মন চায় হারিয়ে যেতে, যখন তখন।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

প্রত্যেকটা মানুষেরই কিছু জন্মগত স্বভাব থাকে। তার মধ্যে একটি স্বভাব হল সবসময়ই অজানা বিষয়ে জানার ইচ্ছা। অজানা বিষয়ে জানার কিইউরিয়াসিটি টা একটু বেশি থাকে মানুষের মধ্যে। এরপর আবার নিষিদ্ধ বিষয়ে জানার আগ্রহটাও মানুষের মধ্যে অত্যাধিক পরিমাণে বেশি। কেউ যদি আপনাকে কোন কিছু করতে নিষেধ করে বা দেখতে নিষেধ করে অথবা জানতে নিষেধ করে, তাহলে আপনার মধ্যে একটা কিইউরিয়াসিটির জন্ম নেবে। যেটা আপনাকে বারবার সে বিষয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করবে। এটা ভালো বিষয়ক হতে পারে আবার খারাপ বিষয়েও হতে পারে। তবে কিইউরিয়াসিটি নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন।

যাই হোক আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার একটা দিনের গল্প শেয়ার করব। যে দিন টা মোটামুটি ভালই কাটিয়েছিলাম। দিনটা ছিল হারিয়ে যাওয়ার । আমিতো এখন ঢাকাতে, তবে গ্রামের বাড়িতে থাকতে প্রায় প্রতিদিনই অনেক ঘুরাঘুরি করা হয়। এমনি একদিন বিকেলে বাজারে গেলাম কিছু ছোট ভাই আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। কিন্তু বাজারে যেয়ে দেখলাম আমার বন্ধু সেখানে নেই। কিন্তু প্রিয় ছোট ভাইয়েরা সবাই উপস্থিত ছিল। তারপর আমরা সবাই চিন্তা করলাম আজ এমন কোথাও ঘুরতে যাব যেখানটা আমরা চিনিনা। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। আমাদের পরিকল্পনা করতে বেশি সময় লাগে না। যখন যেটা ভাবি সেটাই করি। এ বিষয়টা আমার নিজের কাছেও ভালো লাগে।
1632744535277-01.jpeg

1632744613480-01.jpeg

1632744581911-01.jpeg
আজ বেশি বাইক ছিল না। দুইটা বাইক ছিল। দুইটা বাইক নিয়েই ছয়জন রওনা দিলাম। আজ আমাদের পরিকল্পনা ছিল এমন কোথাও যাব যেখানে কখনোই যাই নাই। অচেনা রাস্তায় যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই চলে যাব। এক কথায় উদ্দেশ্য নেই। আমরা যে কোন পাশ দিয়ে কিভাবে কোথায় কোথায় গিয়েছি, এখন কিছুই বলতে পারব না। কারণ যেখানে যেখানে গিয়েছিলাম সেটার কিছুই চিনি না।

প্রথমে মেইন রোড দিয়ে অনেক দূরে যেয়ে, পরে অচেনা একটা সরু রাস্তা দিয়ে আমরা ঢুকেছিলাম। বহুদূর বাইক রাইডিং করার পর একটা নিরিবিলি ফাঁকা জায়গা দেখতে পেলাম। ওখানে একটা রাস্তা ছিল। রাস্তাটা মাঠের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে। শুনশান বেশ নিরিবিলি একটা জায়গা দেখে আমরা যেয়ে বসলাম। বেশ কিছু সময় ওখানে বসে আমরা সবাই আড্ডা দিলাম। তখন রাতের আঁধার কেবল নামতে শুরু করছিল।

1632744648577-01.jpeg

প্রায় পনের বিশ মিনিট পর আমরা সবাই ওখান থেকে উঠলাম। উঠে আবারো বাইক নিয়ে নতুন একটা গ্রামের দিকে প্রবেশ করলাম। আমরা নির্জন একটা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম হঠাৎ সামনে পড়ল একটা মহা বিপত্তি । পাকা রাস্তা সামনেই শেষ । তারপরে কাদাযুক্ত মাটির রাস্তা। আর সামনের এলাকাটা কেমন যেন একটা জঙ্গল টাইপের। প্রথমে আমরা চিন্তা করলাম, যেপাশ দিয়ে আসছি ঐ পাশ দিয়েই আবার ব্যাক যাব কিনা। কিন্তু পরে সেটা না করে সবাই বাইক থেকে নেমে কাঁদার মধ্য দিয়ে আস্তে-ধীরে বাইক নিয়ে এগোতে থাকলাম। অনেক দূর এভাবে যাওয়ার পর দেখতে পেলাম ছোট একটা পাহাড়ের মত কি যেন সামনে।

