🌼আমার বাংলা ব্লগ 🌹//মাতৃত্বের স্বাদ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি 🚼 || @rayhan111 [১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য]

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

আসসালামু-আলাইকুম/আদাব।🤝

হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।

আমরা সকলেই মেয়েদের বেশি সম্মান করি, কারণ মেয়েরা মায়ের জাত। আর মায়ের জাতিকে সম্মান করা প্রতিটা মানুষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। একটি মেয়ের সর্বোচ্চ ইচ্ছা থাকে মাতৃত্বের স্বাদ ভোগ করা।

প্রতিটা মেয়ের সর্বোচ্চ ইচ্ছা থাকে মাতৃত্বের স্বাদ উপভোগ করার। মাতৃত্বের স্বাদ যে কতটা মধুর। এটি একটি মেয়ে বুঝতে পারে যখন সে প্রথম এই স্বাদ গ্রহন করে। এটি স্বর্গীয় অনুভূতি স্বর্গীয় স্বাদ হল মাতৃত্বের স্বাদ।

মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করতে একটি মেয়ের যে কতটা কষ্ট হয়। কতটা কষ্টের মাধ্যমে এই স্বাদ উপভোগ করে। যদি আমরা ছেলেরা বুঝতাম তাহলে মা জাতিকে কখনোই কষ্ট দিতাম না।

তাই আমি আজকে আমার গল্পে মাতৃত্বের প্রথম স্বাদ উপভোগ নিয়ে, একটি গল্প লিখেছি সেটা আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি।

doctor-g0e1da960e_1280.png

Source

মেয়েটির নাম সাদিয়া, বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামেই। যে ছেলেটির সাথে বিয়ে হয়েছে তার নাম রফিক। সে একজন সরকারি চাকরিজীবী। বিয়ের দুই বছর পরে তাদের গর্ভে একটি সন্তান এসেছে। সন্তানকে নিয়ে তারা কতই না পরিকল্পনা করেছে।

সাদিয়ার গর্ভে যে বাচ্চাটি আছে তার বয়স এখন নয় মাস দশ দিন। তারা আজকে ডাক্তার দেখাতে এসেছে। ডাক্তার বলেছে সাদিয়া পেটে একটি সুন্দর মেয়ে বাবু আছে। সাদিয়া শুনে খুবই খুশি হয়েছে। তাদের একটা ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে হবে, বিশেষ করে সাদিয়ার স্বামীর রফিক বেশি খুশি, সে ভাবছে তার মেয়ে সন্তান নাকি তার মায়ের মত হবে। তার মায়ের নামে নাম রাখবে। কারণ রফিকের মা অনেক আগে মারা গেছে। সে ভাবছে তার মেয়েটি তার মা হয়ে ফিরে আসছে। তাই সে অনেক খুশি।

হাসপাতাল থেকে তারা এই সংবাদটি শুনে হাসি মুখে বাড়ির দিকে রওনা দিলো, কিন্তু হঠাৎ রাস্তার মধ্যে একটি গাড়ি এক্সিডেন্টে সাদিয়ার পেটে আঘাত লাগলো। যার কারণে সাদিয়ার রক্ত ভাঙতে শুরু করল তখনই অ্যাম্বুলেন্সে করে সাদিয়াকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো।

surgery-g2ff121028_1920.jpg

Source

ডাক্তার বলল সাদিয়ার, যে পরিমান রক্ত পরচ্ছে এ রকম রক্ত ভাঙ্গে থাকলে সাদিয়া রক্তশূন্যতায় মারা যাবে। তাই আমাদের জরুরিভাবে এখনই অপারেশন করতে হবে।

ডাক্তার বলল একটা দুঃসংবাদ আছে, যে পরিমান রক্ত ভাঙছে আমরা সাদিয়া এবং সাদিয়ার সন্তান দুজনকেই সুস্থ ভাবে বাঁচাতে পারবো না। আপনারা সিদ্ধান্ত নেন যেকোন একটাকে বাঁচাতে হবে।

ডাক্তারের কথায় শুনে রফিক অর্থাৎ সাদিয়ার স্বামী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল এবং পরে বলল আপনারা আমার সাদিয়াকে বাঁচিয়ে দিন। আমার সাদিয়াকেই বাঁচান।

ডাক্তার বলল এত বড় একটি কাজ সাদিয়াকে জানাতে হবে। যদি সাদিয়াকে জানো না হয়। তবে সাদিয়া সুস্থ হওয়ার পরে তার বেবিকে না পেয়ে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে। এতে আরও তার ক্ষতি হবে। তাই সাদিয়াকে জানানো হলো।

সাদিয়া এই কথা শুনতে পেরে সে কান্নায় ভেঙে পড়ল। সে বলল আমার জীবন চাই না।আমি আমার বাচ্চার জীবন চাই। আমি আমার বাচ্চার জীবন চাই, এই ভাবে সে বলতে লাগল আর কাঁদতে লাগল। সে কোন ভাবেই রাজী না, সে তার সন্তানকে সেই বাঁচতে চায় না।

তারপরে অপারেশনের জন্য সাদিয়াকে অপারেশন রুমে নেওয়া হল এবং ডাক্তাররা অপারেশন শুরু করে দিল।

nurse-gc72df6407_1920.jpg

Source

প্রায় দুই ঘণ্টা অপারেশন চলতে লাগল। তার পরে ডাক্তার বের হল। সাদিয়ার বর রফিক মেঝেতে বসে ছিল। সে পাগলের মত হয়ে গেছে এবং সাদিয়ার মা বাবা এসেছে তারাও কান্নায় ভেঙে পড়ছে। তারা হয়তো জানে যে এখন তাদের মেয়ের এই পৃথিবী থেকে চলে যাবে। না হলে তাদের মেয়ের বাচ্চাটি পৃথিবী থেকে চলে যাবে। এই ভেবে তারা কান্না করতেছিল।

