ঢাকায় ব্যাচেলর ফ্ল্যাট বিড়ম্বনা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা। আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। কিন্তু আমি গত তিন দিন যাবত খুবই পেরেশানিতে ছিলাম। কারণ ছিল ব্যাচেলর ফ্লাট খোজা। আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে এলাম আপনাদের সাথে।

এইতো গত দু-তিন দিন আগের কথা। একটি নতুন বেচেলার ফ্ল্যাট খুজতেছিলাম। বাসা নেয়ার প্ল্যান ছিল ওয়েস্ট শেওড়াপাড়ার দিকে। এইখানে বাসা নিলে ছোট ভাই রাহুল আর আমার ভার্সিটি সমান দূরত্বে হবে। এই জন্য গুগোল ম্যাপ দেখে ওয়েস্ট শেওড়াপাড়ার লোকেশন টাই নির্ধারণ করেছিলাম। আচ্ছা, আগে আমি আমার বর্তমান বাসা ছাড়ার কারণটা আপনাদেরকে বলি। প্রথমত আমি যখন ঢাকাতে এসেছিলাম তখন আমার বাসা চয়েস করে ওঠার মত কোন অপশন ছিল না। বন্ধু যেখানে থাকে সেখানেই উঠে পড়েছিল। এখানে মেস সিস্টেম। আমাদের রুমে তিনজন একসাথে থাকতে হয়। যদিও অপরিচিত কেউ-ই না। ছোট ভাই রাহুল আর বন্ধু পাপ্পুর সাথে ছিলাম এতদিন। কিন্তু আমার তিনজনের রুমে এডজাস্ট হতে একটু কষ্ট হচ্ছিল।

waiting-1047677_1280.jpg
image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY

আসলে আমার নিজের বাড়ির মতন নিরিবিলি, সুন্দর, ছিমছাম , পরিচ্ছন্ন পরিবেশের না থাকলে ভালো লাগেনা। তারপর আবার আমার এলার্জি প্রবলেম আছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে আমার জন্য একেবারেই টক্সিক। এইজন্য আমি বাসা চেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল আলাদা একটি ফ্ল্যাট নিতে, যেখানে শুধুমাত্র আমি এবং ছোট ভাই রাহুল প্লাস ওর একটা বন্ধু থাকবে। আমি একটা আলাদা সিঙ্গেল রুমে থাকবো এবং সেখানে পরিপাটি করে নিজের বাড়ির মতন পরিবেশ করে নিব। এটাই ছিল আমার আসল প্লান।

এবার আসি ঘটনায়। সেদিন গেলাম মিরপুর-১০ এ। প্রথমে আমি আর রাহুল গিয়েছিলাম। আর বন্ধু পাপ্পু গ্রিন ইউনিভার্সিটি তে পড়ে, ও ওই সাইডেই ছিল । আমি আর রাহুল প্রথমে এক ঘন্টার মতো বাসা খুঁজেছি কিন্তু তেমন কোথাও পাইনি। এরপর বন্ধু পাপ্পু আসলে আরো তিন ঘন্টা ধরে মিরপুরের আশেপাশে সব জায়গায় খুঁজেছি। বুঝতেই পারছেন এই গরমের মধ্যে এতক্ষণ ধরে বাসা দেখছি, অনেক কষ্টদায়ক ব্যাপার ছিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে টু-লেট লেখা থাকলেও ব্যাচেলর বাসা মিলানো বড়ই ভার। কেউ ব্যাচেলর দিতে চায়না। আমরা দুপুর থেকে বিকেল অব্দি বাসা খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও একটা বাসা মেলেনি। খুবই হতাশ হয়ে মিরপুর-১০ থেকে শেওরাপারার দিকে চলে এসেছিলাম।

