার একা একা হেঁটে বাসায় এসেছি। পথে কত মানুষজনকে দেখলাম কাউকেই চিনি না। প্রত্যেকটা মুখ জীবনের কোনক্ষণেই দেখা হয়নি। আবার নামাজ পড়তে গেলে যেসব মুখ সামনে আসবে কাউকেই চিনবো না। প্রত্যেকটা মানুষ খুবই ব্যস্ত। নামাজ শেষকরে তাদের যেন আবার জীবিকার ট্রাম ধরতে হবে। খুবই অস্থির শহর এটা।

কিন্তু পরিবেশটা এরকম ছিল না যখন আমি গ্রামে ছিলাম। প্রত্যেক শুক্রবারে সবাই একসাথে নামাজ পড়তে যেতাম গ্রামের মসজিদে। ওখানকার প্রত্যেকটা মানুষই পরিচিত। প্রত্যেকটা মুখ চেনা। মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত চেনা জানা। প্রায় প্রত্যেকটি শুক্রবারেই দেখতে পেতাম যারা এলাকায় থাকে না তারাও ছুটিতে গ্রামে এসেছে। প্রত্যেক শুক্রবারে এরকম কেউ না কেউ থাকতোই। সারা সপ্তাহ দেখা না মিললেও বা মাসে কখনো দেখা না মিললেও কোনো এক শুক্রবারে ঠিকই তাদের সাথে দেখা মিলতো। শুক্রবারটা ছিল সত্যিই আনন্দের। পারস্পরিক, সামাজিক বন্ধন গুলো আরেকটু মজবুত হয়ে যেত। আবার নামাজ শেষে তো বিশাল এক আয়োজন থাকতো খাওয়া-দাওয়ার। এটাকে গ্রামে সিরনি বলে। কোন সপ্তাহে থাকতো জিলাপি কোন সপ্তাহে থাকতো সমুচা, সিংগারা আবার কখনো মোটা চাউলের পায়েস। পায়েস খেতে দিত কলাপাতাতে।

বড় হয়ে গিয়েছে তো কি হয়েছে। কলা পাতাতে পায়েস নিয়ে এসে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে খাওয়ার মজাই ছিলো আলাদা। প্রত্যেক শুক্রবারে আমাদের একটা নিয়ম ছিল। আমরা যারা এক বয়সের আছি আর যারা বড় ভাই কিন্তু আমাদের সাথে ফ্রি তারা সবাই নামাজ পড়া শেষ করে রাস্তার উপর এসে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ আড্ডা দিতাম। এই মুহূর্তটা লাগতো সবচেয়ে বেশি ভালো। আর কোন খাবার দিলে সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে খাওয়া, আহ্ কি জোস একটা ব্যাপার ছিল। নামাজ পড়া শেষ করার এক ঘন্টা পর মনে হয় বাড়িতে যেতাম আমরা। শুক্রবারটা অপূর্ণ থেকে যেত নামাজের পরে আড্ডাটা না হলে। সত্যি দিনগুলো খুব মিস করি এখন।

বিভিন্ন প্রয়োজনে আমরা সবাই এখন ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। ঈদের মধ্যে সবার একসাথে হওয়া হয়। তাছাড়া প্রত্যেকের গল্প এই একই রকম। সবাই আলাদা আলাদা জায়গায়। আর আলাদা আলাদা জায়গায় তাদের এক্সপেরিয়েন্স কেমন হচ্ছে সেটা তো আমি বুঝতেই পারতেছি। আমি নিশ্চিত অপরিচিত লোকদের সাথে নামাজ পড়ার পর তাদেরও এই দিনগুলোর কথা মনে পড়তেছে। এই গল্পটা আসলে আমার একার না। আপনারা যারা আমার এই পোস্টটি পড়তেছেন আর তাদের মধ্যে যারা মুসলিম তাদের ও অবশ্যই এই স্মৃতি থাকার কথা। গ্রামে আসলে প্রত্যেকটা জিনিসই মধুর হয়।

যাইহোক আমার বিষয়গুলো বসে বসে মনে হচ্ছিল। আপনাদের সাথে শেয়ার করে একটু ভালো লাগলো। পোস্টটি লেখার মাঝেই আমার এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়েছিল। মেট্রোরেল তো চালু হয়েছে অনেকদিন হলো। এখন পর্যন্ত আমি যাইনি। বন্ধুরা নাকি যাবে, আমাকেও যেতে বলল। যাই দেখি ঘুরে আসি। এক্সপেরিয়েন্স শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। দেখা হবে পরবর্তী পোস্টে ইনশা আল্লাহ্। আল্লাহ্ হাফেজ।

travel-4604499_1280.jpg

image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY



IMG_20220926_174120.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abbVD.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  

You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!

 2 years ago 

অনেক ভালো কিছু এক্সপিরিয়েন্স শেয়ার করেছেন ভাইয়া। ঠিকই বলেছেন আমরা যখন আগে বাসায় থাকতাম তখন শুক্রবার এই দিনটা আমাদের কাছেও অনেক ভালো লাগতো। আব্বু নামাজ পড়তে যেত আসার সময় জিলাপি হাতে করে নিয়ে আসতো আমরা সবাই মিলে খেতাম। আসলে সেদিন গুলোর কথা মনে পড়লে এখনো অনেক ভালো লাগে। সেই দিনগুলো এখন আর পাওয়া যায় না। আর বড় হয়ে গেলে সবাই যার যার মত আলাদা হয়ে যায়। আর গ্রামের এই জিনিসটা খুব ভালো লাগে ঈদের সময় সবাই এক হয় এ সময়টা আসলেই খুব আনন্দের একটা সময়। নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আমরাও আগে রাস্তার ধারে অনেক দেখেছি। মেট্রো রেল দেখার ইচ্ছা আছে কবে দেখতে পাবো জানিনা ।

