বিহাইন্ড দ্যা সিন।
এই তো দুই দিন আগের কথা। আমাদের কমিউনিটির ফটোগ্রাফী কনটেস্টে পার্টিসিপেট করার জন্য ফটোগ্রাফি করার প্ল্যান করলাম। প্রথমদিকে আমি বুঝতে পারছিলাম না আসলে ফটোগ্রাফী কনটেস্টে পার্টিসিপেট করব কিনা। কারণ শীতকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সিংহভাগই দেখা মেলে সকাল টাইমে। আর আমার প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠতে উঠতে নয়টা দশটা অথবা ১১ টা বেজে যায়। এটা নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু আমি যখন বিষয়টা আমার প্রিয় এক ছোট ভাই @mrahul40 এর কাছে শেয়ার করলাম, তখন রাহুল বলল আগামীকাল সকালে আমরা বের হতে পারি। এই ঘটনাটি গত পরশু দিনের আগের দিনের। আমাদের প্ল্যান ছিল সকাল ছয়টার দিকে রাহুল আমাকে ফোন দিবে, এরপর আমি ঘুম থেকে উঠে দুজন একসাথে বাইক নিয়ে বের হবো।
এমনটাই প্ল্যান করেছিলাম গত পরশু দিনের আগের দিনে। যদিও আমরা দুজন কিছুদিন আগে ক্যামেরা নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম। সেদিন কিছু ফটোগ্রাফি করা ছিল। আর সকালের কিছু দৃশ্য আমাদের হাতে থাকলেই কনটেস্টে পার্টিসিপেট করার মত ফটো হয়ে যাবে। শীতকালীন সৌন্দর্য প্রকাশে সকালের দৃশ্যের অনুপস্থিতি মানা যায় না। তাইতো আমরা এতোটা সিরিয়াস। আমাদের পরিকল্পনা মতই রাহুল সকালে আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি ঘুম থেকে উঠে খুব তাড়াহুড়ো করে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম। আমি সাথে করে এক বোতল গরম পানি নিয়েছিলাম। কারণ বাইরে কনকনে শীত, কাজে লাগতে পারে। যাই হোক সকালে আমি বাইক চালিয়েছিলাম। প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল চারিদিকে। আমরা প্ল্যান করেছিলাম চরের মধ্যে যাব। কারণঃ এই টাইমে চরে প্রচুর কৃষিকাজ হয়। আর সেখানেই শীতকালীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লুকায়িত।
আমরা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে চলে গেলাম আমাদের সেই কাঙ্খিত জায়গায়। আমি বাইক চালিয়ে চলেই যাচ্ছিলাম ছোট সরু পথ ধরে। সামনে যেতেই দেখলাম একটি মহিষের গাড়ি। খুব ভরে মাঠের মধ্যে এসে গাড়িতে কিছু একটা সাজাচ্ছে। দূর থেকে বোঝা যাচ্ছিল না কারণ প্রচুর কুয়াশা ছিল। আমি এটা দেখামাত্রই বাইকের ব্রেক চেপে ধরলাম। ব্রেক করার সাথে সাথে বাইক নিয়ে সজোরে স্লিপ কেটে দুজনই পড়ে গেলাম। পরে যেটা বুঝতে পারলাম, আমারই অসাবধানতা ছিল। কারণ এখন শিশির পড়ে ঘাসগুলো প্রচন্ড পরিমানে পিচ্ছিল হয়ে আছে। এখানে ব্রেক ধরাটাই একেবারে উচিত হয়নি। আস্তে-ধীরে বাইক থামানো উচিত ছিল।
বাইক উঠিয়ে দেখলাম হাতে প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি। আমার একটা আঙ্গুল প্রায় অবশ হয়ে গিয়েছিল৷ কিছুই অনুভব করতে পারছিলাম না। তখন কাজে দিল সাথে করে নিয়ে আসা সেই গরম পানি। অনেকক্ষণ ধরে অল্প অল্প গরম পানি ঢালার ফলে একটু আরাম পেলাম । যাইহোক, যে কারণে থেমেছিলাম, এরপর ক্যামেরা নিয়ে সেদিকে যেয়ে অনেকগুলো ফটো ক্লিক করে নিলাম আমরা। ফটোগুলো ইতিমধ্যেই কনটেস্টের পোস্টে শেয়ার করেছি আপনারা দেখেছেন।