boy-4863084_1280.jpg

image source & credit: copyright & royalty free PIXABAY

সেওরাপাড়া এসে আবার বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ বাসা খুঁজেছি। ওই একই সমস্যা। টু-লেট থাকলেও ব্যাচেলর দিবেনা। কি এক যন্ত্রণা। অনেক হতাশা নিয়ে সন্ধ্যার দিকে আমরা ব্যাক করলাম। মোহাম্মদপুরে উপর দিয়ে ধানমন্ডি আসতে ছিলাম। এরপর ভাবলাম মোহাম্মদপুরে দেখা যাক পাওয়া যায় কিনা। মোহাম্মদপুরে অনেকক্ষণ খুঁজলাম কিন্তু কোন বাসা মিলল না। এরপর চলে আসার সময় একটা বাসায় গেলাম। সে বাসায় ব্যাচেলর ভাড়া দিবে। লিফ্ট আছে গ্যারেজে আছে। বাসায় ঢুকে বাসাটা দেখলাম। বাসা টা এক কথায় দারুন। কিন্তু ভাড়া শুনে আমার চোখ কপালে। ভাড়া ছিল ২৪ হাজার টাকা। বাসাটি খুবই পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু ভাড়ার জন্য আর দ্বিতীয় বার না ভেবে চলে আসলাম। কি আর করার। বাসা খুঁজার মিশনে ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে আসলাম।

গতকালকে আবার গিয়েছিলাম মোহাম্মদপুর এরিয়ায়। মোহাম্মদপুর এরিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত বিকেল থেকে শুরু করে রাত ৮ টা পর্যন্ত ঘুরেছি । কিন্তু ওই একই কেস। ব্যাচেলর দিবেনা। আর যে কয়টা ব্যাচেলর পেয়েছি সেগুলো একেবারেই পছন্দ হয়নি। কোনটার লিফ্ট নেই, গ্যারেজ নেই, কোনটা ছয় তলায়, কোনটা ঘিঞ্জির মধ্যে বাসা, পরিবেশ বিশ্রী। সব মিলিয়ে কোনভাবেই মিলাতে পারছিলাম না। শেষমেষ হতাশ হয়ে বাসার দিকে চলে আসতে শুরু করেছিলাম৷ মাথায় একটা টেনশন ছিল। এখন যে বাসায় আছি বাসাটা ছেড়ে দিয়েছি অলরেডি। আর হাতে মাত্র সাত আট দিন সময় আছে। এর মধ্যে বাসা খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু যা অবস্থা তাতে আমার সত্যিই ভাবিয়ে তুলছিলো। রাতে আমি হতাশ হয়ে শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিলাম গতকাল দেখা ওই ২৪ হাজার টাকার ফ্ল্যাট টাই নিব। তাছাড়া আমার হাতে আর অপশন নেই।

রাতে বন্ধুর সাথে চলে গেলাম আবার ওই বাসায়। গিয়ে সব কথাবাত্রা ফাইনাল করে আসলাম। আজকে গিয়ে এডভান্সের টাকাটা দিয়ে আসব। যেদিন বাসায় উঠবো, সবকিছু আপনাদের সাথে শেয়ার করব এন্ড বাসাটা দেখাবো। আমি একটা সিঙ্গেল রুমে আর ছোট ভাইয়েরা অন্য রুমে থাকবে। তিন রুমের বাসা। তিনটি এটাস্ট বাথরুম প্লাস প্রত্যেকটি রুমের সাথে একটা করে ব্যালকনি। অবশেষে বাসা না পাওয়ার টেনশন আর বাসা খুঁজার বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পেলাম। এর থেকে খারাপ অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকেরই আছে কিন্তু এটাই ছিল আমার প্রথম এরকম পরিস্থিতিতে পরা । যাইহোক, অবশেষে বাসা পেয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। আজ তাহলে এ পর্যন্তই। দেখা হবে আগামী কোন পোস্টে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।



JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abbVD.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago (edited)

