খেজুরের রস খেতে যাওয়ার স্মৃতিময় গল্প //পর্ব-১

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম/🌺

হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।


বন্ধুদের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে আমাদের সবার জীবনে। আর এই স্মৃতিগুলো সত্যিই অনেক আনন্দময়। তবে বন্ধুদের সাথে আগের মত আর ঘোরাফেরা হয় না। আগে বন্ধুদের সাথে নিয়ে অনেক জায়গায় ভ্রমনে যেতাম। আর সেই মুহূর্তগুলো অনেক আনন্দের ছিলো। কারণ বন্ধুদের সাথে ভ্রমণ করার মুহূর্ত গুলো অনেক ভালো লাগে।প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের মাঝে আমার বন্ধুদের সাথে ভ্রমণ করার একটি গল্প নিয়ে এসেছি। আর এই গল্পটি হল শীতকালের গল্প। শীতকালে বন্ধুদের সাথে মোটরসাইকেল নিয়ে খেজুরের রস খেতে যাওয়ার স্মৃতির পাতায় একটি গল্প জমা হয়ে রয়েছে। সেই গল্পটির কথা মনে করতে পেরে খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে শীতকাল আসলেই বন্ধুদের সাথে ভ্রমণের সেই গল্পটি যেন বারবার মনে পরে।তাই আজকে আপনাদের মাঝে বন্ধুদের সাথে শীতকালে খেজুরের রস খেতে যাওয়ার স্মৃতিময় গল্পটি শেয়ার করতে এসেছি। আশা করছি এই গল্পটি পড়ে আপনাদের ভালো লাগবে।


winter-3197686_1280.jpg

source

সময়টা ছিল ২০২১ সাল। ২০২১ সালে শীতকালে আমাদের গ্রাম থেকে অনেকেই উল্লাপাড়া এই খেজুর রস খেতে গিয়েছিল। তাদের কাছে রস খাবার এই অনুভূতিগুলো জানতে পেরে খুবই ভালো লাগতেছিল। আসলে শীতকালে এই খেজুরের রস খাওয়ার চারিদিকে যেন ধুম পড়ে যায়। বিশেষ করে খিচুড়ি গাছ থেকে পেরে এই রস খাওয়ার অনুভূতি সত্যি অসাধারণ। তাই বড়দের কাছে যখন আমরা এই রস খাওয়ার অনুভূতিগুলো জানতে পারলাম। তখন আমরা বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম যে আমরা এই খেজুর রস খেতে উল্লাপাড়া যাব। তাই আমরা ছয় বন্ধু মিলে তিনটি মোটরসাইকেল করে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য শুক্রবারে ঠিক করলাম।


উল্লাপাড়া খেজুরের রস সকলেই এক নামে চেনে। যার কারণে সবাই এই উল্লাপাড়া খেজুরের রস খেতে আসে। যেহেতু খেজুর রস খেতে ভোরবেলা রওনা দিতে হবে। তাই আমরা ছয় বন্ধু মিলে মানিকদের বাড়িতে থাকলাম। এই মানিকদের বাড়িতে আমরা সবাই বন্ধু ছিলাম এবং ভোর পাঁচটার দিকে আমরা রওনা দিব। যার কারণে আমাদের ঘুম থেকে চারটা বা সাড়ে চারটায় উঠতে হবে এবং আমাদের গোছাতে হবে। কারণ প্রচন্ড কুয়াশার মধ্যে যেতে হবে। শীতের অনেক কাপড় পরে যেতে। নাহলে মোটরসাইকেল করে যাওয়াটা খুব কষ্টকর,এই কুয়াশার মধ্যে। তারপর আমরা ছয় বন্ধু মিলে রাতে এক জায়গায় থাকলাম এবং রাতের সেই মুহূর্তটা অনেক আনন্দের সাথে উপভোগ করেছি। আমরা গল্প করেছি, যাই হোক একটার পরে ঘুমিয়ে সাড়ে চারটার দিকে ওঠা খুবই কষ্টকর। তারপরে এই শীতের মধ্যে বন্ধুরা সবাই সাড়ে চারটায় আমরা ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নিলাম। যে যত শীতের কাপড় পড়েছে, সেই মুহূর্তটা অনেক হাসাহাসি করতে ছিলাম। কারণ আমার বন্ধু সুজন অনেকগুলো শীতের কাপড় পড়েছিলো।


