নানু বাড়িতে ইজানের প্রথম ঈদ।
আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। কেমন আছেন সবাই? গত পরশুদিন আমাদের এদিকে কালবৈশাখীর দেখা মিলেছে। সেদিন সারাদিন কেটেছিলো জার্নি করে। সেদিনের অভিজ্ঞতা আজ শেয়ার করতে এসেছি।
গত ২ মাস ১১ দিন আগে আমার বোন একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছে। আমার বোনের বাসা নড়াইল। বেবি হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে আসেনি। এবার আমার বোনের ইচ্ছে ছিলো আমাদের বাড়িতে ঈদ করবে। এজন্য গত ২২ তারিখে আমি গিয়েছিলাম অপুকে আনতে । যেহেতু বাচ্চার বয়স মাত্র ২ মাস, এমন অবস্থায় প্রায়ভেট কার ছারা আনা পসিবল না । এজন্য পরিচিত এক ড্রাইভারের গাড়ি ভাড়া করে নিয়েছিলাম। আমাদের প্লান ছিল সকাল ৯ টার দিকে রউনা দিব । ২২ তারিখ সকালে সেহেরি খেয়ে কম্পিউটারে বসে সব কাজ কর্ম গুলো সেরে দিলাম একটা ঘুম । ঘুম থেকে উঠে ড্রইভার ভাইকে ফোন দিলাম । উনি ৯:৩০ এর মদ্ধে আমার বাসার সামনে চলে আসলো ।
যাত্র শুরু হলো নড়াইলের উদ্দেশ্যে । ড্রাইভার ভাই যেহেতু আমার পরিচিত আর মুটামুটি ফ্রি আছি তাই খুব আনন্দের সাথে মজা করতে করতে যাত্রা পথ কেটে যাচ্ছিল। আমরা হাইওয়ে এভয়েড করে ভেতরের রাস্তাগুলো দিয়ে গিয়েছিলাম। মাঠের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা রাস্তাগুলো অসাধারণ লাগছিল। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই আমরা নড়াইলের পৌঁছে গিয়েছিলাম দুপুর ১ টা নাগাদ। আপুদের বাসায় গিয়ে রেস্ট করলাম, তারপরেই আবার প্রস্তুতি নিলাম বেরিয়ে আসার। যেহেতু রোজা রমজান মাস। বেশিক্ষণ থেকে লাভ নেই। যত দ্রুত চলে আসে যায় ততই আমাদের জন্য ভালো। আপুদের বাসা থেকে আমরা আবার রওনা দিলাম দুপুর আড়াইটার দিকে।
আমার এখন দুইটা ভাগ্নে। একটার বয়স ২ মাস, আর একটার বয়স ৯ বছর। বড় ভাগ্নের নাম সাফিউদ্দিন সংগ্রাম, আর ছোট টার নাম ইজান। ইজান এবার প্রথমবারের মতো ওর নানির বাড়িতে আসতে যাচ্ছে। ওর প্রথম ঈদ নানি বাড়িতেই করবে। যাই হোক আমরা পথ চলতে লাগলাম কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার বড় ভাগ্নে সাফি প্রচুর বমি করে। সারা পথ এসি চালাতে পারিনি। জানলা খুলে রাখতে হয়েছিল। গাড়িতে উঠলে ওর এই সমস্যা। ও শুধু ট্রেন জার্নি করতে চায়। বহুকষ্টে ভুলভাল বুঝিয়ে সাফিকে ঘুমপাড়ানো হলো। এরপর আমরা চলতে লাগলাম হাইওয়ে ধরে। প্রচন্ড রোদ ছিল সারাদিন। প্রচুর গরম পড়ছে। বিকেল চারটার দিকে আকাশে এক ফালি মেঘ দেখতে পেলাম। ভাবলাম হয়তো বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি হলে পরিবেশটা ঠান্ডা হবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ করে আকাশে প্রচণ্ড মেঘ দেখতে পেলাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোত্থেকে যে এত মেঘ এসে জড়ো হলো সেটা বুঝে ওঠার আগেই বৃষ্টির আভাস পেলাম।
ফাঁকা রাস্তা, দুই ধারে মাঠ। আকাশে প্রচুর মেঘ। ড্রাইভার ফাঁকা রাস্তা দেখে মজা করে গাড়ির গতি ১৩০ এ উঠলো। এতটাই অসাধারণ লাগছিল পরিবেশটা সেটা বলে বোঝানো যাবে না। ভিডিও থেকে বহু গুন বেশি সুন্দর ছিল বাস্তবে দেখা দৃশ্যটি।
অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সবাই খুবই অবাক হয়ে গেলাম। ঘন কালো মেঘ করেছে আকাশে। প্রচন্ড ঝড় উঠে আসলো। এত পরিমাণ ধুলাবালি উড়ছিল রাস্তায় যে সামনের কিছু ভালোভাবে দেখাই যাচ্ছিল না। রাত নয়টা দশটার দিকে যেমন আকাশে চাঁদ না থাকলে বিদঘুটে অন্ধকার দেখা যায় ঠিক তেমন অন্ধকার নেমে আসলো বিকেল সাড়ে চারটার দিকে। আমার জীবনে প্রথম দিনের বেলায় এত অন্ধকার দেখলাম। প্রত্যেকটা গাড়ি হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছিল তাও খুবই ধীরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টির প্রকোপটা এতই বেশি ছিল যে গাড়ির সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। ড্রাইভার খুবই ধীরে সুস্থে ভালোভাবে লক্ষ্য করে গাড়ি চালাচ্ছিল। গাড়ির ওয়াইন্ড শীল উইপার আপ ডাউন করার সময় মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য সামনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। তবুও সেটা ১৫ থেকে ২০ ফিট দূরত্বের মধ্যে। আর সামনে থাকা প্রত্যেকটা গাড়ি বোঝা যাচ্ছিল গাড়িগুলোর হেড লাইটের আলো দেখে। শুধুমাত্র আলো টাই আবছা আবছা দেখা যাচ্ছিল। তাহলে বুঝুন পরিবেশটা কতটা ভয়ঙ্কর ছিল!!
এমন ভয়ঙ্কর ওয়েদার এর মধ্য দিয়ে আমরা প্রায় ২০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছিলাম। এরপর বৃষ্টির প্রকোপ কমেছিল। এরপর আস্তে ধীরে আমাদের গ্রামে চলে এলাম। এসে সবাই রেস্ট করলাম। আর ইজান প্রথমবারের মতো ওর নানির বাড়িতে পা রাখলো৷ জার্নির শেষ অংশটা একটু ভয়ঙ্কর হলেও মোটামুটি ভালই ছিল সবমিলিয়ে। সত্য কথা বলতে এরকম ওয়েদারে আসতে খারাপ লাগেনি। একটা অ্যাডভেঞ্চার পূর্ণ মুহূর্ত ছিল। যাইহোক, আপুরা এবার আমাদের বাসাতেই ঈদ করবে। আশা করি এটা খুবই আনন্দ পূর্ণ একটা ঈদ হতে যাচ্ছে। আজ আমি এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে আবার নতুন কোন পোস্টে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
ইজান দেখতে মাশাল্লাহ অনেক কিউট। আর নামটাও আমার অনেক পছন্দ হলো৷ যাইহোক দ্বিতীয় ভিডিও দেখে ভালো লাগলো আবার লাস্টের দিকে ভয় লাগলো। ঝড়ের সময় গাড়ি এক্সিডেন্টের সম্ভবনা থাকে। আর গাড়ির গতি ১৩০ দেখে মনে পড়লো আমি আমার বাইকে ১১৫ তুলছিলাম হাইওয়েতে(RTR) ভালো লাগলো আপনার পুরো জার্নি। ইজান যখন বড়ো হবে আপনার এই পোস্ট দেখে মজা পাবে। ধন্যবাদ ভাই।
খুব ভালো বলেছেন তো ভাই। এই পোস্টটা আমি নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখবো। ও বড় হয়ে দেখলে আসলেই খুশি হবে।
ভাইয়া আপনার ভাগ্নে কিন্তু খুব কিউট।ভাগ্নেকে নিয়ে এবার ঈদ অসাধারণ হবে আপনার বুঝতে পারছি। তবে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। আসলে বৃষ্টির আগ মুহূর্তে বাইরের দিকে তাকালেই ভয় লাগে। কেননা তখন বিপদের সম্ভাবনা থাকে।গাড়িতে থাকা অবস্থায় বৃষ্টির সময় আপনার কেমন লেগেছে বুঝতে পারছি। যাক আপনি আপনার বোন ভাগ্নেদের নিয়ে যে সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরেছেন সেটাই বড় কথা।ঈদ আনন্দে কাটুক সবাই মিলে এই প্রত্যাশা।
ভিডিও দেখে আমি প্রথমে ভাবলাম আমার ফোনের ব্রাইটনেস কম তাই এমন লাগছে পরে বাড়ালাম তাও দেখি অন্ধকার,এরপর লেখা পরে সম্পূর্ণটা জানতে পারলাম।বাবু কিন্তু মাশাল্লাহ,আপনার চেয়ে হাজার কোটি গুণ সুন্দর।🤪🤪দোয়া করি দুই বাচ্চা যেনো সুস্থ থাকে।
তাইবলে এতো বেশি। হাহাহা
