এক মুহুর্তেই চোর সব নিয়ে গেলো || তিলে তিলে করা সম্পদ নিমিষেই শেষ।
হে লো আমার বাংলা ব্লগ বাসী। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি। আবার ও হাজির হলাম একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের পোস্ট। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভালো আছি। তবে মনটা খুবই খারাপ। কাল বাসায় চুরি হয়েছে। আমার অনেক গুলো জিনিশ চোর নিয়ে গেছে। ভেবেছিলাম কালই এই পোস্ট শেয়ার করবো কিন্তু খুব মন খারাপ ছিলো তাই ইচ্ছে হয়নি। ভাবলাম আজ শেয়ার করি। আপনাদের সাথে বলতে পারলে কষ্ট কিছু টা হলেও কমবে।
আমি জানিনা মানুষ একজন আরেকজন এর জিনিশ চুরি করে কি মজা পায়। সামান্য কয়টা টাকার লোভ সামলাতে পারেনা মানুষ। একজন মানুষ এর তিলে তিলে গড়ে তোলা সম্পদ নিমিষেই মানুষ নিয়ে যায়। অবশ্য বর্তমানে দেশের যা অবস্থা। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি যে মানুষ কে এসব কাজে ঠেলে দিচ্ছে। গতকাল তেমনই ঘটনার সাক্ষি হয়েছি আমি।
সেদিন সকালটা আমার কাছে অন্যদিন এর সকাল এর মতই লেগেছিলো। আগেরদিন রাতে পড়া বাকি রেখেই ঘুমাতে আসলাম। কারণ পরের দিন পরীক্ষা ছিলো। ঘুমানোর আগে দিয়ে বন্ধুদের সাথে কতই না মজা করলাম । ৫ টা এলার্ম দিয়ে রেখেছিলাম যেনো ঘুম থেকে উঠা মিস না হয়। তারপর শেষে ঘুমিয়ে গেলাম। সকাল বেলা এক একে সব এলার্ম বন্ধ করে ৮ টার দিকে ঘুম থেকে উঠলাম। যদিও এলার্ম দেওয়া ছিলো ৭ টার দিকে। উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিল এ পড়তে বসলাম। তখনো আমি জানিনা কি হয়ে গেছে।
আমি পড়া শুরু করে দিলাম। তারপর আম্মু আসলো। আমি দেখলাম কি যেনো খুজতেছে। আমি জিজ্ঞাস করলাম আর বললো ফোন খুজতেছে। পরে খুজে দেখলাম নাই। চার্জ এ দিয়েছিলো। ফোন দিলাম এক সিম এ । ফোন বন্ধ। আমি একটু চিন্তিত হলাম। অন্য সিম এ ফোন দিলাম সেটাও বন্ধ বলছে। সাথে সাথে ফোন দিলাম আব্বুর ফোনে। আব্বু বললো ফোন নেয়নি। তারপর আর ভাবার বাকি থাকলোনা যে কি হয়েছে । চোর নিয়ে গেছে। কিছুক্ষন আগেই আম্মু দোকানে গিয়েছিলো আমাদের। আমাদের বাসা থেকে দোকান খুব কাছেই ১ মিনিট এর পথ। এই টুকু সময় এর মধ্যেই চোর ফোন নিয়ে যায়। তখনো বুঝিনি আর কি কি নিয়েছে।
হঠাৎ আম্মু বললো তোর ছোট ফোনটা কই। সেটাও আমার টেবিলেই থাকতো দেখলাম সেটিও নাই। খুবই মন খারাপ হলো আমার। কারন ৩-৪ মাস আগেই ছোট ফোনটি কিনেছিলাম আমি। খুবই সখের ফোন ছিলো সেটি। আমি তখনো ভাবিনি আমার জন্য আর কি কি কষ্ট অপেক্ষা করছে। হঠাৎ ই মনে হলো যে আমার মানিব্যাগ ও আমার টেবিল এই থাকে। হন্যে হয়ে খুজতে থাকলাম। কিন্তু পেলাম না। ভাবলাম হয়তো প্যান্ট এর পকেট এই