ব্যাচেলর জীবনের বেদনার গল্পকথা।

in আমার বাংলা ব্লগ28 days ago

আমি @redwanhossain গ্রাম থেকে আসা একজন ব্যাচেলর।

ব্যাচেলর জীবন। শব্দটি শুনলেই অনেকের মনে হয়তো ভেসে ওঠে স্বাধীনতা, মজার মুহূর্ত আর বিন্দাস থাকার ছবি। তবে এই ছবির পেছনের দিকটা অনেকটাই অজানা রয়ে গেছে। আসুন, আমরা একটু ভিন্নভাবে দেখি, ব্যাচেলর জীবন কেমন হয়। তাই আজকের আমার এই ব্লগটির নাম “ব্যাচেলর জীবনের বেদনার গল্পকথা।

গ্রামের শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ ছেড়ে শহরের কোলাহলে এসে জীবন শুরু করা ব্যাচেলরদের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই যাত্রা শুধু শারীরিক কষ্টই নয়, মানসিক ও সামাজিক কষ্টেরও প্রতিচ্ছবি। শহরের যান্ত্রিক জীবনে মানিয়ে নিতে গিয়ে যে সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়, তা সত্যিই বেদনাদায়ক।

IMG1.jpg

শহরে মাথাগুজাবার ঠাঁই খুঁজে পাওয়া এবং তা ধরে রাখা এক বিশাল সমস্যা। গ্রামে নিজের বাড়ির স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে এসে শহরে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। একা একা থাকা, বাসা বদলানো, বাড়ির মালিকের সাথে সমস্যার সম্মুখীন হওয়া - এই সবকিছুই ব্যাচেলরদের জন্য কষ্টের। ভাড়া এবং অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য অর্থনৈতিক চাপও অনেক বেড়ে যায়।

একাকীত্ব ব্যাচেলর জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ঘরে ফিরে কেউ অপেক্ষা করে না, কেউ জিজ্ঞাসা করে না দিনের কথা। একা থাকতে হয় নিজেকে নিয়ে। বন্ধুরা থাকে, কিন্তু দিনের শেষে সেই একা, আর ঘরটাই থাকে সঙ্গী। এই একাকীত্ব অনেক সময় গভীর বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে, যখন কোনো সমস্যা আসে বা দুঃখের সময় হয়, তখন পাশে কাউকে না পাওয়া সত্যিই কষ্টের।

এছাড়া প্রতিদিনের রান্না এবং খাবার সংগ্রহ করা আমাদের মতো ব্যাচেলরদের জন্য একটা বড় সমস্যা। অনেকে বাহিরের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার যারা নিজেরা রান্না করি, তাদের প্রতিদিনের রান্নার ঝামেলা সামলাতে হয়। রান্নার পর বাসন মাজা, ঘর পরিষ্কার রাখা - এই সবকিছুই একার হাতে করতে হয়।

অর্থনৈতিক চাপ। বাড়ির ভাড়া, ইলেকট্রিসিটি বিল, পানির বিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী - সবকিছুই সামলাতে হয়। এর জন্য হয়তো বাবার কাছে অনেকের অনেক কথাও শুনতে হয় কারন দিন শেষে বাবা আর কতদিন চালাবে বলে বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।

এরপর আসে নিরাপত্তার চিন্তা,ব্যাচেলরদের জীবনে নিরাপত্তার বিষয়টিও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একা থাকার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়।কারন ব্যাস্ত এই শহরে আপনার আপনি ছাড়া আপনার আর কেউ নেই। নানা কারনে মানসিক চাপ ব্যাচেলর জীবনে হতাশার সৃষ্টি হয়। একা থাকা মানে সবকিছু নিজে সামলানো। কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে, কাউকে পাশে না পেয়ে নিজেরাই তা মোকাবিলা করতে হয়। এই মানসিক চাপ অনেক সময় হতাশা ও অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা ব্যাচেলরদের জীবন সহজ নয়। ব্যাচেলর জীবনকে আমরা প্রায়শই মজার ও বিন্দাস জীবনের সমার্থক মনে করি। তবে এর পেছনের কষ্টগুলোও আমাদের অনুধাবন করা উচিত। একাকীত্ব, রান্নাবান্নার ঝামেলা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ, নিরাপত্তা ও মানসিক চাপ - এই সবকিছু মিলিয়ে ব্যাচেলর জীবন অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে। এই কষ্টগুলোকে বুঝতে ও সম্মান জানাতে আমাদের সবারই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমার আপনার জীবনের কষ্টগুলোকে সহজ করার জন্য সহানুভূতি ও সহযোগিতা প্রদর্শন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।


আমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

IMG_7721.JPG

আমি রিদওয়ান হোসাইন। পরিবারের শেষ সন্তানটি আমি। পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি নিয়ে। ভ্রমণ করা, গান গাওয়া ও শোনা এবং ফটোগ্রাফি করা আমার খুবই পছন্দ। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে লেখা শুরু করি, তাই "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব, আমার ভালোবাসা। নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে নিজের মনের ভেতর জমে থাকা হাজারো কথা তুলে ধরা যায়।
Sort:  
 28 days ago 

ব্যাচেলর জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন আজকের এই পোষ্টের মাঝে। বেশ ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে। যেখানে আপনি একদম সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করার চেষ্টা করেছেন। একদম সঠিক কথাগুলো আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন ভাই, ধন্যবাদ।

 28 days ago 

আপনার প্রশংসাসূচক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার এই মন্তব্যে আমাকে অত্যন্ত অনুপ্রাণিত করেছে। ব্যাচেলর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখার সময় আমার অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করার চেষ্টা করেছি এবং আপনি সেই চেষ্টাকে প্রশংসা করেছেন, যা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। আপনার মতামত আমাকে আরো ভালো লেখার প্রেরণা যোগাবে বলে আমি মনে করি। তার জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 64269.55
ETH 3490.29
USDT 1.00
SBD 2.53