আমার অংশগ্রহণ [ প্রতিযোগিতা-২২ ]
হ্যালো প্রিয় বন্ধুরা। কেমন আছেন সবাই? বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চলমান কনটেস্টে এখন পর্যন্ত দেখলাম ৪১ জন পার্টিসিপেট করেছে। আপনাদের সাথে আমিও সামিল হতে এলাম। শেয়ার করব আমার প্রথম মোবাইল পাওয়ার অনুভূতি। তাহলে চলুন শুরু করি।
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY
তখন সম্ভবত আমি ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠেছি। তখন আমার দুলাভাই আমাকে একটা ফোন গিফ্ট করেছিলো। ফোনটি ছিলো টেকনো ব্রান্ডের। ওই সময় আমাদের গ্রামে কারোর কাছে ভালো একটা ফোন ছিল কিনা সন্দেহ। আমার যারা বন্ধু ছিলো গ্রামে, তাদের কারোর ই ফোন ছিলো না। আর এখানে বন্ধু বলতে গ্রামে আমরা একসাথে যারা বড় হয়েছি। তো যাই হোক আমি যখন ফোনটা পেলাম আমার খুশি দেখে কে!! ওই ফোনটা ছিলো অর্ধেক টাচস্ক্রীন আর অর্ধেক বাটন। মানে ফোনের স্ক্রিন ছিল যতটুকু ওখানে টাচ করেই সব রকম কাজ করা যেত আবার ফোনে বাটন ও ছিল।
এই লিংক থেকে ফোনটি দেখে নিনঃ- ফোনের ছবি
ফোনের মডেলঃ- Tecno T570Solar
আমি ফোন পাওয়ার দু-একদিনের মধ্যেই একটা মেমোরি কার্ড কিনে ছিলাম। ওই সময়ে মোবাইলে গান শোনা, ভিডিও দেখা, গেম খেলা বিশাল ব্যাপার ছিলো আমার কাছে। আমি বাজারের কম্পিউটারের দোকান থেকে গান লোড দিয়ে নিয়ে আসতাম। আমি ওই সময় বালামের গান শুনতাম। ওই গান গুলো এখন অনেক ব্যাকডেটেড, কিন্তু এখনো ওইসব গানের সুর যখন কানে আসে তখন সেই দিনগুলোর কথা স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। স্কুল শেষে বিকেল বেলায় যখন মাঠে খেলতে যেতাম, তখন আমার ফোন থাকার কারণে বন্ধুরা সব আমার চারপাশে ঘিরে থাকতো। উদ্দেশ্য ছবি তুলবে আর গান শুনবে । আমরা সবাই এক জায়গায় বসে গান শুনতাম। মাঝেমাঝে আমরা মজার মজার ভিডিও শুট করতাম।
একবার তো আমরা একটা নাটক বানিয়ে ফেলেছিলাম। সবার মধ্যে তুমুল ইচ্ছাশক্তি লক্ষ করেছিলাম শুটিংয়ে থাকবে বলে। বিকেলবেলা পুরো মাঠ জুড়ে ছেলেপেলে খেলাধুলা করতো। পুরো মাঠে খ্যার নেড়ে দেওয়া থাকতো। সেই খ্যারের উপরেই আমরা গোল্লাছুট খেললাম আর খেলাধুলা শেষ হলে ওখানে গোল হয়ে বসে ফোন নিয়ে আড্ডা দিতাম। হাজারো স্মৃতি আছে, সেগুলো ব্যাখ্যা করতে গেলে খুবই তুচ্ছ শোনাবে। কিন্তু আমার স্মৃতিতে সেগুলো দারুন ভাবে গেঁথে আছে। নস্টালজিয়া ফিল করি এখনো। ওই সময়টায় একটা মোবাইল ফোনের মধ্যেই কতটা আনন্দ নিহিত ছিল।
এর আগে বর্ষপূর্তি হ্যাংআউটে এবং আমার বিবাহ বার্ষিকীতে খুব অল্প কথায় আমার প্রেমের সূচনা থেকে প্রাপ্তি পর্যন্ত গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম। আমার এখনকার স্ত্রী যখন আমাদের বাসাতে প্রথম এসেছিল তখন ছিল শীতের সময়। ওই সময়টাতে আমি কিছু ভিডিও ধারণ করেছিলাম ওর অগোচরে। যেগুলো আমার সেই ফোনে ছিল। স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছিলাম। বারেবারে দেখতাম। দূর থেকে অনেকগুলো ছবিও তুলে রেখেছিলাম। কিন্তু ওই সময়ে আমার ফোনটা অতটাও ভালো ছিলনা। ক্যামেরা খুব ডিস্টার্ব করতো । ক্যামেরা ক্লিয়ার আসত না, আবার মাঝে মাঝে কিছুই দেখা যেত না।
