কালিপটকা আর তারাবাজি।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)



স্মৃতিচারণ


  • The 29th April , 2022
  • Friday

আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা। কেমন আছেন সবাই? প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য খুবই আনন্দের দিন ঈদুল ফিতর। আমাদের মুসলিমদের প্রধান দুটি উৎসব ঈদুল আজহা এবং ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে এসেছে। এইতো দু-তিন দিন বাকি। দেখতে দেখতে রমজান মাসে প্রায় শেষ করে ফেললাম। আজ ২৭শে রমজান। এই সময়টাতে সবার মধ্যে একটা ব্যস্ততার ভাব চলে আসে। ঈদের কেনাকাটা করা, ঈদের প্রস্তুতি, ছুটিতে বাড়ি ফেরা ইত্যাদি। আকাশে বাতাসে অন্যরকম একটা খুশির আমেজ বিরাজ করে। ঈদের আগের এই মুহূর্তটা আমার বরাবরই খুবই পছন্দের একটা সময়। ছোটবেলায় ফেলে রেখে আসা কত শত দারুন স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝেই মনে পড়ে যায়। আর এটা আপনাদের সবার সাথেই হয় আমি বাজি ধরে বলতে পারি।

আমার ছোটবেলার পুরো রমজান মাসটা ধরেই ছিল পরিকল্পনার মাস। আমি পুরো রমজান মাস ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা করতাম কিভাবে ঈদ কাটাবো। আমি ছোটবেলা থেকেই ইলেকট্রনিক্স এর জিনিসপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতে বেশ পছন্দ করতাম। ঈদের আগে আমি বাজার থেকে মিউজিক বাল্ব কিনে নিয়ে আসতাম। রমজান মাস শুরুর অনেক আগে থেকেই টাকা গুছাইতাম যে ঈদের আগে আমার এগুলো কিনতে হবে। একবার দু-তিন সেট মিউজিক বাল্ব এনে আমার বাড়ির সামনে সাজিয়ে রেখেছিলাম। ওগুলো সন্ধ্যা হলেই জ্বালিয়ে দিতাম। মাঝেমধ্যে দু'একটা বাল্ব নষ্ট হয়ে গেলে চলে যেতাম শহরের দিকে বাল্ব কিনতে। আমি একাই যেতাম। কিছু টাকা গোছানো থাকত সেগুলো নিয়েই কত জল্পনা-কল্পনা ।

আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি ওই সময়টাতে একটা কাজ সবচেয়ে বেশি করতাম, সেটা হচ্ছে পড়ার টেবিলে বসে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স এর জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা আবার নতুন কিছু বানিয়ে ফেলা। একটা সোলার খন্ড ইচ্ছেমতো ডিজাইনে কেটে নিয়ে সেটার মধ্যে লাইট লাগানো। এই জিনিসটা আমরা এখনো মনে আছে।

new-years-day-3083845_1280.jpg
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY

আরো কিছু সুন্দর স্মৃতি আছে। বিভিন্ন পটকা, বাজি, বোম এগুলো নিয়ে। আমি তখন সম্ভবত ক্লাস সেভেনে অথবা এইটে পড়ি। তখন আমি আমার আপুর বাসা নড়াইলে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখলাম ছোট ছেলেপেলে আমার বয়সি যারা আছে তারা ছোট লাল রঙের মরিচের মত দেখতে কি একটা বোম ফাটাচ্ছে। এর পর জানতে পারলাম এগুলোর নাম কালিপটকা। তখন বাজার থেকে বেশকিছু কালিপটকা নিয়ে এসে আপুদের বাড়ির আশে-পাশে আমি নিজেও ফাঠিয়েছিলাম। মজার একটি ব্যাপার হল আমার গ্রামে আমার সাথে বেড়ানো ছেলেপেলের মধ্যে কেউই এগুলো চেনে না। আমিও চিনতাম না এখানে এসেই চিনতে পেরেছিলাম। এরপর আমি যখন বাড়িতে আসবো চিন্তা করলাম অনেকগুলো প্যাকেট কালিপটকা আর কিছু তারাবাজি সাথে করে নিয়ে যাব। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। বেশ কিছু কালিপটকা আর তারাবাজি নিয়ে এসেছিলাম সাথে করে।