বাইক থামিয়ে আশেপাশের প্রচুর ছবি তুলেছিলাম ওই সময়ে। সকালের সূর্য, কুয়াশাচ্ছন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য , পাখিদের আনাগোনা, আখ ভাঙ্গানো খোলার কার্যক্রম, কৃষকদের মাঠে যাওয়ার দৃশ্য ইত্যাদি। ওই জায়গাটার আশেপাশে থেকে অনেকগুলো ছবি তুলে আমরা আর একটু সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করলাম। সামনে গিয়ে দেখলাম এক জায়গায় কিছু সরিষা গাছের চূর্ণবিচূর্ণ খরকুটো জ্বালিয়ে ফেলা হয়েছে। পাশেই এখনো কিছু অবশিষ্ট আছে। কিন্তু সকালে তো প্রচুর কুয়াশা ছিল। খরকুটো গুলো একদম ভিজে ছিল। কিন্তু একদম নিচে যেগুলো ছিল সেগুলো মোটামুটি শুকনো ছিল। আমরা চিন্তা করেছিলাম সেখানে যদি আগুন জ্বালাই তাহলে খুব সুন্দর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি করতে পারব।
কিন্তু আমরা যতই চেষ্টা করছিলাম আগুন জ্বালানোর ততোবারই ব্যর্থ হচ্ছিলাম। কারণ ভিজে ওই জায়গায় আগুন ধরানো খুবই কঠিন ছিল। অনেকবার চেষ্টা করার পরও যখন ব্যর্থ হলাম তখন রাহুল বলল পেট্রোল দিতে। ওর বাইকটা নিয়ে এসে বাইকের তেল এর পাইপ টা খুলে ঐখানেও পেট্রোল ঢেলে দিল অনেকখানি।
এরপর ম্যাচের কাঠি দেওয়ার সাথে সাথেই দাউ দাউ করে আগুন ধরে উঠলো। বেশ ভাল লাগল দেখতে। ভিজে জায়গায় কিভাবে আগুন জ্বলছে। কিন্তু এই আগুন বেশিক্ষণ লাস্টিং করল না। পরে শুধুমাত্র ধোঁয়া উঠেছিল। যখন ভিজে খরকুটো গুলো শুকিয়ে যাচ্ছিল তখন সেগুলোতে মাঝে মাঝে আবার আগুন ধরছিল। এরকম চলতে থাকল। কিন্তু আমাদের তো প্রয়োজন ছিল ধোঁয়া। যখন প্রচন্ড ধোঁয়া উঠছিল তখন অনেকগুলো ফটোগ্রাফি করে নিয়েছিলাম। সেগুলো তো কনটেস্টের পোস্টে শেয়ার করেছি।
যাই হোক এবার এখান থেকে অনেকগুলো ফটোগ্রাফি করার পর আমরা চলে গিয়েছিলাম আখের খুলার দিকে। তখন মোটামুটি সূর্য উঠে গেছে। আর এই পরিবেশে অনেকগুলো ছবি নিয়েছিলাম। আপনারা সেই ছবিগুলো খুবই পছন্দ করেছেন। কমেন্ট পড়ে আমার সেটি মনে হয়েছে।
এরপর আমরা বাড়ির দিকে চলে আসবো স্থির করলাম। ফটোগ্রাফি গুলো শেষ করে আমরা অবশেষে বাড়িতে চলে আসলাম। ঐদিনের ফটোগ্রাফি তো আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি , কিন্তু ঐদিনের কাহিনী গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার খুব ইচ্ছা ছিল। এজন্য বিহাইন্ড দ্যা সিন পোস্টটি বানিয়ে ফেললাম। বিহাইন্ড দ্যা সিন দেখতে অনেকেই পছন্দ করেন। তাদের কাছে ভাল লাগবে আশা করি। যাইহোক আগামী কোন পোস্টে আবার দেখা হবে আপনাদের সাথে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
ধোয়া গুলো ছবি কে আরো প্রাণবন্ত করেছে। ভাগ্যিস বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি অল্প করে চলে গিয়েছে। একটু সাবধানে বাইক চালাবেন ভাই।
লাস্ট দুইটা ছবি ছিল সত্যিই অসাধারণ। আর আপনি সত্যি অনেক সুন্দর ছবি তুলেন। শীতকালীন সকালের পরিবেশ দেখার মজাই আলাদা। যা আপনি উপভোগ করেছেন তা আমার কাছে খুবই চমৎকার লেগেছে। খুব সুন্দর ভাবে পোস্টটি আপনি গুছিয়ে লিখেছেন যা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাই।
দাদা,ধোঁয়ার কুন্ডলী খুবই সুন্দর দেখতে লাগছিল ভোরের সূর্যের সঙ্গে।তাছাড়া আপনার পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে।সবমিলিয়ে আপনার অনুভূতি ও সুন্দর।দাদা এরপর থেকে সাবধানে বাইক চালাবেন আশা করি।ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকবেন।
কথায় আছে কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। আপনি প্রতিযোগিতার জন্য যেরকম কষ্ট করেছেন তাতে আপনার একটি পুরস্কার প্রাপ্য ছিল। দারুন সব ফটোগ্রাফি করেছেন। যদিও প্রতিযোগিতায় এটা আমার প্রথম অংশগ্রহণ ছিল। আশা করি পরবর্তীতে আবার এধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলে আমারও সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে ভালো কিছু ছবি তোলার ব্যাপারে। সবশেষে সুন্দর কিছু ছবি শেয়ার করার জন্য আজকে আবারো ধন্যবাদ।
