আমাদের লিচু বাগানের ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ।
ঝকমকে রোদ্রউজ্জল বিকেলের শুভেচ্ছা জানাই সবাইকে। আজকে তেমন একটা শীত অনুভব করছি না। অনেকটা নাতিশীতোষ্ণ টাইপের। এমন পরিবেশ খুবই ভালো লাগে। ওয়েদার ভালোর সাথে মন ভালোর একটা সম্পর্ক আছে। ওয়েদার ভালো থাকলে অনেক সময় মন ভালো হয়ে যায়।
যাই হোক আজকে আমি আপনাদের সাথে আমাদের লিচুবাগান নিয়ে কিছু কথা বলবো। আমাদের বাড়ির পাশেই আমাদের দুই খন্ড জমি আছে। এই জমিতে সাধারণত বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করতাম আমরা। আমার আর আমার আম্মুর খুব শখ ছিল একটা লিচু বাগান করার। প্রথমদিকে আব্বু রাজি ছিল না। কিন্তু পরে খুব করে বোঝানোর পর রাজি হলো। রাজি হওয়ার অবশ্য আরও একটা কারণ ছিল। আমাদের জমির দুই পাশে আরও দুটি জমি আছে। ওই দুইটি জমির মালিক, তাঁরাও চাইছিলো একটা লিচু বাগান করতে। সবাই যদি একসাথে লিচুবাগান করা যায় তাহলে বাগানটি অনেক বড় হবে। আর দেখাশোনা করাও সুবিধা হবে ভবিষ্যতে। এরপরই ফাইনাল ডিসিশন নেওয়া হল যে লিচু বাগান করা হবে।
আজ থেকে ৫ বছর আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর লিচু বাগানের জন্য ৩ খন্ড জমি প্রস্তুত করা হয়েছিল। আমাদের জমিতে আমরা ২১ টি লিচু গাছের চারা লাগিয়ে ছিলাম। যেখানে যেখানে লিচু গাছ লাগানো হয়েছিল সেখানে আলাদা মাটি ফেলে জায়গাটা উঁচু করে নেয়া হয়েছিল। তিনটি জমিতেই প্রায় একই সাথে লিচু গাছ গুলো লাগানো হয়েছিল। গাছগুলো লাগানোর পর খুবই পরিচর্যা করতাম আমরা। যখন পানি দেয়ার প্রয়োজন হতো তখন একুশটি গাছেই পানি টেনে টেনে পানি দিতাম। কষ্ট হত ভালই কিন্তু খুবই মজা পেতাম, যে আমাদের লিচু বাগানে প্রচুর লিচু ধরবে। অনেক সময় সন্ধ্যা লেগে যেত তাও পানি দেওয়া শেষ হত না। এরপর সন্ধ্যার সময় পানি দেয়া শেষ করে বাড়িতে চলে আসতাম।
ভালোই পরিশ্রম করতে হয়েছিল প্রথমদিকে। গাছ লাগানোর দ্বিতীয় বছরে প্রথম লিচু এসেছিল গাছে। তবে খুবই কম পরিমাণে। এটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তার পরের বছর অর্থাৎ তিন নাম্বার বছরে প্রচুর পরিমাণে লিচু আসছিল প্রতিটি গাছেই। তখন আমার বিয়ে হয়েছিল না। আমার হবু শ্বশুর বাড়িতেও লিচু পাঠিয়েছিলাম 🥰। সব আত্মীয়-স্বজনের দিয়ে আমরা নিজেরা খাওয়ার পরেও ১০ পার্সেন্ট লিচু ও শেষ করতে পারছিলাম না। পরে একটা লিচু ব্যবসায়ীর কাছে সব লিচু বিক্রি করে দিয়েছিলাম। ওই বছরটাতে সবাই খুশি ছিলাম। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হলো তার পরের বছর থেকে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বর্ষার সময় আমাদের জমিতে পানি বেঁধে গিয়েছিল। আর তখন থেকেই লিচু গাছ গুলো দুর্বল হতে শুরু করে। এই কারণে পরে বছরটাতে খুবই অল্প পরিমাণ লিচু ধরেছিল গাছে। এতই অল্প ছিল যে আমাদের নিজেদের জন্যই যথেষ্ট ছিলো না। আমরা বাজার থেকে কিনে খেয়েছিলাম আরো।