রয়েছে। খুজলাম কিন্তু পেলাম না। ভাবতে আর বাকি রইলোনা যে মানি ব্যাগ ও চোর নিয়েছে। খুব খারাপ লাগলো বিষয়টা। চুরির আগেরদিন টিউশন এর টাকা পেয়েছিলাম। দীর্ঘ এক মাস পড়ানোর পর টাকা হাতে পেলে কি ভালো লাগে এটা সেই জানে। আর সেই টাকাই ছিলো মানিব্যাগ এ। ভেবেছিলাম দুইটি শার্ট কিনবো। কারন অনেকদিন ধরেই টাকার জন্য শার্ট কিনতে পারছিলাম না। কিন্তু আমার শার্ট কেনার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। চোখ দিয়ে পানি চলে আসে আমার। কিন্তু বুঝতে দেইনি আম্মুকে।
সব কিছু ভুলে পড়ায় মন দিলাম। যদিও একটুও মন বসতেছিলোনা। কেমনেই বসবে। এতো কষ্টের টাকা। তারপর পড়াতে চলে গেলাম। পড়াই বাসায় ফিরলাম। অনিচ্ছা সত্যেও পড়তে বসলাম আবার। সময় হয়ে গেলো ভার্সিটি যাওয়ার। প্রস্তুতি নিলাম। বের হওয়ার আগে ব্যাগ খুজি। কিন্তু ব্যাগ আর পাইনা। ফোন দিলাম আব্বুকে যে আমার ব্যাগ কি দেখেছে কিনা। বললো দেখেনি। বুঝে ফেললাম ব্যাগটিও চোর নিয়ে গেছে। ব্যাগ এর মধ্যে আমার নতুন কেনা কিছু বই ছিলো। একটি মিনি ফ্যান ছিলো। একটি নতুন ছাতা ছিলো যেটি একদিন ও ব্যবহার করিনি। গত সপ্তাহেই কিনেছিলাম নিজের জন্য। আর ছিলো আমার প্রায় দেড় হাজার টাকা দামের একটি ইয়ারবার্ড। খুব কষ্ট লাগছিলো আমার বিশ্বাস করেন। এই জিনিশ গুলো আমি তিলে তিলে গড়েছি ভাই। ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে আমি এই জিনিশ গুলো কিনেছিলাম । যা কিনা চোর এক মুহুর্তেই নিয়ে যায়। খুব কান্না চলে আসে আমার। তাও কাওকে বুঝতে না দিয়ে চলে যাই ভার্সিটি।
পরীক্ষা খুব একটা ভালো হয়নি। ভালো মতন পড়তে পারিনি। চিন্তায় কি আর পড়া শেষ করা যায়। বেশি খারাপ লাগছিলো আম্মুর জন্য। আম্মুকে দেওয়া ফোন টাও আমি দিয়েছিলাম। গত বছর মার্চ মাসের দিকে। অনেক দিন টাকা জমিয়ে আম্মুর জন্য সেই স্মার্ট ফোনটি কিনেছিলাম। আম্মু কেদে ফেলছিলো। কারণ তার ছেলের দেওয়া গিফট ছিলো। আম্মুর চোখের পানি দেখে আমার আরো বেশি খারাপ লেগেছিলো। পরীক্ষা শেষে রাতে বাসায় ফিরে শুনি আমার পাওয়ার ব্যাংক ও চুরি হয়েছে। যেটি টেবিল এর উপর ই ছিলো। আর কি বলবো। আর কি কি নিয়েছে জানিনা। হয়তো দুই এক দিন গেলে ভালো মতন বুঝতে পারবো। আমি জানিনা চোর এই জিনিশ গুলো বিক্রি করে কত টাকা পাবে। কিন্তু দেখেন আমার এই কষ্ট। এই ক্ষতি পুরন হতে হয়তো আমার অনেকদিন সময় লাগবে। কিন্তু একদিন না একদিন ঠিকি কিন্তু পুষিয়ে উঠবো।
আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেনো আর কারো সাথে এমন না হয়। আল্লাহ যেনো সেই চোর কে হেদায়াত দান করে। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো দ্রুতোই আমি এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারি। ভালো থাকবেন সবাই। আর একটু সাবধানে থাকবেন।
ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়তে পড়তে চোখে পানি চলে আসলো। সত্যি ভাইয়া আমাদের তিলে তিলে গড়া প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যখন চুরি হয় তখন সত্যি অনেক খারাপ লাগে। আমি যখন ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য প্রথম ম্যাচে উঠেছিলাম তার কয়েকদিন যেতে না যেতেই ম্যাচে চুরি হয়েছিল। আমার প্রিয় জামাগুলো হারিয়ে আমার খুবই কষ্ট লেগেছিল। তবে যাই হোক ভাইয়া নিজেকে শান্ত রাখুন। আল্লাহ যদি তৌফিক দান করেন আবারও সেই জিনিসগুলো কিনতে পারবেন।
হুম আপু। অনেক কষ্ট করে ধিরে ধিরে জিনিশ গুলো গড়েছিলাম। সব এক নিমিষেই নিয়ে গেলো।
আমি কখনো এমন চুরির সম্মুখীন হয়নি । তবে আমাদের মেসে একবার চুরি হয়েছিল । রাত তখন ১১টার মত বাজে আমরা দুই রুমের বাসীন্দা সব এক রুমে আড্ডা দিচ্ছি । এরই মাঝে আমাদের মাঝে থেকে একজন তার রুমে যেয়ে দেখে পিছনের দরজা খোলা কাপড় চোপড় এলোমেলো । পরে দেখা গেল একটি ফোন সহ দুই জনের মানিব্যাগ গায়েব । বেচারা দুইজন খুব কষ্ট পেয়েছিল এই ঘটনার পর । সব মিলিয়ে হয়তো কয়েক হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছিল কিন্তু এই ঘটনা তো বাড়িতে বলার মত না মনের কষ্ট মনে চেপে চুপচাপ থাকতে হলো ।
একটা কথা আছে ভাইয়া চোরে না শোনে ধর্মের বাণী । ওদের বিবেক যদি এগুলো নিয়ে ভাবতই তবে কি আর কারো জিনিস ছুয়ে দেখতো ?
তারপরেও বলবো সবুর করেন যা ক্ষতি হয়েছে মনে পড়লে হয়তো খারাপ লাগবে । কিন্তু সবুর করলে আল্লাহ হয়তো খুব তাড়াতাড়ি পুরণ করে দেবে ।
হুম ভাইয়া। দোয়া করবেন। আল্লাহ যেনো সব কিছু তাড়াতাড়ি পুরণ করে দেন।
আপনার আজকের পোস্টটি পড়ে ভাই খুবই কষ্ট পেলাম। আসলে একটু একটু করে জমানো নিজের জিনিসগুলো এভাবে হারিয়ে গেলে কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক, তবে আমাদের আরো সাবধান হওয়া উচিত। যাই হোক ভাই দোয়া করি আপনি আপনার ক্ষতি কাটিয়ে আবার পুনরায় ফিরে আসবেন আপনার আগের জায়গায় সে পর্যন্ত শুভকামনা অবিরাম আপনার জন্য।
হ্যা ভাই সেটাই। একটি জিনিশ হারালেই আমাদের কত কষ্ট লাগে। অথচ আমার কত গুলো জিনিশ নিয়ে গেলো।
যথার্থই বলেছেন বর্তমান দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ চুরি করছে ।তবে অনেকেই স্বভাবের কারণেও চুরি করে থাকে। তবে মানুষের তিল তিল করা সম্পদের সাথে সাথে মানুষের স্বপ্নগুলো কেউ তারা ভেঙে দেয় একটি চুরির মাধ্যমে ।ধন্যবাদ আপনাকে।
তা ঠিক। তবে এখন চুরির পরিমান টা বেড়েছে এই কারনেই।