আপনার প্রতিটি ছবিই অনেক অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে। সত্যি পেছনের গল্পটা পরতে অনেকটাই ভালো লাগে। সব কিছু জানা যায় অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায় প্রতিটি বিষয়ের পেছনের গল্প পরে। খুব সুন্দর একটি সকাল উপভোগ করেছেন দেখছি। কিন্তু আমি হলে আগে আখের রস খেয়ে গা গরম করে নিতাম🤪 শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া💖🥰
আসলে ভাই আপনার ফটোগ্রাফির কোন তুলনা হয় না।যত দেখি তত মুগ্ধ হয়ে যায়। আজকের ফটোগ্রাফি গুলো খুবই ভাল হয়েছে। আসলেই কুয়াশায় ভেজা খরে আগুন সহজে ধরতে চায় না। খুবই কষ্টকর, তারপরে আপনি যখন পেট্রোল দিয়েছেন তখন দাও দাও করে আগুন জ্বলেছিল। এই ধোয়ার ফটোগ্রাফি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।
ধোঁয়া গুলো আসলেই বেশ দারুণ লাগছে ভাইয়া দেখতে।
আসলে আপনার এই ফটোগ্রাফীর নেশাটা দেখতেই ভালো লাগে। কারণ এতো কষ্ট পেয়ে,ব্যথা পেয়েও কাজ করেন।
এটা আমার খুব ভালো লাগে। বারবার ব্যথা পেলও বারবার যাব। 🙂
আপনার কনটেস্টের ছবিগুলো দেখছিলাম, আমি ভাবছিলাম আপনি প্রথম স্থান অধিকারী হবেন।কিন্তু আপনি দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন। যাইহোক, আজকে আপনার বিহান্ড দা সিন দেখে অনেক অবাক হলাম। আপনি ছবিগুলো তুলার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আপনার প্রতি সম্মান আরো বেড়ে গেলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ফটোশুটের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
সব সময় সুন্দর সুন্দর কমেন্ট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 🙂
❣️❣️❣️❣️
আপনার এমন একটা পোস্ট আমার চোখে পরে নাই যেই পোস্ট কোয়ালিটি পোস্ট ছিলো না। ভাই খুব খারাপ লাগলো বাইক এক্সিডেন্ট করার বিষয়টা। আসলে কি সকাল সকাল এই ভাবে বাইক চালান না বলেই ভুল টা হয়েছে। আর শীতের ভিতর ব্যাথা পেলে যে কি এক যত্ননা হয় সেটা ভালোই বুঝি। তবে ছবি গুলো কিন্তু অসাধারণ ছিলো ভাই। আমি ভেবেছিলা। আপনি প্রথম হবেন। যদিও আমি সেই পোস্টে কমেন্ট করি নাই। কারন ওই যে মরার আইফোন। তবে আমি অনেক বার আপনার পোস্ট খুজেছিলাম। কারন জানতাম চমক থাকবে। ৬০ স্টিম বড় কথা না সম্মান বড় কথা এটা সত্যি অসাধারণ বলেছিলেন ভাই। দোয়া রইল আপনার জন্য৷ আমি জানি না কেন জানি আপনাকে আমার খুব বেশি ভালো লাগে ভাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। আপনার পোষ্টগুলো ও অনেক কোয়ালিটি সম্পন্ন হয়।
🥰🥰🥰🙏🙏🙏🙏🙏
ভাই আশা করি ভালো আছেন?শীতকালীন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় আপনি বিজয়ী হওয়াতে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের ফটোগ্রাফি গুলো খুবই দুর্দান্ত হয়েছে ভাইয়া। আসলে আপনি অনেক সময় নিয়ে ক্যামেরা পজিশন ঠিক করেন। আপনার ছবিগুলো খুবই অসাধারণ। ছবি তোলার মুহূর্তগুলো খুবই ভালো কাটিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার রহমতে বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেলেন। এত সুন্দর ফটো তোমাদের মধ্যে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।