 2 years ago 

আসলে আপু ওই দিনগুলো সত্যিই সুন্দর ছিল। আপনার কমেন্ট পড়ে আমার এখন জিলাপি খেতে মন চাচ্ছে। 😋

 2 years ago 

আসলে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা আর শহরের মানুষের জীবনযাত্রা একেবারে আলাদা। গ্রামের মানুষগুলো সত্যি অনেক সহজ সরল। শুক্রবারে সবার সাথে দেখা হয়ে যায় নামাজ পড়তে গেলে। সবাই একসাথে নামাজ পড়ে এবং একে অন্যের সাথে কুশল বিনিময় করে। কিন্তু শহরের অচেনা মানুষগুলো শুধু পাশে বসে নামাজ আদায় করে। কিন্তু কারো ভালো মন্দ খোঁজখবর নেওয়ার মতো সময় তাদের নেই। ছোটবেলায় দাদুকে দেখতাম নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে ফেরার সময় খুরমা, জিলাপি, কিংবা পায়েস এগুলো বাসায় নিয়ে আসতেন। আসলে সেই দিনগুলোর কথা খুবই মনে পড়ছিল।

 2 years ago 

সেই দিনগুলো সত্যিই অসাধারণ ছিল।

 2 years ago 

সত্যি মোটামোটি সবারই এখন এমন একটা অবস্থা, কিছু দিন আগেও আমার বন্ধুরা মিলে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতাম, বেশি সময় হলে বাসা থেকে ফোন আসতো আর এখন, বেরই হতে ইচ্ছা করে না কারন সবাই ব্যস্ত, হয়তো এটাই স্বাভাবিক প্রসেস আমিও হয়তো ব্যস্ত হয়ে যাব, নতুন কোন পরিবেশে নতুন মানুষদের সাথে হারিয়ে যাব আর মিস করবো আমার সেই পুরনো জায়গা গুলো মানুষগুলো।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাই। দিন শেষে আসলে এমনটাই ঘটে।

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া শহরে আর গ্রামের মধ্যে অনেক পর্থক্য রয়েছে। সত্যিই তো গ্রামে ঘর থেকে বের হলেই অনেক পরিচিত মুখ আর শহরে তার উল্টো। আপনাদের ভাইয়া মানে আমার হ্যাসবেন্ড এখনো নামাজ পড়তে গেলে আড্ডা দিতে দিতে ঘন্টা পেরিয়ে যায়।আর গ্রামের মসজিদে নামাজের শেষে অনেক রকমের খাবার থাকে,বিশেষ করে কলার পাতার পায়েস। জি ভাইয়া গ্রাম থেকে শহরে গেলে এই স্মৃতি গুলো বেশি মনে পড়ে, ধন্যবাদ সুন্দর লিখেছেন।

 2 years ago 

আপনার হ্যাসবেন্ড কিন্তু দারুন সময় পার করছে।

 2 years ago 

খুব সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট করেছেন ভাইয়া। আসলে গ্রাম আর শহরের পরিবেশ একেবারে আলাদা। শহরে পাশের ফ্লাটে কে থাাকে সেটাও মনে হয় অনেকে জানেনা। আর চিনবে তো দূরের কথা। তবে যতদূর মনে পড়ে আমরা ছেরেবেলায় দেখতাম বাবা মসজিদ হতে আসার সময় হাতে করে জিলাপী নিয়ে আসতো। আর ঝাকে ঝাকে লোকজন জুম্মার নামায পড়ে আসতো। এখন আর সে দিনগুলো খুজে পাওয়া যায় না।

 2 years ago 

হ্যাঁ এরকম আমাদের এখানেও হতো। মসজিদে জিলাপি দিলে সেটা হাতে করে নিয়ে আসতো অনেকেই।

 2 years ago 

ঠিক বলছেন ভাইয়া এই অচেনা শহরে ব্যস্ত মানুষগুলো যেন নিজেকে গুলিয়ে ফেলে অন্যদের মাঝে।শহরের মানুষগুলো এমনই কেউ কাউকে চিনে না ব্যস্তময় জীবন যাপন করে।কিন্তু গ্রামের মানুষ গুলো অনেক সহজ সরল প্রতি সপ্তায় দেখা না হলেও মাঝে মধ্যে সবাই সবার সাথে দেখা হয় আড্ডা হয় বেশ ভালো লাগে।সুন্দর একটি অনুভূতি শেয়ার করেছেন অনেক ভালো লেগেছে পড়ে।

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু।

 2 years ago 

দারুন লিখেছেন ভাই। এই বিষয়টা নিয়ে অনেক দিন ধরে চিন্তা করছিলাম। ঢাকা শহরে তো চেনা মুখ পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। এমনকি আমরা যারা মফস্বল শহরে থাকি। এখন শুক্রবার মসজিদে গেলে তারাও খুব বেশি পরিচিত মুখ দেখতে পাই না। একসময় মসজিদে গেলে বেশিরভাগমুখই পরিচিত দেখতে পেতাম। তবে এখন বেশিরভাগ লোকজন দেখি অপরিচিত। আর জুম্মার নামাজের পরের আড্ডাটা তো একটা অত্যাবশ্যকীয় বিষয় ছিল। যদিও এখন কালে কালে সেটা অনেক কমে গিয়েছে। অনেক পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

একদম ভাই... খুব মিস করি দিনগুলি।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58986.04
ETH 2580.24
USDT 1.00
SBD 2.53