স্মৃতির পাতা থেকে নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনার গল্প//পর্ব -৩

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago

আসসালামু আলাইকুম/🌺

হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।


আমাদের স্মৃতির পাতায় অনেক গল্প জমা রয়েছে। আসলে ছোটবেলার গল্পগুলো যেন এখন মনে করতে পেরে ভালো লাগে। কত আনন্দের সাথে সেই মুহূর্তগুলো উপভোগ করতাম। বিশেষ করে ছোটবেলা যেমন আনন্দময় স্মৃতি রয়েছে, তেমনি কিছু বেদনাদায়ক ও স্মৃতি রয়েছে। আর কিছু দুর্ঘটনা রয়েছে। যে ঘটনাগুলো কখনোই আমরা ভুলতে পারিনা। এই ঘটনাগুলো মাঝে মধ্যে যেন মনে পড়ে যায়। হঠাৎ চলার পথে স্মৃতিময় এই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। কারণ ওরকমই কোন ঘটনা যদি আবারও আমাদের চোখের সামনে ঘটে যায়। তাহলে সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়। প্রিয় বন্ধুরা আপনাদের সাথে স্মৃতিময় নৌকাডুবি একটি ঘটনা শেয়ার করতে ছিলাম। আজকে সেই গল্পের শেষ পর্ব নিয়ে এসেছি। আশা করছি এই শেষ পর্বের গল্পটি জানতে পেরে আপনাদের ভালো লাগবে।


boat-164977_1280.jpg

source

বাচ্চাটিকে উদ্ধার করার জন্য ডুবুরিরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছে। যার কারণে এই বাচ্চাটিকে সাজ্জাদ নামে এক ডুবুরি পেয়েছিল এবং এই ডুবুরি যখন বাচ্চাটিকে উপরে নিয়ে আসলো বাচ্চাটি তখন অজ্ঞান ছিল এবং তাদের সাথে একজন মেডিকেল ডক্টর ছিল। এই মেডিকেল ডাক্তার বাচ্চাটিকে ভালোভাবে চেকআপ করলো।ডঃ সাহেব সর্বোচ্চ চেষ্টা করল এবং পেটে চাপ দিয়ে অনেক পানি বের করলো এবং ডাক্তার বলল যে ওর এখনো হার্টবিট চলতাছে। তার মানে বাচ্চাটি এখনো বেঁচে রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে মেডিকেলে ভর্তি করতে হবে। তাই তখনি ওখানে থেকে গাড়ি ঠিক করলো আর এই গাড়ি নিয়ে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো এবং সাথে সেই ডঃ একজন গিয়েছিল এবং বাচ্চার আত্মীয়-স্বজন তখন ছিলো। আমরা তখন ওখান থেকে প্রার্থনা করতে লাগলাম। বাচ্চাটি যেন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।


আমাদের গ্রামের যে চেয়ারম্যান ছিল, সে খুবই ভালো এবং সৎ মানুষ ছিল। যার কারণে বারবার ফোন দিয়ে খোঁজ নিতে ছিল। বাচ্চাটির কি অবস্থা আসলে। একজন চেয়ারম্যানকে এরকমই দায়িত্ববান হওয়া উচিত। গ্রামের মানুষ তাকে চেয়ারম্যান বানিয়েছে একদম, কারণ এই চেয়ারম্যান কখনোই ভোটে দাঁড়াতে চায়নি। এলাকার মানুষ ভালোবেসে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। আজকে তার প্রমাণ পেলাম। আসলে এলাকার মানুষ খুবই ভালোবাসে। সে খুবই সৎ ব্যক্তি। যার কারণে বাচ্চাটি সুস্থ হওয়া নিয়ে তার এই দায়িত্ববান দেখতে পেয়ে খুবই ভালো লাগলো এবং সে মাঝে মাঝে খোঁজ নিতে ছিল।সেই বাচ্চাটিকে আই সি তে ভর্তি করানো হয়েছে। আগের চাতে অনেকটাই ভালো রয়েছে।


ship-952292_1280.jpg

source

যে নৌকা দুটির কারণে অর্থাৎ প্রতিযোগিতার দেওয়ার কারণে নৌকাটি ডুবে গিয়েছিল। সেই নৌকার মাঝিদের ইউনিয়নের রাখা হয়েছিরো। যার কারণে ইউনিয়নে চেয়ারম্যান সাহেব ও ম গ্রামের কয়েকজন মতবাদ গিয়ে বলল এই বাচ্চাটি বেঁচে রয়েছে। তাই অনেক ভালো হয়েছে তোমাদের জন্য।যার কারণে তোমাদেরকে মাফ করে দিলাম। তাছাড়া তোমাদেরকে পুলিশে দিতাম। এখন বাচ্চাটি চিকিৎসা করতে যত খরচ রয়েছে তোমাদের দিতে হবে। চেয়ারম্যান সাহেবের কথা শুনে মাঝি দুটি কান্না করে দিল। বলল যে কত টাকা দিতে হবে। চেয়ারম্যান সাহেব বলল তাও তো তোমাদের দুজনের ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই কথা শুনে সত্যি মাঝিরা কান্না করে দিল। কারণ তারা ছিল গরিব মানুষ। কিন্তু গরিব হলে হবে কি হবে যে অন্যায় করেছে এর শাস্তি তাদেরকে পেতেই হবে। চেয়ারম্যান বলল তোমরা যদি গরীব মানুষই হবে তাহলে কিভাবে এত স্পিডে নৌকা চালাবে। তোমাদের নৌকাতে হাজার হাজার মানুষ রয়েছে। তাদের জীবনে কোন দাম নেই। তোমরা কিসের মাঝি হয়েছো নিজের জীবনের দাম না দিলে, কিন্তু তোমাদের নৌকার উপরে যারা রয়েছে তাদের জীবনের দাম রয়েছে।