সত্যি বলতে কি ভাই ব্যাচেলর বলেন আর বেকার বলেন সমস্যা দুইটা। বাড়ি ভাড়া জোটে না অনেক চেষ্টা করেও আবার বেকার মানুষের বিবাহ করতে গেলে সহজে মেয়ে দিতে চায় না মেয়ের বাবা। বলে থাকে বেকার ছেলের হাতে মেয়ে দেব না। এই দুটি সমস্যা বড়ই কঠিন। বুইড়ার হাতে মেয়ে দিতে রাজি থাকলেও বেকারের হাতে দিতে রাজি থাকে না।

 2 years ago 

ভাইয়া আমিও ব্যাচেলর থাকি। আমিও বাসা খুজতেছি। বাসা পাচ্ছি না। যদি সঠিক সময়ে মনের মত বাসা না পায় তার জন্য বাসাও না করি না। সবাই ফেমিলি বাসার কথা বলে, বাসা ম্যানেজ করলেও আবার বোয়ার সমস্য। ব্যাচেলর হয়ে যে কি প্রবলেমে আছি বলে বুঝাতে পারবো না।

 2 years ago 

কি যে একটা অবস্থা। এতো এতো ব্যাচেলর আর সমস্যাও একগাদা।

 2 years ago 

এই বাসা পাওয়া যে কি জ্বালা, বাসা পাইলেও এরপর বুয়া পাইতে আরেক ঝামেলা।পাইকপাড়ার দিকে অনেক কষ্টে একটা বাসা পেয়েছিলাম,তাও কত নিয়ম ব্যচেলর দের জন্য।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন। অনেক ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় এ বাসা চেঞ্জ করতে গেলে।

 2 years ago 

এমন বাজে অভিজ্ঞতা আমার আম্মুর আছে। সেই সকালে বের হয়েয়েত বাসা খুঁজেতে আশে পাশের দুই-তিন এলাকা ঘুরেতো তারওর একটা মিললে আরেকটা মিলতোনা। আপনারাতো আরো ব্যাচেলার বাসা খুঁজতে বের হয়েছেন আপনাদের অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। যাইহোক বেশি টাকা দিয়ে হলেও ভালো একটি পরিবেশে থাকতে পারবেন।

 2 years ago 

মেয়েদের জন্য এটা অনেক বেশি কষ্টের। আমরা তো না হয় ঘুরাঘুরি করে বেড়াই সবসময়। কিন্তু মেয়েদের জন্য অনেক বেশী কষ্টকর হয়ে যায়।

 2 years ago 

বাসা খোঁজার কথা শুনে তো আমারই মাথা ঘুরে উঠলো। কারণ আমাকেও বাসা চেঞ্জ করতে হবে। আসলে সব জায়গায় ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া নিয়ে একটু ঝামেলা করে। কারণ যে দিন কাল আসছে এখনকার ছেলেমেয়েদের দিয়ে কোন বিশ্বাস নেই। যাই হোক আগারগাঁও গেলে আপনার নতুন বাসা থেকেও ঘুরে আসব।

 2 years ago 

অবশ্যই আপু। এদিকে আসলে অবশ্যই আমাকে নক দিবেন।

 2 years ago 

বাসা খোঁজে খুবই কষ্টের কাজ। সহজে ভালো পাওয়া যায়না। আর বাসা পাওয়া গেলে সে বাসাগুলো মনের মত হয় না। যেহেতু আপনার এলার্জি প্রবলেম এবং একই রুমে ম্যাসের মতো করে থাকার পরিবেশ আসলে অনেক কষ্ট কর। তারপর আপনি থেকেছেন এবং আপনি নিরিবিলি একটি পরিবেশের জন্য বাসা খুজতেছে। শেষমেশ বাসা একটা পেয়েছেন।প্রত্যেক রুমে বেলকনি। আসলে বেলকনি থাকলে খুবই ভালো লাগে। এরকম বাসা পাওয়াটা খুবই কষ্টের। যাইহোক আপনি বাসাটা পেয়েছেন। আশা করছি বাসার পরিবেশ নিয়ে আমাদের সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেবেন।

 2 years ago 

আমার সমস্যাগুলো না থাকলে আমি চেষ্টা করতাম অ্যাডজাস্ট করে থাকার। কিন্তু আর সম্ভব হলো না।

