আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২০ || আমার জীবনে প্রথম প্রেমের অনুভূতি
হে লো আমার বাংলা ব্লগ বাসী। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি। আবার ও হাজির হলাম একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
আমার বাংলা ব্লগ মানেই যেনো একটির পর একটি প্রতিযোগিতা। আবারো একটি নতুন প্রতিযোগিতা এসে গেলো। প্রতিযোগিতা হবে আর আমি পার্টিসিপেট করবোনা তা কি হয় নাকি। এবার এর প্রতিযোগিতার বিষয় হচ্ছে প্রেম। ভাবলাম আপনাদের সাথে শেয়ার করেই ফেলি আমার জীবনের লুকানো সেই প্রেম এর কথা। আমি মনে করতে চাইনা সে বিষয় গুলো। তবুও আপনাদের সাথে ভাগা ভাগি করে নিতে পারবো এটাই তো অনেক। স্মৃতি চারণ করে না হয় একটু কষ্টই পেলাম। তো আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করা যাক।
সবার জীবনেই কম বেশি প্রেম ঘটিত অনুভূতি থাকে। তেমনি আমার জীবনেও রয়েছে। যদিও শুরুর দিকে সেটা সুখকর হলেও , শেষের দিকে তা যেয়ে কষ্টের অনুভূতি হয়ে দাঁড়ায়। হটাৎ ই অচেনা কোনো এক মেয়েকে অনেক ভালোবেসে ফেলি। সে নিয়েই আজকে আমার পোস্ট।
স ময় টা ছিলো ২০১৫ সাল। তখন আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি। দিন গুলো ভালোই যাচ্ছিলো। স্কুল , কোচিং , বন্ধু বান্ধবের সাথে আড্ডা। সব কিছু মিলিয়ে দারুন যাচ্ছিলো আমার সে দিন গুলো। আমাদের এক বন্ধু নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছিলো কিছুদিন কোচিং করার জন্য। কারণ সবারই সামনে এস.এস.সি পরীক্ষা।
হঠাৎ একদিন শুনি আমাদের বন্ধু ফারুক চলে যাবে তার গ্রামের বাড়ি। শুনে খুবই মন খারাপ হলো আমাদের সবার। একটা সময় ওকে বিদায় দিয়ে দেয় আমরা। হঠাৎ একদিন ফারুক আমাকে ও আমাদের কোচিং এর অনেক ছাত্র কে সাথে নিয়ে একটি হোয়াটস এপ গ্ৰুপ খুললো। শুধু যে আমরাই ছিলাম তা নয়। বাইরের ও অনেক মানুষ ছিলো। গ্ৰুপে মাঝে মধ্যে হাই হেলো হতো আমাদের সবার কম বেশি।
আমার আবার একটা স্বভাব ছিলো। আমি সবাই নাম্বার আর নাম মাঝে মধ্যে দেখতাম। হঠাৎ একদিন চেক করতে যেয়ে দেখি একটা নাম্বার এর পাশে নীল প্রজাপতি লেখা ছিল। তো আমি সেই নাম্বার টা আমার ফোন সেভ করলাম নীল লিখে। আমি তখন নিশ্চিত ছিলাম না এটা ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে। তাই আমি বাজিয়ে দেখার জন্য মেসেজ দিলাম -
আমি: হেলো ভাইয়া।
নীল: হেলো।
আমি ভাইয়া লিখে মেসেজ দিছিলাম শিউর হতে যে এটা মেয়ে নাকি ছেলে। কিন্তু রিপ্লাই পেয়ে হতাশ হলাম। কারণ মেয়ে হলে নিশ্চই বলতো আমি ভাই না বা অন্য কিছু। সোজা রিপ্লাই দেওয়াতে ভাবলাম ছেলেই হবে। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম-
আমি: কেমন আছেন।
নীল: এইতো ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ?
আমি: আমিও ভালো আছি।
নীল: আপনার নাম কি?