আমার ওই ফোনটা বহুদিন চালিয়েছিলাম। ভালই সার্ভিস দিত। অনেকদিন চলার পর ফোনের চার্জার টা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমার ফোনের ব্যাটারি ছিল দুইটা। আমি অটো চার্জারে সার্চ দিতাম। এখন অটো চার্জার মনেহয় পাওয়া যায় না, দেখাও যায়না । তখন অটো চার্জার ভালই চলত। আমি আমার ওই ফোনটাকে খুবই পছন্দ করতাম। আমি মাঝে একদিন নড়াইলে গিয়েছিলাম। ওখানে আমার আপুদের বাসায় অনেকগুলো মোটরসাইকেলে লাগানো স্টিকার ছিল। আমার বিয়াই ওর ফোনে স্টিকারগুলো লাগিয়েছিল। নীল কালারের স্টিকার। পুরো ফোনে লাগানো যেত। আমিও আমার পুরো ফোনেই স্টিকার লাগিয়েছিলাম। ব্যাকপার্ট, সামনে সব জায়গাতেই স্টিকার লাগানোর পর আমার ফোনের চেহারাই পুরো চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিলো। সুন্দর লাগতো দেখতে।
আমার ওই ফোনটা ক্লাস নাইন অব্দি চালিয়েছিলাম। নাইনে তখন নতুন উঠেছিলাম। ক্লাস নাইনে উঠার কিছুদিনের মধ্যেই আমার ওই ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বেশ কয়েকবার সেরেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন পর পর আবারও নষ্ট হয়ে যেত। একদম শেষ যেদিন নষ্ট হয়ে যায় আমার এখনো মনে আছে। সেদিন আমার বিয়াই ছিল আমাদের বাড়িতে। আমি ফোন নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঐদিন ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম চরের দিকে বেড়াতে। আমি আর ও হাঁটছিলাম ফোনটা হাতে নিয়ে। হঠাৎ করে আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গিয়েছিলো। ফোন হাতে তোলার পর খেয়াল করলাম ফোন বন্ধ হয়ে গেছে। আর চালু হচ্ছে না। কোনভাবেই চালু হচ্ছিল না। ওখানে একটা জমির আইল এর উপর আমার দু তিনটা বন্ধু বসেছিলো। ওদের কাছে গিয়ে আমি ফোনটা ছুড়ে ওর হাতে ক্যাচ ধরবে বলে দিয়েছিলাম। বন্ধু ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল কোনভাবেই ওপেন হচ্ছে না। মেকারের কাছে দিতে বলেছিলো । আমি পরে মেকারের কাছে দিয়েছিলাম কিন্তু মেকার বলেছিলো ফোন আর ভালো হবে না। ওই দিনের কথা এখনো মনে আছে।
বিয়াই এর সাথে পদ্মার চরে যাওয়ার ওইদিনই শেষ আমার ওই ফোনটা চালিয়েছিলাম। বহু স্মৃতি ছিল আমার ওই ফোনের সাথে। ওই ফোনের পর বহু ফোন চালিয়েছি। স্যামসাং, সিম্ফোনি, অপ্পো, আইফোন, শাওমি, নোকিয়া ইত্যাদি। কিন্তু ঐটার মতন একটা ফোনের কথাও আমার মনে পড়ে না। আমার স্মৃতিতে ওই ফোনটাই রয়ে গেছে। ফোনটা নষ্ট হওয়ার পরেও আমি আমার ড্রয়ারে রেখে দিতাম। কিন্তু কলেজে যাওয়ার পর কীভাবে যেন আমার সেই ফোনটার ধ্বংসাবশেষ ও হারিয়ে গিয়েছে। ফোনটার কিছু অংশ থাকলেও আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারতাম। যাইহোক শেয়ার করতে পারলাম না ছবিটা।
