"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪ || গ্রীষ্মকালীন ফল কাঁঠাল, আম,ও লিচু নিয়ে মজার একটি গল্প 🥭[১০%shy-fox]🍒
হ্যা লো বন্ধুরা,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সকলেই সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় খুব ভাল আছি। আমি @rayhan111 🇧🇩 বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগ থেকে।
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ছোটবেলা গ্রীষ্মকালীন ফল নিয়ে নানারকম ঘটনা রয়েছে। আর এই মজার মজার ঘটনা গুলো আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমে সবার কাছে শেয়ার করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। আসলে আমার বাংলা ব্লগ গ্রীষ্মকালীন ফল নিয়ে আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সুন্দর এবং মজাদার গল্প শেয়ার করার সুযোগ করে দিয়েছে, সেজন্য আমার বাংলা ব্লগের এডমিন মডারেটরদের অসংখ্য ধন্যবাদ। কারণ তাদের জন্যই আমরা এত সুন্দর একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারছি। আসলে এই প্রতিযোগিতাটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমাদের প্রত্যেকের জীবনে নানা রকমের মজাদার গল্প রয়েছে। আসলে গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের সমাহার। আরে ফল দিয়ে আমাদের জীবনে রয়েছে নানা রকম মজার মজার গল্প। এই গল্প গুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলে।ছোট বেলা ঘটে যাওয়া এই ফল নিয়ে গল্প গুলো পড়তে পেরে খুবই ভালো লাগে। অনেক মজার মজার গল্প প্রত্যেকের জীবনে ঘটেছে। তাই আজকে আমি আমার জীবনের ঘটে যাওয়া মজার একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। আশা করছি আমার গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।
গ্রীষ্মকালীন ফল নিয়ে মজার একটি গল্প।🥭
আমি তখন ক্লাস ৬ষ্ট শ্রেনীতে পড়ি সময়টা গ্রীষ্মকাল, চারদিকে ফলের সমাহার। প্রত্যেকটা গাছেই নানা রকম ফল ধরেছে। আর এই ফলগুলো দেখলেই খেতে ইচ্ছা করে। আমার বন্ধু রবিন, রাকিব এবং সুমন এই তিনজন ওরা আমাদের বাড়ির পাশে থাকতো। আমরা সব সময় একই সাথে থাকতাম। সবসময় ঘোরাফেরা খেলাধুলা করতে খুবই ভাল লাগত। গ্রীষ্মকালীন সকল গাছে ফল দেখে খেতে খুব ইচ্ছা করত। একদিন রবিন এবং সুমন আমরা তিনজন মিলে আমাদের গ্রামের স্কুল মাঠে আসলাম।স্কুল মাঠে বিকেলবেলা প্রতিদিন বাজার বসতো। সেখানে অনেক ফল বিক্রি করা হতো। বাজারে আসলাম, বাজারে এসে আমি দেখতে পেলাম এক বৃদ্ধ চাচা সে কাঁঠাল ফল বিক্রি করছে। কাঁঠাল নিয়ে বাজারে এসেছে, কিন্তু তার কাঁঠাল ফল বিক্রি করা হচ্ছিল না। কারণ তার কাঁঠাল ফল একটু নষ্ট ছিল।