তার পরের বছরও সেম অবস্থা হয়েছিল। পরপর দু'বছর বর্ষায় মাঠে পানি জমে থাকার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হল । মনে হয় না গাছগুলো আর বেশি দিন বেঁচে থাকবে। তবে পুরো জমিটা যদি মাটি ফেলে উঁচু করা যায় তাহলে গাছগুলো আবার আগের মত হয়ে যাবে। কিন্তু এটা খুবই ব্যয়বহুল হয়ে যায়।
আরো একটা বিষয় বলে রাখি, আগে থেকেই আমাদের জমিতে আম গাছ লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল অনেকগুলো। কারণ পুরো জমিতে ২১ টি গাছ অনেক ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যায়। এজন্য ফাঁকা জায়গাগুলোতে আম গাছ লাগিয়ে দিয়েছিল। তবে বাগানের আম গাছ গুলোর তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। প্রতিকূল পরিবেশ টা বেশ মানিয়ে নিয়েছে।
এখন আমাদের জমিতে দুটি কাজ করতে হবে। একটি হচ্ছে জমির চারপাশ দিয়ে বেড়া দিতে হবে, আরেকটি হচ্ছে জমি উঁচু করতে হবে। এখন বেড়া দিতে হলে সবচেয়ে ভালো একটি উপায় আছে। আর সেটি হচ্ছে জমির চারিদিকে লেবু গাছ লাগিয়ে দেওয়া। তাহলে বেড়ার এক্সট্রা খরচটাও কমে যাবে আবার লেবু থেকেও লাভ করা যাবে। আমাদের জমির পাশে যে জমিটা অর্থাৎ আমার চাচার জমির এক সাইডে এরকম লেবু গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। প্রচুর পরিমাণে লেবু ধরে প্রত্যেক বছর। আর লেবু গাছ গুলো অনেক ঘন। যার কারণে এটি পারফেক্ট বেড়ার কাজ করে। লেবু গাছের ফাঁক দিয়ে কেউ ঢুকতে পারবে না। বেড়ার ফাঁক গলে হয়তো ঢুকা সম্ভব, কিন্তু এত ঘন লেবু গাছের ফাঁক গলে ঢুকা একেবারেই অসম্ভব। কারণ প্রচুর কাঁটা থাকে। যদিও আমার চাচা যে গাছ গুলো লাগিয়েছে সেগুলো অতটাও ঘন করে লাগানো হয়নি। কিন্তু যদি বেড়ার পারপাসে লাগানো হয় তাহলে সেই ভাবেই লাগাতে হবে।
যাই হোক,, এখন যে পরিবেশটা দাঁড়িয়েছে তাতে লিচুবাগান পুরোটাই অলাভজনক প্রজেক্ট। তবে পুরো জমিতে লেবু গাছ দিয়ে বেড়া দিলে লেবু থেকে ভালোই লাভ আসবে আশা করা যায়। আর লিচু বাগানের জমি অল্প খরচের মধ্যে যদি কোনভাবে উঁচু করা সম্ভব হয় তাহলে প্রজেক্ট টা লাভজনক বানানো সম্ভব। তবে এখানে আরো একটি সুবিধা আছে সেটি হচ্ছে লিচু বাগানের মধ্যে সারা বছর বিভিন্ন শাক সবজি চাষ করা সম্ভব। বছরে একবার ধান চাষ করা হয়। আবার শীতের সময় এই জমিতেই সরিষা চাষ করে আমাদের। শীতের সময় সরিষা আর বিভিন্ন রকম শাক সবজি চাষ করা হয় বলে আমাদের সবজির চাহিদা অনেকটাই এখান থেকে পূরণ হয়। ইতিমধ্যেই আমাদের জমিতে সরিষা বুনে দেয়া হয়েছে। যখন সরিষা গাছ গুলো বড় হয়ে যাবে আর ফুল ফুটবে তখন আপনাদের সাথে শেয়ার করব। তো আজ আর লিখছি না। আবার আগামী পোস্টে দেখা হবে ইন শা আল্লাহ্। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন। খোদা হাফেজ।
All photo was taken by: Xiaomi Redmi note 9 pro max
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আপনাদের লিচু গাছের ইতিহাস পরলাম। চারা রোপণের আগেই আপনাদের কিছু বিষয় জেনে রাখা উচিত ছিল।যেমন জমিতে পানি জমে কিনা বাহ কি ধরনের মাটিতে লিচু গাছে ভালো হয়। যাইহোক কোনভাবে মাটি দিয়ে উঁচু করতে পারলেই আবার ভালো ফলন হবে বলে আশা করি