আমি: আমার নাম রাজু আহমেদ। আপনার?
নীল: সাজমা আনিশা।
আমার মনে তো নাম শুনে লাডডু ফুটলো। যাক কথা বলার মতন মেয়ে তো পাওয়া গেলো। শুরু হলো আমাদের নিয়মিত কথা বার্তা। আমি ওর সম্পর্কে জানতে চাইতাম। ও আমার সম্পর্কে জানতে চাইতো।
চলতে থাকলো আমাদের কথা বার্তা। ওর প্রতি একটা ভালো লাগা শুরু হলো আমার। কেন জানিনা খুব কেয়ার নিতাম আমি। ওর সাথে কথা না হলে ভালোই লাগতোনা আমার। আমাদের শুধু হোয়াটস এপ এই কথা হতো। কারণ আর কোথাও কথা বলার জন্য বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। এভাবে অনেকদিন কথা বলার পর ওকে দেখতে চাইলাম। এটা অনেক সাহস করে বলতে হয়েছিল। কারণ ও খুব রাগী ছিল। যদি ছবি চাওয়াতে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয় এটা ভেবে আর চাইতে পারছিলাম না। একটা ছবি পাঠালো। দেখে খুব ভালো লেগেছিলো। গোলুমলু চেহারা ছিল তার। ওকে আমি বলতাম আমি একটা মেয়ে কে খুব পছন্দ করি। কিন্তু কে সে এটা বলতাম না। ওকেই যে ভালোবেসে ফেলেছি অনেক এটা কিভাবে বলি। আগেই বলেছি ও খুবই রাগী ছিল তাই ভয় পেতাম বন্ধুত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার। এভাবেই চলছিল আমাদের দিন গুলো।
ধীরে ধীরে রোজার ঈদ চোলে আসলো। একটা সময় আমি গ্রামে চলে গেলাম। সেখানেও টুক টাক কথা হতো আমাদের। আমিও ওর প্রতি অনেক দুর্বল হয়ে পরি। ও তো বার বার বলতো আমার পছন্দের মানুষ কে সব বলে দেওয়ার। আমি বলতাম আমার খুব ভয় করে। ওকে হারাতে চাইনা কোনো ভাবে। ও বুঝতো যে আমি ওকেই পছন্দ করি। তো সেদিন ছিল ২০১৫ সালের জুলাই মাসের ১৭ তারিখ। আমাদের চাঁদ রাত ছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সেদিন বলেই ফেলবো। যা হবার হবে। আর পারছিলামনা থাকতে। আমি ওকে বলেই ফেললাম অনেক বড় একটি মেসেজ দিয়ে। সকাল বেলায় দিয়েছিলাম মেসেজটি। ও তখন লাইনে ছিলো না। ১ ঘণ্টা পরে আমি যখন দেখলাম যে মেসেজ দেখেছে কিন্তু কিছুই বলছেনা। একটু ঘাবড়ে গেলাম। একটু পর ও বললো এ ব্যাপারে পরে কথা বলবে বিকালের দিকে। আমি বললাম আচ্ছা। বিকাল তো আর আসেনা।
বিকাল এর শেষের দিকে তার মেসেজ আসলো। বলো রাজু। আমি বললাম আমার উপরের মেসেজ দেখেছো? বললো হ্যা দেখেছে। পরে বললাম কি সিদ্ধান্ত নিলে। পরে প্রথম দিকে ও একটু বুঝলো যে এখন সম্ভব না আমাদের পরিবার মানবেনা। আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তারপর। আমি তখন ওকে বুঝলাম যে তুমি আমার পাশে থাকলে সব কিছুই হবে। কিন্তু ও একটু পেচাইতে ছিল। তারপর সেই জীবনের সেরা এক অনুভূতি। হঠাৎ ও পাশ থেকে মেসেজ আসলো। I love you Razu . আমি তো খুশিতে আত্মহারা। সাথে সাথেই Love you to Anisha বলে উত্তর পাঠালাম। তারপর অনেক কথা। ও বললো ও বুঝতো আমি যে মনে মনে ওকেই পছন্দ করতাম। কিন্তু ও নিজে থেকে কিছু বলতোনা। আমি কিন্তু তখন পর্যন্ত ওর ভয়েজ শুনিনি। সেদিন ও চাইলাম না। ভাবলাম আরো কিছু দিন যাক। একটু পর ও বিদায় নিলো মেহেদী লাগাবে হাতে এই বলে।