তারপরে ডাক্তার অপারেশন থেকে বের হল। রফিক ডাক্তারকে বারবার জিজ্ঞেস করতেছিল আমার সাদিয়া কেমন আছে। রফি তখন তার বাচ্চার কথা বলতে ছিলাম না। শুধু বলতে ছিল আমার সাদিয়া কেমন আছে। ডাক্তার কিছুক্ষণ নীরব থাকলো তার পরে একটি হাসি দিল। হাসি দিয়ে বলল আপনাদের জন্য অনেক বড় সুখবর আছে।আপনার সাদিয়া এবং আপনার বাচ্চা দুজনই সুস্থ আছে।

রফিক এই কথাটি শুনে দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে হসপিটালের মেঝেতে শুয়ে পড়ল এবং সৃষ্টিকর্তার ডাকতে লাগলো।

ডাক্তার বলল আমরা সাদিয়াকে বাঁচাতে পারতাম না। আমাদের হসপিটালে রক্তের পরিমাণ কম ছিল। আর সাদিয়ার দেহে রক্ত শূন্যতা অনেক ছিল।সাদিয়াকে বাঁচানোর জন্য সবচাইতে বড় অবদান রেখেছে রাস্তার পথিককেরা, যখন সাদিয়া এক্সিডেন্ট করেছে। আপনি এই হসপিটালে নিয়ে এসেছেন তারাও হসপিটাল এসেছে এবং তাদের মধ্যে থেকে সাদিয়ার রক্তের সাথে মিলে গেছে তারা প্রত্যেকেই রক্ত দিয়ে সাদিয়ার জীবন রক্ষা করেছে।

রফিক তাদের প্রত্যেকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। আসলে আমাদের সমাজে খারাপ মানুষের পাশাপাশি ভালো মানুষ অনেক রয়েছে।

bird-g52fe19b86_1920.jpg

Source

তারপরে রফিক সাদিয়ার কাছে গেল এবং পাশে বসল। তাদের ফুটফুটে বাচ্চাটি দেখে রফিক খুবই খুশি হল। রফিক বাচ্চাটির নাম রাখল তার মায়ের নাম অনুসারে তার মায়ের নাম ছিল ময়না।,সাদিয়া বাচ্চা নাম ও ময়না রাখা হলো।

রফিক বলতে লাগল এটা আমার মেয়ে না এটা আমার মা। আজ থেকে আমার মা আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে। এই বলে রফিক ময়নাকে কলে নিলো। রফিকের খুশি থেকে সাদিয়া হাসতে লাগল সাদিয়ার খুবই ভালো লাগছে। সাদিয়ার অনুভূতিটা অন্য রকম। সে প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ উপভোগ করেছে। মাতৃত্বের স্বাদ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাদিয়া। সাদিয়া পরম শান্তিতে রফিক এবং ময়নাকে নিয়ে বসবাস করতে লাগলো।

new.gif

আমার পরিচয়

IMG_20211018_182622.jpg

আমার নাম মোঃ রায়হান রেজা।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি পেশায় একজন সহকারী মেডিকেল অফিসার ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে🌹💖🌹।

👉 বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Sort:  

মায়ের সম্পর্কে আমরা যত কিছুই বলি না কেন তা খুবই কম হয়ে যাবে। মা হচ্ছেন বিধাতার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। প্রতিটি মা তাদের সন্তানকে নিঃস্বার্থ ভাবে আগলে রাখেন। মায়ের তুলনা শুধুই মা ই হয় অন্য কারো সাথে তুলনা করা চলে না। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা এই কামনা করি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন মমতাময়ী একটি পোষ্ট করার জন্য। উজ্জ্বল হোক আপনার আগামী এই কামনা করি।

 3 years ago 

পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করেছেন, সেজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনার মত মেডিকেলের পেশার লোকজনরা এ সকল বিষয়গুলো খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করার পর মায়ের অনুভূতি। সন্তানকে ঘিরে মায়ের সকল ভালোবাসা এবং পরিকল্পনা সবকিছুই থাকে। খুবই সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আপনার মেয়েদের প্রতি এই সম্মান দেখে খুবই ভালো লাগলো।প্রত্যেক মানুষের এই ধ্যান ধারণা থাকা উচিত।তাছাড়া আপনার লেখা গল্পটি বাস্তবধর্মী।খুবই ভালো লাগলো যে পরিবারের সবাই ভালো আছেন।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

ডাক্তারের কথায় শুনে রফিক অর্থাৎ সাদিয়ার স্বামী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল এবং পরে বলল আপনারা আমার সাদিয়াকে বাঁচিয়ে দিন। আমার সাদিয়াকেই বাঁচান।

আপনার এত সুন্দর একটি পোস্টের বিশেষ কোনো উত্তর দেওয়ার মত আমার সাধ্য নাই।তবে এটুকুই বলতে পারি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অগাদ ভালোবাসা জন্মায় যদি দুজনার মন এক স্থানে অবস্থান করে। আর অন্যদিকে মায়ের ভালোবাসা কোন সন্তান কখনোই শোধ দিতে পারেনা।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59926.69
ETH 2622.88
USDT 1.00
SBD 2.38