🎠আমার বাংলা ব্লগ 🎡পহেলা বৈশাখে স্মৃতি ও বৈশাখী মেলার গল্প🥁 // [১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য]🌹
হ্যালো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।
পুরাতনকে বিদায় দিয়ে নতুনকে গ্রহণ করার এই তো সুযোগ, আর নতুনকে এমন ভাবে গ্রহণ করতে হবে আগামী পথ চলা যেন আমাদের সকলের জন্য মঙ্গল মনে হয়। সকলের জন্য আগামী পথ চলা অনেক আনন্দ এবং মঙ্গলময় হবে সেই দোয়া রইল। জীবনের প্রতিটি ধাপ আমাদের অনেক প্রতিকূলতার সাথে পার করতে হয়। আর এই জীবনের ধাপ গুলো যে সুন্দরভাবে পার করতে পারে তার জীবনে সফলতা আসে। নতুন বছর আমরা অনেক আনন্দময় এবং নতুন ভাবে জীবনের পথ শুরু করবো, এই আশাই রাখছি। আসলে বাংলা নববর্ষ বাংলা নতুন বছর। নতুন বছরকে আমরা বাঙালি হিসেবে অনেক আনন্দের সাথে উদযাপন করে থাকি। আসলে আমরা বাঙালি আর বাঙালিরা নববর্ষকে অনেক গুরুত্ব সাথে পালন করি। আসলে প্রতিটা বাঙালির বাংলা নববর্ষকে অন্যরকম ভাবে পালন করে। কারণ বাংলা নববর্ষ বাঙ্গালীদের জন্য নতুন পথ চলা।
১৪২৯ পহেলা বৈশাখ, বাঙালির এই নতুন বছরকে আমরা বরণ করে নিয়েছি এবং নতুনভাবে জীবনের পথ চলা শুরু করে দিয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে পহেলা বৈশাখের আমার জীবনের ঘটে যাওয়া সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করছি। আসলে পহেলা বৈশাখ আমরা অনেক আনন্দের সাথে পালন করে থাকি। বিশেষ করে ছোটবেলা আরো বেশি আনন্দ হতো। কারণ ছোটবেলা পহেলা বৈশাখের কথা শুনলেই ভালো লাগতো। নতুন পহেলা বৈশাখের জামা পড়তাম। মাথায় গামছা দিয়ে মেলায় যেতাম। তখন আমাদের গ্রামে বটতলাতে মেলা হতো। সেই মেলা এখুনো হয়। আমাদের গ্রামের এই বটতলাতে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের প্রথম দিন এবং দ্বিতীয় দিন মেলা হত। আর এই মেলাতে অনেক আনন্দ করলাম। মেলাতে নাগরদোলা থাকতো আরো নানা রকমের খেলাধুলা। ঢোল তবলা এবং বিশেষ করে টমটম কিনে নিয়ে আসতাম এবং সারাক্ষণ সেই টমটোম নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। এই খেলাটি আজ আমাদের মাঝে আগের মত আর পরিচিত নেই। যাইহোক সেই পহেলা বৈশাখের দিনটি আজ চোখের সামনে ভাসছে।
আমি তখন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি। নতুন বছর বাঙালির পহেলা বৈশাখ। দিনটি আমার বাবা আমার জন্য নতুন জামাই এনেছে এবং গামছাও এনেছে। পহেলা বৈশাখের আমাদের গ্রামের সকল ছেলেরা মাথায় গামছা বেঁধে এবং পহেলা বৈশাখের জামা পড়ে অনেক আনন্দ করে। তাই আমি বাবাকে বলেছিলাম আমার জন্য একটি জামা এবং গামছা নিয়ে আসতে। বাবা আমার জন্য একটি জামা এবং গামছা এনেছে। আমি সেই জামা এবং গামছাটি পড়ে সারাদিন ঘোরাফেরা করেছি এবং বিকেল তিনটার সময় আমি বাবার সাথে আমাদের গ্রামের বটতলা সেই মেলাতে আসলাম। বড়তলা মেলাতে অনেক ভিড় হয়। প্রতিবছর এখানে পহেলা বৈশাখের অনেক বড় মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। আসলে বটতলায় মেলাতে এসে আমার খুবি ভালো লাগছিলো।
বৈশাখী মেলা এবং অন্যান্য মেলা অনেক আলাদা হয়ে থাকে। বৈশাখী মেলাতে অনেক রকমের খেলনা আয়োজন করা হয়। আর যেহেতু এটি বাঙালির প্রথম বছর তাই বাঙালির প্রথম বছরকে কেন্দ্র করে অনেক সুন্দর সুন্দর আয়োজন করা হয়। আমাদের এই মেলার এক পাশে আমি দেখতে পেলাম গানের আয়োজন করেছে। তারা ঢোল, তবলা নিয়ে নববর্ষের গান গাচ্ছে। আমি সেই গানের কাছে আসলাম এবং বাংলা গান গুলো শুনতে লাগলাম। অনেক ভালো লাগতেছিল। আমি তখন ছোট ছিলাম তাই যারা ঢোল -তবলা যারা বাজাচ্ছিলো আমি তাদের পাশে গিয়ে বসলাম এবং গান শুনতে লাগলাম। মেলার অন্য পাশে এসে দেখতে পেলাম আরো অনেক রকমের খেলনা। তবে আমি বাবার সাথে নাগরতলা চলার জন্য বায়না করলাম। বাবা বলল না তুমি ভয় পাবে। তারপরেও আমি নাগরদোলায় উঠলাম।নাগরদোলাতে একটা ঘটনা ঘটে গেল, সেটা হল আমাদের বাড়ির পাশের ছোট ছেলে ছিল নাম আরিফ সে তার বাবার সাথে নাগরদোলায় উঠেছে। কিন্তু নাগরদোলা যখন নিচের দিকে নামে তখন বাচ্চাটি অনেক জোরে কান্না করে। সে খুবই ভয় পেয়েছিল। আসলে নাগরদোলা যখন নিচের দিকে নামে, তখন অনেক ভয় করে।