1632744817395-01.jpeg

1632744788419-01.jpeg

তারপর আমরা বাইক রেখে সামনে গিয়ে দেখলাম, ওটা আসলে রেললাইনের পথ ছিল। ওই এলাকা থেকে রেললাইনের পথ অনেক উঁচু। এর জন্য দূর থেকে ছোট পাহাড়ের মত লাগছিল। তাছাড়া আমরা তো ছিলাম অনেকটা জঙ্গলের মতো এরিয়াতে। এইজন্য দূর থেকে বাইকের আলোয় বিষয়টা বোঝা যাচ্ছিল না। এরপর আমরা সবাই রেললাইনের ঐ রাস্তায় উঠে পরলাম। এখন অনেকটা শান্তি লাগছিল। কারণ রেললাইন দিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকলে কোথাও না কোথাও গিয়ে মেইন রাস্তা আমরা পাবই।

1632744873260-01.jpeg

এরপর আমরা আর কিছু না ভেবে সোজা পথে এগোনোর চেষ্টা করলাম। রাস্তাটা মোটেও বাইক নিয়ে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত ছিল না। অনেক পাথর ছিল দুপাশে, সেটা অতিক্রম করে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হচ্ছিল। অনেকক্ষণ ধরে রেললাইনের পাশ দিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে আমরা একটা পাকা রাস্তার দেখা পেলাম। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস। যদিও পুরো সময়টা বেশ এনজয় করছি।

এত ঘোরাঘুরি করার পর চিন্তা করলাম আজকে রাতে পিকনিক করা যেতে পারে। কিন্তু তেমন একটা আয়োজন করব না শুধু একটা ছোট ভাইয়ের বাসায় রান্না হবে। রান্না শেষ হলো আমরা সেখানে যেয়ে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করব। ডিসিশন ফাইনাল করে বাজার-সদাই যা যা করার সব করে নিলাম।

1632744946677-01.jpeg
বাজার করা শেষ করে ছোট ভাইয়ের বাসায় সবকিছু পৌঁছে দিয়ে আমরা বাজারেই বসে অনেক সময় আড্ডা দিয়েছিলাম। সেদিন রাতে আকাশটা মেঘলা ছিলো। মাঝে মধ্যে হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। অনেক সময় আড্ডা দেওয়ার পর ফোন পেলাম যে রান্না প্রায় শেষের দিকে । তখন আমরা সবাই ওই ছোট ভাইয়ের বাসায় চলে গেলাম। সবাই একসাথে এভাবে অনেকদিন আর খাওয়া হবে না। এজন্য সময়টা ভালোভাবে উপভোগ করলাম। এগারটা থেকে বারোটার দিকে আমাদের খাওয়া শেষ হয়েছিল। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বেশি সময় আর লেট করলাম না। সবাই যার যার মতো বাসায় ফিরে গিয়েছিলাম। তো এটাই ছিল আমার সেদিনের ঘটনা। বেশ ভালোই কেটেছিল দিনটা।

  • ফটোগ্রাফি ইনফর্মেশন...

    ডিভাইসঃ Redmi note 9 pro max
    লোকেশনঃ বিশেষ কারণে শেয়ার করছি না।


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

-cover_copy.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 3 years ago 

প্রকৃতির সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে নিয়ে যাওয়ার মুহুর্তটা সত্যিই অসাধারণ ছিল ভাই। আপনার ঘুরতে যাওয়া দিনের গল্প অসম্ভব সুন্দর ছিল ভাই। সবমিলিয়ে অনেক সুন্দর একটি দিন কাটিয়েছেন দেখছি। ধন্যবাদ ভাই আপনার ঘুরতে যাওয়ার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

অনেক সুন্দর লিখেছেন আপনি ভাই। মন চায় হারিয়ে যেতে আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দারুন হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার জন্য শুভকামনা রইলো

