জীবনে প্রথম পরীক্ষায় গার্ড টিচার হওয়ার অনুভূতি।
হে লো আমার বাংলা ব্লগ বাসী। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি। আবার ও হাজির হলাম একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের পোস্ট। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আপনাদের সাথে জীবনে প্রথম কোনো পরীক্ষায় গার্ড টিচার হওয়ার অনুভূতি শেয়ার করবো।
শিক্ষকতা পেশাটা আমাকে ভালোই টানে। টিউশনির সুবাদে অনেক শিক্ষকতা করেছি। আবার এক স্কুলে ৬ মাস এর জন্য পড়ানোর দায়িত্ব ও পেয়েছিলাম। তবে উচ্চ শিক্ষার কোনো যায়গায় কখনো শিক্ষকতা করা হয়নি। এবার সেই সুযোগই এসে গিয়েছিলো আমার। একদিন আমার বন্ধু রাতুল আমাকে কল করে বললো যে ওদের ক্যাম্পাস এর সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার জন্য কিছু গার্ড টিচার লাগবে। আমি একটু অবাকই হলাম যে আমাকে কেনো ডাকে তাইলে। পরে মনে পরলো যে কিছু মাস আগে রাতুল একবার গার্ড টিচার হয়েছিলো। তখন বলেছিলাম এর পরের বার সুযোগ আসলে আমাকে জানাতে। যদিও ও এখন সেই পলিটেকনিক এর টিচারই হয়ে গেছে। আমি একটু চিন্তায় পরে গেলাম করবো কি করবোনা। একটু লজ্জা লাগতেছিলো। ডিপ্লোমা লেভেল এর স্টুডেন্ট দের গার্ড দিবো। এই ভেবে। মেয়েদের ব্যাপারে আমি একটু লাজুক বেশি। যখন শুনলাম মেয়েরা থাকতে পারে তখন তো আরো চিন্তায় পরে গেলাম।
তবে টাকার খুব সমসায় ছিলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম যে করবো। সাথে যাবে আমাদের আরেক বন্ধু নিলয়। শুনে ভালো লাগবে। সেখানে ডিউটি বলতে একজন পার্মানেন্ট টিচার এর সাথে গার্ড এ থাকতে হবে। কারণ পরীক্ষায় অনেক ধরনের কাজ থাকে। সেগুলা কমপ্লিট করার সময় অনেক শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যেই ঝামেলা করে। এর জন্যই আমাদের ডাকা।
আমাদের প্রথম যেদিন ডিউটি ছিলো তার আগের দিন রাতে ভালো মত অনেক কিছু রাতুল এর কাছ থেকে বুঝে নেই। তাও সব কিছু কি আর মুখে মুখে বুঝা যায়। যাক এখন সমস্যা পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার। তো আমি ৫ টা এলার্ম দিয়ে রাখলাম। নাইলে আমি যে অলস একটা এলার্ম দিলে কখনো ঠিক মতন উঠতে পারবোনা। ৫ টা এলার্ম দিলে হয়তো উঠতে পারবো ঠিক মতন। তারপর অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে আর ঘুম তো আসে না আমার। কাল কি হবে এসব ভেবেই খুব বিস্মিত ছিলাম আমি। ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় রাত ২ টা বেজে যায়।
পরের দিন সকালে এক এক করে সব গুলো এলার্ম বন্ধ করে শেষে সারে ৭ টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। উঠেই গোসল শেষ করে ফেললাম। ৮ টার দিকে বাস স্ট্যান্ড এ থাকবো সিদ্ধান্ত নিলাম। কারণ রাতুল বলে ছিলো সেখানে ৯ টা ৩০ এর আগে থাকতে। পরীক্ষা ১০ টা থেকে। তবে আগে কিছু দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আছে। আমি নিলয় কে ফোন দিয়ে বললাম যথা সময়ে উপস্থিত থাকতে। পরে বাস স্ট্যান্ড এ যেয়ে দেখি নিলয় সেখানেই আছে। তারপর দুজন মিলে চলে গেলাম মহাখালির রাজধানি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর কাছে। কারণ সেটাই ওদের ক্যাম্পাস।