 2 years ago (edited)

সব জায়গায় ভাই ব্যাচেলরদের জন্য এই প্রবলেম। ব্যাচেলরদের কেউই বাসা ভাড়া দিতে চায় না। ছেলেদের তো যে কোন উপায়ে বাসা একটা ম্যানেজ হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে আকাশ পাতাল কঠিন ব্যাচেলর বাসা সংগ্রহ করা।
ভাড়া বেশি হলেও সব শেষ একটি বাসা ম্যানেজ হয়েছে এতেই শুকরিয়া জেনে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

আপনি ঠিক ধরেছেন। আর আমি সেটাই ভাবছিলাম যে আমাদের জন্য যদি এত কঠিন হয় তাহলে একটা মেয়ের জন্য বাসা খুঁজে পাওয়াটা আরো কত কঠিন।

 2 years ago 

আসলে মেয়েদের জন্য অনেক সমস্যা অনেক মেয়েদের বিপদে পড়ে আত্মীয়ের বাসায় থাকতে হয় তাতেও মুখ বুজে অনেক কিছু সহ্য করে নিতে হয়।

 2 years ago 

বন্ধু পাপ্পু গ্রিন ইউনিভার্সিটি তে পড়ে।

আমার নামেও দেখছি একটা ইউনিভার্সিটি আছে, জেনে ভালো লাগলো।আর বাসা খোঁজা শহরের বুকে এটি খুবই ঝামেলাপূর্ণ দাদা।আপনি ব্যাচেলর না হয়েও পরিস্থিতির কারণে ব্যাচেলর বাসা খুঁজে পাওয়ার জন্য কষ্ট করতে হয়েছে।ভাড়া বেশি হলেও মনঃপূত বাসা পেয়েছেন জেনে খুবই ভালো লাগছে দাদা।

 2 years ago 

ও হ্যাঁ তাইতো। ভার্সিটির নাম আর আপনার নাম তো একেবারে মিলে গেল।

 2 years ago 

ভাই ঢাকা শহরে ব্যাচেলার বাসা খুজতে গেলে মনে হয় ব্যাচেলাররা যেন মানুষই না। এত বড় একটা শহরে এত এত বাসা অথচ ব্যাচেলারদের জন্য থাকার কোন ব্যবস্থাই নেই। বিষয়টা খুবই কষ্টদায়ক। তবে শেষমেষ 24 হাজার টাকা ভাড়া হলেও যে পছন্দ মত একটা বাসা পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো। আপাতত উঠে পড়ুন। পরবর্তীতে হয়তো অন্য ব্যবস্থা করে ফেলতে পারবেন। শুভকামনা রইল আপনাদের জন্য।

 2 years ago 

সেটাই ভাবতেছি এই কদিন ধরে। এত বড় একটা শহর আর ব্যাচেলরদের এত প্রেসার নিতে হয় বাসা খুঁজতে গেলে। কি একটা অবস্থা।

 2 years ago 

ঢাকা শহরে টু - লেট ওয়ালা বাসার ও অভাব নেই। কিন্তু ব্যাচেলর বাসা খুঁজতে গেলে অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়ে। যাই হোক আপনি বাসা পেয়েছেন শুনে খুবই ভালো লাগলো কিন্তু ভাড়ার কথা শুনে আমার মাথা ও ঘুরাচ্ছে। কিন্তু এমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিবেলে পরিবেশের জন্য এরকম ফ্ল্যাট দরকার। অপেক্ষা রইলাম আপনার বাসায় ওঠার দিনের গল্পের জন্য। আশা করি কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই খুব সহজেই আপনার বাসায় উঠতে পারবেন।শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

 2 years ago 

একদম তাই। অলিতে গলিতে সবখানে টু-লেট লেখা থাকে কিন্তু ব্যাচেলরকে দেয় না।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64689.90
ETH 3450.92
USDT 1.00
SBD 2.50