ভাই আপনার লিচুবাগান এই গল্পটা পড়ে আমার প্রথমে ভালই লেগেছিল, কারণ আপনি অনেক কষ্ট করে লিচুর বাগান করেছিলেন। একুশটি লিচু গাছে পানি দেওয়া কম কষ্টকর নয়। আপনি এই কষ্টের কাজগুলো আনন্দের সাথে করেছেন। তবে যদি এই লিচু গাছ গুলো ঠিকভাবে বেড়ে উঠত। তাহলে আপনি খুবই লাভবান হতেন। কারণ আমাদের এখানে লিচু বাগান রয়েছে বাগান থেকে অনেক টাকা আয় হচ্ছে। তবে বর্ষার কারণে লিচু গাছ গুলো সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে না পাড়াতে আপনি ভেঙে পড়েননি। আপনি পরবর্তিতে লেবুর বাগান থেকে আশা অনুরূপ ফল পাচ্ছেন,এটা জেনে ভালো লাগলো।
পানি দিতে ভালই কষ্ট হতো। দুপুরের পর যদি পানি দেওয়া শুরু করা যেত প্রায় সন্ধ্যা লেগে যেত পানি দেওয়া শেষ করতে।
ভাই আপনার পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরলাম ।শুরু তে আপনাদের লিচু গাছ লাগানোর অভিজ্ঞতা খুব ভাল লেগেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যখন লিচু গাছে পানি বেঁধে গাছগুলোর অবস্থা খারাপ হয়েছিল দেখে খুবই খারাপ লাগলো। পরবর্তীতে আপনারা আবার বুদ্ধি করে লেবু গাছ লাগিয়ে দিলেন, আম গাছ লাগিয়েছিলেন ব্যাপারটা খুবই ভালো লেগেছিল আমার কাছে ।তবে এখন আপনাদের বাগানের কি অবস্থা জানতে ইচ্ছা করছিল। এখন কি পানি জমে থাকা বন্ধ হয়েছে নাকি এখনো পানি জমে থাকে? আপনার ছবিগুলো খুবই চমৎকার ছিল আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে । ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আম গাছ লাগানোর চিন্তাটা সবচেয়ে ফলশ্রুতি ছিল। কারণ ওটাই এখন লাভজনক প্রজেক্ট হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
সম্পূর্ণ পোস্ট টা পড়ে মনে হলো শাইখ সিরাজের পরিচালিত আমাদের কৃষি অনুষ্ঠান টা দেখলাম। দারুণ হয়েছে পোস্ট টা ভাই। এবং আম গাছগুলো যদি ভালো প্রজাতির হয় যেমন হিমসাগর বা আম রুপালি তাহলে এখান থেকে বেশ ভালো অর্থ আয় করতে পারবেন।
এবং একটি জমির বহুমুখী ব্যবহারের বুদ্ধিটা বেশ দারুণ। জমিতে বেড়া দেওয়ার বদলে লেবু গাছ লাগানো। এবং মাঠ টা দেখছি খুবই সুন্দর।
বহুমুখী ব্যবহারের সুন্দর একটি সুযোগ আছে এখানে। কারণ জমির ভূমি তো ফাঁকাই থাকে। ওখানে সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ করা যেতে পারে। বিষয়টি লাভজনক বটে।
হ্যা ভাই ঠিকই বলেছেন। তবে এক্ষেত্রে জমি উর্বর হতে হবে।
আমি দেখছি, আপনার জমি সবজি চাষে ব্যবহার করা আপনার জন্য খুবই ভালো, কারণ এটি আমাদের জন্যও খুবই উপকারী।
কারণ আমিও বৃক্ষরোপণ পছন্দ করি।