এবার ঈদের আনন্দটা অনেক জমবে। পরিবারের সকলকে নিয়ে সত্যিই খুবই আনন্দ ঈদ পালন করবেন। আসলে গাড়ির স্পিড মিটার দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত স্পিডে গাড়ি চালানো দেখে অবাক, আসলে এরকমই স্পিডে গাড়ি চালানো ঠিক নয়। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, পরিবারের কথা ভাবতে হবে। যাই হোক আপনারা এবং পরিবারের সকলের জন্য দোয়া রইল।আপনারা যেন অনেক আনন্দের সাথে সকলকে নিয়ে ঈদ এর আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
বাহ, নিজের পরিবারের সবার সাথে ঈদ করার মজাই আলাদা। ঈদের মজা পুরো ভাবে উপভোগ করতে পারবেন এবার আশাকরি।
তবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিডিওটা অনেক ইনজয় করেছি। আশেপাশের রাস্তার পরিবেশ অনেক সুন্দর ছিল। দোয়া রইলো ইজান বাবু আর সংগ্রাম বাবুর জন্য।
ধন্যবাদ আপু আপনাকে ।
আপনার নবাগত ভাগ্নে ও বোনকে নিয়ে আশা করছি এইবার ভালো আনন্দমোহ ঈদ উদযাপন করবেন।আসলে সবাই মিলে ঈদ উদযাপিত করলে অনেক অনেক ভালো ও আনন্দ মধ্যে দিয়ে ঈদের খুশি আর বহুগুণ বেড়ে যায়।
ভাই স্পিড মিটারের কাটা দেখে তো আমার রীতিমত ভয় করছিলো। এত জোরে গাড়ি চালানো উচিত হয়নি। স্পিড বেশি থাকলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আপনাদের তো এবার ঈদ তাহলে খুব ভালোই জমবে। বাড়িতে বোন ভাগ্নে এসেছে। ঈদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হবে। চমৎকার করে পুরো বিষয়টা বর্ণনা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
বেশ মজার ছিল ভাই 🙂
ভাই রাস্তার ছবিটা দেখে দারুণ লাগলো। কোথায় এত সুন্দর রাস্তা। তবে ভিডিও টা কেমন ঘোলা এসেছে। আমিও আপনার মত এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি। মনে হয় ভর দুপুরে যেন রাত নেমে আসে। যাই হোক ভাগ্নেদের সঙ্গে দারুণ একটা ঈদ কাটাবেন এই প্রত্যাশা রইল।
ধন্যবাদ ভাই।
ভিডিও টি ১০৮০ পি তে দেখলে ক্লিয়ার দেখাবে।
ভাইয়া আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম আপনি আপনার আপুকে নিতে আপনার আপুর বাসায় গিয়েছিলেন। আপনার ছোট্ট মিষ্টি ভাগ্নে প্রথমবারের মতো আপনাদের বাসায় এসেছে জেনে ভালো লাগলো। আপনি আপনার এই ভ্রমণে বেশ আনন্দ করেছেন এটা বোঝাই যাচ্ছে। তবে শেষ সময়ে এসে প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে হয়তো একটু সমস্যা হয়েছে। আর বৃষ্টির সময় খুবই সাবধানে চলাচল করতে হয়। কারণ যেকোনো সময় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তবে যাই হোক আপনি আপনার প্রিয় মানুষগুলোকে নিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরে এসেছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। সেই সাথে আপনার অনুভূতি ও ভিডিওগ্রাফি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।💓💓
বাহ! খুব কিউট হয়েছে তো, একদম মামার মতো কিউট মাশাআল্লাহ!
আসলেই ভাই গ্রামের ভিতরের রাস্তাগুলো বেশ উপভোগ্য, দুই পাশে সবুজ দৃশ্য মাঝ খান দিয়ে ছুটে চলা, অন্য রকম একটা ভালো লাগা কাজ করে ভেতরে। আর হ্যা, এই সময়ের আবহাওয়াটা এই রকম থাকে, হঠাৎ করেই চারপাশের দৃশ্য পাল্টে যায়। যাক ঠিক ঠাক মতো বাড়িতে আসতে পারছেন এটাই বড় কথা। আর হ্যা, বমির বিষয়টি সত্যি বেশ অস্বস্তিকর, কারন আমার ছেলেও বেশ বমি করে যাত্র পথে।
গ্রামের ভেতরে মাঠ, আর সে মাঠের মধ্যে দিয়ে রাস্তা। এমন পথে চলতে এত ভালো লাগে!!
আর ওই মুহূর্তে যদি আকাশ থাকে মেঘলা, তাহলে তো কথাই নেই।
এটা আসলেই অনেক কষ্টের আর অসস্থির ব্যাপার।