আমি সেদিন খুবই খুশিতে ছিলাম। এত্তো বেশি খুশি হয়েছিলাম। যে বার বার ওর লাভ ইউ বলা মেসেজ টা খুজে পড়তে ছিলাম। ২/১ মিনিট পর পরই সেই মেসেজ পড়ছিলাম আমি। ঢাকায় ফেরার ১ মাস পর প্রথম ওর সাথে আমি ফোনে কথা বলি। আর আমাদের রিলেশন এর ১ বছর পর ওর সাথে ৫ মিনিট এর জন্য দেখা হয়েছিলো আমাদের এখানে এয়ার পোর্ট এ। সে ও এক বিশাল ঘটনা। ওর আব্বু বাহিরে থাকতো। তো দেশে আসবে। ওনেক অনুরোধ করে রাজি করালাম ও আসবে। আমাদের দেখা হবে। কিন্তু সময় টা নিয়ে গন্ডগোল লেগে গেলো। ওর আসার সময় ছিল ভোর ৫ টায়। যদি ঘুমিয়ে যায় এই ভেবে সারা রাত জেগে ছিলাম। রাট ৪ টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে যাই আমি নামাজ এর কথা বলে। ওর জন্য টাইটানিক এর লকেট এর আদলে একটা লকেট কিনি। ৫ মিনিট এর জন্য দেখা হয় সেদিন। নিজের হাতে পরিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন। প্রথম দেখা তাও মাত্র ৫ মিনিট এর জন্য। খুবই কষ্ট লাগছিলো।
এভাবেই চলছিলো আমাদের প্রেম। ৪ বছর কেটে যায় কিভাবে জানিও না। কিন্তু কোথায় আছেনা বেশি সুখ সহ্য হয়না। আমার ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছিল। ২০১৯ সালে মে মাস এর ৭ তারিখ রাতে পাগলিটার সাথে আমার শেষ কথা হয় ফোনে। প্রায় ৫১ মিনিট কথা বলেছিলাম। পরের দিন সকালেও মেসেজ এ একটু কথা হয়। তারপর হঠাৎ করে পাগলিটা হারিয়ে যায় আমার জীবন থেকে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ওর অপেক্ষায়। খোঁজ পেলাম না কি হলো। কেনই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। কি দোষ করে ছিলাম কিছুই জানিনা। আজ আর কিছু লিখছিনা। পারবোনা লিখতে। কান্না আসছে খুব। যতই মনে পরে ততই কান্না আসে। জানি হয়তো আর ফিরে আসবেনা। তবুও তার অপেক্ষায় আমি। ভালো থাকবেন সবাই।
সত্যিই ভালোবাসায় সম্পর্কের শুরুটা খুব ভালোভাবেই কাটে,কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক হয়তবা কিছুটা খারাপের দিকে চলে যায়। যদিও সবার ক্ষেত্রে তা এক না।ভাইয়া সত্যি বলতে প্রথমদিকে পড়ে খুব ভালো লেগেছিল,কিন্তু শেষে এমন পরিণতি হবে ভাবতেই কষ্ট লাগছে।আপুটা যেন ভালো থাকে,আর আপনার এই অপেক্ষাকে যেন আর বেশি দীর্ঘ না করে সেই দোয়া করি।
কি জানি। আর কখনো সে ব্যাক আসবে কিনা।
ভাইরে শেষে যদি এইরকম বিচ্ছেদই থাকবে তাহলে সূচনা টা এমন মধুর হওয়ার দরকার কী😭। সত্যি ভাই শেষটা দেখে আমি নিজেও ইমোশনাল হয়ে গেলাম। কীভাবে আপনাকে ছেড়ে যেতে পারল বুঝলাম না। যাইহোক ভালো ছিল ভাই আপনার প্রথম প্রেমের অনূভুতি টা।