আর একটু নষ্টের কারণে তার কাঁঠাল কেউ কিনলো না। কিন্তু বৃদ্ধ চাচা অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই কাঁঠালটি বিক্রি করতে এসেছিল। তার এই কাঁঠালটি বিক্রি করে তার মেয়ের জন্য ঔষধ কিনবেন।কিন্তুু কাঁঠাল ফল বিক্রি হচ্ছিল না। এমন সময় বাজারের মধ্যে আমাদের গ্রামের সরকার বাড়ি একটা ছেলে আসলো। সে চাচার ফলটি কেনার কথা বলে কাঁঠাল ফলটি নিয়ে রললো আমি এই ফলটি ভেঙ্গে দেখবো যদি একটু ভালো হয় তাহলে টাকা দেবো।তারপর সেই ছেলেটা চাচা কাঁঠাল ফলটি ভেঙ্গে দেখলো ফলটি ভাল আসে কিন্তুু টাকা দিতে রাজি না।
আসলে সরকার বাড়ির এই ছেলেটি তার বন্ধুর সাথে বাজি ধরেছিল যে চাচার কাঁঠাল ভালো না, সম্পূর্ণ পঁচা। তাদের বাজে ছিল এ ফলটি যদি সম্পূর্ণ পঁচা হয় তাহলে এই সরকার বাড়ির ছেলে মামুনকে টাকা দিতে হবে না, আর যদি কাঁঠালটি ভাল হয়, তাহলে সরকার বাড়ি ছেলে মামুনকে ২০০০ টাকা দিতে হবে তার বন্ধুদেে। সেইজন্য চাচার কাঁঠাল ভালো হওয়া সত্ত্বেও সরকার বাড়ি এই ছেলেটি আর চাচার ফলের দাম দিতে রাজি হলো না। সে নানান কাহিনী করে বলল ফলটি পঁচা এভাবে অনেক কথা বলে, একসময় চাচার ফলের দাম না দিয়ে সরকারবাড়ি মামুন চলে গেল।ফলের দাম দিতে রাজিও হলো না। তখন আমার বিষয়টি দেখে খুবই খারাপ লাগলো এবং বৃদ্ধ চাচার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। এটা দেখে আমার খুবই খারাপ লেগেছে।
বৃদ্ধ চাচাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কারণে মামুনের প্রতি আমার অনেক রাগ হলো। তাই বাজার থেকে এসে আমরা তিন বন্ধু আমাদের বাড়ির পাশে এক বড় ভাই আতিক নাম তাতে বিষয়টা বললাম।আতিক ভাই বলল মামুনকে একটা কঠিন শিক্ষা দিতে হবে। সেজন্য আজকে রাতেই আমাদের মামুনদের বাগানে থেকে আম-কাঁঠাল এবং লিচু আমরা চুরি করব। আমি বললাম চুরি করা কি ঠিক হবে, তখন সুজন বলল কেন ঠিক হবে না, মামুন যে কাজটা করেছে এটা কি ঠিক করেছে। আমরা আজকে তাদের বাগান থেকে এই ফলগুলো চুরি করে বৃদ্ধ চাচাকে আমরা সহায়তা করব। এটি আমাদের জন্য খুবই ভাল হবে। মামুন কেউ উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে। তাই মামুনকে আমরা উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য, তাদের বাগানে আজকে চুরি করার প্ল্যান করলাম।
আসলে আজকে আমাদের বন্ধুদের এক জায়গায় থাকতে হবে। সে জন্য আমরা কি করব বাড়িতে বললেও তো রাত করে বাইরে থাকতে দেবেনা। তাই আমরা বন্ধুরা এবং আমাদের বড় ভাই আতিককে নিয়ে আমরা একটা পিকনিকের আয়োজন করলাম। আজকে রাতে আমরা পিকনিক করবো এবং আমরা সবাই মিলে আতিক ভাইয়ের বাড়িতে থাকব। এটা বলে বাড়ি থেকে সকল বন্ধুরা আতিক ভাইয়ের বাড়িতে আসলাম। আমরা অবশ্য একটা ছোট পিকনিকের আয়োজন করেছিলাম। অনেক আনন্দ মজা করে পিকনিক খাওয়া-দাওয়া করলাম। রাত যখন বারোটা গ্রামের মানুষ তখন নিবিড় ঘুমে ঘুমিয়ে আছে। এই সময় আতিক ভাই আমাদের বলল চল এখন আমরা মামুনদের লিচু বাগানে যাবো।