cyclist-4910488_1280.jpg

source

সকল বন্ধুই অনেকগুলো শীতের কাপড় পরলো। তবে বীর পালোয়ান ছিল হাসান। সে বেশি শীতে খাবার পরলো না। সে বলল কিসের শীত কোন শীত নেই মদেখি তোরা এত কাপড় পড়েছিস আমি পড়বো না। সে শুধু একটা শীতের কাপড় পড়েছে এবং কানে কোন মাফলার নেয়নি। সে খুব ভাব দেখিয়ে এভাবে বেরিয়ে পড়ল। পরে আমরা বললাম ঠিকই, ভাব ছুটে যাবে।যখন মোটরসাইকেল এই কুয়াশার মধ্যে চালানো হবে। বীর পালোয়ান হাসান বলল যে কোন শীত তার ধরবে না। আমি পেছনে বসে থাকব। মোটরসাইকেল চালাবো না। তারপরে বললাম সেই বাতাস আর কুয়াশা এর মধ্যে তোমার শীত লাগবেই।সে শুনলো না। এভাবেই রওনা দিল। তো আমরা পাঁচটার দিকে ছয় বন্ধু তিনটি মোটরসাইকেল একসাথে যাত্রা শুরু করলাম।


আমরা যখন পাঁচটার দিকে আস্তে আস্তে রওনা করলাম। তখন রাস্তায় এসে দেখতে পেলাম প্রচন্ড কুয়াশা আর অন্ধকার। আসলে শীতের সময় পাঁচটার সময় ও যেন এত কুয়াশা ছিল যা বলার মতো না।সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এই কুয়াশার মধ্যে দিয়ে অমনি আমরা আস্তে আস্তে যাচ্ছিলাম এবং প্রায় দশ মিনিট যাওয়ার পর মোটরসাইকেল চালিয়ে আমরা বিশ্বরোডে এসে পৌঁছালাম। তখন দেখতে পেলাম এখানে অনেক গাড়ি চলাচল করছে এবং অনেকেই যাত্রা শুরু করে দিয়েছে।তারপরে উল্লাপাড়ার রাস্তায় যেতে হয় বিশ্বরোড থেকে আরেকটি ভেতরে। সেই রাস্তাটিও পাকা রাস্তা ছিল। তবে সেই রাস্তা দিয়ে আমরা যখনই যাচ্ছিলাম তখন হাসান আর তার ভাব ধরে রাখতে পারল না। সে বলল যে বন্ধু আমার প্রচন্ড শীত ধরেছে আমি আর থাকতে পারছি না। তখন আমরা সেখানে মোটরসাইকেল থামালাম এবং থামিয়ে আশেপাশ থেকে খর, কুঠা জোগাড় করে নিয়ে আগুন ধরিয়ে আমরা সকলেই হাত তাপানো শুরু করে দিলাম। সত্যি এভাবে রাস্তার মধ্যে আগুন তাপানোর মুহূর্ত সত্যিই অসাধারণ। আগুন জ্বালিয়ে আমরা অনেকক্ষণ গোল হয়ে বসে ছিলাম। তখন ৫.৪০ বাজে।


রাস্তার মধ্যে এভাবে আগুন জ্বালিয়ে শীতের অনুভূতি উপভোগ করা অসাধারণ। আমরা যখন আগুনে হাত তাপানো শুরু করে দিলাম, তখন দেখতে পেলাম আরো কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে তারাও যেন এই খেজুরের রস খেতে এসেছে। তারা আমাদের আগুন জালানো দেখে তারা মোটরসাইকেল থামিয়ে, তারাও যেন এই আগুনে হাত তাপানো শুরু করে দিল। আসলে প্রচন্ড শীতের এবং কুয়াশার মধ্যে যারা মোটরসাইকেল চালায় তাদের হাত যেন একদম অবশ হয়ে যায়। আর এই আগুনে হত তাপালে অনেক বেশি ভালো লাগে। তাই তাদের সাথে আমরা হতা তাপানো করা শুরু করে দিলাম এবং তারা আমাদের গ্রামেরই বড় ভাই ছিলো। তারা যেন এই খেজুরের রস খেতে এসেছে। তারা আমাদের দেখে বলল কিরে তোরা কখন আসছোস, আগে বলবি না তাহলে একসাথে আসতাম। আমি বললাম যে এখন ভালো হয়েছে আপনাদের সাথে দেখা হয়েছে। আমরা এখান থেকে আবারো একসাথে তাহলে খেজুর রস খেতে যাব। তখন বলল দ্বারা আগে কিছুক্ষণ আগুনে হাত তাপিয়ে নেই।

