১১ টাকার স্মৃতির ৫০০ এসএমএস
একটা সময় ছিলো, যখন সবার হাতে স্মার্টফোনের বদলে সাধারণ ছোট্ট ফোন ছিলো, আর তারও অভাব ছিলো অনেকের। স্মার্টফোন না থাকলেও সেই সময়ের টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো আজও মনের গভীরে অমলিন হয়ে আছে। আমার স্মৃতিতে এমনই এক সময়ের কথা মনে পড়ে, যখন ১১ টাকায় ৫০০ এসএমএস কিনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম। তখন নিজের ফোন ছিল না, তবে বাসার ছোট ফোনটাতেই হতো আমার যোগাযোগের মাধ্যম।
সেই সময়টা ছিলো একেবারেই আলাদা। আমরা বাসার সেই ফোনটাতে ফ্লেক্সিলোড করে টাকা দিতাম, আর কেউ দেখার আগেই তাড়াতাড়ি এসএমএস প্যাক কিনে নিতাম। তখন তো এতো কিছু বুঝতাম না, কিন্তু বন্ধুদের সাথে কথা বলার মজাটা ছিলো অন্যরকম। ফোনে এসএমএস আসলেই মনে হতো, কোনো বন্ধু বুঝি মেসেজ দিয়েছে। একটা ছোট্ট মেসেজ পেয়ে যেরকম আনন্দ হতো, সেটার সাথে বর্তমানের নানা সোশ্যাল মিডিয়া নোটিফিকেশনগুলো তুলনাই করা যায় না।
রাতে মাকে মিথ্যা বলে বাসার ফোনটা কাছে রাখা যেনো এক বিশাল জয় অর্জনের মতো ছিলো। ছোটবেলায় ফোনটা কাছে পেয়ে যেরকম আনন্দ হতো, সেটা ব্যাখ্যা করা কঠিন। কোনো জায়গায় গেলে সেই ফোনটা বাসায় রেখে যাওয়াটাও ছিলো এক ধরণের আনন্দের উৎস। মনে হতো, আমি যেন এক বিশাল স্বাধীনতা পেয়েছি, যা আমাকে চুপিসারে ছোটখাটো এক রাজা বানিয়ে দিত।
কিন্তু সময় তো বদলাতে বাধ্য। সেই দিনগুলো অনেক আগেই পেছনে পড়ে গেছে। এখন আমাদের হাতে সবসময় স্মার্টফোন থাকে, যা দিনের ২৪ ঘণ্টা আমাদের সঙ্গ দেয়। ফোনে ইন্টারনেট থাকে, নেটওয়ার্ক থাকে, আর সাথে থাকে নানা রকম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম—ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, আর কত কী!
কিন্তু সেই ১১ টাকার মেসেজের অনুভূতি যেনো আর খুঁজে পাই না। সেই ৫০০ এসএমএসের ছোট্ট আনন্দ, যা তখন মনে হতো বিশাল কোনো সম্পদ, তা আজকের এই আধুনিক সময়ের প্রযুক্তির দুনিয়ায় হারিয়ে গেছে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, সেই সময়ের সরলতা আর বন্ধুত্ব আজ কোথায় হারিয়ে গেছে। এখনতো সবকিছু হাতের মুঠোয়, তবুও সেই আনন্দ আর অনুভূতিগুলো নেই, সেই মেসেজ করার মানুষগুলিও নেই।
আজও যখন স্মৃতির পর্দা খুলে বসি, তখন সেই ১১ টাকার এসএমএস কেনার স্মৃতিগুলো চোখে ভাসে। বন্ধুদের সাথে মেসেজের মাধ্যমে যোগাযোগ ছিলো, ফোনে মেসেজ এলেই মনে হতো, কোনো বন্ধু খবর পাঠিয়েছে। সেই ছোট্ট মিথ্যে কথা বলে ফোনটা কাছে রাখার স্মৃতিগুলো যেনো আজও মনে একটা অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি জাগায়।
সময় বদলেছে, বদলেছে আমাদের জীবনযাপন। কিন্তু সেই ছোট ছোট স্মৃতিগুলো আজও আমাদের মনে একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। হয়তো সেই সময়গুলো আর কখনও ফিরে আসবে না, কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো মনের গভীরে অমূল্য হয়ে রয়ে যাবে। এখনো ভাবি, কী সুন্দর একটা সময় ছিলো, যা আজকের এই প্রযুক্তির উন্নতির যুগেও আমাদের মন থেকে মুছে ফেলা সম্ভব হয়নি।
আমি রিদওয়ান হোসাইন। পরিবারের শেষ সন্তানটি আমি। পড়াশোনা করছি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি নিয়ে। ভ্রমণ করা, গান গাওয়া ও শোনা এবং ফটোগ্রাফি করা আমার খুবই পছন্দ। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট প্লাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে লেখা শুরু করি, তাই "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব, আমার ভালোবাসা। নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার মুক্ত প্লাটফর্ম। এখানে নিজের মনের ভেতর জমে থাকা হাজারো কথা তুলে ধরা যায়।