মেলার ভিতরে আরেকটি ঘটনা আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছিল, পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীদের পান্তা খাওয়ার একটি নিয়ম বা রীতি রয়েছে,আর মেলাতে এই পান্তা খাওয়ার আয়োজন করেছে। মেলার একপাশে আমাদের গ্রামের অনেক পরিচিত কয়েকজন আছে তারা বাবার বন্ধু। তারা বাবাকে ডাকলো এবং সেখানে নিয়ে গিয়ে আমাদের পান্তা খেতে বললো। বাবা কেখে চায়লো না।কিন্তুু আমি খেতে চায়লাম, তাই তখন ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা এবং সেইসাথে ছিল তিল ভর্তা, খেতে অনেক মজা ছিল। পান্তা ভাত খাওয়ার পর আমাদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা নিল।তখন আমি বাবাকে বললাম টাকা নিলো ক্যানো বাবা।বাবা বললো আজ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তারা সবাইকে পান্তা ভাত খাওয়ায়ে বাঙ্গালির উৎসব পালন করছে আর সন্মানি হিসাবে টাকা নিচ্ছে।
বৈশাখী মেলাতে বাবার সাথে অনেক আনন্দময় সময় পার করলাম। আমি অনেক খেলনা কিনলাম এবং অনেক খাবার ও কিনেছি। বাড়ির জন্য ঝুড়ি মুরকি কিনেছি। তখন আকাশে মেঘ দেখা দিল। বাবা বললো চলো তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে। আকাশে কালো মেঘ দেখা দিয়েছে। এখনই ঘূর্ণিঝড় হবে। আমি বললাম ঘূর্ণিঝড় কি বাবা? বাবা বললো প্রচন্ড বাতাস সাথে বৃষ্টি। তাই আমাদের এখনই বাড়ি যাওয়া উচিত। আমি বললাম ঝড় বৃষ্টির ভিতরে তো অনেক মজা হবে। বাবা বললো এই ঘূর্ণিঝড় অনেক ভয়াবহ, অনেক ক্ষতি হতে পারে। চলো আমরা তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে যাই। তাই আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
তাই আমরা তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসলাম। বাড়িতে আসার পরে বাবা বলল আকাশে কালো মেঘ কমে গেছে। আল্লাহর রহমতে কালবৈশাখী ঝড় হলো না। তবে কিছুক্ষণ পরেই বৃষ্টি নামলো এবং সাথে বাতাসও ছিলো তখন বাবা বলল যে এটা কালবৈশাখীর ঝড় না। তখন আমি বাবাকে বললাম তাহলে আমি আমি আস কুড়াতে যাব। বাবা বলল আম কুড়াতে গিয়ে বিপদ হতে পারে। আমি বললাম না যাব। তখন বাবা বলল ঠিক আছে চলো তোমাকে আমি সাথে নিয়ে যাই। তাই আমি আমাদের আমবাগানে আসলাম এবং আম বাগানে এসে দেখতে পেলাম। অনেক ছোট, ছোট আম পড়ে রয়েছে। আমি এই ছোট, ছোট আমগুলো কুড়াতে লাগলাম। তখন আমার খুবই ভালো লাগতেছিল, কারণ গ্রামের আরো অন্যান্য ছেলে-মেয়েরাও এসেছে আম কুড়াতে। তাদের সাথে এই বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়াতে পেরে খুবই ভালো লাগতেছিল।বাবা আম কুড়িয়ে আমার হাতে দিচ্ছিলো, আমার খুবি ভালো লাগতে ছিল তখন। আসলে সেই পহেলা বৈশাখের প্রথম দিনটি আমার অনেক ভালো লেগেছিল। সারাদিন মেলাতে বাবার সাথে মজা করা ও বিকেলবেলা বৃষ্টিতে ভিজে আম কুড়ানোর সেই মুহূর্তটা সত্যিই অসাধারণ ছিলো। আমার সেই দিনটি এখনো চোখের সামনে ভাসে।ছোটবেলার সেই পহেলা বৈশাখের দিন সত্যিই অসাধারণ ছিলো আমার জীবনে।