তারপর আমরা আবারও বন্ধুরা এবং সেই বড় ভাইয়েরা একসাথে যাত্রা শুরু করলাম। এখান থেকে আর দশ মিনিট লাগবে যেতে। তো আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে তাড়াতাড়ি করে সেখানে আসলাম। খেজুরের এই বাগানে এসে দেখতে পেলাম অনেকেই খেজুরের রস খেতে এসেছে।বড় ভাইদের দেখে তারা চিনতে পেরেছে এবং এই বড় ভাইরা এর আগে এসেছিলো। তাদের পরিচিত একজন লোক আছে। তার কাছে আমরা গেলাম, তারা বলল যে আপনাদের সামনে খেজুরের রস এখন পারবো। তাই সে খেজুর গাছে উঠলো।তো খেজুরের রস পারার জন্য খেজুরের কাছে উঠতে লাগলো। তো বন্ধুরা আজকে এই পর্যন্তই, পরবর্তী পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করব বাকি অংশটুকু। আশা করছি সে পর্বের জন্য অপেক্ষা করবেন।
🙏🤲🙏

আমার পরিচয়

IMG_20211018_182622.jpg

আমার নাম মোঃ রায়হান রেজা।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি পেশায় একজন সহকারী মেডিকেল অফিসার ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে🌹💖🌹।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉 বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 2 years ago 

স্মৃতিময় সুন্দর একটি ঘটনা আজকে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। যেখানে খাজুরের রস খেতে যাওয়ার দারুন মুহূর্ত আমাদের মাঝে তুলে ধরছেন। এখন শীতকাল, এখনই খাজুরের রস হওয়ার উপযুক্ত সময়। আর সময় উপযোগী গল্প আমাদের মাঝে তুলে ধরছেন। হাসানের গল্পটা শুনে তো আমার বেশ অবাক লাগলো, শীতের সময় যেখানে আমরা গরম কাপড় থেকে নিজের শরীর বের করতে পারি না। আর সে পালোয়ানের পরিচয় দিয়েছে, যাই হোক সুন্দর ছিল আপনার এই ঘটনা উপস্থাপনা।

 2 years ago 

আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ

 2 years ago (edited)

এই শীতের সময়টা হল খেজুর রসের জন্য উত্তম একটা সময়। শুনেছি এই শীতে রস খেতে নাকি অনেক টেস্ট লাগে। কিন্তু আমার ভাগ্যে সে সৌভাগ্যটা এখন পর্যন্ত হয় নাই। তবে আপনার খেজুরের রস খাওয়ার গল্পটা কিন্তু আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। এই যে রস খেতে গিয়ে আপনারা কি ঠান্ডার মধ্যে পড়েছিলেন এবং সেখানে আগুন ধরিয়ে কিছুটা সময় গরম তাপ নিচ্ছিলেন। পরে আবার সবাই মিলে খেজুরের রস খেতে গেলেন এবং সেখানে কিছু পরিচিত বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হলো আপনার শীতের রস খাওয়ার কাহিনী অনেক সুন্দর করে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 2 years ago 

এত সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে উৎসাহিত করেছেন, সেজন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ

 2 years ago 

খেজুরের মিষ্টি রস পান করার দারুণ একটি স্মৃতিময় গল্প আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার এই গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। খেজুরের গাছ থেকে খেজুরের রস পাড়ার পরে আপনারা কত গ্লাস করে খেজুরের রস পান করেছিলেন সেটা জানার জন্য আপনার পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের কারণে আমার খুবই ভালো লেগেছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনার লেখাটি খুবই সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার এতো সুন্দর মুহূর্ত আমাদের মাজে শেয়ার করেছেন।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে, মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

সুন্দর একটি স্মৃতি শেয়ার করলেন খেজুর রস খেতে যাওয়ার। আসলে শীতের দিন এমন কিছু কিছু মানুষ আছেন। যারা শীতের কাপড় পড়ে না অথচ তাদের শীতেও লাগেনা। শেষমেষ খেজুর রস খাওয়ার জন্য গেলেন সবাই মিলে। দীর্ঘ এক আলোচনা পর্ব শেয়ার করলেন আপনি ভাল লগলো।

 2 years ago 

শীতকাল আসবে, আর খেজুরের রস খাওয়া হবে না, তা কখনোই হতে পারে না। খুবই সুন্দরভাবে আপনি এই পোস্ট শেয়ার করেছেন। এরকম স্মৃতিময় একটি গল্প আপনার কাছ থেকে পড়তে পেরে খুব ভালো লাগলো। ছোটবেলায় আমিও অনেকবার খেজুরের রস খেতে গিয়েছি। তবে এখন আর তেমন খাওয়া হয়না৷ রস খেতে সবাই মিলে গেলেন শুনে খুব ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.34
JST 0.033
BTC 116888.02
ETH 4510.84
SBD 0.86