এই ঘটনাগুলো কখনো কারো সাথে শেয়ার করবো বলে কখনো কল্পনাও করিনি । কিন্তু বাংলা ব্লগের কল্যাণে আজ সবার সমস্ত স্মৃতিময় ঘটনাগুলো সবার সামনে আমরা তুলে ধরতে পারি। আমার ঘটনাটি খুবই সামান্য হলেও আমার কাছে অনেক। যাইহোক আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। ঘটনাটি শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো। আল্লাহ্ হাফেজ।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
প্রথম প্রেম আর প্রথম ফোন কখনোই ভোলা যায় না ভাই।আর আপনার তো ২টাই একই সাথে।অনেক ভাল লাগল আপনার প্রথম ফোনের অনুভূতি।
আপনি তো অনেক ছোট বেলায় ফোন পেয়েছেন। একসময় অর্ধেক টাচ আর অর্ধেক বাটন ওয়ালা ফোনগুলো খুব চলেছে। আর মেমোরি কার্ডে গান ঢুকিয়ে সেই গান শোনার মজাই ছিল অন্যরকম। প্রথম মোবাইল ফোনের প্রতি সবারই একটি অন্য রকম আকর্ষণ কাজ করতো। খুব ভালো লাগলো পড়ে।
একদম ঠিক বলেছেন। বিশাল মজা লাগতো ফোনে গান লোড দিয়ে নিয়ে এসে গান শুনতে।
আমার প্রথম ফোনের কাহিনী এতোটাও মধুর না।বিশাল ঝামেলার,কারণ বলেছিলাম ই তো অল্পস্বল্প,হিহিহি।তবে ভাবির পার্টটা খুব ভালো লেগেছে।
সত্যি আপু ওই স্মৃতিগুলো আমার কাছে অনেক দামী।
আপনি দেখছি অনেক আগে থেকেই ফোন ব্যাবহার করেন।তবে যাইহোক ফোনটা এভাবে নষ্ট হবে এটা সত্যি অনেক অপ্রত্যাশিত আর দুঃখজনক ছিল।
প্রথম মোবাইল ইউজ করার কথা আমার মনে হয় কেউ ভুলতে পারে না, সবার কাছেই অনেক আকর্ষণীয়।আপনার মত আমিও বালামের গান অনেক শুনতাম, কিন্তু গোল্লা ছুট তো মেয়েদের খেলা, ছেলেরা খেলে নাকি?
বালামের গান জোরে জোরে বাজিয়ে রাস্তা দিয়ে অনেক হেঁটেছি। আমার এখন ভাবলেই লজ্জা লাগে আর হাসি পায়। 😅
আমাদের বাড়ির পাশে একটা অনেক বড় মাঠ ছিল। ওখানে ছেলেরা প্রায় প্রতিদিনই গোল্লাছুট খেলতো।
আমার শুধু ওই গানটা খুব বেশি মনে পড়ে “শুধু তোমার জন্য”।
আমার কাছেও দারুণ লাগতো।
আমি এইটা বেশি শুনতাম। এখনো এই গানের সুর কানে আসলে পুরনো দিনের পুরনো স্মৃতিতে হারিয়ে যাই।
ইউটিউবে এই গানটার কমেন্ট বক্সে ঢুকে সবার কমেন্ট দেখে আমি অবাক। সবারই একই অবস্থা।
প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার কি যে আনন্দ দাদা তা বলে বোঝানো সম্ভব না ৷ আপনি ক্লাস সিক্সে তখন আপনার দুলাভাই গিফ্ট করছে ৷আর আপনি মেমোরি নিয়েছেন ৷বাজারে গিয়ে লোড দিয়েছেন ৷আমারও খুব মনে পরছে সেই দিন গুলোকে
এখন দামি ফোন ব্যবহার করেও সেই মজাটা পাওয়া যায় না।
জি দাদা
আপনার প্রথম মোবাইল Tecno T570Solar যেটা আপনাকে আপনার দুলা ভাই গিফট করেছিল। এই মোবাইলে আপনার বিয়ের সৃতিও আছে। তাহলে সেই মোবাইল নিয়ে আপনার অনেক অনুভূতি আছে। তবে শেষ পর্যন্ত মোবালটি হারিয়েই ফেললেন। যাক আপনার প্রথম ফোনের অনুভূতি পড়ে ভালই লাগলো, ধন্যবাদ ভাইয়া।
ধন্যবাদ ভাই মন্তব্য করার জন্য। আমি ভাবছি এই মডেলের ফোন যদি পাওয়া যায় আমি একটা কিনবো।