আপনি খুবই চমৎকার ভাবে পহেলা বৈশাখের কিছু স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। যদিও ছোটবেলায় খুব বেশি একটা ঘোরাঘুরি করার সুযোগ পায়নি তবে এখন এরকম আপনাদের পোস্ট দেখে খুবই আফসোস হয়। অনেকটা সময় ছিল তখন ঘোরাঘুরি করার জন্য কিন্তু তখন হয়ত কোন একটা কারণে ঘুরাঘুরি করতে পারেনি। ধন্যবাদ আপনাকে এত স্মৃতিমধুর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পেরে আমারও খুবই ভালো লাগছে। আসলে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ছোটবেলার দিনগুলো আমার কাছে অনেক ভালো এবং আনন্দময় মনে হয়।
আপনার পোস্ট পড়ে ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো।আমি যখন ছোট ছিলাম,তখন আমার এক কাকার সাথে বটতলায় মেলায় গিয়েছিলাম।দুই টাকা নিয়ে😉😉।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
ঠিক বলেছেন আপু আগে বাবা - মা দুই টাকা দিত মেলা থেকে ঘুরে আসার জন্য। সত্যিই সেই দিনগুলো অনেক মিস করি এখন।
এটা শুনে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আহ কী সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো। আমার জীবনেও বৈশাখ নিয়ে এইরকম ঘটনা আছে। এবং বৈশাখ শুধু নতুন বছর নিয়ে আসে না সাথে করে নিয়ে আসে বৈশাখী ঝড়। যাইহোক অনেক ভালো লিখেছেন ভাই। আপনাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
পহেলা বৈশাখ আমাদের যেমন আনন্দময় সময় উপহার দেয়। তেমনি আবার কালবৈশাখী ঝড়ে অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
ভাইয়া আপনি আজকে চমৎকার ভাবে পহেলা বৈশাখে স্মৃতি ও বৈশাখী মেলার গল্প শেয়ার করেছেন দারুন হয়েছে। অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে উপস্থাপনা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের কারণে আমার খুবই ভালো লেগেছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আসলে পহেলা বৈশাখ নিয়ে আমাদের প্রতিটা বাঙালির জীবনে নানা রকম স্মৃতি জড়িত। আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো। অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে গেলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাই। সত্যি আমার পোস্টটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আমার খুবই ভালো লাগছে এবং ছোটবেলার স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে পেরে আমারও ভালো লাগছে। ছোটবেলার স্মৃতি গুলো আমার কাছে অনেক আনন্দময় মনে হয়।
পহেলা বৈশাখের স্মৃতি ও বৈশাখী মেলার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো ।এরকম স্মৃতিবিজড়িত বিষয়ে সবার জীবনেই কমবেশি আছে। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আপনাকে, আমার পোস্টে এত চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।
ভাই আপনার আজকের ব্লকটা পড়ে সেই ছোটবেলার অনেক পুরনো কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেল। প্রত্যেকের জীবনে এই পহেলা বৈশাখের কিছু না কিছু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। তেমনিভাবে আপনার স্মৃতি গুলো খুবই চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর ছিল আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের কারণে আমার খুবই ভালো লেগেছে, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আগামী পথ চলা যাতে সবার সুন্দর হয়, এটি সবাই তার জীবনে আশা করে । আমি ছোট বেলায় বেশি উপভোগ করতাম সন্ধার পর বৈশাখী মেলার পুরুষ্কার বিতরনি অনুষ্টান গুলো। বেশ ভালো ছিল আপনার লেখাটা ।
আপনার এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