বাড়িতে এসে আমি পুরো বস হয়ে গিয়েছিলাম। কেউ চেনে না এগুলো। আমি দু-একটা স্যাম্পল ফাটিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলাম। তখন সবাই ছোট ছিল৷ যে কোন নতুন জিনিস দেখলে সবাই একটু বেশি আনন্দ পাবে, অনেক বেশি এক্সাইটেড হবে এটাই স্বাভাবিক। যাইহোক আমি চালাকি করে আগেই বেশি ফাটাইনি। কিছুদিন পরেই ঈদ ছিল। সবাই চিন্তা করলাম যে আমরা ঈদের আগের দিন রাত্রে মাঠে গিয়ে এগুলো ফাটাবো।

dark-1845065_1280.webp
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY

কিছুদিন পরে সেই আমাদের প্রতীক্ষার মুহূর্ত চলে এল। আমি বাড়িতেই ছিলাম। সন্ধার দিকে হেলে দুলে হাঁটতে হাঁটতে মাঠের দিকে গেলাম। সবাই দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ আবার আমাকে ডাকতে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেদিন যে কি একটা আনন্দঘন মুহূর্তের তৈরি হয়েছিল। মাঠের মধ্যে আমাদের বয়সী সব ছেলেপেলে এসে জড়ো হয়েছিল৷ এরপর আমি কালিপটকা আর তারাবাজি নিয়ে মাঠে গিয়েছিলাম। সবাই একসাথে তারাবাজি আর কালিপটকা ফাটিয়েছিলাম। কি যে সুন্দর লাগছিল। আর ওই দিনটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল ছিল। কেন জানিনা ঈদ আসলেই ওই দিনটির কথা এখনো মনে পড়ে। এখনকার আনন্দগুলো একটু ভিন্ন রকম। অনেক ঘুরাঘুরি করি বন্ধুবান্ধবের সাথে, অনেক আড্ডা দেই, পিকনিক করি কিন্তু ওই সময়ের মত সলিড মজাটা এখন আর পাই না।

প্রত্যেকের ছোটবেলায় এমন অসংখ্য সুন্দর সুন্দর স্মৃতি আছে যেগুলো মনের মধ্যে এখনও গেথেই আছে। যাই হোক সামনে ঈদ, সবার ঈদের সময় টা সুন্দর কাটুক সেই কামনা করি এবং সেই সাথে সবাইকে পরামর্শ দিব ঈদের সময়ে রাস্তাঘাটে সাবধানে চলাফেরা করবেন। আজ আমি বিদায় নিচ্ছি। ভাল থাকবেন সবাই, সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে আবার পরবর্তী কোন পোস্টে। আল্লাহ্ হাফেজ।



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abbVD.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

ভাই ভালোই লাগলো আপনার ছোটবেলার আনন্দঘন কিছু স্মৃতি জানতে পেরে। আমিও ছোটবেলায় অনেক বাজে পুরিয়েছি কিন্তু কালিপটকার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। এটা দেখতে পাই অনেক পরে। আসলেই ছোটবেলায় বাজি ফোটানোর মত এমন আনন্দ আর কখনোই ফিরে আসবে না।

 2 years ago 

হুম ভাইয়া আমিও পুজো বিয়ে বাড়ি ইত্যাদি সময়ে আমি এ রকম আতজবাজি ফুটাতে ভালোবাসি ৷ভাইয়া আপনি খুব চমৎকার পোষ্ট শেয়ার করেছেন ৷যাই হোক ভাইয়া আপনার ঈদ ভালো কাটুক এই প্রত্যাশা

 2 years ago 

আপনার ঈদ ও ভালো কাটুক। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনার লিখাটা পড়ে ভালো লাগলো।আমার বড় ভাই এই রকম ইলেকট্রনিক জিনিসপএ নষ্ট করে আবার ঠিক করতো।যাই হোক আপনি নড়াইল থেকে কালিপটকা নিয়ে বস হয়ে এসেছেন,😀।আসলেই ছোটবেলা গুলো দারুন ছিলো।ধন্যবাদ।

 2 years ago (edited)

কালিপটকা নিয়ে বস হয়ে এসেছেন।

হাহাহা।। একদম 😆

 2 years ago 

ঈদের আগে সময়টা আমাদের সকলেরই ব্যস্ততার মধ্যে কাটে বিশেষ করে বাড়ি ফেরা ঈদ কেনাকাটা ইত্যাদি। ছোটবেলায় আমরা পরিকল্পনা করে রাখতাম ঈদ আসলে কি করা যাবে কোথায় যাওয়া যাবে এই বিষয়টা নিয়ে। আপনি আপনার পোষ্টের মধ্যে এই বিষয়গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