তারা বলল চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের খুবই অন্যায় হয়েছে। আমরা জীবনে আর এই ভুল করবোনা। আমাদের ক্ষমা করে দিয়েন। তখন বলল যে তোমাদের এরকম আর হবেনা এর কোন গ্যারান্টি রয়েছে। তখন তারা বলল আমরা জীবনেও আর কখনোই রিক্স নিয়ে এভাবে নৌকা চালাবো না। আমাদের জীবনের দাম না থাকলেও আমরা বুঝতে পেরেছি আমাদের নৌকার উপরে যারা রয়েছে। তাদের জীবনের অনেক দাম রয়েছে। তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমাদের নৌকার উপরে ওঠে এবং ভরসা নিয়ে আমাদের নৌকার উপরে যাতাযাত করে।এই ভরসা আমরা আর কখনোই নষ্ট করব না। আমরা সর্বোচ্চ সাবধানতার সাথে নৌকা চালাবো। তখন বলল তাহলে তোমরা কত টাকা জরিমানা দিতে পারবে। তখন সে বলল যে আমরা পাঁচ করে দুজন দশ হাজার টাকা দুইজন মিলে দিব। তখন বলব গরিব মানুষ তোমাদের এই হিসাবে মাফ করে দিলাম। তবে পরবর্তীতে যদি কোনদিন তোমাদের নামে কোন বাজে ধারণা পাইছি। তাহলে কিন্তু তোমাদের অবশ্যই পুলিশে দেবো।


এভাবে মাঝিদের মাফ করে দেওয়া হল। আর বাচ্চাটি তিন দিন হসপিটালে ভর্তি থাকার পরে সুস্থ হয়েছে।বাচ্চার মা-বাবা বাচ্চাটিকে নিয়ে আমাদের গ্রামে চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে এসেছিলো।কারণ চেয়ারম্যান সাহেব তাদেরকে অনেক উপকার করেছে। সাথে আমাদের গ্রাম বাসিরাও। যার কারণে কৃতজ্ঞদের জন্য এসেছিল এবং বাচ্চাটির বাবাকে তখন ১০ হাজার টাকা দিতে ছিলো চেয়ারম্যান। কিন্তু বাচ্চাটির বাবা নেবে না, বলল এই টাকাটা দিয়ে আপনাদের গ্রামবাসীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েন এবং তাদের নিয়ে একটা আয়োজন করেন। আপনারা যতটা উপকার করেছেন এটা কখনোই অন্য গ্রামে আমরা পেতাম না। সত্যি আপনাদের জন্য আমার ছেলেকে পেয়েছি। চেয়ারম্যান সাহেব বলে আল্লাহর ইচ্ছা ছিলো। আপনার সন্তানকে সাবধানে রাখবেন। ওর জন্য দোয়া রইল। আসলে কোন ভালো কাজের করলে মনের ভিতরে অনেক শান্তি লাগে। আর ভালো কাজের অংশগ্রহণে ও সাক্ষী হতে পেরেও আমার খুবই ভালো লেগেছিল।🙏🤲🙏

আমার পরিচয়

IMG_20211018_182622.jpg

আমার নাম মোঃ রায়হান রেজা।আমি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে সিরাজগঞ্জ জেলায় বসবাস করি। আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমিকে খুবই ভালোবাসি। আমি পেশায় একজন সহকারী মেডিকেল অফিসার ।আমি সর্বদাই গরীব-দুঃখীদের সেবায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং নতুন সৃজনশীলতার মাধ্যমে কিছু তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।এই ছিল আমার সংক্ষিপ্ত পরিচয়, আপনারা সবাই আমার পাশে থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে উৎসাহিত করবেন, ধন্যবাদ সবাইকে🌹💖🌹।

Amar_Bangla_Blog_logo_png.png

👉 বিশেষভাবে ধন্যবাদ সকল বন্ধুদের যারা এই পোস্টকে সমর্থন করছেন🌺🌹🌺

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  
 7 months ago 

দারুন একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন ভাইজান। আর এই থেকে অজানা অনেক কিছু জানতে পারলাম। বেশ ভালো লাগলো আপনাদের চেয়ারম্যানের সততা জানতে পেরে। এদিকে মাঝিরা হয়তো দরিদ্র মানুষ ছিল তারপরেও তাদের ভুলের শাস্তি তো গ্রহণ করতেই হবে। কারণ আমাদের সকলের সব বিষয়ে একটা লিমিটের মধ্যে চলাচল করা উচিত, যাতে ক্ষতি দিকটা না হয়।

 7 months ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যের কারণে আমার খুবই ভালো লেগেছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58503.45
ETH 2594.59
USDT 1.00
SBD 2.45