 3 years ago 

প্রিয় ভাইয়া এমন টায় হওয়া উচিত। মনে যখন যা বলবে তখন সেটা করাই ভালো। আপনার বেলায় তাই হয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে পিকনিক করে ফেলা অনেক আনন্দের ব্যপার।ভাইয়া এমনটা আমি ও করতাম। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে এমন সুন্দর ছবি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

এটা একদম ঠিক বলেছেন ভাই কেউ যদি আমাকে কিছু নিষেধ করে তাহলে ওই জিনিসটার বেশি করে করতে ইচ্ছা হয় এটা হয়তো মানুষের স্বভাবগত অভ্যাস। যাইহোক ভাই দারুন লিখেছেন আর ছবিগুলো অনেক ভালো হয়েছে।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনি অনেক সুন্দর লিখেন।
তবে আমার কাছে ব্যাপারটা অনেক এক্সাইটিং লেগেছে। মানে কিছুই চিনেন না, তাও গেলেন,ঘুরলেন।বেশ থ্রিলিং একটা ব্যাপার আছে ঘটনায়।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে কোনো বিপদ হয়নি।

 3 years ago 

হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে আলাদা একটা মজা আছে।

 3 years ago 

অনেক সুন্দর লেখা,অনেক সুন্দর ফটোগ্রাফি, অনেক সুন্দর জায়গা, অনেক সুন্দর দিন, খুবই ভালো লাগলো আপনার পোষ্টটি পড়ে এবং দেখে।

ভাইয়া অনেক সুন্দর লিখেছেন। আসলে মনটা এমনই সব সময় এটা ওটা ইচ্ছা করে। তবে ঘুরতে ঘুরতে আপনাদের পিকনিক করার বিষয়টা বেশ ভালো ছিল। হঠাৎ করেই সবকিছু করে আবার রান্না করে খাওয়া বিষয়টা বেশ মজার ছিল। আপনার সবগুলো ফটোগ্রাফি অনেক সুন্দর ছিল।
শুভ কামনা ভাইয়া

 3 years ago 

আমরা এরকমই। হঠাৎ করে যে কোনো ডিসিশন নিয়ে ফেলি। সেটা আবার সাথে সাথেই করেও ফেলি। বেশ ভালো লাগে বিষয়টা।

 3 years ago 

খুব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছেন দাদা।আপনি ঠিকই বলেছেন যে, নিষিদ্ধ বিষয়ে জানার প্রতি প্রবল ইচ্ছাটা সবার মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতির সৃষ্টি করে।অনেকটা রহস্যের উদঘাটন করার মতো।ফোটোগ্রাফিগুলি অসাধারণ।রাতের আধার নামার প্রকৃতি দেখলেই মন জুড়িয়ে যায় এবং সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।রেললাইনের পাশে যেহেতু ফাঁকা রাস্তা ছিল না সেহেতু পাথরের উপর বাইকের টায়ারে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারতো।এটি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।যাইহোক তবুও আপনারা অজানা পথে সুন্দর যাত্রা সম্পন্ন করে সবাই একসাথে পিকনিক করেছেন এটি খুবই আনন্দের ।এছাড়া স্মৃতির মতো।গ্রামেই এটি সম্ভব।ধন্যবাদ দাদা।

 3 years ago 

পাথরের উপর বাইকের টায়ারে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারতো।

ঠিক বলেছেন। এ বিষয়ে আমরা অনেক সর্তকতা অবলম্বন করেছিলাম। ধীরে ধীরে বাইক চালাতে হচ্ছিল।

 3 years ago 

ঠিক বলেছেন নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি আমাদের আকর্ষণ কাজ করে বেশি। ভালই এডভেঞ্চার করেছেন আজ৷ সুন্দর একটি দিন কাটিয়েছেন ভাইয়া।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে

 3 years ago 

আপনার পোষ্টের ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর লেগেছে। বিশেষ করে ধানক্ষেতের উপর আকাশের যে ফটোগ্রাফি করেছেন সেটা খুব সুন্দর লেগেছে। অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে আমারও অনেক ভালো লাগে। আপনার পোষ্টের উপস্থাপনাও অনেক সুন্দর ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.11
JST 0.033
BTC 63945.57
ETH 3135.76
USDT 1.00
SBD 4.00