প্রতিকূল পরিবেশের কারণে অনেক সময় লিচুবাগান নষ্ট হয়ে যায়। লিচু গাছে ভালো ফলন হলে অনেক লাভবান হওয়া যায়। তবে আমার মনে হয় বাগানের চারপাশে লেবু গাছ লাগালে এটা অনেক ভালো হবে। একদিকে যেমন বেড়ার কাজ করবে অন্যদিকে অনেক লেবু পাওয়া যাবে। লিচু বাগান এবং অন্যান্য ফলের বাগান করতে গেলে অবশ্যই অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। তবে আমি আশা করছি আপনি আপনার পরিশ্রমের ফল অবশ্যই পাবেন। আশা করছি আপনার বাগানের ভবিষ্যৎ প্রকল্প ভালই হবে।
শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ভাইয়া আপনার লিচু বাগানের কথা শুনে আমার কাছে ও অনেক খারাপ লাগছে , এতো কষ্ট করে দিনের পর দিন পরিচর্যা করে বেশি দিন আর লিচু খাওয়া গেলনা, তবে হবু শশুর বাড়ি লিচু পাঠানোর বিষয়টা ভালো লাগলো ,হেহে ,,,,, যদিও গাছ গুলো থাকতো এই পানির সমস্যা না হলে , তবে ভাইয়া সেটা ভালো হয়েছে যে গাছের ফাঁকে ফাঁকে আম গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন , আর লেবু গাছ কিন্তু এই বেড়া পাহারার কাজে ভালো সাহায্য করে তার সাথে লেবু তো আছেই , এবার যখন সরিষা চাষ করা হয়েছে আশা করি আমরা এই শীতে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি দেখতে পাবো।
আমার হবু বউকে আমার গাছের লিচু খাওয়ানো টাই মেইন উদ্দেশ্য ছিল। 😌
অবশ্যই। ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করব সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি শেয়ার করতে।
ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম আপনার লিচু গাছ গুলো কিভাবে লাগানো হয়েছিল। লিচু গাছ লাগানোর উদ্যোগটা খুবই সুন্দর ছিল। কিন্তু বর্তমানের লিচু গাছ গুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। আমার মতে লিচু গাছ গুলোর যত্ন নিয়ে আগের মত সুন্দর চেহারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করা উচিত। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। এবং একই সাথে আপনার লিচুবাগান এর সব লিচু গাছ গুলোর সর্বোচ্চ যত্ন নেওয়ার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ রইল।
আচ্ছা তাহলে ভিতরে কাহিনী এটা, ছিচু খাইয়ে শ্বশুড়কে পটাইছেন, আর ভাবিকে কিভাবে পটাইছেন সেটা কিন্তু বলেন নাই, হে হে হে
যাইহোক লিচু গাছের সাথেও যে অনান্য সবজি এবং ধান চাষ করা যায় সেটা আমি জানতাম না। আর লিচু গাছগুলোর মাঝে কিন্তু অনেক ফাঁকা, আরো ঘন ঘন করে কি গাছ লাগানো যায় না? তবে লেবু গাছের আইডিয়াটা ভালো লেগেছে, এক ঢিলে দুই পাখি।
আপনার ভাবিকে পটানোর পরেই পাঠিয়েছিলাম। আমি শুধু একজনকে না পরিবারসহ পাঠিয়েছিলাম। 😅😅
আসলে প্রথমে ভেবেছিলাম গাছগুলো অনেক বড় আর ঝাপটি হয়ে যাবে যার কারণে বেশি একটা ঘন করে লাগানো হয়নি। কিন্তু এখন এই অবস্থা।
ভাইয়া আপনি কতো কিছু করেন দেখেই তো একেবারে আমার কাছে অবাক লাগছে। সত্যি ব্যাপারগুলোতো দারুণ!! তবে আপনার লিচুবাগান এর কথা শুনে আমার লিচু খেতে ইচ্ছে করছে। যদিও পারবো না জানি তবে কখনো যদি কোনো সুযোগ আসে তাহলে অবশ্যই মিস দিব না। কারণ কখন যে কোথায় যাওয়া হয় তা তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ঠিক করে রাখেন।