মামুনদের বাড়ির পাশেই ছিল এই লিচুবাগান। লিচুবাগান অনেক লিচু ধরেছে। আর এই পাঁকা পাঁকা লিচু দেখে আমাদের আগে থেকেই খেতে ইচ্ছা করলো। কিন্তু চুরি করে খাওয়ার লোভ ছিল না। যাইহোক আতিক ভাইয়ের কথামত আমরা লিচু বাগানে আসলাম। আমরা তিনজন অনেক লিচু চুরি করলাম। আমরা একটা বস্তার মধ্যে নিলাম নিয়ে আমরা আতিক ভাইয়ের বাড়িতে আসলাম।আতিক ভাই বলল লিচু তো অনেক চুরি করা হয়েছে। আর লিচুগুলো অনেক মিষ্টি তোদের যত ইচ্ছা চায় আজকে লিচু খেয়ে নেহ। একঘন্টা পরে কিন্তু আমরা আবার আম চুরি করতে যাব। কারণ মামুনদের আম বাগানে এই আম গুলো অনেক মিষ্টি।তো আমরা মজা করে লিচু খেতে শুরু করলাম। আসলে অনেক লিচু চুরি করেছি। লিচু খেতে খেতে আর খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে না। আমি আর খেতে পারছিলাম না। তখন মামুন ভাই বলল আজকে অনেক লিচু খেয়েছিস বেশি খাইলে আবার পেট ব্যথা করবে। এখন আমরা আবার আম চুরি করবো।
তারপরে আমরা আমবাগানে আসলাম। আম বাগান থেকে অনেক আম চুরি করলাম। কাঁচা পাকা আম। এই আম গুলো চুরি করে একটি বস্তার অর্ধেক হলো। আতিক ভাই বলল অনেক আম চুরি করা হয়েছে।আর চুরি করা যাবে না। এগুলো আগে আমরা ভালো জায়গায় রেখে দিতে হবে। তখন এগুলো নিয়ে আমরা আতিক ভাইদের ঘরে আসলাম। সেদিন অবশ্য খুবই ভালো হয়েছিল কারণ আতিক ভাইদের বাড়িতে কোন মানুষ ছিল না। আতিক ভাইয়ের আম্মা এবংআব্বা তার নানা বাড়িতে চলে গিয়েছিলো। তখন আতিক ভাইয়ের রুম ছিল ফাঁকা। যাইহোক চুরি করার জন্য সেই দিনটি ছিল আমাদের জন্য নিরাপদ।আম চুরি করে এনে সেখান থেকে আমি একটি মাত্র পাঁকা আম খেয়েছিলাম। তারপরে আর খেতে ইচ্ছা করছিল না। কারণ লিচু অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছিলাম। আমার বন্ধুরাও খুব একটা বেশি আম খেতে পারছিলাম না।
তারপরে যখন রাত তিনটা বাজলে তখন আমরা সরকারবাড়ি মামুনদের বাড়ির পাসে আসলাম কাঁঠাল চুরি করার জন্য। কারণ আমাদের মেইন টার্গেট ছিল কাঁঠাল চুরি করা। সেই চাচার কাঁঠালের প্রতিশোধ নেওয়া, কিন্তু কাঁঠাল চুরি করতে এসে কাঁঠাল কাঁটা পরেই দড়ি ছিঁড়ে কাঁঠাল নিচে পড়ে যায় এবং একটি পাঁকা কাঁঠাল একদম পড়ে থাকে। তারপরেও আমরা আরো চারটি কাঁঠাল পাড়ি। এতগুলো রাত করে নেওয়া খুবই ঝামেলা হচ্ছিল।কারণ কাঁঠাল গুলা বড় ছিল। মামুন একবারও ঘরের ভেতর থেকে শব্দ শুনতে পেয়েছে আমার মনে হচ্ছিল।কিন্তুু বাইরে আসলো না। যাইহোক কাঁঠাল গুলো নিয়ে আসলাম এবং অনেক ভয় হচ্ছিল, কারণ সরকার বাড়ির মানুষ যদি আমাদের দেখতে পেত তাহলে আমাদের অনেক মারধোর করতো। তার পরেও আমাদের আতিক ভাইয়ের নির্দেশে আমরা এই সাহসটা পেয়েছিলাম। কাঁঠাল গুলো এনে আতিক ভাইয়ের রুমে রাখলাম। তবে আমার খুবই ভয় হচ্ছিল সেই বিষয়টা জানতে পারে তাহলে আমার বাবাকে বলবে এবং আমার বাবা খুবই রাগী মানুষ আমাকে মেরে ফেলতো। যাই হোক তারপরে শেষ মেশ এই কাঁঠাল গুলো আমরা আতিক ভাইয়ের রুমে যখন রেখে দিলাম তখন খুবি ভালো লাগতে ছিলো।