ঈদের আগের আনন্দগুলোই হচ্ছে এটা।

 2 years ago (edited)

বাড়িতে এসে আমি পুরো বস হয়ে গিয়েছিলাম। কেউ চেনে না এগুলো। আমি দু-একটা স্যাম্পল ফাটিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলাম।

ঈদের দিনটি ঘিরে আমরা অনেক পরিকল্পনা করি। তবে আগেকার মতো এখন আর সেই আনন্দ নেই। ছোটবেলায় সেই বন্ধুদের সাথে বাজি ফাটানো, আতসবাজি ফাটানো এখন অনেক মনে পড়ে। কালিপটকা যেহেতু আপনার বন্ধুদের কাছে অপরিচিত ছিল তাই সবাই নিশ্চয়ই অনেক আশ্চর্য হয়ে দেখেছে। আসলে ছোটদের ভিতরে যে ঈদের দিনের প্রতি আলাদা ভালোলাগা থাকে আমাদের বড়দের ভিতরে সেটা আর থাকে না। হয়তো ছোটবেলার সেই আনন্দের মাঝে কোন খাদ ছিল না। তবে বড় হওয়ার পর ঈদের সেই আনন্দ খুঁজে পাইনা। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি আপনার ছোটবেলার গল্প ও অনুভূতি আমাদের মধ্যে তুলে ধরেছেন এজন্য আপনাকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️

 2 years ago 

কিযে বলবো ভাই আমাদের এখানে তো কাল থেকেই ফটকা ফুটানো শুরু হয়ে গিয়েছে।আর ওই ফটকা গুলোকে আমাদের এইদিকে মরিচ বোম বলে চিনে।আসলে ঈদের আগের এই কয়েকটা দিন বেশ ভালই কাটে।আর 27 রমজানে সবাই যখন রাত জাগে তখন আম চুরি আর ফটকা ফুটানো এখনো সেই উপভোগ করি আমি, ইভেন কালকে এক ভদ্র লোকের পেঁপের গাছের বড়ো বড় পেঁপে সব সবার হয়ে গিয়েছে 😍

 2 years ago 

আসলেই ওই সময়ের মতো মজাটা আর কিছুতেই নেই যেনো একেবারে।আমি আবার এসব খুব কম ই চিনি।কারণ কখনো এসব নিয়ে মজা করা হয়নি।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন মামু, ছোটবেলায় ঈদের প্রতি একটি আলাদা নেশা ছিল যত বড় হচ্ছি সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা টি কেন যেন মরে যাচ্ছে। তারপরও আমি এসব বিষয়ে খুবই এক্সপার্ট ছিলাম ঈদের আগেই চাঁদ রাতে অনেক বাজি ফোটানো হতো। আপনার পোস্টটি দেখে অতীতের কথা গুলো মনে পরে গেল।

 2 years ago 

আমি দু-একটা স্যাম্পল ফাটিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলাম।

খুবই ভালো লাগলো আপনার অভিজ্ঞতা কথা পড়ে। আসলে আমিও সেই ছোট থেকেই এগুলোর প্রতি আসক্ত। নববর্ষ, ঈদ অথবা বিয়ে যাইহোক না কেন আমার বন্ধুরা আমাকেই দায়িত্ব দেয় এই কাজ গুলোর জন্য। এইতো আর কয়েকদিন আবার হবে। গ্রামে আসছি, আর গ্রামে আসলেই সেই চিরচেনা বন্ধুদের সাথে সেই পুরোনো মজায় ফিরে যাই।

 2 years ago 

আমরা যেমন দুর্গাপূজা বা বড় কোনো পূজার সময় বাজি ফাটায়,তেমনি আপনাদের বড়ো উৎসব ঈদ সেইসময় আপনারা খুব আনন্দ করেন।ছোটবেলার স্মৃতিগুলো আগলে রাখার মতো ,যেমন আপনি বাজি ফাটানোর পূর্ব পরিকল্পনা করে তারপর সবাই মিলে আনন্দ করে কালিপটকা আর তারাবাজি ফাটিয়েছিলেন।
তারাবাজির কথা শুনলেই আমার হাসি পায় দাদা।কারন ছোটবেলায় আমার কিছু বন্ধুরা কুকুরের লেজে এই বাজি বেঁধে তারপর আগুন ধরিয়ে দিত।আর কুকুর ছুটতে থাকতো। হি হি 😊😊
আপনার ঈদ সুন্দর কাটুক এই প্রত্যাশা করি,ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56477.82
ETH 2390.38
USDT 1.00
SBD 2.33