আমরা যথা সময়ে পৌছে যাই সেখানে। তারপর রাতুল আমাদের রিসিভ করতে নিচে আসে। আমরা দেখলাম তখনো মাত্র ৮ টা ৫০ বাজে । তাই চা খেতে চলে গেলাম। চা খেতে খেতে রাতুল কিছু জিনিশ বললো। তারপর রাতুল এর রুম এ চলে গেলাম। মানে যেখানে রাতুল বসে। ও খাতা দেখালো। কিছু বুঝাই বললো। নিলয় আর আমি সব কিছু ভালো মতন খেয়াল করলাম। তারপর আমরা নিচে চলে গেলাম কার ডিউটি কোথায় এটা জানার জন্য। শুরুর দিনই আমার একা ডিউটি পরেছিলো। তবে সেখানের একজন ম্যাম আমাকে বললো চিন্তা করোনা তুমি শুধু গার্ড দিবা। বাকি কাজ আমি করে দিয়ে আসবো। আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম। তারপর ৬ তালা থেকে খাতা নিয়ে চলে গেলাম আমার যেখানে গার্ড দিতে হবে সেখানে। ছাত্র-ছাত্রীরা সালাম দিলো। নিজেকে খুব সম্মানিত মনে হলো। যদিও আগেও শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেছি তবে এই লেভেল টা আলাদা। আমার গার্ড দিতে হবে ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী দের। সেই রুম এ ছিলো ১৬ জন। তবে উপস্থিত তখনো সবাই হয়নি। আমি ঢোকার পর ও অনেকে এসেছে। সবাই কে খাতা দিলাম। একটু পর একজন টিচার এসে প্রশ্ন দিয়ে গেলো। সেগুলো আমি কলাম আকারে সাজাই রাখলাম।
ঘন্টা পরার সাথে সাথে প্রশ্ন দিয়ে দিলাম। তবে মেয়েদের দেখে একটু লজ্জা পেয়েছিলাম। ৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলো। যাক ভালো মতন পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। একটু পর এক ম্যাম এসে খাতার বাকি কাজ গুলো করেন। তখন আমি তার রুম এ যেয়ে গার্ড দেই। তারপর আবার আমার যে রুম এ ডিউটি ছিলো সেখানে চলে আসি। তারপর সুন্দর মতন পরীক্ষা শেষ করে সবার খাতা তুলে জমা দেই। খুব ভালো একটা অভিজ্ঞতা ছিলো। আমি গার্ড তেমন কড়া ভাবে দেইনি আবার তেমন সোজা ভাবেও দেইনি। আমি আমার মতন করেই দিয়েছিলাম। তবে শিক্ষার্থীরাও শান্ত ছিলো। তেমন চিল্লাচিল্লি করেনি। যাক তারপর আমি আর নিলয় গার্ড শেষে রাতুল থেকে বিদায় নেই। তারপর ম্যাম রা আমাদের আর কি কি তারিখে ডিউটি আছে সেটা বুঝিয়ে দেয় আর আমরা চলে আসি।
তো এই ছিলো আমার জীবনে প্রথম শিক্ষক হওয়ার অনুভূতি। কেমন লেগেছে জানাবেন।
এটা তো সবাই বলে কিন্তু মনে মনে কিন্তু অন্য কথা রয়েছে ভাইয়া 😅। পরীক্ষার সময় যখন কোন টিচার আমাদের গার্ড দিত তখন মনে মনে ভাবতাম আমি যদি কখনো গার্ড দেই তাহলে সবাইকে দেখাদেখি করার সুযোগ করে দেবো। হয়তো সেই সুযোগ কোনদিন আসবে কিনা জানিনা তবে আপনার এই অনুভূতি পড়ে সত্যি আমার খুবই ভালো লেগেছে। একেবারে ভিন্ন অনুভূতির সাক্ষী হয়েছেন। ইচ্ছা আছে কোনো একদিন এভাবে গার্ড দিব ইনশাআল্লাহ।
আরে না। সত্যি আমি একটু শরম পাই এই ব্যাপারে। কেমন যেনো একটা লাগে। ছোট বেলায় আমিও আপনার মতই ভাবতাম। কিন্তু যখন একটা দায়িত্ব আপনার কাছে আসবে তখন দেখবেন সেটা ভালো মত পালন করতে হয়।
ভাই আপনার প্রথম অনুভূতির কথা শুনে সত্যি খুব ভালো লাগলো। ভালো হয়েছে আপনি খুব বেশি কড়া করেও দেননি খুব বেশি সহজভাবেও নেননি। আসলে ভাইয়া এ বয়সের পোলাপান পরীক্ষার হলে চিল্লাচিল্লি করবে না ওরা টেকনিকে কাজ সারাবে😁। যাইহোক ভাই আপনাকে অভিনন্দন।
একটু তো ছাড় দিয়েছি। যদিও ওরা ভেবেছে স্যার তো দেখেনি। তবে আমি ঠিকি দেখেছি। কিছু বলিনি আরকি।
ভাই শিক্ষকতা পেশায় পরীক্ষার হলে গার্ড শিক্ষকের ভূমিকা আপনার আজকের যে অনুভূতি আপনি প্রকাশ করেছেন সত্যি আমার কাছে পড়ে খুব ভালো লাগলো। যদিও কিছুটা ভীতিকর অবস্থায় আপনি আজকের দিনটি অতিবাহিত করেছেন, আশা করছি সামনের দিনগুলো ঠিক হয়ে যাবে।
হুম ভাই। প্রথমে একটু অপ্রস্তুত লাগলেও পরে মানিয়ে নিয়েছি ধীরে ধীরে।
বাহ!! ভালোই তো ভাইয়া তাহলে আমাদের ৭ম সেমিস্টারদের শিক্ষার্থীদের হলে পেয়েছিলেন তাহলে। শিক্ষকতা পেশাটা আমাকেও খুব টানে। অন্যরকম একটা ভালো লাগাই কাজ করে। রাজধানী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর গার্ড দেয়ার অনুভূতি পড়ে ভালোই লাগলো আসলে। ছোট ছোট অভিজ্ঞতা থেকে একটা সময় বড় দায়িত্বগুলাও সামাল দেয়া যায়।
হ্যা ভাই। ৭ম,৫ম,১ম এই তিন সেমিস্টার এর শিক্ষার্থীদেরই পেয়েছিলাম।