এভাবে রাতের বেলা আম, কাঁঠাল লিচু তিনটি ফল চুরি করলাম। প্রথমবার চুরি করার অভিজ্ঞতা ভালোই লাগতে ছিলো। কারণ আমাদের চুরির মধ্যে ছিল একটি ভালো দিক। কারণ আমরা এই বৃদ্ধ চাচাকে সহায়তা করার জন্য এবং মামুনকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যাই হোক। আমরা ঘুমিয়ে গেলাম সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলাম। আতিক ভাইকে বললাম এই কাঁঠাল এবং আম গুলো কিভাবে আমরা বিক্রি করে চাচাকে সহায়তা করব। তখন আতিক ভাই বলল আমাদের পাশের গ্রামে এক বড় ভাই আছে। সে এই ফলের ব্যবসা করে। আমরা এগুলো নিয়ে তার কাছে বিক্রি করব। তাই আমরা তার কথা মতে এই ফলগুলো এবং আতিক ভাইদের গাছ থেকে আরও দুটি কাঁঠাল পারলাম। মোট ছয়টি কাঁঠাল এবং আম নিয়ে পাশের গ্রামের মনির ভাইয়ের কাছে আসলাম। মনির ভাইয়ের কাছে আমরা এই ফলগুলো বিক্রি করে দিলাম। বিক্রি করে আমাদের তখনকার সময়ে ১৭৫০ টাকা হয়েছিল।
সেখান থেকে আমরা তিন বন্ধু এবং আতিক ভাই এই চারজন মিলে বৃদ্ধ চাচার বাড়িতে আসলাম। বৃদ্ধ চাচার বাড়িতে এসে দেখতে পেলাম চাচার মেয়ে অনেক অসুস্থ। তার ওষুধ কেনা হয়নি এবং তাদের বাড়িতে খাবার রান্না হয়নি। যার কারণে তারা না খেয়ে আছে। তখন আমি চাচাকে বললাম চাচা আপনার এত কষ্ট হচ্ছে ধরেন আমরা আপনাকে এই টাকাগুলো দিলাম। আপনি এখনই বাজারে যাবেন বাজার থেকে খাবার এবং ওষুধ কিনে নিয়ে আসবেন। বৃদ্ধ চাচাকে টাকাটা দেওয়ার পরে চাচা অনেক কান্না করে দিলো।এই কান্নার মধ্যে ছিল আবেগময় খুশি, আসলে আমরা হয়তো সাহায্যটা চুরি করে করেছি, কিন্তু তার মুখে হাসিটা দেখতে পেয়ে আমাদের এই অপরাধটাকে আর অপরাধ মনে হয়নি। আসলে ছোটবেলা চুরির এই গল্পটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছিল। যা আজও মনে করতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগে।চাচাকে সহায়তা করে অনেক ভালো লেগে ছিলো।
ছোট বেলায় সবাই চোর ছিলাম। হাহাহা!!!!
অনেক মজা লাগলো আপনার লেখা গল্পটি পড়ে।চমৎকার উপস্থাপন ছিলো। শুভ কামনা রইলো।
এক বয়সে মানুষ এমন করে । আসলে ছেলে বেলায় কত কি করেছে। চুরি করে আম কাঠাল খাওয়ার মজাই আলাদা। আপনাদের উদ্দেশ্য ভাল ছিল। গল্পটি পড়ে মজা পেয়েছি। ধন্যবাদ।
আপনার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনি চমৎকার ভাবে গল্পটি উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই ধরনের কবিতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে আমার খুবই ভালো লাগছে, ধন্যবাদ আপনাকে।তবে আপনার বানানে ভুলে মিস্টেক হইছে, দয়া করে বানানটি সঠিক করে নিবেন ভাইয়া🙏🙏।