সে ই জানে ভাই। আমি আজো সেই প্রশ্নের উত্তর খুজে বেড়াচ্ছি৷
যেখানে হ্যাপি ইন্ডিং হওয়ার কথা সেখানে দুঃখ দিয়ে ভরিয়ে দিলেন আপনি। যাই হোক আশা করি গোলাকার পৃথিবীতে কোন একদিন আবার হয়তো বিধাতা আপনার সামনে তাকে দাঁড় করিয়ে দিবে, তখন মনের চাহিদা গুলো এবং ভিতরে যে প্রশ্ন ছিল সেটা জেনে নিবেন ধন্যবাদ।
হয়তোবা। একটি বার তাকে সামনে পেলে জিজ্ঞেস করতাম সব কিছু।
খুবই ভালো লেগেছে আপনার প্রথম প্রেমের অনুভূতি গুলো পড়তে পেরে। আমি মনে করি এই কনটেস্টে যারা অংশগ্রহণ করেছে তাদের মাধ্যমে নতুন নতুন কিছু শিখতে পারবো এবং জানতে পারবো।
ধন্যবাদ ভাই। আমার প্রেমের অনুভুতি পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।
ফিনিশিংটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না ভাই । এটা তো ফিনিশিংটা আরো সুন্দর হলেও পারতো । কিন্তু বাস্তবতা হয়ে গেল তার বিপরীত । কিছু না বলেই আপনার জীবন থেকে উধাও হয়ে গেল আনিষা নামের মেয়েটি । তবে আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাই আবার কষ্টও হচ্ছে 😢
জীবন টা খুবই নাটকীয় ভাই। মেয়েটি কিন্তু আপনার ফেনি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ পড়তো। কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট এ।
এটা কেমন হল? আপনার কি কোন উপায় ছিল না তার সাথে যোগাযোগ করার। সে কেনই বা হারিয়ে গেলো? আমার নিজেরই তো খুব খারাপ লাগছে শুনে। এভাবে কেউ চার বছরের সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে। আপনার দিক থেকে যোগাযোগ করেছিলেন? অনেক প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়।
নিশ্চয়ই করেছিলেন। কিন্তু আরেকটু লিখলে ভাল হত ভাইয়া। একটা অপূর্ণতা রয়ে গেলো। যাই হোক ভালো থাকবেন।
লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ ছিলো আপু। আমার দিক থেকে যত ভাবে সম্ভব যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যার সাথে যোগাযোগ করবো সে যদি না চায় তাহলে কি আদো সম্ভব? আসলে ৪ বছরে সব কথা যদি এক পোস্ট এ লেখি তাহলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে তাই অনেক কিছু স্কিপ করতে হয়েছে। হয়তো কোনো একদিন পুরো ঘটনা শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
খুবই বেদনাদায়ক ছিল, আমরা ও আর জানতে চাইনি লাস্ট পর্যন্ত কি হয়েছিল, আজ জেনে গেলাম সেদিনের সেই অপূর্ণ ঘটনাটি। ভালোবাসা হয়তো সবার কপালে সয়না 🥺
Long distance রিলেশনশিপ গুলো কেমন যেন খামখেয়ালি হয় শেষের দিকে এসে। আপনার মত আমি নিজেও হারিয়ে ফেলেছি আমার সেই ভালবাসাকে। জানিনা শেষে কি হয়েছিল যার জন্য চলে গেল। যদি খুব বাজে কিছু না হয়ে থাকে তাহলে চাইবো ভালোবাসা যেন আবার ফিরে আসে আপনার জীবনে।